অন্য ঘড়িগুলোর কথা জিজ্ঞাসা করতে তিনি বললেন, তার বসার ঘরে অন্য সব ঘড়ি একঘণ্টা করে ফাস্ট করা আছে।
মিস পেবমার্স বললেন, আপনি অন্য ঘড়িগুলো, কি বলতে চাইছেন তিনি বুঝতে পারছেন না। বসার ঘরে আর কোনো ঘড়ি নেই।
.
০৩.
হার্ড ক্যাসেল চমকে উঠলেন যখন তাকে অন্য ঘড়িগুলোর কথা বলা হলো। তিনি বললেন যে একরকম কোনো ঘড়ি তার ঘরে ছিলো না। তারপর বললেন যে যদি বিশ্বাস না হয় তাহলে মিস কার্টিনকে জিজ্ঞাসা করা যেতে পারে। হার্ড ক্যাসেল তাকে পাশের ঘরে আসতে বললেন। মিস পেবমার্স ঐ ঘড়িগুলো নিজে পরীক্ষা করতে চান। তারপর বললেন যে ঘড়িগুলো তো তিনি দেখতে পাবেন না। তাকে হাত দিয়ে স্পর্শ করে অনুভব করতে হবে।
মিস পেবমার্সকে নিয়ে হার্ড ক্যাসেল ওখান থেকে বেরিয়ে এলেন। ওখানের লোক বললো যে স্যার, আমরা প্রায় কাজ শেষ করে এনেছি। মিস পেবমার্স বললেন যে, কাকাতুয়া ঘড়ি আর গ্রান্ডফাদার ঘড়িটা ছাড়া আর কোনো ঘড়ি ওর নেই। হার্ড ক্যাসেল এরপর কিভাবে এগোবেন সে ব্যাপারে একেবারেই নিশ্চিত হতে পারছেন না। তার দিকে তিনি অনুসন্ধানী দৃষ্টিতে তাকালেন। ভদ্রমহিলা যে খুব অবাক হয়ে গেছেন এটা বুঝতে মিঃ ক্যাসেলের অসুবিধা হলো না। মিস পেবমার্স এটা কিছুই বুঝতে পারেন না।
ইন্সপেক্টর ক্যাসেল ফিং বারপ্রিন্টি বিশেষজ্ঞদের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, ঘড়িগুলো পরীক্ষা হয়ে গেছে।
একজন বললো, ঘড়ির উপর কোনো ছাপ নেই। থাকা সম্ভব নয়। ওটার ওপর দিকটায় কোনো ছাপ লাগে না। চীনা ঘড়িটার ক্ষেত্রে ঐ একই ব্যাপার। চামড়া আর রুপোর ঘড়িটাতেও কোনো ছাপ পাওয়া যায়নি।
অবশ্য বস্তুগুলোতে স্বাভাবিক সম্ভাবনা থাকতেও পারে। সেখানে অবশ্য ছাপ থাকলেও থাকতে পারে।
হ্যাঁ, ভালো কথা, ওগুলোর কিন্তু কোনোটাতেই দম ছিলো না। প্রত্যেকটি ঘড়িতে একই সময় দেখা যাচ্ছে। সব ঘড়িতেই সাড়ে চারটে।
ঘরের বাকি অংশ থেকে তিন চার সেট ছাপ পাওয়া গেছে। প্রত্যেকটাতেই মহিলার অঙ্গের ছাপ। ভদ্রলোকের পকেটের জিনিসগুলো টেবিলের উপর রাখা আছে।
হার্ড ক্যাসেল টেবিলে গিয়ে দেখলেন ওর মধ্যে একটা নোটের খাম আছে। তাতে কয়েকটা নোট, কিছু খুচরো পয়সা আছে। এছাড়া একটা ছাপাহীন সিল্কের রুমাল আর একবাক্স হজমিগুলি। আর আছে ছাপানো কিছু কার্ড। কার্ডে লেখা ছিলো।
সি. আর. এইচ. কারি
মেট্রোপলিটান অ্যান্ড প্রভিনসিয়াল ইনসিওরেন্স কোং লিমিটেড
৭ নং ডেনভার স্ট্রিট, লন্ডন।
মিস পেবমার্সকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন, তিনি কারো আসার প্রতীক্ষা করছিলেন। এই ইনসিওরেন্সের নাম তিনি শোনেননি।
