ব্যাপারটা খুব ঝুঁকির। বড়োজোর একটা ভুল হতে পারে। বছর পনেরো পরে যে কোনো মহিলাই এরকম ভুল করতে পারে ভাবাটাই খুব স্বাভাবিক। আর এর সঙ্গে হয়তো সামান্য কিছু অর্থের ব্যবস্থা আছে। সুতরাং সেইভাবে এগিয়েছে ও।
মহিলা সন্দেহজনক নয়। মৃতের যারা পরিচিত তাদের সকলকে খুনী ভাবতে পারি না। ঐ মহিলা ঐরকম কোনো কাজ করতে পারে বলে তো আমার মনে হয় না।
ওর সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে দেখা হলে তিনি যা মনে ভেবেছিলেন ও সেটাই করলো। সম্ভবত যে ওকে কাজে লাগিয়েছে তার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলো, একটা পোস্টঅফিসে গেল প্রথমে। আমি ওকে অনুসরণ করেছি।
পোস্টঅফিসে গিয়ে ও প্রথমেই একটা ফোন করলো। আমি ভেবেছিলাম বাড়ির সামনে থেকে ফোনটা করবে। সন্ধ্যা পর্যন্ত কিছু ঘটেনি। এরপর ও গেল ভিক্টোরিয়া স্টেশনে, সেখানে ক্রাউডিয়ানের একটা টিকিট কাটলেন। সময় ঠিক সাড়ে ছটা। এই সময়টা রাস্তাঘাটে বেশ ভীড় হয়। খুনী ভীড়ের মধ্যে পেছনে এসে দাঁড়ায় এবং ছোরাটা ঢুকিয়ে দেয়।
জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। পেবমার্স কলেজে ছিলেন। ইনস্টিটিউশনের ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল। তারপর ৭.৪০ ট্রেনে ক্রাউডিয়ানে ফিরে আসেন।
হার্ড ক্যাসেল দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবার বলতে লাগলেন, আর শীলা ওয়েবও কাল লন্ডনে ছিল। সে সময় এক লেখকও নিউইয়র্ক যাবার পথে লন্ডনে ছিলেন। সম্ভবত পাঁচটা কুড়িতে ও হোটেল ত্যাগ করে। এখানে ফিরে আসার আগে একাই একটা সিনেমা দেখতে গেছিল।
আমি বললাম, শোনো ডিক তোমাকে বলার মতো কিছু জানতে পেরেছি আমি। একজন প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ। নয়ই সেপ্টেম্বর উনিশ নম্বর বাড়িতে ১.৪৫ নাগাদ একটা গাড়ি ভ্যান এসেছিলো। যে লোকটা চালিয়ে নিয়ে এসেছিলো সেই একটা বড়ো আকারের বাক্স এই বাড়িতে ডেলিভারি দেয় পেছনের দরজা দিয়ে। বাক্সটা সাধারণ ধরনের বাক্স ছিলো না। নতুন লন্ড্রী সব গজিয়ে উঠেছিল। দ্য স্নো ফকস্ এমন একটি লী। ঠিক আছে ব্যাপারটা তুমি চেক করো। একটা লোক চালিয়ে নিয়ে এসেছিলো, আবার একজন সম্ভবত ভেতরে নিয়ে গেছিল বাক্সটাকে।
ও কিছু বলার আগে আমি ছেড়ে দিলাম। বেরিয়ে এলাম। তাকালাম রিস্ট ওয়াচটার দিকে। আমাকে এখন অনেক কাজ করতে হবে। হার্ড ক্যাসেল আমার কাছে পৌঁছবার আগেই এটা আমাকে করে ফেলতে হবে। আমার ভবিষ্যৎ জীবনের ব্যবস্থা।
.
২৭.
