বেশ…তখনো কিন্তু স্বপ্নের ঘোরে আচ্ছন্ন…তারপর?
তারপর? মেরী জানালার ধারে দাঁড়িয়েছিল, আমি আবার গেলাম ভাড়ার ঘরে, ঐ যে আপনি বললেন না, স্বপ্নের ঘোর ঠিক তাই।…নার্স ওখানে কাপ প্লেট ধুচ্ছিলেন, মাছের কৌটোটা আমি ওঁকে দিলাম। নার্সের কব্জিতে একটা দাগ ছিল। আমি প্রশ্ন করতে উনি বললেন, আউটহাউসের ধারে গোলাপ বাগানের কাটাতে কেটে গেছে। আমার মনে পড়ে গেল আমি আর রডি গোলাপের লড়াই খেলতাম। ঐ ভাড়ার ঘরে দাঁড়িয়ে…হঠাৎ হঠাৎ একটা অন্ধকার ঘিরে ধরল আমায়,..মনের গোপন কোণ থেকে ঘৃণা ছড়িয়ে পড়ল…। আমি চাইনি ওর মৃত্যু হোক-পরে যখন আবার খাবার ঘরে গেলাম, দেখি মেরী মারা যাচ্ছে…।
পোয়ারোকে একদৃষ্টে ওর মুখের দিকে চেয়ে থাকতে দেখে সলজ্জভাবে এলিনর প্রশ্ন করল, আপনি কি এখনও আমাকে প্রশ্ন করবেন…মেরী জেরার্ডকে আমি খুন করেছি কিনা?
পোয়ারো দ্রুতস্বরে বললেন, এমন অনেক জিনিস আছে যা আমি জানতে চাই না…।
.
২.১২.১
এরকুল পোয়ারো ট্রেন থেকে নামলেন। ড. লর্ড বললেন, যথাসম্ভব জোগাড় করে রেখেছি আপনার প্রশ্নের উত্তর। প্রথমতঃ, মেরী জেরার্ড ১০ই জুলাই এখান থেকে লণ্ডনে গিয়েছিল। দ্বিতীয়তঃ, বাড়িতে আমার সংসারের কাজ করে কয়েকটি হাসিখুশি মেয়ে, আমার কোন হাউস-কীপার নেই। কাল সকালেই মিসেস স্ট্যাকারীর বাড়িতে আপনাকে নিয়ে যাব যিনি রানসমের (আমার পূর্বসূরীর) হাউস-কীপার ছিলেন।
ড. লর্ড বললেন, মিঃ পোয়ারোর সবচেয়ে আগে হান্টারবেরীতে যাওয়া উচিত ছিল। এ ধরনের কেস হলে তিনি আগে ঐ বাড়িটাতেই ছুটে যেতেন যেখানে মেরী খুন হয়েছে।
পোয়ারো বললেন, বইপড়া বিদ্যে নিয়ে রহস্যের তদন্ত করা যায় না। নিজের স্বাভাবিক বুদ্ধি কাজে লাগাতে হয়।
ড. লর্ড বললেন, কোন না কোন সূত্র তো পেতে পারতেন?
পোয়ারো বললেন, পুলিশ তন্ন তন্ন করে বাড়িটাকে খুঁজেছে এলিনরের বিপক্ষে যেতে পারে এমন সব প্রামণের জন্য, তার স্বপক্ষের জন্য নয়। পোয়ারো আরো জানালেন, এখন তিনি কি চান তা বুঝছেন, মনে হয় সামান্য কিছু হলেও কিছু একটা ও বাড়িতে পাওয়া যেতে পারে।
ব্যগ্র হয়ে ড. লর্ড প্রশ্ন করলেন, মানে এলিনরকে নির্দোষ প্রমাণ করার জন্য।
গম্ভীর হয়ে পোয়ারো বললেন, অপেক্ষা করুন বন্ধু, এই প্রশ্নের উত্তরের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
.
২.১২.২
দুপুরের লাঞ্চের সময় ড. লর্ড আর পোয়ারোর মধ্যে কথা হচ্ছিল, পোয়ারো বললেন, কোন কোন অপরাধের মূল থাকে অতীতের মধ্যে ছড়ানো। আমার মনে হয় এই ঘটনারও তাই ছিল।
বিরক্ত ড. লর্ড বললেন, দেখুন মিঃ পোয়ারো, আপনি কোন পথে এগোচ্ছেন তা জানার অধিকার কি আমার আছে? না আমাকে অন্ধকারেই থাকতে হবে?
