মহিলাটি শীলার কথায় এবার থমকে গেলেন।
.
কলিন ল্যাম্বের বিবৃতি
নয়ই সেপ্টেম্বর, দুটো বেচে উনষাট নাগাদ উইলিব্রাহাম ক্রিসেন্ট ধরে আমি পশ্চিম দিক বরাবর এগোচ্ছিলাম। সত্যি কথা বলতে কি তিনি আমাকে একরকম গোলকধাঁধার মধ্যেই ফেলে দিয়েছিলেন।
তিনি ৬১ নম্বর ঠিকানা খুঁজে বের করতে চাইছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত খুঁজে পেয়েছিলেন কি? উইলিব্রাহামের ক্রিসেন্ট শেষ হয়ে গেছে। সামনের পথ রোধ করে অ্যালবনি রোড দাঁড়ালো। এরপর তিনি পেছন দিকে ঘুরে দেখলেন দক্ষিণ দিক বরাবর একটা বাড়িও নেই। লম্বা একটা দেওয়াল বরাবর চলে গেছে, দেওয়ালের ঠিক পেছনের দিকে আধুনিক ফ্ল্যাটের ব্লকগুলো মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। ওখানে ঢোকার জন্য নিশ্চয়ই অন্য কোনো রাস্তা আছে, কোনো আশাই দেখতে পেলাম না।
ঠিক ১৯ নম্বরের কাছে গিয়ে আমাকে থমকে দাঁড়িয়ে পড়তে হলো। দেখলাম ১৯ নম্বরের দরজাটা খুলে গেলো। সঙ্গে সঙ্গে একটা যুবতী বেরিয়ে এলো ভেতর থেকে। তারপর চিৎকার করতে করতে রাস্তার দিকে উধ্বশ্বাসে এগোতে আরম্ভ করলো। ঠিক তখনই গেট দিয়ে বেরিয়ে আসার মুখেই সজোরে ধাক্কা লাগলো আমার সঙ্গে। এরকম আচমকা ধাক্কায় আমি একরকম ছিটকে পড়েই যাচ্ছিলাম। সঙ্গে সঙ্গে দুটো হাত দিয়ে আঁকড়ে ধরলো মেয়েটি। মেয়েটিকে স্থির হতে বললাম। মেয়েটি স্থির হয়ে তখনও পর্যন্ত আমাকে আঁকড়ে ছিলো। চিৎকারটা অবশ্য থেমে গেছে। কিন্তু তখনও ওর কণ্ঠ দিয়ে একটা অস্ফুট শব্দ বেরিয়ে আসছিলো বারবার, আমি এবারে ওকে জিজ্ঞেস করলাম।
সে বললো, ওখানে একটা লোক মেঝের ওপর পড়েছিলো। সে মারা গেছে। ঐ বয়স্ক মহিলাটি লোকটার ঘাড়ের ওপর প্রায় পড়েই যাচ্ছিল।
যুবতী বললো, তার ধারণা মহিলাটি অন্ধ। সে বললো, যে তার হাতে ঐ মহিলাটির রক্ত লেগেছে।
তাই তো কথাটা বলে তিনি তার কোটের দাগটার দিকে তাকালেন। ওর হাতের রক্ত তার বুকের থেকে। আমি পুরো ব্যাপারটা নিয়ে ভাবলাম। তারপর বললাম, যে, তুমি আমাকে ভেতরে নিয়ে চলো, দেখাও আমাকে।
সে ভীষণভাবে কাঁপছিলো। সেই অবস্থাতেই বলে উঠলো, না না, আমি পারবো না। আমি ভেতরে কিছুতেই যাবো না।
আমি বললাম যে, তুমি এখানে বসো। বলে, আমি একটা ফুটপাথের রেলিং-এ হেলান দিয়ে বসিয়ে দিলাম। তুমি এখানে থাকো। যতক্ষণ না আমি ফিরে আসি, তুমি কোথাও যেন যেও না। মেয়েটি বললো, সে ঠিক আছে। আমি ওকে আশ্বস্ত করে বাড়িটার দিকে এগোতে আরম্ভ করলাম। কিছুটা এগিয়েই হলঘরের মধ্যে প্রবেশ করে কয়েক মুহূর্তে ইতস্তত করলাম।
বাঁ-দিকের দরজা দিয়ে তাকালাম। সামনে একটা ফাঁকা ডাইনিং রুম। বসার ঘরে ঢুকতে একজন ভদ্রমহিলার সঙ্গে দেখা হলো। যার ধূসর রঙের চুল। আমার পায়ের শব্দ শুনে বললেন, কে আপনি?
