শীলা আমাকে যে মিথ্যা কথা বলছে তা আমি জানতাম। তাই তার দুর্বল জায়গায় আঘাত করতে চাই। আমি দৃঢ়ভাবে মোহমুক্ত হয়ে সোজাসুজি আক্রমণ করলাম।
সে ঘড়ি সম্পর্কে বলল যে, ঘড়িটা দীর্ঘদিন ধরে ওর কাছে ছিল। ছ-বছর পর্যন্ত তার নাম রোজমেরী ছিল। কিন্তু ও শীলা ডাকটা পছন্দ করত। সম্প্রতি ঘড়িটা খারাপ হয়ে যায়। ওটাকে সে ঘড়ির দোকানে সারাতে নিয়ে যায়। দোকানটা ব্যুরোর কাছাকাছি। তাই অসতর্কবশতঃ সে ওটা হারিয়ে ফেলে। সপ্তাহখানেক আগে এটা হয়। এই নিয়ে তার কোনো দুঃখ ছিল না কারণ ওটা ভুল সময় দিত।
তারপর যখন সে ঘরে গিয়ে মৃতদেহ দেখল তখড় মৃতদেহটা পরীক্ষা করল। এবং ঘড়িটা টেবিলে নজরে পড়লো। মহিলাটি যখন এসে পড়ল তাকে সব বললো। সে শুনে অবাক হলো যে মহিলা তাকে আসতে বলেনি। সে বুঝতে পারছিল না ওখানে ঘড়িটা কে রেখেছে।
তিনি বললেন যে তার বাবা-মা ছোটোবেলায় দুর্ঘটনায় মারা গেছে। তার মাসি যা বলত সবসময় মিলত না। তার মনে হত তার বাবা-মা কোনো অপরাধমূলক কাজ করেছিল। সে তার বাবা-মার অবৈধ সন্তান হতে পারে। তার মতে, ছেলে-মেয়েদের কাছে সবকিছু খুলে বলা উচিত। এড়না কেন যে তার বাড়িতে গেছিল তা সে বুঝতে পারছিল না। তার কোনো শত্রু নেই। প্রেম প্রত্যাঘাত যুবক বা কোনো মেয়ে তার প্রতি হিংসা করে। এরপর অন্য কথা বলা হলো।
.
২৩.
কলিন ল্যাম্বের বিবৃতি
বিদেশে যাবার ব্যবস্থা করে ফিরছিলাম। সামনে পুলিশ স্টেশনের ভেতরে ঢুকে পড়লাম। আমি বললাম, আমি লন্ডন চলে যাচ্ছি।
ডিক বললো, এই নাও চিঠিটা পড়। চিঠিতে লেখা আছে,
প্রিয় মহাশয়,
আমার এই মুহূর্তে একটা ব্যাপার মনে পড়ে গেল। আপনি আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন যে আমার স্বামীর শনাক্তকরণ কোনো চিহ্ন আছে কি না। আমি না বলে ছিলাম তখন। কিন্তু আমার ভুল হয়েছিলো। ওর বাঁ দিকে কানের পেছনে একটা দাগ আছে। ব্লেড দিয়ে কেটে গেছিল। এখানে সেলাই হয়। দাগটা এই ছোটো যে আমার তখন মনে পড়েনি। পরে মনে পড়েছে।
ইতি
মেরেলিনা রাইভ্যাল
তাহলে মৃতদেহটার শরীরে একটা চিহ্ন আছে মহিলার কথামতো। যখন ওকে লাশ দেখানো হয়েছিল তখন উনি দেখতে পাননি। দেখতে হবে, কানটা টেনে দেখতে হবে।
আচ্ছা লন্ডনে তোমার সঙ্গে ঐ বেলজিয়াম বন্ধুটির দেখা হবে।
ডিক বললো, সম্ভবত আসতে পারবে না। কারণ ওর পা খোঁড়া।
আমি তার দিকে তাকিয়ে রইলাম।
পৌনে বারোটার সময় উইলিব্রাহাম ক্রিসেন্টে বাষট্টি নম্বর বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে বেল টিপলেন। র্যামসের সামনে এসে তার সঙ্গে কথা বলতে চাইলেন। তিনি বললেন, পুলিশকে বলার ক্ষমতা তার নেই। তার স্বামী এখনও বিদেশে। তার কথায় তিনি চুপ করে রইলেন। তিনি বললেন যে তিনি জানতেন উনি চলে যাচ্ছেন। তার স্বামীর কাজে তার বিন্দুমাত্র সহানুমুতি ছিল না। তাকে স্পষ্ট করে উনি কিছুই বলেননি। তিনি জানতে চাননি। ওর পুরানো পার্টি মেম্বারশিপ এসব কিছু জানাননি। তিনি খুবই সাধারণ। স্বামীকে তিনি ভালোবাসতেন। চেষ্টা করলে মস্কো যেতে পারতেন। এতে যে তার রাজনীতির সঙ্গে একমত হতে হত, তা নয়। কিন্তু ওর কথা তিনি শোনেননি। চেয়েছিলো তিনি যেন ছেলেদুটোকে নিয়ে আসেন।
র্যামসে বললেন, মিচেলের সঙ্গে দেখা হবে কিনা জানেন না। তার মতে তার ছেলেরা নিজেদের দেশে বেড়ে উঠুক। তিনি আমার কাছ থেকে বিদায় নিলেন। ফেরার সময় ম্যাকনটনের বাড়িতে গেলাম। সেখানে কিছুক্ষণ কাটিয়ে ক্রিসেন্টে গেলাম। মিঃ ব্ল্যাণ্ডের সঙ্গে দেখা হতে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কোথা থেকে এসেছেন?
