মিস মাটিনডেলের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে এলাম। দেখলাম জনাতিনেক টাইপিস্ট মহিলা যাবার জন্য তখন প্রস্তুত হচ্ছে। সবাই জিনিসপত্র গুছোতে ব্যস্ত। এডনা নিজের জুতো নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। করুণ স্বরে পাশের মহিলাটিকে বললো এডনা, মাত্র কয়েকমাস হলো জুতোটা কিনেছি। আর এর মধ্যেই দ্যাখো হিলটা বেরিয়ে এসেছে। এতে দামী জুতো।
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে উঠলো আবার, আর ঐ কাছের দোকানের সামনে যতসব বিশ্রী গর্ত, গর্তে পড়েই আমার জুতোর এই হাল। এখন কি করে আমি বাড়ি যাবো বুঝতে পারছি না।
রিসেপসনিস্ট এডনার মুখটা খুব করুণ দেখাচ্ছিল। ঠিক তখনই আমরা ওদের কাছাকাছি গিয়ে হাজির হলাম। আমি এবার হার্ড ক্যাসেলের দিকে তাকিয়ে বললাম, তাহলে ডিক তোমার সন্দেহ থাকা সত্ত্বেও শীলা ওয়েবের কাহিনীটা পুরোপুরি সত্যের দিকে বাঁক নিয়েছে।
হার্ড ক্যাসেল জবাবে বললো, ঠিক আছে, তুমি জিতেছে।
.
০৫.
মিসেস মার্টিনের মুখটা কেমন কঠিন ধরনের। একমনে বাসনগুলো ধুয়ে যাচ্ছিল ও। ইতিমধ্যে অ্যানি এসে জানালো একটা পুলিশের জীপ এসে দাঁড়িয়েছে বাড়ির সামনেই। দুজন পুলিশ অফিসার নেমে এদিকেই আসছে। কথাটা শোনামাত্রই ভুরু কুঁচকে মার্টিন তাকালো অ্যানির দিকে। অ্যানি বারান্দায় এসে খুলে দিলো দরজাটা। সামনে দুজন অফিসার। অপেক্ষাকৃত লম্বাটে চেহারার অফিসারটি বললেন, তুমিই মার্টিন। মার্টিন জবাবে বললে, হ্যাঁ। ইনসপেক্টর বললেন যে, তিনি তার সঙ্গে একটু কথা বলতে চান। মার্টিন-এর ছেলে এরনির সামনে কথা বলা হচ্ছিল।
মার্টিন বললো যে, অন্ধ মহিলাটি খুব সুন্দরভাবে কাজকর্ম করেন। দেখে বোঝা যায় না যে উনি অন্ধ। ওখানে তিনি দশটা নাগাদ যান, ফেরেন ১২ নাগাদ। কোনো কোনো দিন কাজকর্ম থাকলে একটু দেরি হয়ে যায়। ভদ্রলোকের মৃতদেহ সম্পর্কে তাকে জানানো হলে সে বলে যে, খুন-টুনের ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না। সে বললো, আজ সকালে কেউ মিস পেবমার্সের সঙ্গে দেখা করতে আসেনি। তবে সে হলে সেরকম কোনো লোককে ঘরে ঢুকতে দিতো না। কারীর নাম শুনে তিনি বললেন, এটা ভারতীয় নাম কিন্তু তা নয়। মৃতদেহটি প্রথম একটা যুবতী–একটা কোম্পানির স্টেনো-টাইপিস্ট, ওকে কাজের জন্য ডাকা হয়েছিল, সেজন্য ওর মিস পেবমার্সের বাড়িতে আসা–আবিষ্কার করে। এটা ক্যাসেল তাকে জানালেন।
মার্টিন বলতে লাগলো, বসার ঘরে দুটো ঘড়ি একটা কাকাতুয়া ধ্বনি ও একটা গ্র্যান্ডফাদার ক্লক আছে। যদি আর একটা থাকতো তাহলে তার চোখে নিশ্চয়ই পড়তো। সে বললো যে, পৌনে বারোটা নাগাদ বাড়িতে ফিরেছেন। সাধারণতঃ মিস পেবমার্স বারোটা থেকে সাড়ে বারোটার মধ্যে বাড়ি ফেরেন। মাঝে মাঝে সময়টা একটু বেশি হয়ে যায়। সে বললো, তিনি ওখানে যাবার আগেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেছিলেন। সে বললো, তার খুব অদ্ভুত লাগছে যে, কিভাবে ঘড়িগুলো এখানে এলো, মাস চারেক আগে মিস পেবমার্স নীলামে তৈরি চুলের কার্পেট পেয়েছিলেন। খুবই ভালো অবস্থা ছিলো তার। তিনি তাকে বলেন, সেটা খুব সস্তায় পেয়েছিলো। কয়েকটা মফঃস্বলের কার্পেট পেয়েছিলেন তার সঙ্গে সেগুলো ছিলো তুণের মতো। এরপর ইনসপেক্টর বিদায় নিলেন।
.
