সেটাই হবে যথাযথ-উত্তরে বলেন পোয়ারো। অবার এইসব যুবক যুবতীর কাছ থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য পাবার জন্য তাদের প্রাপ্য মর্যাদা দিতে হবে।
ইনসপেক্টর রাইস বললেন, সংবাদপত্রগুলি মিসেস গ্রান্টের মৃত্যুর সংবাদটা ঠিক পেয়ে যাবে। এই কেসের ব্যাপারে কোন গোপনীয়তা নেই। নিশ্চিত হবার জন্য পোর্টরাকে সঙ্গে করে নিয়ে যান। পোর্টার মিসেস গ্রান্টের শনাক্ত করেছে। ভদ্রমহিলার বয়স বছর পঁয়ত্রিশ হবে।
ভদ্রমহিলাকে কোথায় কি ভাবে খুন করা হলো তার কি কোন হদিস পেয়েছেন ইনসপেক্টর রাইস। জিজ্ঞাসা করেন পোয়ারো।
সহজ ভঙ্গিতে ইনসপেক্টর রাইস বলেন, ঘটনাটা ওইরকম–টেবিলের সামনে বসেছিলেন ভদ্রমহিলা। তার বিপরীত দিকে যিনি বসেছিলেন সেই একটা ছোট ক্যাসিবারের পিস্তল দিয়ে তাকে গুলিবিদ্ধ করে। টেবিলের এপার আর ওপার। দূরত্ব খুবই কম। তাই নিশানা ছিল অব্যর্থ। গুলিবিদ্ধ হওয়া মাত্র তিনি টেবিলের উপর উপুড় হয়ে পড়েন। তাতেই টেবিল ক্লথের উপর রক্তের দাগ লাগে।
মিলড্রেড জিজ্ঞাসা করল, তাই যদি হয় তবে গুলির আওয়াজ কেউ কেন শুনতে পেল না?
সেই পিস্তলে সাইলেনসার লাগানো ছিল। তাই কেউ গুলির আওয়াজ শুনতে পায়নি। যখন তারা তার পরিচারিকাকে বললেন তার গৃহকত্রী মারা গেছেন তখন সে বাইরে যাবার জন্য পা বাড়িয়ে ছিল। পরিচারিকা ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে যাবার সময় কোন কর্কশ আওয়াজ সে কি শুনতে পেয়েছিল?
সম্ভবতঃ না। তিনি আগেই বলেছিলেন যদি পিস্তলের আওয়াজ শোনা না যায় তবে দরজা বন্ধ করার সময় কোন আওয়াজ শোনা যেতে পারে না।
পরিচারিকার কথা উঠতেই পোয়ারোর মনে পড়ে যায় প্যাস্ট্রিতে শুয়ে থাকা মেয়েটির কথা। যাকে তিনি পুলিশ আসার আগে ঘুম থেকে জাগিয়ে তুলতে চান নি।
তার মনের কথাটা হঠাৎ প্রকাশ করলেন পোয়ারো-মিঃ রাইস, পরিচারিকা মেয়েটি কোন কথা বলেনি তাকে?
উত্তর দিলেন মিঃ রাইস-সন্ধ্যার সময় তার বাজার যাবার কথা। সেইমতো মিসেস গ্রান্টের ফ্ল্যাট থেকে সে বেরিয়ে যায়। তার একটা নিজস্ব চাবি ছিল। রাত প্রায় দশটার সময় সে ফিরে এসে দেখে তার গৃহকত্রীর ফ্ল্যাট নিঃঝুম। তাই সে ভাবলো তার গৃহকত্রী শুয়ে পড়েছেন।
তাহলে বসার ঘরের দিকে সে তাকিয়ে দেখেনি।
হ্যাঁ, দেখেছিল নিশ্চয়ই। সান্ধ্য ডাকে আসা চিঠিগুলো সংগ্রহ করে সেখান থেকে। কিন্তু কোন অস্বাভাবিকতা সে দেখতে পায়নি। তার মনে হয় খুনী অত্যন্ত চতুর। পর্দার আড়ালে মৃতদেহ লুকিয়ে রাখে। যাতে কোন খুঁত না থাকে।
কিন্তু তার কি মনে হয় না এটা খুবই রহস্যজনক? পোয়ারো জিজ্ঞেস করল। এই কাজের পিছনে কোন গুঢ় অভিসন্ধি লুকিয়ে আছে। অভিসন্ধিটা জানতে পারলেই খুনীকে ধরা সম্ভব হবে।
শান্ত মার্জিত সংযত হয়ে পোয়ারোর কথার মধ্যে এমন কিছু ছিল যা ইনসপেক্টরকে ভাবিয়ে তুলেছিল।
