হ্যাঁ, দি ব্রাউন আইজ অব কেরোসিন।
একটা শব্দ করে বলেন যে মাদমোয়াজেলের নীল চোখ। তারপর শুভরাত্রি জানালো প্যাট। এবং মিলড্রেডের বিশেষ অনুরোধে সে আজ প্যাটের ফ্ল্যাটে থেকে যাচ্ছে। প্যাট যদি তার ফ্ল্যাটে একা থাকে তবে সে খুব ভয় পাবে।
সিঁড়ির মুখে দুজন যুবক তার সাথী হলো। তারা যখন তাকে বিদায় সম্ভাষণ জানাতে যাবে তখন তাদের প্রভাবিত করেন তিনি।
তরুণ বন্ধুরা, তারা নিশ্চয় জেনেছেন, জিমি সন্তুষ্ট হতে পারেন নি। মিসেস গ্রান্টের ফ্ল্যাট থেকে ব্যর্থ হয়ে ফিরে এসেছেন। সত্যি কথাটা হলো তিনি সন্তুষ্ট নন। এখন আবার ফিরে গিয়ে নিজের মতো করে তদন্ত করে দেখতে চান। তাদের কে তার সাথী হবে?
তার সেই প্রস্তাবে দুটি যুবক রাজী হয়ে গেল। তারপর কিছুমাত্র দেরী না করে নীচের ফ্ল্যাটে নেমে এলেন। ইনসপেক্টরের দেওয়া চাবি নিয়ে খুললেন মিসেস গ্রান্টের ফ্ল্যাটের তালা। ফ্ল্যাটে ঢুকে প্রত্যাশা মতো বসার ঘরে না গিয়ে, কিচেনে প্রবেশ করলেন।
একটা ছোট্ট লোহার জানালার সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন। কভরটা সরিয়ে গায়ের সমস্ত শক্তি দিয়ে লোহার জানালাটা খুলে ফেললেন জিমি।
জিমি এবং ভেনোডেন বিস্ময়ে তাকিয়ে রইল তার দিকে। পোয়ারোর হাবভাব ক্রমশঃ তাদের অবাক করে তুলেছিল।
হঠাৎ জয়ের আনন্দে চীৎকার করে ভাবলেন তিনি। তারপরেই দেখা গেল তার হাতে ছিপি আঁটা একটা বোল।
ইউরেকা, আনন্দে চীৎকার করে ওঠেন তিনি। আমি যা চেয়েছিলাম তা পেয়ে গেছি। ভয়ঙ্কর উল্লাসে বোতলের ছিপির উপর নাক রেখে শুকলেন তিনি। হায়! হায় ভাগ্য? আমার মাথায় ঠাণ্ডা লেগেছে।
তার হাত থেকে বোতলটা ছিনিয়ে নিয়ে পোয়ারোর মতোন নাক ঠেকাল কিন্তু গন্ধে পেল না। চিৎকার করে পোয়ারো তাকে সতর্ক করে দেবার আগে দ্রুত হাতে ছিপি খুলে নাক লাগল।
চীৎকার করে বললেন–মূর্খ, ছিঃ ছিঃ, ঐ রকম বোকার মতোন তাড়াহুড়ো করে কেউ বোতলের ছিপি খোলে? সে কি দেখেনি, কিরকম সাবধানে তিনি বোতল ধরে ছিলেন? দয়া করে যদি একটু ব্রাণ্ডির ব্যবস্থা করা যায়। বেশী দূরে যেতে হবে না। এই ফ্ল্যাটেরই বসার ঘরে একটা সুরাপাত্র তিনি দেখেছেন।
এটাকে কোন কঠিন কাজ বলেই মনে করল না সে। বন্ধুর জন্য যত দূরেই হোক ছুটে যেতে পারবে সে। এত হাতের কাছেই রয়েছে। এই বলে বসার ঘরে ঢুকে গেল সে। ফিরে এসে অবাক হয়ে দেখল ভেনোডেন সুস্থ হয়ে উঠে বসেছে।
উদ্বিগ্ন স্বরে জিমি জিজ্ঞেস করলো, ভেনোডেনের কষ্ট হয়নি তো? কেমন বোধ করছে?
