তিনি বললেন, ওখানে তার জন্য অপেক্ষা করা হোক।
.
০২.
উনিশ নম্বর বাড়িতে পুলিশের পক্ষ থেকে শেষপর্যন্ত প্রয়োজনমাফিক ব্যবস্থা নেওয়া হলো। পুরো টিমটাতে একজন পুলিশ সার্জেন, একজন পুলিশ ফটোগ্রাফার আর একজন ফিংগারপ্রিন্ট নেবার লোক ছিলো।
সবশেষে এলেন ডিটেকটিভ ইনসপেক্টর হার্ডক্যাসেল। ভদ্রলোকের গড়ন অনেকটা লম্বাটে ধরনের। ভাবলেশহীন মুখ, চোখের ওপর ভুরু দুটো প্রকট। দেখতে বেশ সুশ্রী। কাজটা সঠিকভাবে এগোচ্ছে দেখে তিনি খুশী হলেন মনে মনে।
এবার তিনি মৃতদেহটার কাছে গিয়ে সেটা ভালোভাবে পরীক্ষা করলেন। তারপর সার্জেনের সঙ্গে গোটা কয়েক কথা বললেন। শেষে ডাইনিং রুমে হাজির হলেন। সেখানে ওরা তিনজন বসেছিলো। ডিটেকটিভ ইনসপেক্টর হার্ড ক্যাসেল তার নিজের পরিচয় দিলেন। তিনি মিস পেবমার্সকে মোটামুটি চিনতেই। অবশ্য পেশাগত ব্যাপারে দুজনের মধ্যে সাক্ষাৎ হয়নি। হার্ড ক্যাসেল সেই ভদ্রমহিলার সম্পর্কে জানেন, তিনি একজন স্কুল শিক্ষিকা। তিনি প্রতিবন্ধীদের জন্য যে সব স্কুলে শিক্ষার ব্যবস্থা আছে তার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
এইরকম একজন সচেতন শিক্ষিকার সাজানো গোছানো ছিমছাম ঘরে একজন ব্যক্তি খুন হয়ে আছে ব্যাপারটা কিরকম অদ্ভুত ধরনের, অনেকটা অবাস্তব।
হার্ড ক্যাসেলের কথায় পেবমার্স জানালেন এ সম্পর্কে মিস ওয়েব কিছু জানেন, কথাটা বলার পর ডাইনিং রুমে কিচেনের দরজাটা খুলে ওয়েবের সঙ্গে কথা বলতে লাগলেন।
শীলা জানালেন তার ঠিকানা চোদ্দো নম্বর পামার টোন রোড। তিনি পেশায় একজন শর্টহ্যান্ড টাইপিস্ট। তিনি মিস মার্টিনডেলের সেক্রেটারিয়াল ব্যুরোতে চাকুরি করেন। তিনি প্রায় দশমাস ওখানে চাকুরি করেছেন। তিনি মিস পেবমার্স যে একজন স্টেনোগ্রাফার চাইছেন এটা শুনে তিনি লাঞ্চ করে ঐ বাড়িতে আসেন। আসলে তিনি বিশেষভাবে তাকেই চাইছিলেন। কেননা তিনি আগে তার কাছে কাজ করেননি। কারণ মিস পেবমার্স এমন একজন মহিলা যাকে চট করে ভুলে যাওয়া অদ্ভুত ব্যাপার।
মিঃ ক্যাসেল বললেন, যাইহোক আপনি ঠিক কটা নাগাদ পৌঁছেছিলেন ওর বাড়িতে। তার জবাবে বললেন, তিনটের আগেই, এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত। কেননা ঐ কাকাতুয়া-মার্কা ঘড়িটা!
কথাটা শেষ না করেই চুপ করে গেল ও। তারপর চোখদুটো বিস্ফারিত হয়ে গেলো ওর। ওয়েব বললেন যে কাকাতুয়া ঘড়িটায় তিনটে বেজেছিলো ঠিকই। কিন্তু অন্য ঘড়িগুলো প্রায় ঘণ্টাখানেক করে ফাস্ট ছিলো। মিঃ ক্যাসেল বললেন, নিশ্চয়ই খুব অদ্ভুত।
বলে সামান্য ভেবে বললো, এবার বলুন তো মিস ওয়েব তিনি কখন মৃতদেহটা লক্ষ্য করেন।
শীলা বললো, আমি সোফাটা ঘুরে আসার পরেই লোকটাকে দেখতে পাই। কি ভয়ঙ্কর! মিস ওয়েব বললেন, তিনি তার আগে ভদ্রলোককে দেখেননি।
তারপর তিনি ভদ্রলোককে ছুঁয়ে দেখেন, তারা গা পুরোপুরি ঠান্ডা, তার রক্ত গায়ে লেগেছিলো। তারপর সেই ভদ্রমহিলা ঘরে ঢুকেছিলেন। উনি হাতে একটা শপিং ব্যাগ নিয়ে এলেন।
তিনি ভদ্রমহিলাকে মৃতদেহের কাছে যেতে নিষেধ করলেন। ইনসপেক্টর বললেন যে, ঘরেই ঢুকলেন না। আপনি এসে বেলটা বাজিয়েছিলেন, কিন্তু সাড়া পাননি। সেক্ষেত্রে আপনি ভেতরে ঢুকলেন কেন?
