.
২৫.
মিসেস রাইভ্যাল দরজার হাতলটা ঘুরিয়ে ঠেলে ভেতরে ঢুকলেন। পা দুটো সামান্য টলছিল। তিনি নিজের মনে বিড়বিড় করছিলেন।
ব্যাপার মোটেই ভালো নয়। মিস রাইভ্যাল বললেন, আমি ব্যাপারটা সহ্য করতে পারছি না। সে কাউকে প্রবঞ্চনা করতে পারে না।
রাইভ্যাল নিজের মনে বলছিলেন, আমি সহ্য করতে পারছি না। লোকে আমার সঙ্গে কি করে ঐরকম আচরণ করার কথা ভাবতে পারে। ব্যাপারটা আদৌ ঠিক নয়। তুমি যদি নিজে কারো পেছনে না লাগো তাহলে তোমার পেছনেই বা লোকে কেন লাগতে যাবে?
এরপর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে জোর গলায় আবার বললো, আবার একটা দাও। ফেজকে তিনি বললেন, যখন তোমাকে কেউ কিছু করতে বলবে তখন তার উচিত ব্যাপারটা খুলে বলা। তার জানানো উচিত যে তুমি কি করেছে এবং তার অর্থ বা কি। সব মিথ্যেবাদী। আমি এসব সহ্য করতে পারি না। মিসেস রাইভ্যাল বললেন, এখন আমার তাহলে কি করা উচিত?
রাইভ্যাল বললেন, তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ফেজ। মিসেস রাইভ্যাল বেশ হাসিখুশী কিন্তু আজ ওর মেজাজ ঠিক নেই।
মিসেস রাইভ্যাল বললেন যে, দরজা খুলে দেখলেন ইনসপেক্টর হার্ড ক্যাসেল। তিনি বললেন যে তার খুনের সম্পর্কে কিছু জানতে চান। মিসেস রাইভ্যাল বললেন, একসময় রাইভ্যাল তার জীবনে ছিল। কিন্তু এখন আমি ওকে ভাবি না। খবরের কাগজে ছবি দেখেই তো আমি এগিয়ে এসেছিলাম। নিজে থেকে আমি আপনাদের কাছে ওর সম্পর্কে অনেক কিছুই বলেছি।
মিসেস র্যাইভ্যাল তার স্বামীর একটা আইডেন্টিফিকেশন মার্ক দেখিয়েছেন। এটা একটা মূল্যবান পয়েন্ট। কারণ আই ভেরিফাই অবশ্যই ভালো হওয়া উচিত।
মিসেস রাইভ্যাল, আচ্ছা সময়টা মনে আছে ঠিক কবে নাগাদ ঐ দাড়ি কামাতে গিয়ে কাটার ব্যাপারটা ঘটেছিলো। অক্টোবরে কি নভেম্বরে ঘটেছিল। তার স্বামী তাকে একান্নতে ছেড়ে যান। তারপর তার খুনের ছবি দেখে তাকে চিনতে পারেন।
মিসেস রাইভ্যাল যে মৃতদেহ দেখার আগে তাকে দেখেননি এটা মনে হলো না হার্ডের। তাই তিনি বললেন ডাক্তারের কথা অনুযায়ী ঐ দাগটা বছর পাঁচেকের আগে কিছু না।
রাইভ্যাল বললেন, তা তিনি বিশ্বাস করেন না। যদি তাই হয় তাহলে বুঝতে হবে আপনার স্বামী যখন আপনাকে ছেড়ে যান তখন ঐ দাগ ছিল না। মৃত লোকটি যে হ্যারি এতে আমার বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই।
আর আপনার সঙ্গে যদি দীর্ঘদিন দেখাসাক্ষাত না হয়ে থাকে তাহলে কি করে জানলেন আপনি, যে আপনার স্বামীর ঐ বিশেষ জায়গায় একটা ক্ষতচিহ্ন আছে?
