এরপর তারা কি করবে। তাদের করণীয় কি? জিমি জিজ্ঞাসা করল। এখান থেকে ছুটে পালাবে, না, প্যাটের ফ্ল্যাটে গিয়ে পুলিশকে ফোন করবে নাকি রাস্তায় পেট্রোল ম্যানকে ডেকে আনবে? আবার ভালো পেট্রোল ম্যানের পিছনে অযথা ছোটাছুটি না করে প্যাটের ফ্ল্যাটে গিয়ে ফোন করাই উচিত। তাতে সংবাদদাতার নাম উদ্ধার করা যাবে। এরপর দ্রুত পুলিশী ব্যবস্থাও হবে। যাতে আততায়ী মৃতদেহ সরিয়ে ফেলতে না পারে। এবার তবে যাওয়া যাক।
ফিরে যাবার জন্য প্রস্তুত হতেই কিচেনের পথে পা বাড়াল আর সঙ্গে সঙ্গে বাধা পেল ভেনোডেনের কাছ থেকে।
ও পথে নয় বন্ধু। তারা এখন মিসেস গ্রান্টের সদর দরজা দিয়ে বেরিয়ে যেতে চায় চোরের মতো পিছন দরজা দিয়ে যায়, বুক ফুলিয়ে সামনের দরজা দিয়ে না গিয়ে। আর রাতের চোরেরা লিফট ব্যবহার করবে না।
বেরোতে যাবার উপক্রম করতেই হঠাৎ দরজার সানে দাঁড়িয়ে পড়ে ইতস্ততঃ করল সে।– কি হলো জিমি আবার দাঁড়ালে কেন? প্রশ্ন করলো ভেনোড়েন।
ভেনোডেনের প্রশ্নে জিমি বললো, তাদের এই ভাবে এখান থেকে চলে যাওয়া উচিত হবে না। পুলিশ না আসা পর্যন্ত একজন এখানে থেকে সবকিছু না হয় করা উচিত।
ভেনোডেন বলল–কথাটা নেহাতই মন্দ বলো নি। মনে মনে তার প্রশংসার তারিফ করলো। ভেনোডডেন বলল, সে ঠিকই বলেছে, জিমিকে সেখানে রেখে ভেনোডেন প্যাটের ফ্ল্যাটে গিয়ে পুলিশ স্টেশনে ফোন করে আসবে। সে যাবে আর আসবে। বলে যেতে গিয়ে থমকে দাঁড়াল ভেনোডেন। ভাবল ফ্ল্যাটে একজন মহিলার মৃতদেহ পড়ে রয়েছে। সেটা আগলে রাখতে হয়তো জিমির ভয় হতে পারে।
উত্তেজিত হয়ে জিমি বলল, মরা মানুষকে তার কোন ভয় করে না। জীবন্ত মানুষ যে কোন মুহূর্তে হিংস্র হয়ে উঠতে পারে। এমনকি মানুষ খুনও করতে পারে। ঘাতক কোন কিছু শিকারের বাছবিচার করে না। কখনই চিন্তা করে না, তার সঙ্গে শিকারের সব মানুষের মধ্যে একটা পশুশক্তি আছে। নিষ্ঠুর দানব লুকিয়ে থাকে। তারাই হয়ে ওঠে বশে দানব নিষ্ঠুর ঘাতক। বন্ধু, সে নিশ্চিন্তে থাকতে পারে। মৃতদেহটি তার কোন ক্ষতি করতে পারবে না। দেরী না করে তাড়াতড়ি কাজ সেরে আসুক।
এক মুহূর্ত দাঁড়াল না ভেনোডেন। দুটি সিঁড়ি এক ধাপ এক সঙ্গে লাফিয়ে উঠে এল সে, ফোর্থ ফ্লোরে প্যাটের ফ্ল্যাটের সামনে। তেমনি দ্রুত হাতে টিপল বেল জোরে জোরে। এরকম ঘন বেল সে আগে কখনও টেপেনি। প্যাট বিস্মিত। তাড়াতাড়ি কিচেনে থেকে প্যাট দরজা খোলার জন্য বেরিয়ে এলো। দরজা খুলতেই ভেনোডেনকে এত উত্তেজিত অবস্থায় দেখে প্যাটের সুন্দর মুখে একটা কালো ছায়া নেমে এল। তার সমস্ত রূপ নিমেষে বুঝি উধাও হয়ে যায়। প্যাট তার নোংরা হাত মুখে নিয়ে মুখে নিয়ে গালে গাল রাখে। তার মুখটা তখন ফ্যাকাসে হয়ে উঠেছে। রক্ত। কে যেন চোপার দিয়ে বুঝি বা শুষে নিয়েছে। বিস্ময়ে তার চোখ দুটি বিস্ফারিত।
ভেনোডেন একা একা ফিরে এলো। জিমি কোথায়? সেই মুহূর্তে তাকে রহস্যময় পুরুষ বলে মনে হয়। এমন সিরিয়াস প্যাটকে আগে দেখেনি।
অধৈর্য হয়ে প্যাট জিজ্ঞাসা করল–চুপ করে আছে কেন সে? কোন বিপদ ঘটেছে কি? প্যাটের হাত দুটো নিজের হাতে নিয়ে ভেনোডেন বলল, না না, জিমির কোন বিপদ হয় নি। ওপরের ফ্ল্যাটে নেহাতই আশ্চর্যজনক ঘটনা ঘটে গেছে।
আমরা মানে! জিমিও কি তার সঙ্গে ছিল।
হ্যাঁ, ছিল বসে, সায় দিল ভেনোডেন।
তারা কি আবিষ্কার করল?
