ওর ইনকোয়েস্ট গত পরশু হবে। মেডিক্যাল সাক্ষ্যে দেখা যাচ্ছে কোনো ফল কাটার ছুরি দিয়ে সে হাত চিরেছে। ভদ্রমহিলা সত্যি অন্ধ। তিনি নর্থ কান্ট্রি স্কুলের শিক্ষিকা ছিলেন কিন্তু ১৬ বছর আগে দৃষ্টি হারিয়ে বেলপদ্ধতি শিক্ষা করে আরলবার্গের চাকরি নেন। তারা প্রতিবেশীদের জেরা করতে চান।
উইলিব্রাহাম ক্রিসেন্ট হলো একটি অভিজাত এলাকা। ঐ বেলা একটার সময় কেউ লক্ষ্য করেনি। ক্যাসেল বললেন, আঠারো নম্বর বাড়িতে থাকেন মিঃ ওয়াটারহাউস। ভদ্রলোক গেসমহোর্ক এন্ড সুট্যেম জ্যন কোম্পানির ম্যানেজিং ক্লার্ক। ওর বোন ওকে সামলায়। কুড়ি নম্বরে এক মহিলা বেড়াল নিয়ে থাকে।
.
০৭.
আঠারো নম্বর উইলিব্রিহাম ক্রিসেন্ট। মিঃ ওয়াটারহাউস অনেকটা নিশ্চিতভাবে বাড়িতে সিঁড়ি বেয়ে নামছিলেন। হঠাৎ বোনকে বললেন যে তুমি যে-সঠিক এ ব্যাপারে তুমি নিশ্চিত?
ভদ্রমহিলা সামান্য বিরক্ত হয়ে বললেন, তুমি কি বলতে চাইছ আমি তো ঠিক বুঝতে পারছি না জেমস!
এবাভে মিঃ ওয়াটারহাউস বোনের দিকে জবাবদিহির মতো তাকালেন। মিঃ ওয়েটারহাউস এবার সলিসিটারের কাছে যাবার জন্য প্রস্তুত হলেন। ওর মাথার চুল ধূসর। এদিকে ওর বোন মিস ওয়াটারহাউস কিছুটা লম্বাটে ধরনের কৃশকায় চেহারার। অন্যের বোকামি দেখতে তিনি একটু বেশি মাত্রায় উত্তেজিত হয়ে পড়েন। বোন মনে করেন তার দাদা খুন হতে পারে। ওর দাদা বলে উঠলেন যে, খুনী বাড়ি থেকে রোজ একটা করে শিকার বেছে নেয়। মিঃ ওয়াটারহাউস বললেন, এডিথ তুমি এমন কথা বলছে। মিস ওয়াটারহাউস দাদার দিকে তাকিয়ে দৃঢ়স্বরে বলে উঠলেন, আমার দেখতে ইচ্ছে করছে, কোনো একজন এখানে এসে আমাকে খুন করার চেষ্টা করছে।
মিঃ ওয়াটারহাউসের কাছে বোনের কথাটা তেমন একটা মনে হলো না। তিনি ভাবলেন স্বয়ং যদি খুনের শিকারের কথা ভাবলেন তাহলে বোনকে নিশ্চয়ই বাছতেন না। এডিথ বললেন, এখন খুন নিয়ে নানা ধরনের গুজব চলছে। এডিথ অবশ্য কোনোদিনই গুজবে কান দেয় না। তবু ব্যাপারটা উপভোগ করতে ছাড়লেন না। তিনি বললেন, এই ভদ্রলোক নাকি আরলবার্গ ইনস্টিটিউশনের ট্রেজারার কিংবা ট্রাকি। এই সংক্রান্ত ব্যাপারেই হিসাবনিকাশের ব্যাপারে কিসব গোলমাল হয়েছিলো। সে ব্যাপারেই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ভদ্রলোক এসেছিলেন মিঃ পেবমার্সের কাছে।