মিসেস রাইভ্যাল, মিথ্যে সাক্ষী দেওয়ার জন্য বিপদে পড়ে যেতে পারেন। আইনে এটাও একটা অপরাধ। এটা হার্ড ক্যাসেল বললেন।
সামান্য থেমে আবার বললেন ইনসপেক্টর, এটাও তো হতে পারে, কেউ হয়তো আপনাকে চাপ দিয়ে আমাদের কাছে দাগের কথা বলতে বলেছে।
রাইভ্যাল বললেন, তিনি মিথ্যে বলেন না। যদি তার বলার মধ্যে কোনো ভুল হয় তার জন্য তিনি দোষী নন। ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন হার্ড ক্যাসেল। ওর চলে যাবার সঙ্গে সঙ্গে মিসেস রাইভ্যালের ভাবভঙ্গী একেবারে বদলে গেল। অস্থিরভাবে বেশ কিছুক্ষণ ধরে পায়চারী করলেন তিনি। রিসিভার নিয়ে ডায়াল ঘোরাতে লাগলেন।
আমি ফ্লোর কথা বলছি। তুমি কখনোই আমার সঙ্গে সোজাসুজি ব্যবহার করোনি। শুধু বলেছিলে লোকটার পরিচয় শনাক্ত হলে তুমি বিপদে পড়তে পারো। কিন্তু কখনও ভাবতে পারিনি যে আমি একটা খুনের মামলায় জড়িয়ে পড়তে চলেছি। আমি আর এসবের মধ্যে থাকতে চাই না।
অপরাধের সহযোগী, মিথ্যে সাক্ষীর জন্য জেল হতে পারে। রিসিভার নামিয়ে রেখে বুথ থেকে বেরিয়ে এলেন মিসেস র্যাইভ্যাল। তারপর হাঁটতে লাগলেন ফুটপাত ধরে। তিনি পরিবর্তনশীল চরিত্রের মহিলা।
.
২৬.
কলিন ল্যাম্বের বিবৃতি
তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে ঐ র্যামসে মহিলাটির কাছ থেকে বেশিকিছু বের করতে পারোনি। অভিযোগ করলেন কর্নেল বেক।
মহিলা তাহলে সক্রিয় অংশগ্রহণকারী নন। আমার দিকে তাকালো কর্নেল। আমি জবাব দিলাম না।
তুমি কি আরো বেশি কিছু আশা কর? জিজ্ঞেস করলো কর্নেল।বললাম জবাবে, তা দিয়েও কিছু হবে না।
ভালো কথা। আমাদের অন্য কারো কোথাও আরো কোথাও দেখতে হবে। ক্রিসেন্টটাকে ছেড়ে দাও।
কলিন তোমার ব্যাপারটার শেষ খবর কি, কর্নেল জিজ্ঞেস করল।
আমি মাথা নেড়ে বললাম, নিশ্চয়ই কোনো এক সময় শেষ হবে। ব্যাপারটা আমি অবশ্য করেছি। এখানকার সময় পৃথিবীটা বড়ো গোলমেলে। যেমন যেভাবে সবকিছু ঘটা উচিত সেভাবে ঘটে না। তোমার কাজটা নিঃসন্দেহে প্রথমশ্রেণীর।
কর্নেল বললেন, তার ধারণা মেয়েটি খুশী। আপনি ভুল করছেন কর্নেল। কর্নেল বেক আঙুল তুলে খানিকটা সতর্ক করার ভঙ্গীতে বলে উঠলো, আমি বলছি তুমি প্রস্তুত থেকো। ভেবেচিন্তেই বললাম কথাটা।
আমি ওর কাছে বিদায় নিয়ে চ্যাজিক্রশ ধরে গভীরভাবে চিন্তা করতে করতে হাঁটছিলাম। আমি একটা কাগজ কিনলাম। তাতে দেখলাম একজন মহিলা ভিক্টোরিয়া স্টেশনের ভিড়ে অজ্ঞান হয়ে মারা যান। ভদ্রমহিলার নাম মেরিলিনা রাইভ্যাল।
হার্ডক্যাসেল ফোন করে জানাল ভদ্রমহিলাকে বোধহয় কেউ টাকার লোভ দেখিয়ে লোকটিকে শনাক্ত করেছে। ওর সময়ের সঙ্গে দাগটির মিল ছিল না।
মাঝখান থেকে ঐ অদৃশ্য ব্যক্তিটি বেশি চালাক সাজার চেষ্টা করছে।
ধরা যাক কোনো পরিচিত ওর কাছে এসে বললো, আমি একটু অসুবিধার মধ্যে পড়ে গেছি। আমি যার সঙ্গে কাজ-কারবার করতাম সেই হঠাৎ খুন হয়ে গেছে। ওরা যদি মৃতদেহ শনাক্ত করে দেখে আর আমাদের কাজ-কারবারের ব্যাপারটা প্রকাশ হয়ে যায় তাহলে সমস্ত ব্যাপারটা চুরমার হয়ে যাবে। কিন্তু তুমি যদি এখানে এসে বলল ঐ মৃত লোকটি তোমার স্বামী তাহলে খুব ভালো হয়। বলবে অনেক বছর আগে ও চলে গেছিল। আবার সম্ভবত ফিরে এসেছিল। তোমার স্বামীর নাম হ্যারি ক্যাসলটন, তাহলেই ব্যাপারটা অন্যদিকে ঘুরে যাবে।