সেটা এমন কিছু ব্যাপার নয়। তাকে ওভাবেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এটা মিস মার্টিনডেল তাকে বলেছিলেন, তিনি বললেন তার মা-বাবা দুজনেই গত হয়েছেন। তিনি তার এক মাসির কাছে থাকেন। তার নাম মিসেস লাউটন।
ইনসপেক্টর ক্যাসেলের কাছ থেকে বিদায় নেবার পর মিসেস পেবমার্সের ডাক পড়লো। তিনি ঘরে ঢুকে চেয়ারে বসে পড়লেন। হার্ড ক্যাসেল জানলা বন্ধ করে দেওয়ার পর পেবমার্স জিজ্ঞাসা করলেন ঐ ভদ্রলোক কে? তিনি বললেন ঐ ভদ্রলোক হলেন কলিন ল্যাম্ব। তিনি রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন। সেই সময় শীলা তার কাছে গিয়ে সাহায্য চান। তিনি ঘরে সবকিছু দেখে পুলিশকে ফোন করেন। যেন একজন মেরিন বায়োলজিস্ট।
মিস পেবমার্স জানালেন তিনি এখানে ১৯৫১ সাল থেকে আছেন। তিনি একজন প্রাক্তন স্কুল শিক্ষিকা। ঘটনাক্রমে তিনি অন্ধ হয়ে যান। তারপর ব্রেইলের বিশেষজ্ঞ হওয়ার জন্য নিজেকে নিয়োগ করেন, যারা অন্ধ তাদের সাহায্যের জন্য নানাধরনের শিক্ষা গ্রহণ করেন। অন্ধ আর প্রতিবন্ধী ছেলেদের জন্য যে শিক্ষায়তন আছে সেখানেই তিনি কাজ করেন।
মিস পেবমার্সকে ইনসপেক্টর মৃত ব্যক্তির বর্ণনা পড়ে শোনালেন। ভদ্রলোকের উচ্চতা পাঁচ ফুট আট-দশ ইঞ্চি। বয়স প্রায় ষাট। চোখ দুটো বাদামী। দাড়ি গোঁফ পরিষ্কার করে কামানো। মুখের গড়ন একহারা ধরনের। চোয়ালটা দৃঢ়। পরনে কালচে রঙের ধূসর স্যুট।
মিস পেবমার্স লোকটিকে চিনতে পারলেন না। তার বর্ণনা বেশ সাদামাটা।
মিঃ ক্যাসেল বললেন যে, এমন কোনো ব্যক্তির আসার কথা ছিলো বা কেউ চিঠি দিয়েছিলো। তিনি বললেন না। তিনি বললেন, তিনি ক্যাভেনডিস ব্যুরোতে ফোন করে কোনো সেক্রেটারি চাননি। আর তাছাড়া তার কোনো ফোন নেই। মিস শীলা ওয়েবের নাম তিনি শোনেননি। তিনি সকালে অনেক সময় তালা না লাগিয়ে বাইরে যান, তাই সে সময় কেউ ঢুকে পড়া বিচিত্র নয়। সেদিন তাই ঘটেছে। তিনি দেড়টা থেকে দুটোর মধ্যে বাইরে বাজার করতে গিয়েছিলেন। কেননা তার কিছু কেনাকাটার প্রয়োজন ছিলো। তিনি পোস্টঅফিসে যান, আনাবেনি রোডে। তিনি একটা পার্সেল পোস্ট করেন। কয়েকটা স্ট্যাম্প কেনেন। তারপর কয়েকটা গৃহস্থালীর জিনিস কেনেন। কয়েকটা কাসপার ও সেফটিপিন কেনেন। তিনি গেটের কাছে আসার সময় তার কাকাতুয়া ঘড়িটা তিনবার ডেকে উঠেছিলো।