তাঁর এখানকার জবানবন্দী নেওয়া শেষ হলে তারা ফিরে যাবেন ফোর্থ ফ্লোরে মিসেস প্যাট্রসিয়ার ফ্ল্যাটে। প্যাটের দিকে তাকিয়ে ইনসপেক্টর বলেন, এই ভদ্রমহিলাকে দেখা যাচ্ছে যিনি একটু আগে ব্যস্ত ছিলেন তাকে তিনি অনুরোধ করেছেন প্রত্যেকের জন্য একটা করে ওমলেট তৈরী করতে। পোয়র বলেন, তিনি ওমলেটের খুব ভক্ত। তাই মঁসিয়ে ইনসপেক্টর তার এখানকার কাজ শেষ হলে তিনি বরং ওপরের তলায় গিয়ে যাকে যা প্রশ্ন করার করবেন।
পুলিশ ইনসপেক্টর পোয়ারোর প্রস্তাবে সম্মতি জানালেন।
মিঃ এরকুল পোয়ারো চারজন যুবক যুবতীকে নিয়ে ফিরে গেলেন প্যাটের ফ্ল্যাটে।
৪-৬. চারজন যুবক যুবতী
চারজন যুবক যুবতীকে নিয়ে পোয়ারো চলে গেলে ইনসপেক্টর তার দুই সঙ্গী কনস্টেবল এবং ডিভিশনাল সার্জেনকে নিয়ে তাদের তদন্তে কাজে লেগে গেলেন।
ডিভিশনাল সার্জেনকে নির্দেশ দিলেন ভদ্রমহিলার মৃত্যুর কারণের সময় নির্ধারণ করতে। সে হাঁটু মুড়ে মৃতদেহের পাশে বসে মৃতার একটা হাত ধরে নাড়ী দেখতে লাগলেন। যদিও তিনি মৃত তবুও পুলিশী নিয়মানুযায়ী মৃতার নাড়ী টিপে দেখতেই হয়। সত্যি সে মৃত কিনা। অনেক সময় দেখা গেছে ডাক্তার মৃত ব্যক্তির ডেথ সার্টিফিকেট দেবার তিন ঘণ্টা পরে তার প্রাণ আবার ফিরে আসতে দেখা গেছে। নাড়ী টিপে দেখল যে, ভদ্রমহিলা যে মৃত তাতে কোন সন্দেহ নেই। তার মৃত্যুর কারণ হলো খুব কাছ থেকে তাকে গুলি করে মারা হয়েছে। গুলিটা ফুসফুস বিদ্ধ হয়েছে।
ডিভিশনাল সার্জেন তার পর্যবেক্ষণের রিপোর্ট লিখে নেয়।
এবার পুলিশ ইনসপেক্টর স্বয়ং তার দেহ পরীক্ষা করতে ব্যস্ত হলেন। একটা ছবিও তোলা হলো। ছবিটা হলো মৃতব্যক্তির ঘরের আসবাবপত্রের বিশেষতঃ সেন্টার টেবিলের। টেবিলে পাতা রক্তমাখা টেবিল ক্লথ তিনি চালান করলেন তার ব্রীফকেসে। সেটিকে ফরেনসিক বিভাগে পাঠাতে হবে যদি সেটার ওপর আততায়ীর কোন হাতের ছাপ পাওয়া যায়। তার অনুমান খুন করার পর রক্ত মোছর জন্য এই টেবিল ক্লথটি খুনী ব্যবহার করেছে। এই টেবিল ক্লথের কাছে গুলি করার পরে মৃতদেহটিকে জানালার ধার সরিয়ে ফেলা হয়।
অন্যদিকে প্যাটের ফ্ল্যাটে তখন জোর কদমে মিঃ পোয়ারোর সঙ্গে আলোচনা চলছিল। পোয়ারো তাদের একের পর প্রশ্ন করে যাচ্ছিলেন। নিজের কার্য সিদ্ধির কখনও তাদের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিলেন আবার প্রয়োজন মতো নিজের প্রশ্ন রাখছিলেন। তারা তাদের সাধ্যমতো উত্তর দিয়ে চলছিল।
মঁসিয়ে পোয়ারো, প্যাটের মনে হলো, তিনি একজন নিখাদ ভালো মানুষ, তাদের অতি আপনজন। তার মধ্যে নেই কোন ভড়ং, নেই কারচুপি বা শঠতা, যখন যা মনে আসে তখন তা বলে ফেলেন। এই ধরনের মানুষজন তার খুব পছন্দ। তার মতো মানুষের জন্য সব কিছু করা যায়। তাই সে মঁসিয়ে পোয়োররাকে একটা চমৎকার ওমলেট উপহার হিসাবে খাওয়াল।
