ভেনোডেনের কথা শুনে অবাক চোখে তার দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ। টয়লেট থেকে ভেনোডেন হাত ধুয়ে এল। জিমি তার হাতে কোন কাটার দাগ জাতীয় কিছুই দেখতে পেল না। অথচ এটি আশ্চর্য ব্যাপার। এত রক্ত হাতে এল কি করে।
বড় অদ্ভুত ব্যাপার। রক্তের পরিমাণ যথেষ্ট। হাতে এত রক্ত কোথা থেকে এল ব্যাপারটাতে গূঢ় রহস্য আছে সেটা বুঝতে খুব সময় লাগলো না। যে অনুমান তারা করছিল যে ভদ্রমহিলা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন, এখন সেটা আর তাদের ঠিক অনুমান বলে মনে হচ্ছে না।
প্রশ্নগুলির সম্ভাব্য উত্তর ঠিক করে লাফিয়ে উঠল জিমি। রক্তটা নিশ্চয়ই ফ্ল্যাট থেকে এসেছে। তাছাড়া অন্য কিছু হতে পারে না। তার সম্ভাব্য উত্তরের জন্য নিশ্চিত হতে তার বন্ধুর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করল–রক্তটা যে ভদ্রমহিলার সে বিষয়ে সে কি নিশ্চিত?
ধীরে শান্ত নিশ্চিত ভাবটা ফুটিয়ে তুলে ধীরে ধীরে মাথা নাড়ল ভেনোডেন। বলতে গিয়ে গলাটা একটু কেঁপে গেল।
নীরবে একজন একজনের মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। তাদের একটাই চিন্তা, কোথা থেকে এত রক্ত এল। ভদ্রমহিলার ফ্ল্যাটে এত রাত্রে অন্য কারোর উপস্থিতির কথা শোভন নয়। জিমিই পরবর্তী পদক্ষেপের কথা বলল।
দ্বিধাগ্রস্ত ভাবে সে বলল, তাদের উচিত এগুলি আনেস্টিনের ফ্ল্যাটটা ভালো করে পর্যবেক্ষণ করা উচিত। সবকিছুই ঠিক মতো আছে কিনা, না অন্য কিছু সেটা তাদের জানা অত্যন্ত প্রায়োজন।
তার কথায় সায় দিল ভেনোডেন। সহ টেনেন্ট হিসাবেও তাদের কর্তব্য রয়েছে। ইতস্ততঃ করে বলল, মেয়ে দুটির কি হবে। ওদের কিছুই জানানো হবে না। কিন্তু তারা আবার চলে গেলে সন্দেহ বেড়ে যাবে।
সেটাই তো স্বাভাবিক। সম্মতির সুরে জিমি বলল। আরও বলল, সে একটা সমাধানের রাস্তাও ঠিক করে রেখেছে। তাদের কাজের মধ্যে ব্যস্ত রেখে দ্বিতীয় অভিযানটা অনায়াসে করে দিতে পারবে।
প্যাট এসে বসল বসার ঘরে। প্যাটকে দেখেই জিমি পাকা ছেলের মতো আবদার করে বলল–ভীষণ খিদে পেয়েছে। তাদের খাবারের কোন ব্যবস্থা হবে না?
নিশ্চয়ই বলে মৃদু হেসে প্যাট জিজ্ঞাসা করলো, সে তো ওমলেট খেতে খুব পছন্দ করে। চলবে নাকি?
