–আমার প্রশ্ন, এটাকে যদি খুন বলে ধরে নেওয়া যায়, তবে কার লাভ হবে? পোয়ারো বলল জ্যাপকে।
-শুনেছি জেরাণ্ডা ছোকরা খুব উজ্জ্বল ছিল। বিস্তর ধার দেনা করেছে হয়তো, পাওনাদারদের তাগাদায় অস্থির হয়ে, ধার শোধ করবার জন্যে সে হয়তো জ্যাঠাকে খুন করেছে।
পোয়ারো গম্ভীর হয়ে বলল, দ্যাখো জ্যাপ, চালাকি করো না। জেরাল্ডা-এর মেটিভ সম্পর্কে তুমি নিশ্চিত নও। খালি হয়তো এর ওপর নির্ভর করে কাউকে সন্দেহ করা যায় না।
এরপর সন্দেহ জাগে আ-লিঙের ওপর; কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, মূল্যবান কিছু কি খোয়া গেছে?
–না। টাকাকড়ি। গয়নাগাটি সব ঠিক আছে; কিন্তু একটা পাণ্ডুলিপি পাওয়া যাচ্ছে না।
মিঃ পেণ্টার বইখানাকে প্রকাশ করার জন্যে পাবলিশারের সঙ্গে চুক্তিভঙ্গ হয়েছিলেন।
–পাণ্ডুলিপির কথাটা তুমি কার কাছে শুনলে?
–ভাইপো জেরাল্ডার কাছে।
–বইয়ের বিষয়টা কি ছিল?
–চীনের বিষয়ে। নাম দিয়েছিলেন চীনের চক্রান্ত”।
–আ-লিংকে ডেকে পাঠাও।
আ-লিং এল। পরণে চীনা জোব্বা।
তাকে প্রশ্ন করে জানা গেল, মালিকের হত্যাকারী কে? সে বলতে পারে না। সেদিন রাত্রের খাবার সেই রান্না করেছিল।
কিন্তু আফিং সে মেশায়নি। আর সে জুই-কথাটার অর্থ জানে না। চতুরঙ্গের নাম শুনে তার মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে গেল, কোনোদিন চতুরঙ্গের নাম শোনেনি বলে সে পোয়ারোকে জানাল। তারপর চলে গেল।
সে চলে যাবার পর পোয়ারো বলল, মনে হচ্ছে এ চতুরঙ্গেরই কাজ। হয়তো পেন্টার চতুরঙ্গের পয়লা নম্বর কর্তা লি-চ্যাং ইয়েনের সম্পর্কে কোনোও গোপন তথ্যের উল্লেখ করেছিলেন, তারা চায়নি সেটা প্রকাশ হোক।
কথা বলতে বলতে ঘরে এসে ঢুকল জেরাল্ড। তাকে বসতে বলে জিজ্ঞেস করা হল, সে রাত্রে আপনি কোথায় খেয়েছিলেন?
–এক প্রতিবেশীর বাড়িতে নেমন্তন্ন ছিল।
–প্রতিবেশী ভদ্রলোকের নাম?
–মিঃ উইচার্লি।
বাড়ি ফিরেছিলেন কখন?
–রাত এগারোটা নাগাদ। ডুপ্লিকেট চাবি ছিল।
বাড়িতে ঢুকবার পরে কি, এমন কিছু আপনার চোখে পড়েছিল যা সন্দেহ জনক?
বাড়িতে ঢুকে দেখলাম, চাকর বাকররা সব আলো নিভিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। জ্যাঠার ঘরেও আলো জ্বলছিল না। চুপচাপ নিজের ঘরে যাবার সময় দেখলাম, বারান্দায় উপর থেকে একটা মানুষের ছায়া সরে গেল। মনে হল, আ-লিং তবে আমি নিশ্চিত নই। ভুলও হতে পারে।
পোয়ারো বলল, শুনেছি দীর্ঘকাল জ্যাঠার সঙ্গে আপনার কোনো যোগাযোগ ছিল না। এর আগে আপনার জ্যাঠার সঙ্গে আপনার শেষ কবে দেখা হয়েছিল?
তখন আমার বয়স হবে দশ? তারপরে আমার বাবার সঙ্গে তার ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়।
–এতদিন বাদে আপনাকে খুঁজে বার করতে জ্যাঠার অসুবিধা হয়নি?
