জিমি হঠাৎ জিজ্ঞাসা করল, কি হলো ভেনোডেন।
তার বিশ্বাস রাত্রি নামলেই ঘরগুলিকে বন্ধ করে দেওয়া হয়। এখন ওর সব কিছুই মনে হচ্ছে অন্য জায়গায়। চেয়ার টেবিলগুলি ঠিক মতো জায়গায় নেই।
ঠিক সেই মুহূর্তে একটা সুইচের সন্ধান পাওয়া গেল। সুইচ টিপতেই আলোয় ভরে গেল। আর ঠিক পরেই ভয়ে আতঙ্কে দুজনে দুজনের মুখের দিকে তাকালো। কি সাংঘাতিক ব্যাপার। এ কি করে সম্ভব? একটা প্রচণ্ড ব্যবস্থা তাদের তাড়িয়ে নিয়ে এলো এই জায়গায়। ঘরটা প্যাটের বসার ঘর। ভুল ফ্ল্যাটে ঢুকে পড়েছে তারা।
তারা দুইজনে ফ্ল্যাটটা জরিপ করতে গিয়ে দেখে ঘরটা প্যাটের ঝলমলে আসবাপত্রে ঠাসা। অসাবধান হলেই অন্ধকারে হোঁচট খেতে হবে।
আলোই সম্ভাব্য বিপদের হাত থেকে বাঁচিয়েছে। ভেনোডেনের অবস্থা দেখে চেয়ার টেবিলগুলোও বোধহয় বিদ্রূপ করেছে। ঠিক মাঝখানে গোল টেবিল। আবরণে ঢাকা। এই মুহূর্তে ঘরের মালিকের আচার ব্যবহার অনুমান করা দুঃসাধ্য। নীরবে বিস্মিত। টেবিলটার উপর তাকিয়ে দেখল একগুচ্ছ চিঠি পড়ে রয়েছে।
প্রাপকের নামটা পাড়তে গিয়ে এক বুক নিঃশ্বাস ফেলে বলল, মিসেস আনোটন গ্রান্ট। তারপরেই আবছাজনক দৃষ্টিতে বলল–সর্বনাশ জিমি। ভদ্রমহিলা বোধহয় তাদের আসার খবর পেয়ে গেছেন।
কিন্তু আশ্চর্যের কথা এই যে তাদের আসার সংবাদ পেয়েও জিমি গভীর ঘুমে অচেতন। চোর ডাকাতের কথা ভেবেই তার ছুটে আসা উচিত ছিল। ভয়ে জিমি বলল-ব্যাপারটা খুব সুবিধের নয়। ভেনোডেন তাদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এখান থেকে চলে যাওয়া উচিত। এক মূহুর্তও নয়। শেষে পুলিশী ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েতে হতে পারে।
দ্রুত ঘরের আলো নিবিয়ে বেরিয়ে আসে তারা। লিফটে পা রেখে নিশ্চিন্ত হলো। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানাল নতুন কোন ঝামেলায় তাদের জড়িয়ে পড়তে হয়নি বলে।
জিমি সন্তোষের সুরে বলল, এইরকম গাঢ় ঘুমের আনেস্টিনের হয়তো গভীর ঘুমের অভ্যাস আছে। কিন্তু এত গভীর ঘুম হলে চোর ডাকাত পড়ে তার সর্বস্ব লুট হয়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে সকালে উঠে দেখবেন তিনি সর্বস্বান্ত হয়ে গেছেন।
ভেনোডেন চিন্তা করল, এমন মারাত্মক ভুল তাদের কি করে হলো। ফোর্থ ফ্লোরে না গিয়ে থার্ড ফ্লোরে তারা কিভাবে পৌঁছলো। একটা সম্ভাবনার কথা মনে পড়ছে। বলল, সে বুঝতে পারছে কি ভাবে তাদের ফ্লোর গুনতে ভুল হলো।
কৌতূহল প্রকাশ করে জিমি বলল, সেটা কি রকম?
উত্তরে ভেনোজেন বলল, তারা লিফট চালু করে কোথা থেকে।
কেন গ্রাউণ্ড ফ্লোর থেকে। নিশ্চিন্ত ভাবে জবাব দেয় জিমি।
না। তবে কোথা থেকে? তার স্পষ্ট মনে আছে লিফট চালু হয়েছে বেসমেন্ট থেকে। তাই তাদের গুনতেও ভুল হয়ে যায়।
.
০২.