অনেকক্ষণ প্যাটের মুখের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকলেন পোয়ারো। প্যাট লজ্জায় মাথা নত করল।
তার লজ্জায় নত মুখ দেখে হাসি পেল পোয়ারোর। মনে মনে ভাবলেন, সব মেয়েদেরই এক রূপ পুরুষদের দৃষ্টির পড়লে সে যত সুন্দরী বা যত স্মার্ট হোক না কেন লজ্জা ঢেকে রাখতে পারে না।
ঠিক আসে সেই ভালো বলে পোয়ারো একটু গলা কেশে বললেন, জানেন মাদমোয়াজেল, ঠিক তার মতো একজন সুন্দরী ইংরাজি তরুণীকে তিনি ভালোবেসেছিলেন। কিন্তু তার দুর্ভাগ্য যে, সে প্যাটের মতো রন্ধন পটিয়সী ছিল না। তাই মনে ভাবলেন যা কিছু ঘটেছে তা ভালোর জন্য ঘটেছে।
কৌতূহলী হয়ে তার দিকে তাকায় জিমি ফকনার। হাসি এবং ঠাট্টা করে সে পোয়ারোর কথাটা হালকা করতে চাইল। পরে সবাই দুঃখ ভুলে গেল।
প্যাটের পরিবেশন করা ওমলেট খেয়ে সবাই প্রশংসায় পঞ্চমুখ। তখন পুলিশ ইনসপেক্টরের পায়ের আওয়াজ শোনা গেল। কনস্টেবলকে মৃতদেহের সামনে রেখে ডাক্তারকে সঙ্গে নিয়ে ইনসপেক্টর উপরে এলেন।
পোয়ারো জিজ্ঞাসা করলেন, মঁসিয়ে রাইস, কি রকম মনে হলো কেসটা?
উত্তম প্রস্তাব মঁসিয়ে পোয়ারো। খুব পরিষ্কার কে বলেই মনে হচ্ছে। খুব একটা অসুবিধায় পড়তে হবে না। তবে খুনীকে ধরতে খুব বেগ পেতে হবে। এখন প্রশ্ন হলো যে কি ভাবে মৃতদেহটা আবিষ্কৃত হলো?
ভদ্রমহিলার মৃতদেহ আবিষ্কারের ঘটনার কথা জানতে চাইলে ভেনোডেন ও জিমি পরস্পর মুখ চাওয়া-চাওয়ি করে। বুঝতে পারল পুলিশের কাছে কিছুই গোপন করা যাবে না। আবার বোস কোন কিছু বলা যাবে না। এই জবানবন্দী দেবার ব্যাপরে খুব সতর্ক এবং সংগঠিত হতে হবে তাদের।
অন্যদিকে ইনসপেক্টর তখন ভর্ৎসনার দৃষ্টিতে তাকালেন প্যাটের দিকে। বললেন, মিস তার লিফটের দরজা খুলে রাখা উচিত কাজ হয়নি।
প্যাট ক্ষমা চাওয়ার ভঙ্গীতে বলল, সে মিঃ রাইসকে কথা দিচ্ছে ভবিষ্যতে এই ধরনের ভুল আর কখনো করবে না। ভয়ার্ত কণ্ঠে বলল, নীচে ফ্ল্যাটে মিসেস গ্রান্টের মতো কেউ তার ফ্ল্যাটে ঢুকে তাকে খুন করে যেতে পারে।
কিন্তু তারা লিফটে আসেনি। প্যাটের হয়ে জবাব দিলেন মিঃ পোয়ারো। তাই নাকি? এটা কি তার আবিষ্কার মঁসিয়ে রাইস। তিনি যদি তার মূল্যবান আবিষ্কারের কথা খুলে বলেন সবাইকে তবে খুব উপকার হবে।
আমার যতটুকু জানা উচিত ছিল। বলতে হবে তিনি তা জানতে ব্যর্থ। কিন্তু তার মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে তিনি এই ব্যাপারে আলোকপাত করতে পারবেন মঁসিয়ে পোয়ারো।