তাই যদি হতো, কেউ তাকে দেখতে পেত না?
-ইন্সপেকটর মেজােজ, পরে আপনাকে সব বলব, আপাততঃ এটুকু জেনে রাখুন, খুনীকে সবাই লক্ষ্য করেছে কিন্তু নজর করেনি।
সবাই মিলে থানায় গেলাম। আমি আর পোয়ারো গ্রান্টের কাছে গিয়ে, তাকে সব কথা খুলে বলতে লাগলাম, যদি সে জেল থেকে ছাড়া পেতে চায়।
গ্রান্ট অনেক ইতস্ততঃ করে বলল, আমি দুধ নিয়ে এসে সরাসরি কর্তার ঘরে ঢুকেছিলুম। কর্তা খুন হয়েছেন দেখে, আমি ভাবলাম আমার পালানো উচিত। কারণ আমি এর আগে চুরির দায়ে বারকয়েক জেল খেটেছি। তাই তাড়াতাড়ি নিজের ঘরে চলে এলুম। ইতিমধ্যে বেটসী এসে চীৎকার করে ওঠায় সকলে চলে আসে। যার ফলে আমি আর পালাতে পারিনি।
–আর ঐ পুতুলগুলো? ওগুলো তোমার ঘরে এলো কি করে?
গ্রান্ট একটু লজ্জিতভাবে জানালো, ওগুলো কর্তার ঘর থেকে বেরোবার সময় নিজের ঘরে নিয়ে চলে আসি।
মৃদু হেসে পোয়ারো বলল, স্বভাব যায় না মলে। তোমার মনে হল, পালাবেই যদি, তখন একটা কিছু হাতিয়ে পালানো যাক। যাকগে এবার বলল একাজটা তোমাকে কে জুটিয়ে দিয়েছিল।
-এক ভদ্রলোক, নাম সণ্ডার্স। তার মাথায় কালো টুপী আর চোখে চশমা ছিল। তিনি আমার সঙ্গে দেখা করে বলেন যে, আমি যদি সৎপথে থাকি তাহলে তিনি একটা কাজ জুটিয়ে দেবেন।
পোয়ারো বলল, আর জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার সময় তোমার নিশ্চয়ই একজোড়া জুতো কেনবার পয়সা ছিল না। তাই মিঃ সণ্ডার্স তোমাকে একজোড়া জুতো দান করেছিলেন, তাই না? গ্রান্ট অবাক হয়ে বলে, হ্যাঁ দিয়েছিলেন। সেই জুতোই আমি পরতুম।
হাজত থেকে বেরিয়ে–আমি, পোয়ারো আর মিঃ ইনগ্লেস একটা রেস্তোরাঁয় ঢুকলাম।
ইনগ্লেস বললেন, কী, রহস্য পরিষ্কার হল?
-জলের মতো পরিষ্কার। এ কাজ যে চতুরঙ্গের; তাতে কোনো সন্দেহই নেই। সণ্ডার্স আসলে ওদের লোক। খুনের পরিকল্পনা করেই সণ্ডার্স একই সাইজের দু-জোড়া জুতো কেনে এবং গ্রান্টকে একজোড়া দেয়। নিজে সেই জুতো পায়ে দিয়ে আসে এবং খুন করে জুতোজোড়াকে হাতে ঝুলিয়ে গাড়িতে ওঠে। ঘরের মধ্যে দু-জোড়া একই রকম ছাপ দেখেছি কারণ দু-জোড়া জুতোই একই রকমের।
ইনগ্লেস বললেন, কিন্তু দিনদুপুরে তাকে কেউ দেখতে পেল না?
মৃদু হেসে পোয়ারো বলল, খুনী এসেছিল কসাইয়ের ছদ্মবেশে। দৃশ্যটা এতই স্বাভাবিক ছিল যে কেউ নজর করে দেখেনি।
আমি প্রায় চেঁচিয়ে উঠে বললাম, খাসীর ঠ্যাংটা দেখে তুমি সব বুঝতে পেরেছো, তাই না?
–ঠিক। গতকাল ছিল রবিবার, কসাইয়ের দোকান বন্ধ থাকে। অথচ ও মাংস শনিবারের হওয়াও সম্ভব নয়, কারণ এই সত্তর ডিগ্রী ফারেনহাইট টেম্পারেচারে মাংসের গায়ে নিশ্চয়ই বরফের কুচি লেগে থাকত না। সণ্ডার্স তার ছদ্মনাম এবং বেশটাও ছদ্মবেশ।
.