উত্তরে বলল–এক মৃত মহিলা। শুনে চমকে উঠল। প্যাট হাঁপাতে হাঁপাতে বললো, কি ভয়ঙ্কর। তিনি অজ্ঞান হয়ে যাননি তো?
না, তার প্রাণহীন দেহটা দেখে কেন জানি না তাদের মনে হয়েছে মৃত্যুটা স্বাভাবিক নয়।
স্বাভাবিক নয়। প্যাটের চোখ আরো বিস্ফারিত হলো। তবে কি তিনি আত্মহত্যা করেছেন? না, সেটাও নয়।
তাকে হত্যা করা হয়েছে নিষ্ঠুর ভাবে। ভেনোডেনকে বলল, এ কি বলছে সে। ভয়ার্ত চোখে তাকায় প্যাট। ভয়ে তার হাত-পা অবশ হয়ে যাচ্ছে।
ভেনোডেন জানে ভয়ঙ্কর ঘটনার খবর সে সহ্য করতে পারবে না, এটা একটা জঘন্য নৃশংস ব্যাপার।
প্যাটের হাতে ভেনোভোনর হাত। স্বেচ্ছায় প্যাট তার হাত দুটো তার হাতের মুঠোয় ধরে রেখেছিল। এমন কি ভয়ে হাত দুটি জড়িয়ে ধরেছিল তখন।
পরক্ষেণই ভেনোডেনের চিন্তা ভাবনা জিমি ফকনারেকে ঘিরে ধরে। জিমির কথা তার মনে পড়ে যায়। সে এখন নীচের ফ্ল্যাটে। সে ঘরে অপেক্ষা করছে। এই বোধটা তাকে চিন্তিত করে তুলল। একজন মৃতদেহ আগলে বসে রয়েছে। আর সে এসে রোমান্স করছে বান্ধবীর সঙ্গে।
বাস্তবে ফিরে এল ভেনোডেন। প্যাটের ধরা হাত ছাড়াবার জন্য ব্যস্ত হয়ে উঠল। বললো, প্রিয়তমা প্যাট, এখনি তাদের পুলিশে ফোন করা প্রয়োজন।
তারা কথা বলছিল প্যাটের সামনে দাঁড়িয়ে। তোনোডেন তখন প্যাটের ফ্ল্যাটে প্রবেশ করেনি।
প্যাটে তাকে পথ করে দিলো। প্যাটের ফ্ল্যাটে প্রবেশ করতে যাবে ঠিক সেই সময় অপরিচিত কণ্ঠস্বর শুনতে পেল। আগন্তক বলল–মঁসিয়ে ঠিকই বলেছেন মাদমোয়াজেল, তাকে পুলিশে খবর দিতে দিন। তারা যখন পুলিশের আগমনের জন্য অপেক্ষা করবেন সেই ফাঁকে তাদের তিনি সহযোগিতা করবেন।
ফ্ল্যাটে প্রবেশ করার জন্য এগোতে গিয়ে সামনে থমকে দাঁড়িয়ে পড়ে তারা। তারা পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখল অজানা কণ্ঠস্বর কোথা থেকে আসছে, দেখার জন্য তখনি তাদের নজর পড়ল ফিফথ ফ্লোরের উপর সিঁড়ির প্রথম ধাপে একজন লোককে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেল। তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য তিনি দাঁড়িয়ে ছিলেন। এবার নীচে নেমে এলেন।