কলিন ল্যাম্বের বিবৃতি
ঠিক পাঁচদিন পরে। রাত আটটা নাগাদ আমি পৌঁছলাম ক্রাউডিয়ান। হোটেলে গিয়ে হাজির হলাম। ওখানে রুম ভাড়া করলাম একটা। ঘুমিয়ে পড়ার পর পৌনে দশটা নাগাদ। চিরকুটের খামটা বেশ মোটা আর সীমিত বটে। খামটা পরিষ্কার ভাবে ছাপা। কিছুক্ষণ উল্টেপাল্টে দেখে খামটাকে খুললাম।
ভেতরে একটা কাগজ। বড়ো বড়ো করে ছাপার অক্ষরে লেখা আছে কারফিউ হোটেল : ২১ : ৩০ রুম নাম্বার ৪৩০ (তিনবার দরজায় টোকা মারবে)।
আমি লোকটার দিকে তাকিয়ে রইলাম কিছুক্ষণ। উল্টেপাল্টে দেখলাম বার কয়েক। কারফিউ হোটেলে ফোন করার কথাটা মাথায় এলো। পরক্ষণেই ডিককে ফোন করার কথা ভাবলাম। এরপর আমি কারফিউ হোটেলে গেলাম। প্রায় ঠিক সময়েই ওখানে পৌঁছে গেলাম। হোটেলের ভেতরে তেমন একটা বেশি লোকজন ছিল না।
ডেস্কে আমি কোনো কিছু জানতে চাইলাম না। সরাসরি উঠে গেলাম। লিফটে এসে পৌঁছলাম চারতলায়। বারান্দা ধরে এগোতে লাগলাম চারশো তিরিশ নম্বর ঘরের দিকে।
দরজায় তিনবার টোকা দিলাম। ঠিক আমার দিকেই মুখ করেই বসে আছেন এরকুল পোয়ারো। পোয়ারো বললেন যে তাকে চিকিৎসক সমুদ্রের হাওয়া খেতে পরামর্শ দিয়েছেন। পোয়ারো বললেন যে রোজমেরীর একটা ছবি দিতে পারতাম। এছাড়াও আমি নিজের আঙুল কেটে দরজার ওপরে রক্ত লাগা আঙুলের ছাপ লাগিয়ে রাখার কথা ভেবেছিলাম।
শোন কলিন এবারে কিছুটা সিরিয়াস হওয়া যাক। আমি তোমার কিছুটা সহযোগিতা আশা করি। চীকনস্টেবলকে ডেকে পাঠিয়েছিআমি। আর এই মুহূর্তে তোমার ঐ বন্ধুটির জন্য অপেক্ষা করছি। ঐ ডিটেকটিভ ইনসপেক্টর হার্ড ক্যাসেল। তারা তিনজন কথাবার্তা চালাতে লাগলো।
শেষ পর্যন্ত হার্ড ক্যাসেল এলেন। হার্ড ক্যাসেল বললেন, কিছুটা সতর্কভাবে বলতে আরম্ভ করলেন মনে হচ্ছে ব্যবস্থাটা আপনার নিজেরই।
পোয়ারো বললেন যে তার বক্তব্য কক্স হাইড বা ব্লান্ড হাউণ্ডের মতো। গন্ধের পেছনে ছুটোছুটি করার কোনো প্রয়োজন নেই।
পোয়ারো বললেন, তার বন্ধু কলিন ল্যাম্ব এখানে এসেছে। ও আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল। কোনো সমাধানের ব্যাপারে সাহায্য চাইতে নয়। তার অনুমান ইতিমধ্যেই এগিয়েছে ও। কলিন এখনও তাকে চেনে না।
পোয়ারো উইলিব্রিহাম ক্রিসেন্টে উনিশ নম্বর বাড়িতে যে ভদ্রলোক খুন হয়েছেন তার পরিচয় জানেন। তিনি কে, কিভাবে খুন হয়েছেন তাও জানেন। হার্ড ক্যাসেল বললেন যে, এই লোক একটা নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে এগোত কিন্তু এইরকম লোকের সংখ্যা কম।
পোয়ারো বললেন যে, সমস্ত ব্যাপারটা ধাপে ধাপে বসালে দেখা যাবে ব্যাপারটা এভাবে ছাড়া অন্যভাবে ঘটতে পারত না।তিনি বললেন, কোনো সমস্যার সমাধান করতে গেলে অবশ্যই একটা ঘটনাবলীর প্রয়োজন। কলিন এই ব্যাপারে তাকে সাহায্য করবে। কারণ যেমন একটা ঘটনা হয়তো চারটের সময় ঘটলো, কাগজে বেরোলো সাড়ে চারটে। কলিন তা করবে না।