মিঃ ব্ল্যাণ্ড হাসলেন। বাইরে প্রকাশ করা নিষেধ।
তিনি বিদায় নিয়ে ৬১ নং বাড়ির দিকে এলেন। মিঃ পোয়ারো বললেন তাকে, প্রতিবেশীদের কাছ থেকে আরো বেশি বের করতে হবে। কেউ কিছু দেখেনি এটা একেবারে অস্বাভাবিক। হয়তো হার্ড কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। একটা প্রশ্নের সিট তৈরি করলাম। মিঃ কেরীকে নেশা করানো হয়েছিলো। তারপর ওকে খুন করা হয়েছিল কোথায়? মিঃ কারী (ক্যাসলটন)কে উনিশ নম্বর বাড়িতে আনা হয়েছিল। কেমন ভাবে?
প্রশ্নগুলো এইভাবে ভাবতে ভাবতে আমি রাস্তার বাঁ দিকে ঘুরলাম। এইভাবে ব্যাপারটা ভাবতে ভাবতে এগোচ্ছি হঠাৎ তীব্র আলোর ঝলক আমার চোখে এসে লাগলো। মুখ তুলে সঙ্গে সঙ্গে দেখলাম, রাস্তার ধারে কাছাকাছি একটা বাড়ির জানলা দিয়ে কেউ আমাকে দেখছে।
আমি দূরবীন দিয়ে চোখ লাগালাম। হঠাৎ একটা রোলস রয়েস গাড়ি খুব শান্তভাবে অতিক্রম করে গেল। আপোস করলে ভাগ্য সহায় হয়।
ব্লকটার কাছাকাছি এসে তিনতলার বোতামটা টিপলাম। লিফট চলতে শুরু করল।
.
২৪.
দরজার সামনে আমাকে কয়েক মিনিট অপেক্ষা করতে হলো। ক্ষমা করবেন, এ ঘরে সম্ভবত কোনো মেয়ে আছে, আপনাকে জানলা দিয়ে দেখছিল। ও একটা জিনিস নিচে ফেলে দিয়েছে।
মহিলাটি ঘরে নিয়ে এলো। মেয়েটিকে ফলকাটা ছুরিটা দেখানো হলে সে বললো, ওটা আমার নয়।
তাকে প্রশ্ন করা হলো, সে বললো, খুনের দিন ধুয়ে মুছে তাড়াতাড়ি চলে যেতে পারে, সকাল দশটা হবে। সে সময় অবশ্য আমি একটা ক্রসওয়ার্ড পাজল নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। কারীকে সে বাড়িতে আসতে দেখেনি। ভদ্রলোক সামনের দরজা দিয়ে কলিং বেল টিপে ঢোকেননি। তাহলে তিনি দেখতে পেতেন। পাশের বাগান দিয়ে কেউ ঢোকেননি। মিস পেবমার্স ঐ দিন দশটা নাগাদ বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। তার কাজের লোক যায় ২টা নাগাদ। তবে মিসেস কারীকে আসতে দেখেননি। ঐ বাড়িতে পেবমার্স নিজে একাই বাজার করতেন। একজন স্ত্রীর লোক একটা বড়ো বাক্স ডেলিভারি দিত। ১.৪৫ মিনিটে তা ঘটেছিল, ড্রাইভার গাড়ি থেকে নেমে দরজা খুলে বাক্সটা বের করল। লোকটা সাধারণ দেখতে, তার থেকে বয়স বেশি। সে বাক্স নিয়ে টলতে টলতে বাড়ির পাশ দিয়ে ঘুরে পেছনের দরজা দিয়ে ঢুকে ছিল। তবে সম্ভবত ঢুকতে পারেনি। কারণ মিস পেবমার্স দরজায় তালা দিয়ে গিয়েছিল। বাক্সটা ওখানেই রেখে দিয়ে ফিরে গিয়েছিল ও। লোকটাকে আমি ঠিকমতো দেখতে পাইনি। রাস্তার ভুল দিকে দাঁড় করিয়েছিল গাড়িটাকে। আমি শুধু ওর মাথার পেছনের দিকটা দেখতে পেয়েছিলাম। তারপর লোকটি গাড়ি চালিয়ে চলে গেল। মনে মনে ভাবলাম লোকটা হয়তো গুরুত্বপূর্ণ কিছু দেখেও থাকতে পারে। মেয়েটাকে ধন্যবাদ জানিয়ে আমি তখনকার মতো বিদায় নিলাম ওর কাছ থেকে। যে মেয়েটাকে প্রশ্ন করেছিলাম এতক্ষণ, ওর নাম জেরালাউনে।