তিনি কোনোভাবেই কোনো ইনসিওরেন্স করার চিন্তা করেননি। তিনি আগুন আর চুরির জন্য ইনসিওরেন্স কোম্পানি থেকে ইনসিওরেন্স করিয়েছিলেন বটে। ঐ কোম্পানির একটা ব্রাঞ্চ ওখানে আছে। তবে তিনি ব্যক্তিগতভাবে কোনো ইনসিওরেন্সে করাননি। তার কোনো সংসার বা আত্মীয়স্বজন নেই, তাই তিনি নিজের জীবন-ইনসিওরেন্স করার কোনো যুক্তি খুঁজে পাননি। কারণ ঐ নামের কোনো লোককে তিনি চেনেন না। যিনি খুন হয়েছেন তারই নাম। ভদ্রমহিলা ভদ্রলোককে স্পর্শ করে নিখুঁতভাবে বুঝতে চান লোকটা দেখতে কেমন ছিলো।
মিস পেবমার্স-এর বুক থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস এলো। কাজটা আনন্দদায়ক না হলেও তিনি এই কাজটা করতে রাজী, তিনি লোকটির পাশে বসে চুল, চোখ, নাক, চিবুক পরীক্ষা করলেন। বললেন, না, তিনি নিশ্চিত যে এইরকম কোনো লোককে তিনি চেনেন না বা আগে দেখেননি।
এরপর মৃতদেহ নিয়ে যাওয়া হলো। হার্ড ক্যাসেল গার্ডের কাছে এগিয়ে গেলেন। তারপর ফিরে এসে বসলেন মিস পেবমার্সের কাছে, বললেন, আজ আপনার কাছে কোনো অতিথির আসার কথা ছিলো না। এছাড়া আপনি এমন কোনো চিঠি পাননি যে কোনো ইনসিওরেন্স কোম্পানির এজেন্ট আপনার সঙ্গে দেখা করতে আসছে। এছাড়া কোনো স্টেনো বা টাইপিস্ট তার দরকার ছিল না। তিনি ফোন করে তিনটে নাগাদ ওরকম কাউকে পাঠিয়ে দেওয়ার জন্য ফোন করেননি। যখন তিনি বেরিয়েছিলেন তখন ঐ ঘরে একটা ঘড়ি ছিলো। ঐ কাকাতুয়া ও গ্র্যান্ডফাদার ঘড়িটা।
পেবমার্স বললেন যে, যদি সম্পূর্ণ সঠিক না হতেন তাহলে ঘড়ি ব্যাপারটাকে জোর দিয়ে বলতে পারতেন না। তার যেহেতু দুটো চোখই নেই সেইজন্য ঘরে কি রইলো বা রইলো না তা লক্ষ্য করা তার পক্ষে সম্ভব নয়। শেষবারের মতো সকালে তিনি যখন ঘর পরিষ্কার করতে যান তখন ঘড়িদুটোর ব্যাপারে তিনি নিশ্চিত ছিলেন। কাজের লোকেরা ঘর পরিষ্কার করতে গিয়ে অনেক জিনিস লক্ষ্য করে। সেজন্য আমি ওদের রাখার বদলে নিজের কাজ নিজেই করি।
প্রতিদিনের মতো আজও দশটার সময় আমি আরলবার্গ ইনস্টিটিউটে গেছিলাম। সেখানে ১২-১৫ অবধি ক্লাস করি। তারপর পৌনে একটা নাগাদ রান্না করি। চা তৈরি করি। তারপর বেরিয়ে যাই। তিনি রান্নাঘরে খান। পরে আর তিনি এ ঘরে আসেননি। তাহলে দশটার সময়ে ঘড়িগুলো কেউ এ ঘরে রেখেছে এ সম্পর্কে মিসেস কাটিস বলতে পারবেন।
হার্ড ক্যাসেল বললেন, ধরে নেওয়া যাক আজ কোনো সময়ে ওগুলো ঘরে নিয়ে এসে রাখা হয়। প্রত্যেকটা ঘড়িতেই কিন্তু সাড়ে চারটে বেজে আছে। এই বিশেষ সময়টা সম্পর্কে মিস পেবমার্সের কোনো ধারণা নেই।