পোয়ারো বলল, হেস্টিংস। জুই রহস্য তুমি বেশ গুছিয়ে বলো তো আমায়।
বললাম, বেশ; এই রহস্যের কেন্দ্র চরিত্র হচ্ছেন মিঃ পেন্টার। ইংরেজ বয়স পঞ্চান্ন, ধনী, শিক্ষিত মানুষ, ইংল্যান্ডের হ্যাণ্ডফোর্ডে স্থায়ীভাবে বসবাস করার জন্যে একটা বাড়ি কিনেছিলেন। আত্মীয় বলতে একটিমাত্র ভাইপো জেরাণ্ডাকে তিনি খুঁজে বার করে তাকে অনুরোধ করেন তার সঙ্গে বসবাস করার জন্যে। এ প্রায় মাস সাতেক আগের কথা। তারপর এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। ভাইপো ছাড়া তার বাড়িতে ছিল সাতটা চাকর, তার মধ্যে একটি ভৃত্য ছিল চীনে, নাম আ-লিং।
গত মঙ্গলবার রাত্তিরের খাবার খেয়ে মিঃ পেন্টার অসুস্থ বোধ করলে ডাক্তার ডাকা হয়। ডাক্তার এসে তাকে পরীক্ষা করার সময় কেউ ঘরে ছিল না বা পেন্টারের সঙ্গে কি কথা হয় তা কেউ শোনেননি। তবে বিদায় নেওয়ার সময় ডাক্তার বলেন, পেন্টারের হার্ট খুব দুর্বল, তাকে একটা ইনজেকশান দেওয়া হয়েছে। ডাক্তার চাকর বাকরদের গুটিকয় প্রশ্ন করেন, কার বাড়ি কোথায়, কে কতদিন যাবৎ কাজ করছে। এই প্রশ্নে পরিচারিকারা বিস্মিত হয়ে পড়ে। যাই হোক পরদিন সকালে পেন্টারের পড়বার ঘর থেকে একটা চিমসে গন্ধ পাওয়া গেলে ঝি দরজা ঠেলে দেখে ভিতর থেকে বন্ধ। তখন সে চীনে ভৃত্যটাকে এবং জেরাণ্ডাকে ডেকে আনে। তারা দরজা ভেঙে ঢুকে দেখে মিঃ পেন্টার গ্যাস উনুনের মধ্যে মুখ গুঁজে পড়ে আছেন। মুখখানা পুড়ে গিয়ে চেনার অযোগ্য হয়ে গেছে।
–সবাই ভেবেছিল যে হঠাৎ হয়তো মাথা ঘুরে তিনি গ্যাসের উনুনে পড়ে গিয়েছেন। এমনটা ভাবার কারণ, তিনি ছিলেন অসুস্থ এবং তাকে কুয়েন্টিনের মতে কড়া ইঞ্জেকশান দেওয়া হয়েছিল।
কিন্তু তারপরই একটা অদ্ভুত জিনিষ চোখে পড়ল, একটা খবরের কাগজে কাঁপা কাঁপা হাতে বড় বড় অক্ষরে কে যেন লিখে রেখেছে; জুই। মিঃ পেন্টারের ডান হাতের তর্জনী কালি মাখা এবং উল্টানো দোয়াত দেখে কোনো সন্দেহ রইল না যে, কথাটা মিঃ পেন্টারই লিখেছেন।
–কিন্তু তিনি জুই কথাটার দ্বারা কি বোঝাতে চেয়েছেন। এ প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়নি। পেন্টারের বাড়িতে লতানে জুইয়ের ঝাড় ছিল।
–জানা গেল ডাঃ কুয়েন্টিন এ পরিবারে নতুন ডাক্তার। তার আগে ডাঃ বেলিথোই মিঃ পেন্টারের নিয়মিত চিৎকার করতেন। মাসখানেক তিনি ছুটিতে বাইরে যাওয়ায়, ঠিক হয় ডাঃ বেলিথোর অনুপস্থিতিতে ডাঃ কুয়েন্টিন চিকিৎসা করবেন। ডাঃ কুয়েন্টিনের সাক্ষী থেকে জানা গেল : মিঃ পেণ্টার ঘটনার দিন তাকে একটা অদ্ভুত কথা বলল। আসলে সেদিন এমন একটা তরকারি তাকে পরিবেশন করা হয়, যার গন্ধটাই কেমন সন্দেহজনক। আ লিঙয়ের অগোচরে সেই তরকারী কিছু অংশ তুলে রেখেছিলেন, তারপর ডাঃ কুয়েন্টিনকে সে তরকারীটা পরীক্ষা করে দেখতে বলেন। পেন্টারের ধারণা হয়েছিল তাকে বিষ মিশিয়ে হত্যার চেষ্টা চলছে।