মিঃ ওয়াটারহাউস মানতে চান না, তিনি বললেন, একটুকরো তার ওর গলায় জড়িয়ে দিয়ে ওকে শ্বাসরোধ করে মেরেছেন, ভদ্রলোক মোটেই সতর্ক ছিলেন না। আর কেই-বা একজন অন্ধ নিরীহ মহিলার সঙ্গে কথা বলতে অতশত ভাবে। তার অর্থ অবশ্য এই নয় যে, ব্যাপারটা আমি কিভাবে করছি। তার ধারণা তিনি একজন চমৎকার স্বভাবের মহিলা। ওকে গোঁড়া আর অসংযমী বলে মনে হয় না। শিক্ষা ছাড়াও জেনে রাখো পাশাপাশি আরো অনেক ব্যাপার থাকতে পারে। উনি যে স্কুলে পড়ান সেই স্কুলটা দেখতে অদ্ভুত। এই তো মিসেস হেড বলছিলেন ওর ছেলে সুসাম নাকি বলেছে ওদের নতুন ক্লাসরুমটা একেবারেই পছন্দ নয়। জানলাগুলো দিয়ে নাকি বাইরে একেবারে তাকানো যায় না। সেইজন্য নাকি লেখাপড়ায় একেবারে মন বসে না। মিঃ ওয়াটারহাউস গলফের জিনিসপত্র যে ব্যাগে রাখা ছিলো সেখানে গিয়ে ব্যাগ থেকে একটা খেলার লাঠি বের করলেন। তারপর সেটাকে সদর দরজার সামনে সুপরিকল্পিতভাবে রেখে দিলেন। তিনি বললেন যে, জেমস ভীষণ বোকা। যেকোনো পরিস্থিতির জন্য সব সময় তৈরি থাকা ভালো।
এসব করে যখন শোবার ঘরে হাজির হলেন মিস ওয়াটারহাউস, ঠিক তখনই মিসেস হেড হন্তদন্ত হয়ে সিঁড়ি বেয়ে উঠে এলেন ওপরে। বললেন, শোনো দুজন ভদ্রলোক আমার সঙ্গে দেখা করতে চান। ভদ্রলোক হলেও ওরা পুলিশের লোক। ডিটেকটিভ ইনসপেক্টর হার্ড ক্যাসেল তাকে জেরা করবেন।
মিসেস হেড মিস ওয়াটারহাউসকে নিচে যেতে বললেন। মিস ওয়াটারহাউস বললেন, ঠিক আছে। আমি নিচে যাচ্ছি। মিসেস হেড এবারে বলে উঠলেন, তার মনে হয় ওরা তোমাকে পেবমার্সের কথা জিজ্ঞাসা করবেন। নিশ্চয়ই জানতে চাইবেন এই মহিলার আচরণে তুমি কোনোরকম অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করেছে কিনা। ওদের ধারণা মাঝে মাঝে কারো আচরণে কোনোরকম অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করাটা আশ্চর্যের কিছু নয়। অবশ্য ধীরে ধীরে নাকি ব্যাপারটা আরো বেড়ে যেতে থাকে।
হার্ড ক্যাসেল বললেন যে, আপনি নিশ্চয়ই বুঝেছেন কেন আমি এসেছি? নিশ্চয় শুনেছেন গতকাল আপনার পাশের বাড়িতে কি ঘটেছে?
তিনি বললেন পাশের বাড়িতে কেউ খুন হলে সেটি সাধারণত নজরে না এসে যায় না। অবশ্য আগেই জনাদুয়েক সাংবাদিক এসেছিলেন আমার কাছে। তাদের তিনি ফিরিয়ে দিয়েছেন। হার্ড ক্যাসলে বললেন, তিনি ঠিক করেছেন। ঐসব সংবাদিকরা সব জায়গাতেই গর্ত করে পথ করে নিতে পছন্দ করে। অবশ্য আপনি যে এসব মোকাবিলা করার ব্যাপারে সক্ষম তাতে আমার কোনো সন্দেহ নেই। অবশ্য তিনি যদি সত্যিই কিছু দেখে থাকেন তাহলে তা আমাদের কাছে আলোকপাত করলে আমরা কৃতজ্ঞ থাকবো।
হার্ড ক্যাসেল বললেন, খুনটা দেড়টা থেকে আড়াইটার মধ্যে করা হয়েছিল। ওয়াটারহাউস বললেন, তিনি এখানেই ছিলেন। খুন ঠিক কে করেছে আজকে খবরের কাগজে এটা এখনও জানতে পারেনি। হার্ড ক্যাসেল জানালনে, মিস পেবমার্স আমাদের আশ্বাস দিয়ে বলেছেন, ঐসময় তিনি কারো আসার প্রত্যাশায় ছিলেন না। আর ভদ্রলোক সম্পর্কে ওর কোনোরকম ধারণাই নেই।