০৬.
কলিন ল্যাম্বের বিবৃতি
ওখান থেকে আমরা বেরিয়ে একটা রেস্তরাঁয় গেলাম। শেষে ডিক ক্যাসেল আমার দিকে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।
হার্ড ক্যাসেল তাকে বললো, পরের মাসেই তো লারকিন-এর শুনানী। বেশ অদ্ভুতভাবে এতদিন ধরে ও দুনম্বরী কাজকর্ম চালিয়ে যাচ্ছিলো। তুমি নিশ্চয়ই কাউকে সন্দেহ করতে।
সে বললো, লারকিন অফিস থেকে কাগজপত্র সরিয়ে নিতো। তারপর সেগুলোর ছবি তুলে নেওয়া হতো। এরপর সেইদিনেই কয়েক ঘণ্টার মধ্যে খুব সাবধানে ঐ কাগজপত্র আগের জায়গায় রেখে দেওয়া হত। সংগঠন ছিলো বেশ ভালো। লারকিন যখন সেখানে কোট ঝুলিয়ে রাখতো, ঠিক তারই পাশে একই রকমের দেখতে এটা কোট পাল্টে নেওয়া হত। বেশ পরিকল্পনা মাফিকই নিয়মিত ঘটনাটা ঘটানো হতো। এ ব্যাপারে নিশ্চয়ই কারো বুদ্ধি কাজ করতো।
লারকিন কোথাও কিভাবে পাওনাগণ্ডা পেতো তা তিনি জানেন। ওরা তাদের হেড-কোয়ার্টারের পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজের ছক তৈরি করত। ওখানে পৌঁছবার একটা সূত্র আছে। অর্থ রোজগার করার জন্য এটা করতো।
হার্ড ক্যাসেলের কথায় সে বললো, লারকিনকে ধরার আগেই অনেক মূল্যবান খবরাখবর এইভাবে পাচার করে দিয়েছিলো, সে কারণে ওকে তারা আরো কিছু পাচার করার সুযোগ দিয়েছিল।
আমি বললাম ওকে, লোকে যেরকম এটাকে রোমাঞ্চকর কাজকর্ম ভাবে, তা মোটেই নয়। এখন আর কোনো রোমান্স নয়। আমরা সবাই পরস্পরের গোপন ব্যাপার জানি। এমন কি আমাদের এজেন্টও দেখা যায় অনেক সময় বিরুদ্ধ পক্ষেরও এজেন্ট বটে। এর বিপরীতও বটে। এ ধরনের বিপজ্জনক এজেন্টরা অনেক সময় ভাবনার কারণ হয়ে ওঠে। সেকারণে এখন গোপনে চক্রান্ত করে কোনো ফল পাওয়া যায় না। ডিক বললো, তুমি কেন এখনও পোর্ট লিবিউরিতে ঘুরে বেড়াচ্ছো আমি বুঝতে পারছি। কিন্তু ক্রাডিয়াল তো পোর্ট লিবিউরির থেকে দশ মাইলের বেশি দূর।
তারা যাদের পেছনে ঘুরছে তারা ক্রিসেন্টে রয়েছে। ওখানে ক্রিসেন্ট মুন বলে একটা রেস্তরাঁ ছিলো। সে কারণে পোর্ট লিবিউরি থেকে আরম্ভ করা হলো।