এলিনর বিরস গলায় জানাল, সব জিনিসের দাম এখন আকাশছোঁয়া।
রডি বলল, ডারলিং তুমি যেন জলের পদ্মফুল, কোনরকম পরিশ্রম বা ছোটাছুটি তুমি করতে পারো না।
এলিনর ঝাঁঝিয়ে বলল, আমার কি ঐসব করা উচিত বলে তুমি মনে করো রডি?
রডি বলল, তুমি তুমিই, ফুলের মতো কোমল, আবার প্রয়োজনে হুল ফোঁটাতেও পারো। লরা পিসি না থাকলে হয়তো তোমাকে বাধ্য হয়ে আজেবাজে চাকরি করতে হতো। অবশ্য আমার ক্ষেত্রেও তাই। লিউস অ্যাণ্ড হিউমের চাকরীটা করার ফলে আমার আত্মসম্মান অক্ষুণ্ণ আছে। আর লরা পিসির কাছ থেকে আমিও কিছু আশা রাখি আর তাই ভবিষ্যৎ নিয়ে ততো মাথা ঘামাই না।
রডির কথা শুনে এলিনর নিজেদের মানুষরূপী জোঁকের সঙ্গে তুলনা করলে রডি বলল, একদিন না একদিন আমরা কিছু সম্পত্তি পেতে পারি। এই কথাগুলোর প্রভাব আমাদের আচরণের উপর পড়েছে।
এলিনর বলল, লরা পিসি কখনো সঠিকভাবে বলেননি। কিভাবে উনি ওর সম্পত্তি ভাগ বাঁটোয়ারা করে যাবেন।
রডি বলল, তাতে কিছু এসে যায় না। উনি যদি সম্পত্তি তোমাকে দিয়ে যান, তাতে কিছু ভাববার নেই, কারণ তার ভাগ আমিও পাবো কারণ আমি তো তোমায় বিয়ে করব। আবার বুড়ি ওয়েলম্যান বংশের পুরুষ উত্তরাধিকার হিসাবে বেশীরভাগ সম্পত্তি যদি আমাকেই দেন, তাতেও কিছু হবে না, কারণ তুমি তো আমায় বিয়ে করছে।
রডি বলল, ভাগ্য ভালো যে আমরা পরস্পরকে ভালোবাসি। তুমিও তো আমাকে ভালোবাস, বাসো না এলিনর?
এলিনর শান্ত নিরীহ গলায় উত্তর দিল, হ্যাঁ।
রডি বলল, আশ্চর্য মেয়ে তুমি এলিনর। এই যে তোমার মেজাজ, সব সময় একটা স্বতন্ত্র ভাব, ধরা ছোঁয়ার বাইরে, তোমার এই গুণগুলোর জন্যই তোমায় এত ভালোবাসি।
রডি বলল, কোন কোন মহিলার অধিকারবোধ বড় বেশী, সব কিছু গ্রাস করে ফেলতে চায়, অথচ ভীষণভাবে অনুরক্ত, বিশ্বাসী, সব কিছুকেই তারা যেন ঘিরে থাকে। কিন্তু তোমার ব্যাপারটা স্বতন্ত্র, যে কোন মুহূর্তে তোমার মেজাজ পাল্টে যেতে পারে, ঐ রকম শীতল নিস্পৃহভাবে তুমি খুব দূরের হয়ে যেতে পারো। খুব শান্ত গলাতেই বলতে পাশে, দ্যাখো আমি আমার মত পাল্টেছি, অদ্ভুত মোহময়ী চরিত্র তোমার এলিনর। জানো আমার মতে আমাদের বিয়েটা খুব ভালো হবে। আমরা দুজনেই দুজনকে যথেষ্ট ভালোবাসি, দুজনেই দুজনের বন্ধু, আমাদের রুচিরও মিল আছে। আমাদের মধ্যে সম্পর্কও আছে, অথচ সে সম্পর্ক বিয়ের ব্যাপারে বাধা নয়। আমাকে হয়তো তোমার বেশীদিন ভালো লাগবে না। কিন্তু তোমার ব্যাপারে আমার আগ্রহ কমবে না।
এলিনর জানাল, তা কখনোই হবে না।
রডি বলল, আমাদের সম্পর্কের ব্যাপারটা জানাবার জন্যই যেন আমরা হান্টারবেরীতে যাচ্ছি, এই অজুহাতে ওখানে যাওয়া যায়।
রডি বলল, দুমাস হতে চলল আমরা ওখানে যাইনি। এখন যাবার সঙ্গে সম্পত্তির কোন সম্পর্ক নেই। স্রেফ মানসিক কারণে যেতে চাইছি।
এলিনর সম্মতি জানাতে রডি চিঠিটা পুড়িয়ে দিল আস্তে আস্তে, এবং চিন্তা করতে লাগল কে এমন চিঠি লিখতে পারে।
এলিনর ঠিক করল সমস্ত ব্যাপারটা স্বচক্ষে দেখে আসাই ভালো।
.