চমৎকার হয় তাহলে। লাফিয়ে উঠলো জিমি। তার কারণ মেয়ে দুটিকে কাজে ব্যস্ত রেখে তাদের কাজ হাসিল করার সুবর্ণ সুযোগ পেয়ে গেছে ভেবে। প্যাটের কথায় সম্মতি জানিয়ে বলল-তা হোক।
ভেনোডেন তার কথায় সায় দিয়ে বলল–ওমলেট আর পাউরুটি দারুণ জুটি। জিমির মতো তারই একই চিন্তা মেয়েদুটিকে ব্যস্ত রাখা।
প্যাট আর দাঁড়ল না। এ্যাপ্রোন পরে কিচেনের দিকে রওনা হলো। মেলড্রেডও তাকে অনুসরণ করল।
অপসৃয়মাণ দুটি যুবতীর দিকে তাকিয়ে জিমি উঠে দাঁড়াল। বলল, চলো বন্ধু, তাদের দ্বিতীয় অভিযানে এবার নেমে পড়া। যাক, মেয়েদুটি কাজে ব্যস্ত থাকবে অনেকক্ষণ। এই সুযোগেই তারা কাজ সেরে ফিরে আসবে।
তারপরে কোন কথা নয়। শুরু কাজ। আগের পথেই তাদের যাওয়া উচিত। বলতে বাধা নেই, গত বারের ভুল এবার হবার সম্ভাবনা নেই। অস্থির মন নিয়ে লিফটে চড়ে বসল। এক সময়ে তারা থার্ড ফ্লোরে এসে পৌঁছাল।
আগের মতোই মিসেস গ্রান্টের কিচেনের দিকে এগিয়ে গেল তারা। খুব একটা অসুবিধায় পড়তে হয়নি তাদের। কিচেনের মধ্যে গিয়ে ঘরে প্রবেশ করলো তারা। আলোর সুইচটা টিপতেই আলোর বন্যা বয়ে গেল।
ঘরের ভেতরটা কেমন যেন ওলোট পালোট হয়ে গেছে। বিশৃঙ্খলার ভাব রয়েছে কিচেনে। প্রতিটি ইট, কাঠ এবং চেয়ার টেবিলে। সম্ভাব্য রক্তের উৎস কোথায়, খুঁজতে লাগল তারা।
হঠাৎ ভয়ঙ্কর উত্তেজিত হয়ে উঠল তারা। কাঁপছিল থর থর করে। মুখ দিয়ে কথা সরছিল না। শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে ছিল সামনের দিকে। ভয়ার্ত চোখ। সেই ভয়ের উৎস খুজতে ফ্যাল ফ্যালজত হয়ে উঠল সম্ভাব্য রক্তের
চকিতে তার আঙুল বরাবর তাকালো ভেনোডেন। জিমির ক্ষেত্রে অপর ভয়াবহ প্রতিক্রিয়া। কিচেন লাগোয়া ভারী পর্দার নীচে একটি মহিলার পা। পায়ে এক ধরনের বিশেষ চামড়ার জুতো।
দ্রুত পর্দা সরিয়ে দেখতে পেল এক মহিলার মৃতদেহ মেঝের উপর বিশৃঙ্খলা অবস্থায় পড়ে রয়েছে। অন্ধকারে বুঝতে অসুবিধা হলো না যে তার শরীরে প্রাণের স্পন্দন নেই। তাকে হাত বাড়িয়ে তুলবার উপক্রম করতেই ভেনোডেন চিৎকার করে বাধা দিয়ে উঠল–পুলিশ না আসা পর্যন্ত স্পর্শ করা অনুচিত।
কথাটা জিমির একেবারেই মনে ছিল না। মৃত্যু যে এত ভয়ঙ্কর তার জানা ছিল না। তার যেন বোধ শক্তি হারিয়ে গিয়ে সব ওলোট পালোট হয়ে যাচ্ছে। উনিই বোধ হয় মিসেস আনেস্টিন গ্রান্ট মনে হয়।
ভদ্রমহিলার মুখের দিকে তাকিয়ে আন্দাজে অনুমান করল; সেই রকমই মনে হচ্ছে। ফ্ল্যাটে অন্য লোকের কোন সাড়া শব্দ নেই। তারা নিশ্চয়ই হাসিখুশীতেই মজে রয়েছে।
সারা ফ্ল্যাটটা নীরব চাদরে যেন ঢাকা। তারা যে অন্যায় ভাবে ফ্ল্যাটে প্রবেশ করেছে তার প্রতিবাদ করার মতো কেউ নেই। এটাই আশ্চর্যের ব্যপার।
ভেনোডেনের মাথায় অন্য চিন্তা। তারা কি ভুতুড়ে। ফ্ল্যাটে ঢুকে পড়েছে? ভদ্রমহিলার জ্ঞান ছিল। রক্ত মাংসের মানবী ছিলেন কিনা? এমনও তো হতে পারে তারা বলে গেল মৃতদেহটি উধাও হতে পারে। আততায়ী তারা এসে পড়ায় মৃতদেহ সরাতে পারেনি। এই ফ্ল্যাটেরই অন্য কোথাও গা ঢাকা দিয়ে রয়েছে।