তা না হয় মেনে নেওয়া হোক মঁসিয়ে রাইস কিন্তু কি করে বুঝলেন খুনী সিল্কের রুমাল নিয়ে হাতের ছাপ মুছে ফেলেছে।
কারণ সেই রুমালটার সন্ধান তারা পেয়েছেন। বিজয়ীর মতো উল্লসিত হয়ে বললেন তিনি। যখন খুনী পর্দার আড়ালে মৃতদেহ ঢাকার চেষ্টা করছিল তখন অন্যমনস্ক ভাবে তার দৃষ্টি এড়িয়ে পড়ে যায়।
একটা বড় আকারের সিল্কের রুমাল। রুমালের মাঝখানে একটি চিহ্ন ছিল, যেটা সহজেই পড়া যায় এবং পরিষ্কার বোঝা যায়। রুমালের মাঝখানে একটা নাম পড়লেন পোয়ারো–জন ফ্রেজার।
ইনসপেক্টর বলেন, ঠিক তাই। এই নামের লোকটিকে তাদের খুঁজে বার করতে হবে। লোকটিকে বার করা গেলে বোঝা যাবে মৃত মহিলার সঙ্গে তার কি সম্পর্ক।
সন্দেহ নিয়ে পোয়ারো বলেন, ব্যাপারটা তাই কি? তার আশঙ্কা তিনি যা ভাবছেন তা সত্যি নয়। আপাতদৃষ্টিতে যে রুমালের ওপর নাম লিখেছে সেই রুমালটা দিয়ে পিস্তলের ওপর তার নামের ছাপ মুছে দিয়ে অপরাধের চিহ্ন লুপ্ত করতে পারত। কিন্তু তা সত্ত্বেও খুনীকে চতুর সতর্ক ব্যক্তি হিসাবে ধরা যায় না। যেহেতু তার নাম লেখা রুমালটা সে হারিয়ে ফেলেছে এবং সেটা পরবর্তী হাতে না পৌঁছায় চেষ্টা করা, তার একবারও মনে হয়নি। সেই চিরকুটটা পুলিশের হাতে পড়লে সে অপরাধী সাব্যস্ত হবে।
তালগোল পাকানো ব্যাপার, বললেন, ইনপেক্টর রাইস। খুনীর সম্পর্কে তার মত পাল্টাতে হচ্ছে। ধন্যবাদ মঁসিয়ে তিনি তার চোখ খুলে নিয়েছেন।
এখনও পুরোপুরি চোখ খুলতে পারিনি। কেবল চোখের পাতা উল্টে দিয়েছেন। তাহলে বোঝা যাচ্ছে মঁসিয়ে রাইস তার কাছ থেকে তাঁর একটা ধন্যবাদ পাওনা রইল।
পোয়ারোর কথার উত্তরে ইনসপেক্টর বলেন, তিনি প্রতিমুহূর্তে ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। একটু থেমে আবার বলেন–সব কিছু কেমন যেন তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে।
তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। তা পাকিয়ে দিচ্ছে খুনীটা।
ইনসপেক্টর আর ভাবতে পারছেন না। হতাশ হয়ে বললেন, এখন থেকে পোয়ারো যা বলবেন তাই তিনি শিরোধার্য করে রাখবেন।
পোয়ারো বললেন, আপনাদের ব্যাপার হলো, এই বিল্ডিংয়ে খুনীকে কেউ ঢুকতে বা বেরোতে দেখেনি। তবে কি নোকটা হাওয়ার মিলিয়ে গেল?
