তাহলে বলা যায় মেরী ওকে এড়িয়ে যেতে চাইছিল, তাই ক্ষেপে ছিল ও মেরীর ওপর।
নার্স হপকিন্স জানালেন টেড তার জন্য নার্সকেই অনেক কথা শুনিয়েছিল। কিন্তু মেরীর মতো সহজ সরল একটা মেয়েকে উনি বাজে পথে চলতে দিতে চাননি।
পোয়ারোকে নার্স হপকিন্স জানালেন মেরী বুড়ো জেরার্ডের মেয়ে নয়। মেরীর মা ছিলেন মিসেস ওয়েলম্যানের খাস ঝি। মেরী হবার পর ওর সঙ্গে জেরার্ডের বিয়ে হয়।
এবার পোয়ারো নার্স হপকিন্সকে জিজ্ঞাসা করলেন, মিঃ রডারিক-এর সঙ্গে মেরীর কি ধরনের সম্পর্ক ছিল।
নার্স হপকিন্স বললেন, মিঃ রডারিক মেরীকে পছন্দ করত কিন্তু মেরী তাকে পছন্দ করত না।
এবং ধরে নেওয়া যেতে পারে এই পছন্দ থেকে ভবিষ্যতে আরও অন্য কিছু জন্মাতে পারতো?
নার্স হপকিন্স জানালেন, মেরী রডারিককে বলেছিল যে, মিস এলিনরের সঙ্গে এনগেজমেন্ট যখন আছে তখন অমন কথা বলা উচিত নয়।
এবার পোয়ারো মিঃ রডরিকের সম্পর্কে হপকিন্সকে প্রশ্ন করতে লাগলেন। রডারিক ওয়েলম্যান সম্পর্ক তার ধারণা, রডারিক তার কাকীকে কতটা ভালোবাসত ইত্যাদি ইত্যাদি।
নার্স হপকিন্স জানালেন, মিসেস ওয়েলম্যান মারা যাবার আগের রাতে ওরা লণ্ডন থেকে এসেছিলেন এবং তাঁর বিশ্বাস রডারিক ওয়েলম্যান সে ঘরে ঢোকেননি।
পোয়ারো যাচাই করে নিতে চাইলেন যে, সত্যিই রডারিক মিসেস ওয়েলম্যানের ঘরে ঢুকেছিল কিনা?
অন্ততঃ আমি যতক্ষণ ডিউটিতে ছিলাম, ততক্ষণ যাননি। ভোর তিনটের সময় আমার জায়গায় এসেছিলেন নার্স ও’ব্রায়ান, উনি ওকে ডেকে আনতে পারেন, তবে সে কথা আমাকে বলা হয়নি।
আপনার অনুপস্থিতেও তো যেতে পারেন ঘরে? ধরুন জল গরম করতে বা কোন বিশেষ ওষুধ আনতে আপনি নীচে গিয়ে থাকতে পারেন?
নার্স হপকিন্স জানালেন বোতলে গরম জল ভরতে তিনি গিয়েছিলেন এবং মিনিট পাঁচেক পরেই তিনি ফিরে আসেন।
তবে ঠিক ঐ সময়রে মধ্যে মিঃ ওয়েলম্যান ভিতরে এসে কাকীকে দেখে থাকতে পারেন? যদি করে থাকেন বলতে হবে খুব তাড়াতাড়ি করেছেন।
.
২.৪.১
মিসেস বিশপ একটু রক্ষণশীল স্বভাবের। বিদেশী পোয়াবোর প্রতিটি কথাতেই উনি একটু সন্দিগ্ধ হয়ে উত্তর দিচ্ছিলেন। মিসেস ওয়েলম্যানের মৃত্যুর জন্য দুঃখপ্রকাশ করলেন। মিস কার্লিসলের গ্রেপ্তারের ব্যাপারটাকে অপমানজনক, নতুন পুলিশী ব্যবস্থায় পরিণতি প্রভৃতি আখ্যা দিলেন। মেরীর মৃত্যুর ব্যাপারে অস্পষ্ট কিছু উত্তর দিলেন।
পোয়ারো তাঁর শেষ তুরুপের তাসটা কাজে লাগালেন। স্ট্যাণ্ডিংহামের রাজপরিবারে তার যাতায়াত আছে যেন দুজনে বেশ ঘরোয়া হয়ে উঠলেন। নানা কথাবার্তার মধ্যে হঠাৎ পোয়ারো প্রশ্ন করে বসলেন, বিয়ের ব্যাপারে নানা ঝঞ্ঝাট…।
পোয়ারো সুযোগ বুঝে জিজ্ঞেস করলেন, মিঃ রডারিক আর এলিনয়ের বিয়ের এনগেজমেন্টটা ঐ বৃদ্ধাকে খুশী করার জন্য করা হয়েছিল কিনা?
