আমাকে আপনি? বলে বিস্ময় প্রকাশ করল প্যাট।
উত্তরে পোয়ারো বলেন, সেই রকম কোন কারণ এখনও ঘটেনি। তবে আগে তাকে বলে দিলেন, গোয়েন্দা পুলিশের চোখে সবাই অপরাধী। আবার এখন থেকে সবার রাতের ঘুম কেড়ে নিতে পারেন। মাদমোয়াজেল, আপনার। মিঃ জিমি আপনার। আপনাদের বন্ধু মিঃ ভেনোডেন বেইলি, এমন কি মাদমোয়াজেল লিড্রেডের।
ঘরে নেমে আসে জমাট নীরবতা। সেই জমাট নীরবতা ভঙ্গ করে একটা নাক ডাকার আওয়াজ কানে এল।
আর অস্ফুট স্বরে বললেন পোয়ারো, এতক্ষণে একটা পরিবেশ পাওয়া গেল।
কিচেন পেরিয়ে একটা ছোট প্যাস্ট্রির সামনে হাজির হলেন পোয়ারো। ছোট্ট একটা দরজা। দরজা খুলে সুইচ টিপে দেখে একটা কুকুর থাকার বাসস্থান হিসেবে তৈরী করেছে ফ্ল্যাট মালিক। মেঝের মস্ত জায়গা জুড়ে রয়েছে একটা খাট। বিছানায় শুয়ে রয়েছে সুন্দর চিবুকের একটি মেয়ে। মুখটা পিছন দিকে ফেরানো। মুখটা ভোলা। শান্ত ভাবে নাক ডাকছে সে।
ঘরের আলো নিবিয়ে দিয়ে বেরিয়ে এলেন পোয়ারো। অন্যরা তাকে অনুসরণ করল।
বললেন, পুলিশ না আসা পর্যন্ত তাকে জাগানো হবে না।
এরপর তিনি বসার ঘরে চলে গেলেন। তাদের সঙ্গে ভেনোডেনের দেখা হলো।
পুলিশ এখুনি এসে পড়বে। তারা যেন কেউ কিছু স্পর্শ না করে।
তারা কিছুই স্পর্শ করবে না। মাথা নেড়ে সায় দেন পোয়ারো। নেতিবাচক উত্তর দিলেন পোয়ারো–তারা কেউই স্পর্শ করবে না। শুধুমাত্র পর্যবেক্ষণ করবে। এরপর ঘরের চারদিকে দেখতে থাকেন তিনি।
মিলড্রেড ভেনোডেনের সঙ্গে এসে উপস্থিত হলো। চারজন যুবক যুবতী গভীর আগ্রহ সহকারে তাদের গতিবিধি লক্ষ্য করল। মুখে তাদের কোন শব্দ নেই। আচমকা মনে হলো তারা যেন পোয়ারোর কর্মপদ্ধতিতে সম্মোহিত হয়ে গেছে। তার কাজের প্রতিবাদ বা আপত্তি জানানোর ভাষা হারিয়ে ফেলেছে।
পোয়ায়োর মন্তব্যটা আমাদের কাছে সবাই অপরাধী আবার সবাই নির্দোষ হতে পারেন। এই জাতীয় উক্তিগুলো তাদের রাতের ঘুম কেড়ে নেবার পক্ষে যথেষ্ট। প্রত্যেকে দুশ্চিন্তামুক্ত হবার পথ খুঁজতে লাগল।
একটা ব্যাপার ভেনোডেনের মগজে কিছুতেই ঢুকছে না, যেখানে মৃতদেহটা পড়ে রয়েছে সেটার ধারেকাছে পর্যন্ত যায়নি। তবুও কি করে তার হাতে রক্ত লাগল? সপ্রশ্ন গলায় বলল তোনোডেন।
প্রিয় তরুণ বন্ধু, আয়নায় সামনে গিয়ে দাঁড়ালেও তিনি দেখতে পাবেন এর উত্তরটা রয়েছে তার মুখে। বিস্ময়াবিষ্ট চোখে তিনি যেটার দিকে তাকিয়ে রয়েছেন সেটার কি রং।
তির্যক ভাবে প্রশ্ন করেন পোয়ারো, কিন্তু একটা ব্যাপারে তিনি জোর দিয়ে বলতে পারেন ভদ্রমহিলা খুন হবার আগে তার রং আর যাই থাকুক না কেন লাল ছিল না। আর নিঃসন্দেহে বলতে পারেন টেবিলটার উপর হাত রেখেছিলেন। ভালো ভাবে খেয়াল করে দেখুন তো?
