ড. লর্ড ধীরে ধীরে বললেন, নিরীহ একটি মৃত যুবতী, সে সপক্ষে এখন কিছুই বলতে পারবে না, তার সম্বন্ধে ঐ ধরনের অভিযোগ খোঁজা কি ঠিক হবে?
তাহলে বলছেন অত্যন্ত নির্মল চরিত্রের মেয়ে ছিল মেরী জেরার্ড?
জোর দিয়ে ড. লর্ড জানালেন, হ্যাঁ।
শান্ত গলায় পোয়ারো বললেন, নার্স হপকিন্স সম্বন্ধে এমন কিছু জানেন যা বলতে ভয় পেয়েছেন। যদিও নার্সের ধারণা ঐ ব্যাপারটার সঙ্গে খুনের কোনো সম্পর্ক নেই, এলিনরই মেরীর হত্যাকারী। এমনও তো হতে পারে মেরী কোন এক তৃতীয় ব্যক্তির ক্ষতি করেছে, আর সেই তৃতীয় ব্যক্তিটি মেরীর মৃত্যু চেয়েছিল।
ড. লর্ড জানালেন, বাপারটা এতো ঘোরালো হলে নার্স হপকিন্স নিশ্চয়ই বুঝতে পারতেন।
নার্স হপকিন্স বুদ্ধীমতী হলেও আমার সমান বুদ্ধি নিশ্চয়ই রাখেন না। অতএব তিনি যা বুঝতে পারেননি আমি পারতে পারি।
পোয়ারো জানালেই টেড বিগল্যাণ্ড যার জীবন মেরীর সঙ্গে এখানেই কেটেছে সেও জানে না, মিসেস বিশপও কিছু জানে না। একমাত্র আশা নার্স ও’ব্রায়ান।
ড. লর্ড জানালেন, মাত্র দুমাস হল তিনি বদলি হয়ে এসেছেন এখানে।ও ব্যাপারে তিনি বিশেষ কিছু জানেন না।
পোয়ারো বললেন, মেরীর কথাটা কথাচ্ছলে যদি নার্স হপকিন্স বলে থাকেন নার্স ও’ব্রায়ানকে তবে তার কিছু জানার কথা।
.
২.১০.১
চায়ের টেবিলের অন্যধারে বসে কপালের ওপর এসে পরা লাল চুলের গোছ ঝাঁকুনি দিয়ে পিছন দিকে সরিয়ে আবার পূর্ণ দৃষ্টিতে দেখলেন ছোটোখাটো লোকটিকে।
পোয়ারো বললেন, স্বাস্থ্য আর প্রাণশক্তিতে ভরপুর এমন কারুকে দেখলে মন খুব প্রসন্ন হয়। আমার স্থির বিশ্বাস আপনার রোগীরা ভালো হবেই হবে।
উত্তরে নার্স ও’ব্রায়ান বললেন, তার হাতে কম রোগীই মারা গেছে।
পোয়ারো প্রশ্ন করলেন, ঐ সময়ে আপনার মনে কোন সন্দেহ হয়নি?
নার্স ও’ব্রায়ান বললেন, বিন্দুমাত্র না, তবে হওয়া উচিত ছিল। কারণ সেদিন সকালে ড. লর্ড অকারণে একবার একাজে–একবার অন্যকাজে সর্বত্র ছোটাছুটি করিয়েছিলেন, আর ঐ অবসরেই ডেথ সার্টিফিকেট লিখে ফেললেন।
পোয়ারো বললেন যে, মিসেস ওয়েলম্যান আত্মহত্যা করেছেন এমন কথা উঠেছে।
শুনে নার্স ও’ব্রায়ান বললেন, যিনি কোনরকমে শুধু একটা হাত তুলতে পারতেন, বিছানা থেকে ওঠা তো দূরের কথা উনি কিভাবে আত্মহত্যা করবেন? আবার মিস কার্লির্সল, মিঃ ওয়েলম্যান বা মেরী জেরার্ড কারুর পক্ষেই একাজ করা অসম্ভব বলে জানালেন নার্স ও’ব্রায়ান।
পোয়ারো তার কথা মেনে নিয়ে বললেন, আচ্ছা নার্স হপকিন্সের মরফিনের শিশি কখন হারিয়েছিল?
