ক্যাসেলের মনে হয় না ঐ মৃত ব্যক্তিটাকে ঘরের মধ্যে আসতে দিয়েছেন পরিচারিকা। একথা তিনি তার কাছ থেকেই জানলেন। ভদ্রলোক সম্যক কোনো একটা কারণেই তার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন। কারণটা ব্যবসায়িক কিংবা ব্যক্তিগত যে কোনো কারণ হতে পারে। বেলা ১-৩০ থেকে ১-৪৫ টার মধ্যে তাকে ছুরি মেরে খুন করা হয়। দরজা খোলা ছিল বলে তার আসা অসম্ভব নয়।
মিস পেবমার্সকে জিজ্ঞাসা করা হলো মিরিক্যারী এই ঘড়িগুলো সঙ্গে নিয়ে এসেছে। পেবমার্স বললেন, সেগুলো বয়ে আনার কোনো চিহ্ন নেই। এখন প্রশ্ন হলো, যে এনেছে ঘড়িগুলোকে পকেটে করে নিয়ে এসেছে। এছাড়া সব ঘড়িতেই সাড়ে-চারটে বেজে ছিলো এ ব্যাপারে আপনার মত কি?
পেবমার্সের ধারণা এটা কোনো উন্মাদের কাজ। মিস পেবমার্সকে, হার্ড ক্যাসেল বললেন যে তিনি ঘড়িগুলো নিয়ে যেতে চান এবং তার বিনিময়ে একটি রসিদ দিতে চান। পেবমার্স বললেন, ওগুলো তার জিনিস নয় সেই বুঝে কাজ করবেন।
ইতিমধ্যে শীলা কলিনের সঙ্গে দরজার দিকে এগোলেন। মাঝপথে দাঁড়িয়ে হঠাৎ বলে উঠলেন, তাহলে চলি। হঠাৎ শীলা বাইরে এসে বললেন, তার গ্লাভসগুলো বাইরে ফেলে এসেছে। শীলা বললেন যে, তিনি একমাত্র জানেন এগুলো কোথায় আছে। শীলা বাড়ির ভেতর ঢুকে গিয়ে ওটি পেল না।
শীলা যখন বাড়ির ভেতর ঢুকতে যাচ্ছে তখন কলিনের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে শীলা চলে গেলো। হার্ড ক্যাসেল অ্যালেনকে বললেন যে তিনি কিছু জায়গায় যেতে চান, তার জন্য কলিনকেও নিয়ে যেতে চান। কলিন যাবার সম্মতি দিলো।
.
০৪.
কলিন ল্যাম্বের বিবৃতি
আমরা কোথায় যাবো? ডিককে জিজ্ঞাসা করা হলো। ও ড্রাইভারকে বললো, ক্যাভেনডিস সেক্রেটারি অফ ব্যুরো প্যালিস স্ট্রিটে। ডানদিক বরাবর এসপ্ল্যানেডে।
গাড়িতে নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছতে চারটে সিঁড়ি উঠে তবেই বিল্ডিং-এর সদর দরজা। তারা দুজন খোলা দরজা দিয়ে ঢুকলেন। ঢুকেই ডান দিকে একটা দরজা। একপাশে লেখা আছে, দয়া করে আসুন।
ঘরটা বেশ বড়ো, তিনজন টাইপিস্ট পাশাপাশি বসে টাইপ করছিলো। একজন মহিলাকে বললো, মিস মার্টিডেলকে চাই। তার ঘরে যখন যাওয়া হলো তখন ডিক একটা কার্ড বের করে তার দিকে এগিয়ে দিলেন। তার চোখ বিরক্তি ও বিস্ময়ে কুঁচকে গেলো।
মিস মার্টিনডেল-এর ডেস্কের ঠিক ওপরেই দেওয়ালে ফটোগ্রাম টাঙানো একজন আরিয়ান অলিবার যিনি রহস্য উপন্যাসের লেখক, আর একজন গ্যারি গ্রেসজন যিনি থ্রিলার রাইটার। ওর পাশে সিরিয়ম হর্গের ফটোগ্রাফ। এছাড়া একজন টাকওয়ালা লোকের ছবিও আছে। পুরুষগুলোর বেশির ভাগেরই মুখের পার্থক্য আর পরনের পোশাক এক।
