পোয়ারো নিঃশব্দে মিসেস গ্রান্টের ঘরে ঢুকলেন। পুলিশ কনস্টেবল রাইসের নির্দেশে ডিউটি দিচ্ছেন। সে পোয়ারোকে চিনতো, তাই তাকে বিনা বাধায় ভেতরে যেতে দিল।
ফ্ল্যাটে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিল পোয়ারো। ঘরের সব আসবাবপত্র যেখানে পড়েছিল সেখানেই পড়ে রইল। নেই কেবল ফ্ল্যাটের বাসিন্দা। হতভাগিনী মিসেস গ্রান্ট। তার মৃত্যু সম্পর্কে তাদের ভাসা ভাসা অনুমান। ডিভিশনাল সার্জেনের ডেথ সার্টিফিকেট কিংবা মৃত্যু সম্পর্কে ডাক্তারের রির্পোট এই সব যথেষ্ট নয়। তাঁর কাছে মৃত্যুর কারণটা বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে না পারলে কেস টিকবে না। আসামী বেকসুর খালাস পেয়ে যাবে। তাই পোস্টমর্টেম রিপোর্ট অত্যন্ত জরুরী।
গোয়েন্দা টেবিলটার সামনে এসে দাঁড়ালেন। একগুচ্ছ চিঠি পড়ে রয়েছে টেবিলের ওপর। যেগুলি সান্ধ্য ডাকে এসেছিল এবং মেয়েটি টেবিলের ওপর রেখেছিল আলো না জ্বালিয়েই। এই অভ্যাস তার বহুদিনের। এখন চিঠিগুলি দেখতে দেখতে নিরাশ হলেন তিনি যে চিঠিটির খোঁজে তিনি এখানে এসেছেন সেটি নেই। একটা চিঠি নেই। প্রথমবার এসে তিনি চিঠিগুলি গুনে দেখেছিলেন। কিন্তু পুলিশ না আসা পর্যন্ত তিনি চিঠিগুলি নিতে পারেন নি। কিন্তু কে সরাবে? মিসেস গ্রান্টের পরিচারিকা কি? সে যদি সরাবার চেষ্টা করে তাহলে আগেই সরাতে পারত। তাছাড়া মিসেস গ্রান্টের চিঠি তার কি কাজে লাগতে পারে? উত্তর হলো অপ্রয়োজন। সুতরাং তালিকা থেকে সে বাদ।
এবার প্রথম হলো কি এমন ছিল যেটা কারোর কাছে জরুরী হয়ে পড়ল? তাও আজ রাতেই। অতএব মিসেস গ্রান্টের চিঠির সঙ্গে তার কাজ জড়িয়ে থাকতে পারে। এক্ষেত্রে তার প্রথমে মনে পড়ল স্বামীর কথা। তিনি যে বিবাহিতা ছিলেন সে বিষয়ে কোন সন্দেহ থাকতে পারে না। কিন্তু তার স্বামী কে, প্যাট সে কথা জানে না। কয়েকজন পুরুষ তার ফ্ল্যাটে নিয়মিত যাতায়াত করতো। কেউ কখনো স্থায়ী ভাবে তার সঙ্গে বাস করে নি। যদি কাউকে চোখে পড়ত তবে অবশ্যই ধরে নেওয়া যেত তিনি তার স্বামী। এছাড়া আর কোন সম্পর্কের কথা তারা ভাবত না।
যদি ভদ্রমহিলা স্বামী পরিত্যক্ত হবেন তবে ধরে নেওয়া যায় তার স্বামী বিচ্ছেদে রাজী থাকলেও তিনি মানসিক ভাবে তা মেনে নিতে পারেন নি। যদি স্বামী অন্য কোন নারীর প্রতি আসক্ত হন তাহলে প্রথমে সে স্ত্রীকে বিবাহ বিচ্ছেদে রাজী করাতে চাইবে। যদি স্ত্রী রাজী না হয় তবে তাকে পথ থেকে সারানো জন্য অন্য পথ অবলম্বন করবে।