১.১.২
নার্স ও’ব্রায়ান মিসেস ওয়েলম্যানের ঘর থেকে বেরিয়ে বাথরুমে ঢোকার মুখে বললেন, কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ার আগে এক পেয়ালা গরম চা নার্স হপকিন্সের নিশ্চয় ভালো লাগবে।
নার্স ও’ব্রায়ান বেশ লম্বা, লাল চুল, ত্রিশের কোঠায় বয়েস, ঝকঝকে সাদা দাঁত, মুখে ঘামাচির দাগ, এবং ঠোঁটে সর্বদা হাসি।
সরকারী নার্স হপকিন্স মাঝবয়সী মহিলা, শান্ত চেহারা, গাম্ভীর্য নিয়ে থাকেন, আদবকায়দা বেশ চোস্ত। তিনি প্রতিদিন সকালে মিসেস ওয়েলম্যানের পোশাক বদলানো, বিছানা ঠিক করা, বাথরুমের কাজ, সরানোর কাজে ও’ব্রায়ানকে সাহায্য করেন।
ও’ব্রায়ান জানাল এই বাড়িতে সবকিছুই বেশ নিয়মমাফিক আর ভালোভাবে চলে, যদিও সবই একটু সেকেলে ধরনের। এখানকার ঝি-চাকরগুলোও বেশ নম্র, ভদ্র। মিসেস বিশপ নিজের তদারকি করেন তাদের।
ক্ষুব্ধ সুরে হপকিন্স বললেন, আজকাল মেয়েগুলো একটা দিনও ভালোভাবে সব কাজ করতে পারে না, ও’ব্রায়ান মেরী জেরার্ডের প্রশংসা করলেন এবং হপকিন্স মেরীর জন্য দুঃখপ্রকাশ করলেন।
নার্স ও’ব্রায়ানের ঘরে বসে দুজনে চা খেতে খেতে ও’ব্রায়ান বললেন, আজ টেলিগ্রাম এসেছে মিস কার্লিসল আর মিঃ ওয়েলম্যান এখানে আসছেন। ও’ব্রায়ান জানালেন যে মিঃ ওয়েলম্যান খুব সুন্দর মানুষ, তবে দেখলে একটু অহংকারী মনে হয়।
হপকিন্স জানালেন যে, ঐ মেয়েটার আঁকা ছবি তিনি ট্যাটলার হলে দেখেছেন।
ও’ব্রায়ান নার্স হপকিন্সকে জিজ্ঞেস করলেন যে, এলিনর সুন্দরী কিনা?
হপকিন্স জানালেন যে, মেরী জেরার্ডের ধারে কাছে যেতে পারবে না এলিনর কার্লিসল।
ও’ব্রায়ান চাপা সুরে হপকিন্সকে জানালেন, কাল রাতে একটা অদ্ভুত ঘটনা ঘটেছে। রাত প্রায় দুটোর সময় রোগীকে পাশ ফিরিয়ে দিতে গিয়ে দেখেন উনি জেগে আছেন। অথচ যেন স্বপ্ন দেখছেন, কারণ খাটের কাছে যেতেই উনি বললেন, ফটোটা। ফটোটা আমার চাই।
ও’ব্রায়ান কার ফটো জানতে চাইলে তিনি বলেন, লিউইসের এবং বিছানার পাশে রাখা বক্স থেকে একটা চাবি বের করে ড্রেসিং টেবিলের দ্বিতীয় ড্রয়ারটা খুলতে বলেন। ওর মধ্যে রূপোর ফ্রেমে বাঁধানো দারুণ সুন্দর দেখতে এক ভদ্রলোকের ফটো ছিল। যার তলার দিকে এক কোণে আড়াআড়িভাবে লেখা লিউইস। ফটোটা ওঁর হাতে দিতেই অনেকক্ষণ সেটা দেখে অস্পষ্ট সুরে লিউইসের নাম নিলেন এবং দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফটোটা আবার যথাস্থানে রেখে দিতে বললেন। এবং ও’ব্রায়ান চাবি বন্ধ করে ফিরে এসে দেখেন মিষ্টিমুখে তিনি ঘুমিয়ে পড়েছেন।