হ্যাঁ, তিনি তাই করেছিলেন। উত্তরটা যেন তার জানাই ছিল। এমন ভাবে উত্তর দিল সে।
মাথা নেড়ে পোয়ারো বলল, আর তিনি টেবিলের ওপর ঝুঁকে পড়ে এবং তার উপর গভীর লাল দাগ টেনে দিয়েছিলেন।
এটাই তার অপরাধের চিহ্নিত হয়। দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে বলেন–পরে মৃতদেহটা সরিয়ে ফেলা হয়।
তারপর উঠে দাঁড়িয়ে ধীরে ধীরে ঘরের চারদিকে নজর বুলোত লাগলেন। একপাও নড়ল না তা সত্ত্বেও তাদের চারজনের ধারণা তার তীব্র দৃষ্টির সামনে অদেখা কিছুই রইল না।
এরকুল পোয়ারোর হাবভাবে বোঝা গেল তাদের অনুমান মিথ্যে নয়। তৃপ্তির সঙ্গে মাথা নাড়ার সঙ্গে একটা ছোট্ট দীর্ঘশ্বাসও তিনি ফেললেন। আমি দেখতে পাচ্ছি বলে হঠাৎ হেসে ফেললেন।
কৌতূহল চাপতে না পেরে ভেনোডেন বলল, কি দেখতে পেলেন তিনি?
পোয়ারো কথার জের টেনে বলল, আপনারা যা নিঃসন্দেহে অনুভব করেছেন ঘরটা ফার্নিচারে ঠাসা।
দুঃখের মধ্যেও হাসলো ভেনোডেন। এ বিষয়ে তর্কের খাতিরে একটা দর কষাকষি করেছিল। প্রথমে আসতে রাজী হয়নি স্বীকার করলে সে। প্যাটের ঘরের তুলনায় এই ঘরের সব কিছুই আলদা। কিন্তু প্রথমে অসুবিধা হলেও এখন বোঝা যাচ্ছে সব কিছুই ছিল।
না সব কিছুই নয়, বাধা দিয়ে উঠলেন।
প্রশ্নভরা চোখে তাকালো ভেনোডেন।
কৈফিয়ত দেবার ভঙ্গীতে পোয়ারো বলেন, কিন্তু কিছু জিনিস সবসময় নির্দিষ্ট থাকে। যেমন, দরজা, জানালা, ফায়ার প্লেস, এখানে যা রয়েছে নীচের ফ্ল্যাটেও তাই থাকবে।
মিলড্রেড বলল, সেটা কি একেবারে চুলচেরা হিসাব হয়ে গেল না।
হ্যাঁ, কেন স্থির পরিসংখ্যান দিতে গেলে সঠিক তথ্য দেওয়া উচিত। তারই একটা ছোট্ট উদাহরণ। এরপরেও কি বলা যায় সেটা নিছক খ্যাপামী।
মিলড্রেড কি বলতে গিয়ে থেমে যায়। চুপ করে কান খাড়া করে রইল সবাই।
সিঁড়িতে বেশ কয়েক জোড়া পায়ের শব্দ শোনা গেল। একটু পরেই তিনজন নোক ঘরে এসে উপস্থিত হলো। তাদের মধ্যে একজন পুলিশ ইনসপেক্টর, একজন কনস্টেবল, একজন ডিভিসনাল সার্জেন।
পুলিশ ইনসপেক্টর পোয়ারোকে চিনতে পারলেন। এগিয়ে এসে সশ্রদ্ধ অভিবাদন জানালেন। তিনি অন্য সাথীদের দিকে এক এক করে তাকালেন।
ইনসপেক্টরের সঙ্গে সবার পরিচয় করিয়ে দিলেন পোয়ারো। পরিচয় পর্ব শেষ হবার পর সবার দিকে ফিরে তাকালেন ইনসপেক্টর। বললেন, আপনাদের সবার জবানবন্দী তিনি নিতে চান।
তার কথায় বাধা দিয়ে পোয়ারো বলেন, তার একটা ছোট আর্জি ছিল।
বেশ তো বলুন বলে সম্মতি জানালেন পোয়ারো।