.
১.৭.৩
আউটহাউসে মেরী জের!র্ড খুব অসহায়ভাবে তাকাচ্ছিল চারপাশে। তার মনে পড়ে গেল অতীতের কিছু স্মৃতি।
এটা সেটা কথার পর নার্স হপকিন্স কাজের কথায় এলেন। ফার্ণিচারগুলো সব খুঁটিয়ে দেখে কতগুলো রাখতে আর কতকগুলো বেছে নিতে বললেন এবং একটা লিস্টও তৈরী করলেন।
মেরী জানাল, উকিলবাবু তাকে আগাম কিছু টাকা দিয়েছেন যা দিয়ে সে ট্রেনিং ফি এবং অন্যান্য খরচ চালিয়েছে। পুরো টাকাটা পেতে মাস খানেক লাগবে।
বুড়ো জেরার্ডের কাপড় জামা গোছানোর পর ওরা কাগজপত্র ভরা একটি টিনের বাক্সের মধ্যে জেরার্ডের জমিয়ে রাখা কিছু খবরের কাগজের কাটিং, পুরানো চিঠি ইত্যাদি পেল।
একটা কাগজ খুলে মেরী বলল, এই যে মা-বাবার বিয়ের সার্টিফিকেট, সেন্ট অ্যালবান গির্জা, ১৯১৯ সাল।
হঠাৎ মেরীর গলার স্বর কঠোর হল। কাঁপাকাঁপা গলায় বললো, ১৯১৯ সালে আমি এক বছরের ছিলাম। এটা তো ১৯৩৯ সাল। এখন আমার বয়েস একুশ। ১৯১৯ সালে আমি এক বছরের ছিলাম। তার মানে..যখন আমি হয়েছি তখন আমার মা বাবার বিয়ে হয়নি।
নার্স হপকিন্স বললেন, অনেক স্বামী-স্ত্রী আছে, তাদের যখন চার্চে যাবার কথা তার বেশ কিছু পরে যায়, কিন্তু শেষ পর্যন্ত গেলে সবটাই ঠিক হয়ে যায়।
আর ঠিক এই কারণেই কি বাবা আমাকে ভালোবাসতেন না? কারণ আমার মা ওঁকে বিয়ে করতে বাধ্য করেছিলেন।
নার্স হপকিন্স একটু ইতস্ততঃ করে বললেন, সত্যি কথাটা তাহলে আমাকে বলতে হয়, তুমি জেরার্ডের মেয়েই নও।
মেরীর গাল লাল হয়ে উঠল, কিন্তু আপনি সেটা জানলেন কি করে?
নার্স হপকিন্স বললেন, মারা যাবার আগে জেরার্ড অনেক কথা বলেছিলেন।
ভেবে পাচ্ছি না তাহলে আমার আসল বাবা কে?
মুখ খুলতে গিয়ে মনঃস্থির করতে না পেরে নার্স হপকিন্স মুখ বন্ধ করলেন। ঘরে একটা ছায়া দেখে দুজনেই মুখ তুলে দেখল জানালার কাছে দাঁড়িয়ে এলিনর।
প্রাথমিক সম্ভাষণের পর এলিনর জানাল যে তাদের জন্য খাবার এনেছে এবং খাবার জন্য তিনজন এলিনরের বাড়ির দিকে এগোল। খালি বাড়ির শীতল ছায়ায় পা দিয়েই কেঁপে উঠল মেরী। এলিনর জানাল, সকালবেলা তারও ঠিক একই অভিজ্ঞতা হয়েছিল।
খাওয়া-দাওয়ার পর নার্স হপকিন্স পাশের ঘরে গেলেন চা করতে আর এলিনর মেরীর সঙ্গে জোর করে কিছু কথা বলার চেষ্টা করছিল। মেরীর দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে ছিল এলিনর। অপ্রস্তুত হয়ে মেরী বলল, কিছু হলো কি? আপনি এমনভাবে তাকাচ্ছিলেন।
এলিনর জানাল কোন চিন্তা গভীরভাবে আমাকে পেয়ে বসলে এমনভাবে তাকাই মাঝে মাঝে, এলিনর স্বাভাবিক হবার চেষ্টা করল। ছোটবেলায় চা তৈরী করার খেলাটা মেরীও খেলত কিনা জানতে চাইল।
এলিনর বলল, ছোটোবেলায় ফিরে যেতে আমার খুব ভালো লাগে। তোমার লাগে না মেরী? মেরী বলল, মিস এলিনর, আপনার উচিত নয় একথা ভাবা।
এলিনরের গলায় ইস্পাতের ধার, কি ভাবা উচিত নয় আমার?
