হঠাৎ নামটা মনে পড়ে গেল প্যাটের। সে কি সার্ভিস লিফটের কথা বলছে। হ্যাঁ তার মনে পড়েছে নামটা কিন্তু সেটা তো তারের বাক্সের মতো জিনিস।
ভেনোডেনের দুটো চোখ চকচক করে উঠল। খুশিতে বলল, এতক্ষণে একটা উপায় বের করা গেল।
মেলড্রেডের পরামর্শে তার খুশীর রেখা হঠাৎ মিলিয়ে গেল। মেলড্রেড ভীষণ ভাবে নিরুৎসাহ করে তুলল।
প্যাটের কিচেন হয়তো ভিতর থেকে বন্ধ থাকতে পারে।
মেলড্রেডের পরামর্শ নাকচ করে দেয় ভেনোডেন, সেটা বিশ্বাস করা ঠিক হবে না।
জিমি বলল, প্যাটের কিচেনের কথা সে বলছে না। তারা তো প্যাটের স্বভাব সম্পর্কে ভালো মতোই জানো। কখনও ঘরে তালা দেয় না আর ঘরে খিলও দেয় না।
প্যাট মন্তব্য করল, তার মনে হয় না ঘরে খিল দেওয়া আছে।
আজ সকালে সে ডাস্টবিনের ময়লা পরিষ্কার করে আর দরজায় খিল দেয়নি। তারপর সেখানে কি হলো মনে করতে পারল না। তাদের চিন্তিত দেখাল চারজনকে। মুশকিল আসান যেন দূর অস্ত। তাদের মধ্যে একটা অসহায়তার ছাপ পড়েতে শুরু করে দিয়েছে। ব্যতিক্রম শুধু ভেনোডেনের। ভেঙে পরার শেষ মুহূর্তে সোজা হয়ে দাঁড়ায়। আগে বহুবার নানা দৃষ্টান্ত অতীত প্রায়। আজও ব্যতিক্রম হলো না।
ঠিক আছে, আজ রাতে তাদের কাছে এই ঘটনাটি কার্যকর হতে যাচ্ছে বলে তার ধারণা। তবে তরুণী প্যাট তার এই অভ্যাস একদম বাজে। এই শিথিলতা অবহেলা অনেক বিপদ তার জীবনে ডেকে আনতে পারে।
তবে ভাগ্যের কথা সেখানে কোন চোরের উপদ্রব নেই। বেড়ালের উপদ্রব তার রাতের ঘুম কেড়ে নেয়নি।
তার নীতিকথায় কান না দিয়ে প্যাট বলল, তার সঙ্গ নিতে।
সমস্বরে আওয়াজ হলো কোথায়?
মুখে একটা আঙুল দিয়ে সর্তকতার সঙ্গে বললো, অন্য ফ্ল্যাটের লোকেরা বিরক্ত হবে। বেশী চেঁচান উচিত নয়। তার প্রসঙ্গ পাল্টে বলল, তারা লিফটের খোঁজে চলেছে।
ভেনোডেন জিজ্ঞেস করল, এত রাতে লিফট কি চালু আছে? না, তা সম্ভবত নেই, উত্তর দিল প্যাট। কিন্তু কয়লা তোলার অন্য একটি লিফট আছে। চব্বিশ ঘণ্টা সার্ভিস।
একরকম ছুটে প্যাট এগিয়ে গেল। অন্যেরা তাকে অনুসরণ করলো। গাঢ় অন্ধকারে প্যাট তাদের নেতৃত্ব দেয়। ডান দিকে লিফটের দিকে তারা এগিয়ে গেল। পরের ডাস্টবিনটা সরাবার সময় একটা কটু গন্ধ পেল ভেনোডেন।
এই অভিযানে সে কি একাই যাবে, কেউ তাকে সঙ্গ দেবে না?