পোয়ারো বললেন, থাকতে হবে, কারণ এখনও পর্যন্ত এমন কোন সূত্র পাইনি যা থেকে ধারণা হতে পারে একজন ছাড়া অন্য মেরী জেরার্ডকে খুন করতে পারে এবং সেই একজন হল এলিনর।
এতটা নিশ্চিত হবেন না, জানেন তো মেরী বহুদিন বিদেশে ছিল?
পোয়ারো জানালেন, জার্মানীতে তার কিছু স্পাই আছে। ছোটখাট কাজে তিনি তাদের ওপর নির্ভর করেন। শেষ একজনকে মিঃ ওয়েলম্যানের ফ্ল্যাট সার্চ করার জন্য লাগিয়েছিলেন উনি কতটা মিথ্যা কথা বলেছেন তা জানবার জন্য। পোয়ারো বললেন, প্রায় প্রত্যেকেই মিথ্যে বলেছেন। নার্স ও’ব্রায়ান বলেছেন স্বপ্নের কল্পনার রং লাগিয়ে, নার্স হপকিন্স গোঁয়ারের মতো, মিসেস বিশপ ঈর্ষা আর দ্বেষ মিশিয়ে আর আপনি…
ড. লর্ড প্রায় লাফিয়ে উঠলেন, আমি নিশ্চয়ই আপনাকে মিথ্যে বলিনি।
পোয়ারো অস্বীকার করলেন না।
হান্টারবেরীর গেট পেরিয়ে মাঝবরাবর আসার পর মালী হরলিক-এর সঙ্গে দেখা। ড. লর্ড হরলিকের সঙ্গে পোয়ারার আলাপ করালেন এবং পোয়ারোকে বললেন, সেদিন সকালে হরলিক কাজ করছিল। হরলিক জানাল, সেদিন এলিনর কার্লিসলকে একটু যেন উত্তেজিত মনে হচ্ছিল–যেন মনে মনে কিছু একটা চিন্তা করছিলেন।
পোয়ারো প্রশ্ন করলেন, তুমি মেরী জেরার্ডকে চিনতে?
হ্যাঁ স্যার, তবে খুব ভালো চিনতাম না।
কি ধরনের মেয়ে ছিল ও?
অত্যন্ত ভালো মেয়ে স্যার, সুন্দর কথাবার্তা, নিজের সম্বন্ধে একটু বড় ধারণা ছিল। জানেন মিসেস ওয়েলম্যান ওকে নিয়ে বড় বাড়াবাড়ি করতেন। ফলে ওর বাবা একেবারে ক্ষেপে গিয়েছিল।
পোয়ারো মেরীর বাবার সম্পর্কে জানতে চাইলে হরলিক জানাল, সবসময়ে কটু কথা বলত মিঃ জেরার্ড।
সেদিন সকালে কোথায় কাজ করছিলে তুমি?
হরলিক জানাল, তরকারীর বাগানে।
তুমি লাঞ্চ খেতে কখন গিয়েছিলে?
দুপুর ১টায় স্যার।
এবং তুমি কিছুই দেখতে পাওনি, আশেপাশে কেউ ঘুরে বেড়াচ্ছে..বা কারুর গাড়ি…কোন কিছু।
মালী আশ্চর্য হয়ে বলল, পিছন দিকের গেটের বাইরে সে ড. লর্ডের গাড়ি দেখেছে।
ড. লর্ড প্রায় আর্তনাদ করে উঠলেন, আমার গাড়ি? হতেই পারে না। সেদিন সকালে আমি উইদেরবেরীর দিকে গিয়েছিলাম দুটোর আগে ফিরিনি।
ড. লর্ড তাড়াতাড়ি পোয়ারাকে নিয়ে বাড়ির দিকে এগোলেন এবং কিছুটা উত্তেজিত হয়ে বললেন, শেষপর্যন্ত পাওয়া গেল গলিতে কার গাড়ি ছিল?
আপনার কি গাড়ি বন্ধু?
ফোর্ড-টেন, সমুদ্র-সবুজ রং। খুবই সাধারণ গাড়ি।
আর আপনি নিশ্চিত তো ঐ গাড়িটা আপনার ছিল না?
ড. লর্ড জানালেন, না।