–আমার খোঁজ চেয়ে জ্যাটা বিজ্ঞাপন দিয়েছিলেন। ভাগ্য ভালো বিজ্ঞাপনটা আমার চোখে পড়ে। আমি দেখা করি।
–আপনি এখন যেতে পারেন, আর কিছু জিজ্ঞেস করার নেই।
এরপর আমরা গেলাম ডাঃ কুয়েন্টিনের চেম্বারে। তার থেকে নতুন কিছু জানা গেল না। তার সন্দেহ আং-লিং-এর ওপর।
এরপর পোয়ারো একটা বইয়ের দোকানে ঢুকে একটা বই কিনলো। তারপর হোটেলে ফিরে ঘুম। পরদিন সকালে ঘুমচোখ খুলে দেখি পোয়ারো ঐ বইখানা উল্টেপাল্টে দেখছে।
আমার ঘুম ভেঙেছে দেখে পোয়ারো বলল, রহস্যের কিনারা করবার জন্যে যে তথ্যটা জরুরী, মিঃ পেন্টার আমাদের সেটা জানিয়েই গেছেন।
-মানে?
–লোকটা মরবার আগে হঠাৎ ফুলের নাম লিখতে গেল কেন? জুই শুধু ফুলের নাম নয় বিষেরও নাম। ইয়েলো জ্যাসমিন (সোনাজুই) অতি মারাত্মক বিষ। এই বইটা থেকে জানতে পারলাম। এতে লেখা আছে, ঐ বিষ কারোর শরীরে ঢুকিয়ে দিলে তার মৃত্যু অবধারিত। বিষপ্রয়োগে হত্যা করে, তারপরে তাকে আগুনে ঠেসে ধরা হয়। মৃত্যুর আসল কারণটাকে চাপা দেবার জন্যে এই প্রয়াস। পুলিশ যদি শোনে আফিং মেশানো তরকারী তিনি খাননি, তাহলে দ্বিতীয়বার বিষ প্রয়োগের চেষ্টা হেসে উড়িয়ে দেবে।
-তরকারীতে তাহলে আফিং ছিল না, আমি বললাম।
–না। ডাঃ কুয়েন্টিন পরীক্ষা করার আগে তরকারীতে আফিং মিশিয়ে নিয়েছিলেন। সেদিন রাত্তিরে মিঃ পেন্টারকে ডাক্তার যে ইঞ্জেকশান দিয়েছিলেন আমার দৃঢ় বিশ্বাস তাতে আসলে ছিল ইয়োলো জ্যাসমিন। পেণ্টার মারা যাবার পর কেউ ঘরে ঢুকে আসল কারণটা চাপা দেবার জন্যে তার মৃতদেহটা আগুনে চেপে ধরে। মুমূর্ষ পেন্টারের লেখাটা অপরাধীরা কেউ জানতে পারেনি। জানলে নিশ্চয়ই সরিয়ে ফেলত।
–কে মিঃ পেন্টারকে আগুনে ঠেসে ধরেছিল? আ-লিং?
–না। চতুরঙ্গের নাম সে জানত। জেরার সময় তার মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে যাবার কারণ, সে চতুরঙ্গের নাম শুনে ভয় পেয়েছিল।
–তাহলে জেরাল্ডা কি মিঃ পেন্টারের ভাইপো নয়?
–ঠিক সে চতুরঙ্গের সেই ছদ্মবেশী চার নম্বর কর্তাটি। সে ভাইপো সেজে ঢুকেছিল।
–জেরাল্ডাই কি তাহলে জল্লাদ?
-না, ডাঃ কুয়েণ্টিন সেই জল্লাদ। সেও আসল ডাক্তার নয়, চতুরঙ্গের লোক। আমি জ্যাপকে বলেছি ওদের দুজনকে নজরে রাখতে।
বলতে না বলতে জ্যাপ এসে ঢুকে বলল, জেরাল্ডা পালিয়েছে, ডাঃ কুয়েন্টিনেরও খবর পাওয়া যাচ্ছে না। যাই হোক, আমরা ওদের গ্রেপ্তার করবই।
বিষণ্ণ হেসে পোয়ারো বলল, অসম্ভব।
২. সোহো অঞ্চলে
১১.
মাসখানেক পরের কথা।
সোহো অঞ্চলের একটা রেস্তোরাঁয় আমি আর পোয়ারো খাচ্ছি। জ্যাপ সেখানে খেতে এসে পোয়ারোকে জিজ্ঞেস করল, দাবা খেলায় আপনাকে আগ্রহ আছে? পোয়ারো হা বলাতে জ্যাপ জানাল রাশিয়ার বিখ্যাত দাবা খেলোয়াড় ডঃ সাবারোনফ আর আমেরিকার খেলোয়াড় গিলমোর উইলসনের মধ্যে গতকাল একটা ম্যাচের আয়োজন করা হয়েছিল। কিন্তু উইলসন খেলার শুরুতেই হার্টফেল করে মারা যান। কিন্তু আমাদের সন্দেহ তার এই মৃত্যু মোটেই স্বাভাবিক নয়, তাকে বিষ খাইয়ে মারা হয়েছে।