মেরী ভয়ে বলল, কি বলছিলাম…ভুলে গেছি আমি।
নার্স হপকিন্স চা আনতে পরিস্থিতিটা সহজ হল।
এলিনর মেরীকে কিছু বলতে গিয়েও বলল না।
চা খাওয়া শেষ হল। এলিনর ট্রে হাতে বেরিয়ে যেতে যেতে দেখল জানালার ধারে দাঁড়িয়ে মেরী জেরার্ড, তরুণী, সুন্দরী, প্রাণবন্ত…।
.
১.৭.৪
নার্স হপকিন্স ও এলিনরের কথা হচ্ছিল ভাঁড়ার ঘরে। জামার হাতদুটো গুটিয়ে বাসনপত্র ধোয়ার জন্য এগিয়ে এলেন নার্স হপকিন্স আর হঠাৎ তার কব্জির কাছে রক্ত দেখে এলিনর বলল, কিসের খোঁচা লাগল?
নার্স হপকিন্স হেসে বললেন, আউটহাউসের পিছন দিকে গোলাপের বাগানের কাঁটা ফুটে গেছে।
অতীতের স্মৃতির ঢেউ আছড়ে পড়তে লাগল এলিনরের হৃদয়তটে। ও আর রডি ঐ বাগানে ঝগড়া করত, লড়াই করত, আবার মিলও হত। হাসি, আনন্দে ভরা সুখের সেসব দিনগুলো তার মনে পড়ল, আর হঠাৎই একটা বেদনার শীতল হোত ওর সারা দেহ মনের ওপর দিয়ে বয়ে গেল–সেসব দিন..আর এখন? আমি পাগল হয়ে গেছি…একেবারে বদ্ধ পাগল।
নার্স হপকিন্স পরে বলেছিলেন, একেবারে অদ্ভুত ব্যাপার…মনে হচ্ছিল…নিজে নিজেই কথা বলছিলেন এলিনর। চোখগুলো কেমন যেন গোল হয়ে উঠেছিল।
লরা মাসির জিনিসপত্রগুলো গ্রামে কোথায় দিলে কাজে লাগবে জানতে চাইল এলিনর। তারপর দুজনে মিলে ঘরটা পরিষ্কার করে দোতলায় গেল।
সেখানে মিসেস ওয়েলম্যানের দামী দামী কাপড়জামা সব গুছিয়ে রাখল আর তারপরই নার্স হপকিন্সের হঠাৎ মনে পড়ল মেরীর কথা।
এলিনর বলল, ওকে চা খাবার ঘরে বসিয়ে রেখে তারা চলে এসেছে প্রায় ঘন্টাখানেক হল। খাবারের ঘরে এসে দেখল মেরী একটা বড় আরাম চেয়ারে গা এলিয়ে শুয়ে আছে, জোরে জোরে অদ্ভুতভাবে নিঃশ্বাস নিচ্ছিল।
নার্স হপকিন্স হঠাৎ-ই হাঁটু মুড়ে মেরীর পাশে বসে পড়ে মুখের কাছে মুখ নিয়ে কি শুকলেন আর চোখের পাতা টেনে দেখলেন তারপর ড. লর্ডকে ফোন করার কথা বললেন।
কি ব্যাপারটা কি? এলিনর, ঘাবড়ে গিয়ে প্রশ্ন করল! নার্স হপকিন্স জানালেন মেরীকে বিষ খাওয়ানো হয়েছে চোখে সন্দেহের ছায়া নিয়ে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলেন এলিনরের দিকে।
২. পিটার লর্ড
২.১.১
পিটার লর্ড এরকুল পোয়ারোকে বললেন, মঁসিয়ে পোয়ারো। পৃথিবীতে আপনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি আমাকে সাহায্য করতে পারেন।
আপনার কেসটা কি? শান্ত গলায় জানতে চাইলেন পোয়ারো।