সুইচ টিপতেই লিফট চলতে শুরু করে দিল। এবার তারা সঠিক পথেই যাচ্ছে। জিমি আন্তরিক ভাবেই সেটা আশ্বস্ত করল। ফোর্থ ফ্লোরে এসে নেমে পড়ল। তারপর প্যাটকে বলল, আবার বিস্ময়কর ঘটনা ঘটলে সহ্য করতে পারবে না।
জিমির আশংকা অমূলক নয়। সুইচ টিপতেই উজ্জ্বল আলোতে ঘর ভরে গেল। চোখের সামনে প্যাটের কিচেন। কিচেন পার হয়ে তারা সামনের ঘরের দিকে এগিয়ে গেল। মিনিট খানেক পরে ফ্ল্যাটের প্রবেশ পথের দরজা খুলতেই দেখা গেল দুটি তুরুণী অপেক্ষা করছে।
বিরিক্তি প্রকাশ করে প্যাট বলল–তারা অনেক সময় ব্যয় করেছে। মিলড্রেড আর সে দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষা করছে।
আমরা দুঃখিত বলে তাদের দারুণ মজার অভিযানের কথা শোনাল। তবে অভিযানের ভয়ঙ্কর একটা ঝুঁকিও ছিল। অনধিকার প্রবেশের জন্য ধরা পড়লে তাদের জেলের ঘানি টানতে হত।
মজাদার অভিযান। পুলিশ স্টেশন। তারা অপরাধী হতে পারত। এসব কি কথা বলছে ভেনোডেন? ঠিক সে তার ফ্ল্যাটে ঢুকতে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলো প্যাট। বসার ঘরে আলো জ্বাললো প্যাট। দৃষ্টিতে তার প্রতিজ্ঞার আভাস। দুটি যুবকের অভিযানের কাহিনী না শোনা পর্যন্ত তার বিস্ময় কাটলো না। সামনের দুটি চেয়ারে দুজনকে বসতে বলল। আর মিলড্রেড বসল তার পাশে।
ভেনোডেনকে তাদের অভিযানের গল্প করতে অনুরোধ করল। সে তার ধৈর্য্য ধরে থাকতে পারছে না।
তাদের অভিযানের বর্ণনা শুনেত শুনতে মাঝে মাঝে উত্তেজিত হয়ে উঠেছিল আর মন্তব্য করল, বিস্ময়ের ভাব প্রকাশ পাচ্ছিল। বলল, কি ভয়ঙ্কর ভুল। এই ভুলের মাশুল তাদের ঠিক গুনতেই হতো।
এরকম মারাত্মক ভুলের সূত্র সে বার করতে পেরেছে। আসলে তারা বেসমেন্ট থেকে যাত্রা শুরু করে এবং থার্ড ফ্লোরকে প্যাটের ফ্লোর মনে করে মিসেস গ্রান্টের ফ্ল্যাটে ঢুকে পড়ে।
প্যাট মন্তব্য করল, ভদ্রমহিলা যে তাদের হাতে নাতে ধরে ফেলেনি তার কারণ ঘুমুলে বৃদ্ধার কোন জ্ঞান থাকে না। পরশ্রীকাতর তিনি, এটা বয়সের দোষ। আজ সকালে তিনি প্যাটের সঙ্গে সাক্ষাতে ইচ্ছুক। মনে হয় কোন অভিযোগ করবেন। যতদূর মনে হচ্ছে পিয়ানো নিয়ে। যারা পিয়ানো বাদন সহ্য করতে পারে না তাদের সেখানে থাকা উচিত নয়। হঠাৎ ভেনোডেনের হাতের দিকে তাকাতে গিয়ে বলল–তার হাতে কোন চোট লাগে নি তো?
কেন, প্রশ্ন করতেই বলল, তার হাত ভর্তি রক্ত। টয়লেটে গিয়ে হাত ধুয়ে ফেলতে বলল।
এই প্রথম নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে বিস্মিত হয়ে ভাবল এত রক্ত এল কোথা থেকে। হাত কোন চোট বা আঘাত লাগেনি, তার হাত ভর্তি রক্ত কেন। ভৌতিক কাণ্ড বা শারীরিক। এই সব প্রশ্নে না গিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসতেই জিমির কথায় অবাক হলো-তার হাতে যে পরিমাণে রক্ত দেখা যাচ্ছে তাতে চোট বা আঘাত পাবারই কথা। কিন্তু সে কি চোট পেয়েছে কোথাও।