সে তার পালাবার রাস্তা ঠিক না হওয়ার পর্যন্ত মৃতদেহ পর্দার আড়ালে লুকিয়ে রেখেছিল। হ্যাঁ, সেটাই হবে। সম্মতি সূচক উত্তর দিলেন পোয়ারো। পরিচারিকার জবানীতে শোনা যায় বিকেল পাঁচটায় মিসেস গ্রান্টের ফ্ল্যাট থেকে সে বেরিয়ে যায়। ডাক্তারের মতে প্রায় চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা আগে।
কম কথার মানুষ ডাক্তার ঘন ঘন মাথা দুলিয়ে সম্মতি জানাল।
তারপর ঘড়ির তাকিয়ে দেখল পৌন বারটা বাজে। তারপর পকেট থেকে একটা চিরকুট বের করল।
মৃত ভদ্রমহিলার পোশাকের পকেট থেকে সেটা পাওয়া গেছে। সেটা হাতে নিয়ে দেখতে কোন বাধা নেই পোয়ারোর। তার উপর হাতের কোন ছাপ নেই।
চিরকুটটা হাতে নিয়ে মেলে ধরলেন পোয়ারো। ছোট ছোট গোটা গোটা অক্ষরে ছাপানো আজ সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার সময় তোমার সঙ্গে দেখা করতে আসব।
.
০৫.
বেশ কয়েকবার চিরকুটের লেখাটা দেখলেন। নীচে প্রেরকের নামের আদ্যক্ষর জে.এফ.। চারজনেই শুনতে পারে এমন ভাবে বলেন তিনি–জে.অফ.। সবার দৃষ্টি গিয়ে জিমি ফকনারের উপর পড়লো। জে. এফ. অর্থাৎ জিমি ফকনারই কি তাহলে পত্রপ্রেরক।
হঠাৎ জিমির মুখটা কেমন পাংশু হয়ে গেল। অপর তিনজন যুবক তার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকাল। দুচোখে তাদের ঘৃণা আর সন্দেহ। জিমির অবস্থা ফাঁসীর আসামীর মতোন। বিচারের আগেই সে খুনী চিহ্নিত হয়েছে।
ছিঃ ছিঃ, জিমি। মনে মনে তারা এই বলছিল। সে ঘৃণা, সমাজের কলঙ্ক, সে তোদের বন্ধু হবার অনুপযুক্ত।
ফুঁসে উঠে প্যাট বলল, কেন, যে মিসেস গ্রান্টকে খুন করল, তিনি তার কি করেছিলেন?
কৈফিয়ত চেয়ে মিলড্রেড বলে–তার সঙ্গে তো জিমির কোন পরিচয় ছিল না। তবুও কেন অপরিচিতাকে খুন করতে গেল।
তাদের প্রতিক্রিয়া দেখে মনে হাসলেন পোয়ারো। দীর্ঘদিনের বন্ধু হওয়া সত্ত্বেও তারা চিনতে পারেনি কিন্তু আজকে একটা সূত্র হাতে পেয়েই কেমন সোচ্চার হয়ে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাচ্ছে।
সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার এই নামের আদ্যাক্ষর দুটি–জে.এফ., জিমি ফকনার না অন্য কিছু? কিন্তু তার অনুমানও মিথ্যে হয় না।
এই চিরকুটের প্রেরক জানত না, মিসেস গ্রান্ট তার পোশাকের তলায় চিরকুটটা রেখে দিয়েছিলেন। বললেন, হয়তো খুনী ভেবেছিলো সেটা সে নষ্ট করে থাকবে। তবে দেহটা পোস্টমর্টেম করতে নিয়ে যাবার সময় পিস্তলটা পাওয়া যায়। একটা সিল্কের রুমাল দিয়ে সেটার উপর থেকে হাতের ছাপ মুছে ফেলা হয়। তাহলে বোঝা যাচ্ছে মঁসিয়ে পোয়ারো, খুনী কত সাবধানী। সে সম্ভবত তার মৃতদেহটাও সরিয়ে ফেলত। যদি না বেইলার এবং ফকনার মিসেস প্রান্টের ফ্ল্যাটে এসে পড়ায় তার মৃতদেহটাকে সরিয়ে ফেলতে পারেনি।