সেই মহিলাটি অন্ধ, আমি তাকে বললাম, একজন অল্পবয়সী মেয়ে দৌড়ে রাস্তায় গিয়ে বললো, যে এখানে নাকি একজন ভদ্রলোক মৃত অবস্থায় পড়ে আছেন।
আসলে ভদ্রমহিলা যেরকম শান্তভাবে বসেছিলেন তাতে মনে হচ্ছিল না ঘরে খুন হয়েছে। ভদ্রমহিলা বললেন, সোফার পেছনে মৃতদেহ পড়ে রয়েছে।
আমি সোফার পেছনে এগিয়ে গেলাম। লোকটির দেহের সামনের দিকে রক্তের চিহ্ন। ভদ্রমহিলা বলতে পারলেন না, কে খুনটা করেছে। আমি বললাম, তাহলে টেলিফোন করা উচিত পুলিশকে।
ভদ্রমহিলা বললেন, যে তার বাড়ি এটা, এখানে কোনো ফোন নেই। তিনি বললেন, তিনি যখন শপিং করে ঘরে ফিরেছেন, তখন মনে হলো দরজার গায়ে একটা চেয়ারে একটা ব্যাগ ঝুলছে। তিনি তারপর ঘরের ভেতরে ঢুকলেন।
তার বুঝতে অসুবিধা হলো না, ঘরে কেউ একজন রয়েছে। তখন তিনি কেউ ঘরে আছে কিনা জানতে চাইলেন। কার শ্বাস-প্রশ্বাসের শব্দ হচ্ছিল, সেদিক লক্ষ্য করে এগোতে লাগলেন। চিৎকারটা কানে এলো। তখন শব্দ এলো যে, সামনে এগোবেন না তাহলে মৃতদেহের উপর পড়ে যাবেন। এরপর খানিকটা অবাক হলেন। সে সময় কেউ দৌড়ে বেরিয়ে গেলো। তখন তিনি খুব সাবধানে যাতায়াত করলেন যতক্ষণ না তার পায়ে বাধা ঠেকলো।
তারপর তিনি হাঁটু মুড়ে বসলেন, বুঝলেন কার হাত একেবারে ঠান্ডা। বিন্দুমাত্র নাড়ির স্পন্দন শোনা যায় না।
তিনি দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। তারপর তিনি উঠে পড়লেন। এখানে চলে এলেন। বসে একভাবে অপেক্ষা করতে লাগলেন। তার অনুমান কেউ না কেউ এখানে একসময় আসবেই। শেষপর্যন্ত ঐ অল্পবয়সী মেয়েটি মহিলার অদ্ভুত স্থৈর্য দেখে অবাক হলো। মহিলাকে লোকটির নাম জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন যে, তিনি কলিন ল্যাম্ব।
ভদ্রমহিলা বললেন যে, রাস্তায় একটা বুথ আছে। সেখান থেকে পুলিশকে ফোন করা যাক। ভদ্রমহিলা চুপ থেকে বললেন, মেয়েটাকে বাড়ির ভেতরে নিয়ে আসুন।
ভদ্রমহিলা রান্না করে স্বপাকে খান। তার নাম মিমিসেন্ট পেবমার্স। কলিন মেয়েটিকে ধরে বাইরে থেকে ভেতরে নিয়ে এলো। এরপর সে ফোন করার জন্য বাইরে এলো।
.
০১.
ক্রাউডিয়ান পুলিশ স্টেশন। একটা আধো ক্ষীণ কণ্ঠস্বর শোনা গেলো–আমি কি ডিটেকটিভ ইনসপেক্টর হার্ড ক্যাসেলের সঙ্গে দেখা করতে পারি।
ওপ্রান্তের কণ্ঠস্বর সতর্কভাবে বললো–তিনি ঠিক জানেন না তিনি এখানে আছে কিনা। আপনি কে?
ওকে বলুন আমার নাম কলিন ল্যাম্ব।
ফোনের ওপার থেকে হার্ড ক্যাসেল বললেন–তুমি কোথা থেকে কথা বলছে। তিনি বললেন, এখন বলতে ক্রাউডিয়ান, তার চেয়ে সূক্ষ্মভাবে অর্থাৎ প্রকৃত অর্থে উইলিব্রাহাম ক্রিসেন্টে একজন ভদ্রলোক মৃত অবস্থায় ঘরে পড়ে আছে। তার ধারণা আধ ঘন্টা আগে ভদ্রলোককে ধারালো অস্ত্র দিয়ে খুন করা হয়েছে। মৃতদেহটা আবিষ্কার করেছে একটি মেয়ে, সে তাকে দেখতে পায়। মিমিসেন্ট পেবমার্স নামে একজন অন্ধ ভদ্রমহিলার বাড়িতে খুনটা হয়েছে। মেয়েটি দেখে বাইরে এসে ভয়ে কাঁপছিলো। ভদ্রমহিলা অন্ধ হওয়ার জন্য বুঝতে পারেননি সামনে কেউ পড়ে আছে।