মিসেস বিশপ জানালেন, মিস এলিনর আর মিঃ রডারিক দজনেই দুজনের প্রতি অনুরক্ত ছিলেন। তাদের এনগেজমেন্ট ভেঙ্গে যাবার কারণ মেরী। মিসেস ওয়েলম্যানের অসুস্থতার সুযোগে মেরী তাকে কজা করে ফেলে, যখন তখন ফুল পাঠিয়ে, বই পড়ে শুনিয়ে। এরপর মেরী কিভাবে মিঃ রডারিককে ফাঁদে ফেলেছিল সেকথাও বললেন মিসেস বিশপ। এছাড়া টেড বিগল্যাণ্ড মেরীকে পছন্দ করত একথাও জানালেন মিসেস বিশপ। মেরী মিসেস ওয়েলম্যানের সম্পত্তি গ্রাস করার চেষ্টকরছিল বলে জানালেন তিনি। এবং মিস এলিনরকে ভদ্র মেয়ে বলেই চিহ্নিত করলেন।
নানা কথার পর পোয়ারো প্রশ্ন করলেন, খুবই দুঃখের বিষয়, মারা যাবার আগে মিঃ রডারিক ওঁর কাকীমার সঙ্গে দেখা করলেন না।
মিসেস বিশপ জানালেন, তিনি মিঃ রডারিককে তার কাকীমার ঘরে ঢুকতে দেখেছিলেন।
এরপর পোয়ারো মেরী জেরার্ডের মৃত্যু সম্বন্ধে মিসেস বিশপের ধারাণা জানতে চাইলেন। তিনি জানালেন টিনের মাছ খেয়েই মেরীর মৃত্যু হয়। মরফিনের ব্যাপারে তিনি তেমন কিছু বলতে পারলেন না। মেরী আত্মহত্যা করে থাকতে পারে কিনা জিজ্ঞেস করাতে তীব্র প্রতিবাদ করে উঠলেন মিসেস বিশপ।
.
২.৫.১
পোয়ারো টেড বিগল্যাণ্ডকে পেল তার বাবার খামারে। টেড জানাল এলিনর কার্লিসলের মতো ভদ্র, নরম মনের মেয়ে মেরীকে খুন করতে পারে না। মেরীর মৃত্যুরহস্য উন্মোচনে টেড তাকে কোনোরকম সাহায্যই করতে পারল না।
মেরী সম্বন্ধে ভিন্ন ভিন্ন লোকের ভিন্ন ভিন্ন মত হঠাৎ পোয়ারের মনে পড়ে গেল। ড. লর্ড বলেছিলেন, চমৎকার মেয়ে। নার্স হপকিন্সের মন্তব্য। যে কোনদিন ও সিনেমায় নামতে পারতো। মিসেস বিশপের কথায় বড্ড দেমাকী চালচলন আর টেডের কথায় ফুলের মতো নিষ্পাপ।
টেডের বিশ্বাস মেরীর মৃত্যু একটা অ্যাক্সিডেন্ট। যেটা ঘটার নয়, অথচ ঘটে গেছে তাতে অ্যাক্সিডেন্ট ছাড়া আর কিই বা বলা যায়?
টেড জানাল মেরী বিদেশে যাওয়া ও সেখানে লেখাপড়া করার ফলে একটু পাল্টে গিয়েছিল। ও তার আগের জীবনটা ভুলে গিয়েছিল। টেড তার উপযুক্ত ছিল না। আবার মিঃ ওয়েলম্যানের মতো সত্যিকারের ভদ্রলোকের উপযুক্ত ছিল না মেরী।
মিঃ ওয়েলম্যানকে টেড পুরুষ হিসাবে গণ্যই করে না। এবং কথায় কথায় মিঃ ওয়েলম্যানের ওপর টেডের অসন্তোষ প্রকাশ হয়ে পড়ে।
টেড বিগল্যাণ্ড জানান রডি ওয়েলম্যান মেরীর আশেপাশে বড্ড বেশী ঘুরঘুর করতেন। মেডেনসফোর্ড সবাই মেরীকে ভালোবাসত। মিসেস ওয়েলম্যান মেরী না হলে চোখে অন্ধকার দেখতেন। কিন্তু মিসেস বিশপ মেরীকে পছন্দ করতেন না।