এই ব্লিডিং-এ অত বড় বড় সব ব্লক। কত লোক আসছে যাচ্ছে। তাদের মধ্যে কেউ কি দেখেনি খুনীকে? মিস গারনেট, মিস মিলড্রেড, মিঃ ফকনার, মিঃ বেইলি? কেউ তাকে ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে আসতে দেখেনি। আশ্চর্য ব্যাপার।
কৈফিয়ত দেবার সুরে প্যাট বলল, এতে আশ্চর্য হবার কোন কারণ নেই। আজ তারা একটু তাড়াতাড়ি প্রায় সন্ধ্যে সাতটা নাগাদ বেরিয়ে যায়।
অন্য দিকে জিমিকে বেশ প্রফুল্ল দেখাচ্ছিল। চিরকুটে লেখা নামের আদ্যাক্ষর জে. এফ. দেখে হতাশায় ভেঙে পড়েছিল সে। এই শব্দ দুটি তাদের বন্ধুত্বের মধ্যে বিরাট ফাটল ধরিয়েছিল। তারা তার প্রতি সন্দিহান হয়ে পড়েছিল। এখন আর কোন সন্দেহের অবকাশ নেই। কারণ খুনীর ব্যবহৃত রুমাল থেকে জানা গেছে তার নাম জন ফ্রেজার। এখন পুলিশ জন ফ্রেজারকে সন্দেহ করবে তাকে নয়। বন্ধুরা তার দিকে খুনী বলে আঙুল তুলবে না। আবার গলা জড়িয়ে ধরে তারা মনের আনন্দে গান গেয়ে বেড়াবে শুধু।
প্যাটের ফ্ল্যাটের দরজার সামনে থমকে দাঁড়িয়ে পোয়ারো বললেন, একবার তিনি নীচের ফ্ল্যাটটা পরীক্ষা করে দেখতে পারেন?
কেন পারবেন না মঁসিয়ে পোয়ারো। আর এটাকে তিনি কেন অনুগ্রহ বলছেন? তার যে কোন সাহায্য তাদের কাছে অনুপ্রেরণা হিসাবে চিহ্নিত হয়। তার প্রতিটি কর্মধারা বিশ্লেষণকে তারা তাদের আদর্শ বলে মনে করেন। তাই মঁসিয়ে পোয়ারো যদি কিছু চেয়ে অনুগ্রহ বলে মনে করেন তাহলে তাদের ছোট করা হবে।
এটা তার মহানুভবতার পরিচয়। মঁসিয়ে পোয়ারো, তারা প্রত্যেকেই তাঁর সাহায্যপ্রার্থী ইনসপেক্টর বলেন, তাদের হয়ে তিনি কাজ করতে চাইছেন তাতে তাদেরই উপকার হবে। শুরুতে তিনি বলেছিলেন, এই কেসে মিঃ পোয়ারোর খুব একটা লাভ হবে না। কিন্তু ইনসপেক্টর এখন মনে হচ্ছে, এ কেস শুধু তার হাতে শোভা পায়। তিনি একমাত্র সমাধানের সূত্র খুঁজে বের করতে পারেন। এই বলে ফ্ল্যাটের একটা চাবি গোয়েন্দা পোয়ারোর হাতে দিলেন।
ফ্ল্যাট একেবারে কঁকা। কোন পরিচারিকা নেই? জিজ্ঞাসা করেন পোয়ারো।
অতবড় দুর্ঘটনা ঘটায় মেয়েটি চলে যায়। ওখানে একা থাকতে তার ভয়।
অসংখ্য ধন্যবাদ, চাবিটা হাতে নিয়ে বলেন পোয়ারো, বোকার মতো কিচেনের দরজা দিয়ে মিসেস গ্রান্টের ফ্ল্যাটে নয় বুক চিতিয়ে সামনের দরজা দিয়ে প্রকাশ্য দরজা দিয়ে ঢোকা ভুল করে। এত রাতে সব বাসিন্দাই ঘুমে অচেতন। সেই সময় এই ফ্ল্যাটের বাসিন্দা মিসেস গ্রান্ট খুন হয়। এবং পুলিশ দলবল নিয়ে সেখানে উপস্থিত হয়েছিল তখন অন্য বাসিন্দারা কেউ হয়ত ঘুমোবার আয়োজন করছিল। কেউ বা বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েছিল। শুধু একমাত্র জেগে ছিল ফ্ল্যাটের কেয়ারটেকার। পুলিশ ইনসপেক্টর তাকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছিল যদি পুলিশের উপস্থিতিটা কেউ জানতে পারে তবে তার এবং তার মালিকের সমূহ বিপদ ঘটবে। কারণ এই বিল্ডিং-এ কেউ খুন হয়েছে খবরটা প্রচার হলে কেউ ভবিষ্যতে ভাড়া নিতে আসবে না। যারা আছে তারাও নিরাপদ জায়গায় চলে যাবে। বিল্ডিং যদি ভাড়াটে শূন্য হয়ে পড়ে তবে ভবিষ্যতে তার চাকরি চলে যাবার একটা সম্ভাবনা থেকে যাবে। তাই ভয়ে মুখ খুলল না কেয়াটেকার। মিসেস গ্রান্টের খুনটা বেমালুম চেপে যায়।