খুন হয়েছেন মিসেস গ্রান্ট। স্বামী জীবিত কিনা কেউ জানে না। কি তার পরিচয়? স্বামী যদি পলাতক হয় তাহলে পুলিশ তাকে খুঁজে বের করবে। এইসব কথা ভেবে পোয়ারো নিজেকে অসহায় মনে করল।
এখন সবথেকে বড় কাজ হলো, সেই হারানো চিঠিটা খুঁজে বের করা। তার দৃঢ় বিশ্বাস, হারানো চিঠিটার মধ্যে এমন কিছু আছে যাতে মিসেস গ্রান্টের বিবাহিত জীবনের কোন জরুরী নথিপত্র থাকতে পারে বা সেটা একান্ত জরুরী হয়ে পড়ে খুনীর কাছে। সে তার স্বামীই তোক বা অন্য কেউ থোক।
এখন প্রথম কাজ হলো চিঠিটার সন্ধান করা। তারপর মিসেস গ্রান্টের স্বামীর সন্ধানে বেরোনো। আরও একটা জিনিসের সন্ধান করা অত্যন্ত জরুরী মনে করেন এরকুল পোয়ারো। গোয়েন্দা লাইনে তার অভিজ্ঞতা প্রচুর। কোন সম্ভাবনাকে জড়িয়ে দেওয়া যায় না। যেমন প্যাটের ফ্ল্যাটের চাবি উধাও হয়ে যাবার ঘটনা। প্যাটের অভিমত হচ্ছে, তার পরিষ্কার মনে আছে ফ্ল্যাটে থেকে বেরোবার সময় প্রবেশ পথে তালা লাগিয়ে চাবিটা হাতব্যাগে রেখেছিল। কিন্তু তন্ন তন্ন করেও খুঁজে পায়নি।
আপাতদৃষ্টিতে প্যাটের ফোর্থ ফ্লোরের সঙ্গে নীচের থার্ড ফ্লোরের মিসেস গ্রান্টের খুন হবার সঙ্গে কোন সম্পর্ক না থাকারই কথা। কিন্তু কোন মানে না পোয়ারোর মনে হলো প্যাটের ফ্ল্যাটের চাবি চুরি করা মিসেস গ্রান্টের হত্যাকারীর একান্ত প্রয়োজন ছিল। খুনী অত্যন্ত চতুর এবং সচেতন। প্যাটের চাবি চুরিটা তার চাতুর্যের একটা নিদর্শন মনে হতেই বেরিয়ে এলেন। তিনি। চিঠিটার কথা ভুলে গেলেন তিনি।
প্যাটের ফ্ল্যাটে ফিরে যাবার আগে গ্রাউণ্ড ফ্লোরে নেমে এলেন পোয়ারো। ডে এণ্ড নাইট সার্ভিসে একটা ওষুধের দোকানে ঢুকলেন। সেখানে থেকে এবিন ফ্লোরাডের বোতল কিনে যখন প্যাটের ফ্ল্যাটে ফিরে এলেন তখন সে অন্য মানুষ।
.
০৬.
জিমি যেন অন্য এক পোয়ারোকে দেখছে। তার ফ্ল্যাটে থেকে যখন নীচের ফ্ল্যাটে যাচ্ছিল তখন ছিল উজ্জ্বল ঝলমলে মনে হচ্ছিল। আর এখন ফিরে এলেন একেবারে কালো মুখ। হতাশার চিহ্ন চোখে মুখে।
জিমি প্রশ্ন করে, মঁসিয়ে পোয়ারো কি সন্তুষ্ট হতে পারেন নি?
না, উত্তরে তিনি বলেন, তিনি সন্তুষ্ট নন।
কৌতূহলী হয়ে ভেনোডেন জিজ্ঞাসা করে, কিসের এত দুশ্চিন্তা তার?
তার কথায় উত্তর না দিয়ে এক মিনিট নীরব থাকা পর হঠাৎ ভ্রুকুটি করে কি যেন ভেবে কাঁধ ঝাঁকালো।
প্যাটের দিকে তাকিয়ে বলেন, মাদমোয়াজেল, শুভরাত্রি। তিনি খুব ক্লান্ত। অনেক রান্না বান্না তিনি করেছেন।
হেসে উত্তর দিয়ে প্যাট বলল-রান্না বলতে কেবল ওমলেট। নৈশভোজের রান্না সে করেনি। ভেনোডেন জিমি সকলে মিলে একটা ছোট্ট জায়গায় যায়।
তারপর থিয়েটার?