জিমি তার সঙ্গ নিল।
ভেনোডেনের পাশে পাশে হাঁটতে লাগল সে।
তার সন্দেহ হচ্ছে লিফট তার ভার বহন করতে পারবে কিনা।
একটন কয়লার থেকেও কি তোর ওজন বেশী? প্যাট জিজ্ঞাসা করল।
লিফটে পা দিয়ে উৎফুল্ল হয়ে ভেনোডেন বলল, খুব শীঘ্রই তারা একটা পথ খুঁজে পাবেই।
লিফটের যান্ত্রিক আওয়াজে শোনা গেল। তারা দৃষ্টির আড়াল হলো। কিন্তু তাদের রাশ থেকে গেল।
ভেনোডেন মন্তব্য করল, কান ঝালাপালা করা শব্দটা ভয়ানক। অন্য ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা কি ভাবছেন কে জানে।
চোর কিংবা ভূত, এই ধ্বংসের কিছু একটা তারা ভাববে। লিফটের দড়ি টানা কঠিন ব্যাপার। ফায়ারস ম্যানসনের কর্মীরা এই দুরূহ কাজ কি ভাবে করে ভাবতেও অবাক লাগে।
জিমিকে জিজ্ঞাসা করল, সে কি ফ্লোরগুলি গুনেছে।
হায় ভগবান। শুনতে একদম ভুল হয়ে গেছে। মৃদু হেসে ভেনোডেন বলল, তার ঠিক মনে আছে। তারা এখন থার্ড ফ্লোর অতিক্রম করছে। পরের ফ্লোরটাই তাদের।
বিড় বিড় করে বিরক্তি প্রকাশ করে জিমি বলল, দেখা যাবে দরজায় তালা লাগানো।
কিন্তু চিন্তাটা অমূলক। কাঠের দরজা ঠেলতেই খুলে গেল। কালো স্নেটের মতো অন্ধকারে কিচেনে ঢুকল ভেনোডেন আর জিমি।
নিচ্ছিদ্র অন্ধকারে কিছুই নজরে পড়ল না। এক পা চলতে তাদের ভীষণ অসুবিধে হলো। সুইচ বোর্ড খুঁজে পাচ্ছিল না।
ভেনোডেন মৃদু গলা করে বলল, এই জন্য অন্ধকারে তাদের একটা টর্চ সঙ্গে রাখা উচিত ছিল। ফ্ল্যাটের কোন কিছুই তার জানা নেই। অসাবধান হলে রান্নার সরঞ্জাম ভেঙে চুরমার হয়ে যাবে। প্যাটকে সর্তক করে দিয়ে ভেনোডেন বলল, সে যেখানে দাঁড়িয়ে আছে সেখানেই থাক আলো না জ্বালা পর্যন্ত একটু নড়বে না সে।
মেঝের উপর থেকে অতি সন্তর্পণে তার পথ সে করে নিল। আর মুখে একটা শব্দ ড্যাম। পথ চলতে গিয়ে অসাবধানতায় কিচেনে হুমরি খেয়ে পড়লে বুকের পাঁজরে ধাক্কা লাগল তার। কোন মতে নিজেকে সামলে নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে ছিল। একটা সুইচ বোর্ডের খোপ অন্য একটা সুইচ বোর্ডের কাছে গেল সে। ড্যাম শব্দটা মুখ থেকে আবার বেরিয়ে এল।
জিমি তাকে বলল তাকে দেখে যেন হতাশ মনে হচ্ছে। সে বলল, আলো আর আসবে না। বালবগুলি সব ফিউজ হয়ে গেছে।
প্যাসেজ পার হয়ে বসার ঘর। তার পায়ের শব্দ অনুসরণ করে জিমি। দরজা পার হবার আওয়াজ পাওয়া যায়। এবার বসার ঘর থেকে ভেনোডনের পায়ের শব্দ শোনা গেল। শব্দটা সুইচ পর্যন্ত এগিয়ে থেমে গেল। একটা ব্যর্থতার হিসহিস শব্দ শুনে মন্তব্য করলো, তবে কি তাদের শূন্য হাতে ফিরে যেতে হবে? মুখ কঠিন হয়ে গেল। অন্ধকারে বসার ঘরের দিকে এগিয়ে গিয়ে মনে হলো অন্ধকার যেন আরও জমাট।
অন্ধকারে ঢিল ছোঁড়ার মতো তার সঙ্গ নিল ভেনোডেন। ভেনোডেনকে দেখা যাচ্ছিল না। তবে তার উচ্চ নিশ্বাস গায়ে লাগতেই বোঝা গেল তোনোডেন তার খুব কাছে। কিন্তু তার আর সাড়া পাওয়া গেল না। তবে সে কি বলে ছেড়ে দিল। ফিরে গিয়ে প্যাটকে কি জবাব দেবে। প্যাটের দুশ্চিন্তা সে ফ্ল্যাটে ঢুকতে পারবে তো?