-সাক্ষ্যে কুয়েন্টিন আরো জানান, যদিও সেদিন মিঃ পেন্টার অসুস্থ বোধ করছিলেন না তবুও সাবধানতার জন্যে তাকে তিনি একটা স্ট্রিকানন ইজেকশান দেন। ল্যাবরেটরিতে তরকারী পরীক্ষা করে দেখা যায়; তাকে গুড়ো আফিং মেশানো রয়েছে। সবটা বলে আমি চুপ করলাম।
পোয়ারো বলল, এসো, ব্যাপারটা একটু খতিয়ে দেখা যাক। তরকারীটা রান্না করেছিল আ-লিং। কিন্তু সে আফিং মিশিয়ে পেন্টারকে মারতে চাইবে কেন? এদিকে জেরাল্ডকেও সন্দেহ তালিকা থেকে বাদ দেওয়া যায় না, কারণ, তাড়াতাড়ি জ্যাঠার সম্পত্তি পাবার লোভে সে তাকে মারতে চেয়েছিল। আরো দেখা যাচ্ছে, জ্যাঠার সঙ্গে একসাথে খেলে তাকেও ঐ তরকারী পরিবেশন করা হবে, তখন না খেলে সন্দেহজনক দেখাবে। তাই সেদিন জেরাল্ড বাইরে এক প্রতিবেশীর বাড়িতে ডিনার সেরেছিল।
আমি বললাম, খাওয়া সেরে অনেক রাতে জেরাল্ডা বাড়ি ফিরে দেখে জ্যাঠার ঘরে আলো জ্বলছে সে বুঝল, প্ল্যান ভেস্তে গেছে, বুড়ো মরেনি। তাই সে বুড়োকে গ্যাস উনুনে ঠেসে ধরল।
-কিন্তু হেস্টিংস, পোয়ারো বলল, ব্যাপার অদ্ভুত লাগছে না? বুড়ো নিশ্চয়ই বাঁচবার জন্যে একটু ধস্তাধস্তি বা চীৎকার করবে। কিন্তু পেন্টারের ঘরে ধস্তাধস্তির চিহ্ন ছিল না। চীৎকারও কেউ শোনেনি। কিন্তু একটা ব্যাপার লক্ষনীয় মিঃ পেন্টার দীর্ঘদিন চীনে ছিলেন, অতএব এখানেও লি চ্যাং ইয়েনের হাত থাকলে, আমি অবাক হবে না। কিন্তু, না চলো, আমাদের গন্তব্যস্থল এসে গেছে। নামা যাক।
.
১০.
প্ল্যাটফরমে জ্যাপ দাঁড়িয়েছিল। আমরা তার সঙ্গে ক্রন্ট ল্যাগুস অর্থাৎ মিঃ পেন্টারের বাড়ি গেলাম।
সুন্দর সাদা, ছোট বাড়ি। জুই লতা উঠে গেছে। পোয়ারো বলল, কী মনে হয় জ্যাপ, দুর্ঘটনা না খুন?
-তরকারীতে আফিং মিশিয়ে কেউ তাকে খুন করার চেষ্টা করেছিল যেহেতু, সেহেতু আগুনে পুড়ে মারা যাবার ঘটনাকে নেহাত দুর্ঘটনা বলে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
-বাঃ, বেশ বুদ্ধিমানের মতো কথা বলছো জ্যাপ। যে ঘরে পেণ্টার মারা গিয়েছিল সেই ঘরে গেলাম আমরা।
পোয়ারো প্রশ্ন করল, জানালায় ছিটকিনি লাগানো ছিল না?
ঘাড় চুলকে জ্যাপ বলল, সেটা ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। ডাক্তার পরীক্ষা করে দরজাটা ভেজিয়ে দিয়ে চলে যায়। পরদিন ঝি দরজা ঠেলে দেখল ভিতর থেকে খিল দেওয়া। আ-লিং বলছে, জানলায় ছিটকিনি লাগানো ছিল না। ডাঃ কুয়েন্টিন বলেছেন, জানালাটা ভেজান ছিল বটে কিন্তু খুব সম্ভব তাতে ছিটকিনি লাগানো ছিল না। ঝি বলছে, সকলে দরজা ভেঙে ঢোকার পর জানালাটা খুলে দেওয়া হয়, ছিটকানি আঁটা ছিল কিনা তার মনে নেই।