তিনি বললেন তার কাছে শীলা ওয়েব নামে একটি মেয়ে কাজ করে। সে এখন নেই। দুপুরবেলা একটা বিশেষ কাজে গেছে। এসপ্ল্যোনেড থেকে বিকেল পাঁচটা নাগাদ কারলো হোটেলে ও একটা বিশেষ কাজে যাবে। বছরখানেক ধরে সে এখানে কাজ করছে। ও এই কাজের আগে কিছু কাজ করতো কিনা তা ওর ফাইল দেখে জানা যাবে। তবে মনে হয় লন্ডনের কোনো ব্যবসায়িক সংস্থায় কাজ করতো। ওর টাইপ একেবারে নিখুঁত, ওর পারিবারিক ব্যাপার তিনি জানেন না। তবে ও নাকি এক মাসির কাছে থাকে। তিনি বললেন যে মিস পেবমার্সের কাছে সে গেছে। তিনি একজন শর্টহ্যান্ড টাইপিস্ট জানা মহিলা চান। তিনি ফোন করে জানতে চান কোন মহিলাটি দরকার। তিনি দুটো বাজতে দশ নাগাদ ফোন করেছিলেন। তিনি অবশ্য প্যাডে সেটা নোট করে নিয়েছেন।
তিনি প্যাডের পাতা উল্টে বললেন, উনপঞ্চাশ মিনিট। তিনি তার গলা চেনেন না। তবে তিনি ফোনে তার পরিচয় দিয়েছিলেন। তাকে জানানো হলো যে মিস পেবমার্স ফোনের কথা অস্বীকার করেছেন। মিস মার্টিনডেল বললেন, সত্যিই ব্যাপারটা ভারী অদ্ভুত।
তিনি বললেন, তার ফোন এসেছিলো কিন্তু তিনি নিশ্চিত নন ফোনটা কে করেছিলো। মিস মার্টিনডেল এই রসিকতার কোনো অর্থ খুঁজে পেলেন না। আসলে শীলা ওয়েবকে চাওয়ার একটা কারণ ছিলো। কারণ শীলা ওয়েব বললেন যে, তিনি ওর কাছে কাজ করেছেন।
ইনসপেক্টর বললেন যে, সে অনেক জায়গায় কাজ করে তবে সে এই জায়গায় কাজ করেছে। তো নিশ্চিত নয়।
হার্ড ক্যাসেল বললেন, শীলা উনিশ নম্বর উইলিব্রাহাম ক্রিসেন্টে গিয়ে পৌঁছেছিলো। তারপর সোজা ওর বাড়িতে ঢুকে বসার ঘরে গিয়ে বসেছিলো। সেখানে গিয়ে ও যে মৃতদেহ দেখে, এটা শুনে মার্টিনডেল ভয় পেয়ে যায়। বেশ কিছুক্ষণ ওর মুখ দিয়ে কথা বেরোলো না।
ক্যাসেল বলে উঠলো, মিস মার্টিনডেল, কারী নামটা শুনে আপনার কিছু মনে হচ্ছে? মি. আর, এইচ. কারী।
ক্যাসেল বললেন, উনি মেট্রোপলিটন এ্যান্ড প্রভিন্সিয়াল ইনসিওরেন্স কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত।
ইনসপেক্টর বললেন, তার দুদিকেই অংশ, একদিকে মিস পেবমার্স আপনাকে ফোনে শীলাকে চেয়েছিলো। আর অন্যদিকে মিস পেবমার্স ব্যাপারটা অস্বীকার করেছেন। শীলা তারপর গিয়েছিলো ওখানে। সেখানেই সে একজন মৃত ব্যক্তিকে আবিষ্কার করে। কিছু বুঝতে পারলেন।
মার্টিনডেল বললেন, তার ব্যাবসা ভালোই চলছে। প্রথমটায় ছোটোখাটো ভাবে আরম্ভ করেছিলাম। তারপর বাড়িয়েছি। এখন আমার এখানে আটজন মেয়ে কর্মচারী আছে। ওরা সবসময়েই কাজে ব্যস্ত।
দেওয়ালে টাঙানো লেখকদের ছবিগুলো দেখছে হার্ড ক্যাসেল। মিস মার্টিনডেল বললেন, শুরুতে আমি লেখকদেরই বিশেষজ্ঞ ছিলাম। আপনি নিশ্চয়ই বিখ্যাত থ্রিলার লেখক গ্যারি জনসনের নাম শুনেছেন। শেষে ওর অনুমোদন পেয়ে আমি এখানে এই সংস্থা তৈরি করি। যে কোনো প্রয়োজনীয় রিসার্চে আমি ওদের সাহায্য করি। যেমন আইন সংক্রান্ত খুঁটিনাটি, পুলিশি নিময়কানুন কিংবা বিভিন্ন ধরনের বিষয়ের তথ্যাবলী এরকম নানা ধরনের ব্যাপার আছে। লেখকেরা বিদেশে কোথাও তাদের উপন্যাস রাখতে চাইলে আমরা ওদের প্রয়োজনীয় নাম ঠিকানা প্রভৃতি দিয়ে দিই।