০৫.
খুনের আসামী হিসেবে রবার্ট গ্রান্টকে আদালতে পেশ করা হয়েছিল, কিন্তু তার বিরুদ্ধে যে সব প্রমাণ ছিল, এরকুল পোয়ারোর সাক্ষ্যের পর সেগুলি আর ধোপে টিকলো না।
সপ্তাহ কয়েক পরের কথা। পোয়ারোর ফ্ল্যাটে একদিন সকালবেলায় কথাবার্তার সময় ইন্সপেক্টর জ্যাপ এসে হাজির। তার সঙ্গে আর একজন ভদ্রলোক।
জ্যাপ বলল, মঁসিয়ে পোয়ারো, এই ভদ্রলোকের নাম ক্যাপ্টেন কেন্ট। ইনি মার্কিন সিক্রেট সার্ভিসের একজন কর্মী। ইনি আপনাকে কিছু বলতে চান। ক্যাপ্টেন কেন্ট বললেন, মঁসিয়ে পোয়ারো, আমি জানি আপনি খুবই ব্যস্ত মানুষ। তাই কোনো ভূমিকা না করেই বলি, আপনার নিশ্চয়ই মনে আছে যে, মাস কয়েক আগে আমেরিকার উপকূলের কাছে পরপর কয়েকটা জাহাজডুবি হয়েছিল। তার ঠিক আগেই জাপানে ভূমিকম্প হয়। আমরা ভূমিকম্পের ফলে জলস্ফীতির, কারণে জাহাজডুবি হয়েছে বলে মেনে নিলাম। তার কিছুদিন পরে একদল দুবৃর্তের কাছ থেকে যে সব কাগজপত্র পাওয়া যায়, তাতে বলতে পারি জাহাজডুবির অন্য কোনো কারণ থাকা সম্ভব। আরও জানতে পারি চতুরঙ্গ নামে একটা সংগঠনের কাছে এমন একটা অস্ত্র আছে যা দূর থেকে মারণ রশ্মি বিকিরণ করে কোনো বস্তুকে ধ্বংস করে দিতে পারে। আমরা এ ব্যাপারে খোঁজখবর করার চেষ্টা করেছি। শেষ পর্যন্ত আমাকে আমেরিকা থেকে ব্রিটেনে পাঠানো হয়। আমাকে একজন বিজ্ঞানীর কাছে পাঠানো হয়েছে। সেই বিজ্ঞানী এক বিজ্ঞান সম্মেলনে বক্তৃতায় বলেন, মারণরশ্মি আবিষ্কার করা এবং অস্ত্র হিসেবে তাকে কাজে লাগনো মোটেই অসম্ভব ব্যাপার নয়।
ক্যাপ্টেন থামতেই পোয়ারো বলল, বিজ্ঞানীর নাম কী?
–মিঃ হ্যালিডে। এঁর বয়স খুব অল্প।
–তার সঙ্গে দেখা করেছেন?
–না। সম্ভব হয়নি। কারণ তিনি নিরুদ্দেশ হয়েছেন।
চমকে উঠে পোয়ারো প্রশ্ন করল, কতদিন আগে তিনি নিরুদ্দেশ হয়েছিল?
-প্রায় ছ-মাস হবে।
পোয়ারো এবারে ইনস্পেক্টর জ্যাপের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, ইন্সপেক্টর, এই ভদ্রলোকটি নিখোঁজ হবার পর তার আত্মীয় স্বজনরা কি পুলিসকে সে কথা জানিয়েছিল?
জ্যাপ বলল, হ্যাঁ, তার স্ত্রী নিজে আমাদের কাছে এসে বিস্তর কান্নাকাটি করেছিলেন।
-কেন?
–মুচকি হেসে জ্যাপ বলল, প্যারিসে গিয়ে যারা নিরুদ্দেশ হয়, তাদের কখনও পাওয়া যায় না।
প্যারিসেঃ মিঃ হ্যালিডে কি প্যারিসে গিয়ে নিরুদ্দেশ হয়েছেন নাকি?
–হ্যাঁ, এতে অবাক হবার কি আছে?
–অবাক হচ্ছি…কারণ মেয়ারলিং-এর কথানুযায়ী চতুরঙ্গের তিননম্বর কর্তা একজন ফরাসী মহিলা! এখন তুমি শুধু মিসেস হ্যালিডের ঠিকানাটা আমাকে দাও। কালই তার সঙ্গে আমি দেখা করব।