ঠিক পরের দিন সকালে। উনি বললেন শিশিটা এখানে ছিল, তারপর ওঁর ধারণা হল মরফিন হয়তো বাড়িতে ফেলে এসেছেন।
পোয়ারো বললেন, কি আশ্চর্য তখনও আপনার সন্দেহ হয়নি?
নার্স ও’ব্রায়ান জানালেন, আমার মাথায় ওসব চিন্তা আসেনি। পুলিশরে ওটা নিছক সন্দেহ ছাড়া কিছুই নয়।
উত্তরটা মনঃপুত না হওয়াতে পোয়ারো বললেন, মরফিনের শিশি হারিয়ে গেছে, অথচ আপনাদের দুজনের মনে কোন সন্দেহই জাগল না?
ব্লু-টি কাফেতে বসে নার্স হপকিন্সের সঙ্গে তার যা কথা হয়েছিল, জানালেন নার্স ও’ব্রায়ান। পোয়ারো জানতে চাইলেন, এখন আপনার কি ধারণা?
যদি মেরীর পেটে মরফিন পাওয়া যায়, তবে আন্দাজ করা যাবে কে ওটা চুরি করেছিল বা কোন কাজে লাগানো হয়েছিল, তবে ওর শরীরে মরফিন না পাওয়া পর্যন্ত কিছুতেই বিশ্বাস করবো না, তবে মেরী জেরার্ডকে যে এলিনর খুন করেছে সে বিষয়ে আপনার কোন সন্দেহ নেই?
নার্স ও’ব্রায়ান বললেন, সে রাতেবৃদ্ধা কথা বলার চেষ্টা করেছিলেন আর মি এলিনর তার সমস্ত ইচ্ছাপূরণের কথা দিয়েছিলেন, সে রাতে আমি যদি উপস্থিত না থাকতাম বা একদিন মেরী যখন সিঁড়ি দিয়ে নেমে যাচ্ছিল আর কুটিল মুখে এলিন ওর দিকে তাকিয়েছিল, সে দৃশ্য যদি না দেখতাম তবে হয়ত অন্য কথা ভাবতাম।
পোয়ারো প্রশ্নের জবাবে নার্স ও’ব্রায়ান বললেন, দুই লাখ পাউণ্ডের সম্পত্তির লোভেই এলিনর মেরীকে খুন করেছে।
নার্স জানাল, মিসেস ওয়েলমান উইল করে গেলে ওনার পাইপয়সা মেরীকেই দিয়ে যেতেন।
পোয়ারো বললেন, একথাও তো কেউ বলতে পারে যে, মেরী জেরার্ড কায়দা করে বুড়ীকে হাত করে নিয়েছিল, ফলে নিজের আত্মীয় সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হতে যাচ্ছিল।
ঘাড় নেড়ে নার্স ও’ব্রায়ান কথাটা স্বীকার করলেন।
পোয়ারোর প্রশ্ন, মেরী জেরার্ড কি খুব ধূর্ত, ফন্দিবাজ মেয়ে?
নার্স ও’ব্রায়ান জানালেন, মেরী মোটেই সেরকম মেয়ে ছিল না।
হঠাৎ এক অদ্ভুত মর্মভেদী স্বরে পোয়ারো বলে উঠলেন, আপনি আর নার্স হপকিন্স দুজনেই একটা কথা জনসমক্ষে উপস্থিত করবেন না এমন বোঝাপড়া করে নিয়েছেন, তাই না?
আপনার কথার অর্থ?
নার্স ও’ব্রায়ানের কণ্ঠস্বরে পোয়ারো তাড়াতাড়ি বললেন, না না, এই খুনের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই–সম্পূর্ণ আলাদা ব্যাপার।
নার্স ও’ব্রায়ান শান্তভাবে বললেন, পুরানো ময়লার গাদা খুঁচিয়ে লাভ কি বলুন? তাছাড়া উনি একজন বয়স্কা সম্মানিতা মহিলা, ওর সম্বন্ধে কোন কেচ্ছা নেই, মারাও গেছেন সম্মান নিয়ে।
আপনি বলছেন মিসেস ওয়েলম্যানকে মেডেনসফোর্ডে সবাই খুব সম্মান করতো।
নার্স ও’ব্রায়ান আপন মনে বলতে লাগলেন, বহুদিন আগে সব শেষ হয়ে গেছে, মানুষ ভুলেও গেছে। যার স্ত্রী পাগলা-গারদে সেই পুরুষের পক্ষে আমৃত্যু একা একা কাটানো বড়ো কঠিন।