কৈ কিছু সে বুঝতে পারছে না। সে আগের মতোই সুস্থ বোধ করেছে। পোয়ারোর উপদেশ শুনতে হলো। তাকে বিষাক্ত জিনিসের গন্ধ নিতে হলে অতি সাবধানতা প্রয়োজন।
লজ্জায় নত হয়ে ভেনোডেন বলল, এখুনি সে বাড়ি ফিরে যাবে। কাঁপা কাঁপা পায়ে উঠে দাঁড়াবার চেষ্টা করল সে। যদি মঁসিয়ে পোয়ারো তাকে অনুমতি দেন এবং যদি তার প্রয়োজন আর না থাকে। সে খুব দুর্বল বোধ করছে। অসহায় হয়ে তার অনুমতির অপেক্ষায় রইল।
অনুমতি দিয়ে পোয়ারো বলেন, বাড়ি ফিরে যাওয়াই হবে তার এখন সবচেয়ে ভালো দিক।
তারপর জিমির দিকে ফিরে বললেন, মসিয়ে ফকনার, তিনি যেন এক্ষুনি চলে না যায়, তার জন্য কিছুক্ষণ অপেক্ষা করেন। তার বন্ধুকে এগিয়ে দিয়ে তিনি যেন এক্ষুনি ফিরে আসেন।
ঘাড় নেড়ে বাধ্য ছেলের মতো সম্মতি জানাল জিমি। দরজার বাইরে পর্যন্ত তাকে এগিয়ে দিতে গিয়ে সিঁড়ির মুখে অনেকক্ষণ আলোচনা করল। শেষে ফ্ল্যাটে ঢুকে পোয়ারো দেখলেন, বসার ঘরে দাঁড়িয়ে রয়েছে জিমি। তাকে ফিরে আসতে দেখে তাকিয়ে রইল পোয়ারোর দিকে। স্তব্ধ বিমূঢ় হতবাক। মুখে কথা নেই। চোখে যেন সরষে ফুল দেখছে।
অনেক পরে অস্ফুট স্বরে বলল–সে কি এখন যেতে পারে?
নিশ্চয়, বলে জিমিকে এগিয়ে দিতে গেলেন পোয়ারো। ভেনোডেনের জন্যে দরজা খুলে দিয়েছিল কেয়ারটেকার। এবার পোয়ারোকে নীচে নামতে দেখে কেয়ারটেকার বলল তিনিও কি বাইরে যাবেন মঁসিয়ে পোয়ারো? উত্তরে পোয়ারো জনালেন, তার বন্ধু মঁসিয়ে ফকনার যাবেন।
ফটক পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে পোয়োরা বললেন, কাজের কথাটাই বলা হয়নি। কাল সন্ধ্যায় তাকে একবার পুলিশ স্টেশনে আসতে হবে। এই সময়ে মধ্যে মিসেস গ্রান্টের পোস্ট মর্টেম রিপোর্টটা পাওয়া যাবে। তারপর যা করণীয় করা যবে।
তার কি কোন প্রয়োজন আছে? জিজ্ঞাসা করে জিমি।
সবিস্ময়ে পোয়ারো বলেন, প্রয়োজন অবশ্যই আছে। মঁসিয়ে, ভুলে যাবেন না যেন যে মিসেস গ্রান্টের খুনী এখনও ধরা পড়েনি।
তবে কি তাকে সম্ভাব্য খুনী হিসেবে চিহ্নিত করছে পোয়ারো। তাকে তার জন্য পুলিশ স্টেশনে যাবার নির্দেশ দিচ্ছেন। ভেনোডেনকে বললেন না। প্যাট আর মিলড্রেডের সঙ্গে মধুর ব্যবহার করলেন। তাদের সন্দেহ তালিকা থেকে বাদ দিয়েছেন পোয়ারো। যাই হোক তিনি যদি পুলিশ স্টেশনে না যান তবে ইনসপেক্টর রাইস তার ফ্ল্যাটে গিয়ে হাজির হবেন।
ভাবতে গিয়ে মাথা ঝিমঝিম করতে লাগল তার। অতএব বাধ্য ছেলের মতো তার প্রস্তাবে রাজী হয়। পোয়ারোকে শুভরাত্রি জানিয়ে রাস্তায় নামল জিমি।
পরদিন সন্ধ্যায় সময়মতো হাজির হয় জিমি। নানা চিন্তায় সে বিভোর ছিল। যদি হত্যাকারী হিসেবে তাকে গ্রেফতার করে তবে প্যাটকে ফোন করবে তার জামিনের ব্যবস্থা করার জন্য। যদিও মিথ্যা অভিযোগ তাকে গ্রেফতার করেছে। তবুও প্যাট মিথ্যে অভিযোগটা সত্যি ধরে নেবে আর এতদিনের বন্ধুত্ব প্রেম ভালোবাসা সব মিথ্যে হয়ে যাবে।