হার্ড ক্যাসেল বললেন, মিস পেবমার্স একজন সক্ষম পুরুষকে ছোরা মেরে খুন করতে পারেন না। তবে যদি ওনাকে নেশা করানো যায় কিংবা ভদ্রলোক ঘুমোবার জন্য এখানে এসেছিলেন, তাকে মেরে ছোরাটা প্রতিবেশীর বাগানে ফেলে দেওয়া হয়। এরপর ক্যাভেনডিস ব্যুরো থেকে ফোন করে শীলাকে ডেকে পাঠান।
হার্ড ক্যাসেল বললেন, কাজে নামার আগে অবশ্যই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এতে সত্য উদঘাটিত হবে তাতে সন্দেহ নেই।
এবার আমি পকেট থেকে একটা পোস্টকার্ড বের করে টেবিলে রাখলাম। এটাতে লন্ডনের পোস্টঅফিসের ছাপ ছিল। বাঁ-পাশে মনে রেখো লেখা, ডান পাশে নাম-ঠিকানা। নিচে ৪.৩০ সময়ের উল্লেখ আছে।
হার্ড ক্যাসেল বললো, এটাতে কোনো কিছুর যোগসূত্র আছে।
শীলা এটার মাথামুণ্ডু বুঝতে পারছে না। হার্ড ক্যাসেল পোস্টকার্ডটা নিজের কাছে রাখলো সূত্র পাবার আশায়।
পুলিশ স্টেশনে কয়েকটা চিঠি এসেছিলো। একে একে হার্ড ক্যাসেল সেগুলো পড়তে লাগলেন। প্রত্যেকটায় চোখ বোলাতে লাগলেন। হার্ড ক্যাসেল রিসিভারটা তুলে নিলেন। তার দিকে তাকিয়ে বললেন, উইলিব্রাহাম ক্রিসেন্টে টেলিফোন বুথে ওরা একটা মেয়ের মৃতদেহ দেখতে পেয়েছে।
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন তারপর, ওরই মাফলার দিয়ে ওকে শ্বাসরুদ্ধ করে মারা হয়েছে।
হার্ড ক্যাসেল আমাকে বললেন যে মৃতদেহটা তোমার বান্ধবীর নয়। আরেকটু চুপ করে ও বলে উঠলো, অবশ্য তোমার যদি কোনো আশঙ্কা থেকে থাকে। শীলার সঙ্গে কাজ করে এডনা ব্রেন্টের। মিস ওয়াটারহাউস প্রথমে মৃতদেহটা দেখতে পান। আঠারো নম্বরে থাকেন উনি।
একজন পুলিশ কনস্টেবল ঘরে ঢুকে বললো, ডঃ রিগ এই মাত্র ফোন করেছিলেন। তিনি ওখানে শিগগিরই চলে যাচ্ছেন। উইলিব্রাহাম ক্রিসেন্টে উনি আপনার সঙ্গে দেখা করবেন বলেছেন।
.
১৭.
এরপর ঘণ্টাখানেক কেটে গেছে। হার্ড ক্যাসেলের সঙ্গে কনস্টেবল পিয়ার্স দেখা করতে চাইলেন। তিনি তাকে অফিসে আসতে বললেন। প্রাথমিক কিছু কথাবার্তার পর পিয়ার্স হার্ড ক্যাসেলকে ইনকোয়েস্টের দিন কোর্টের সামনে এডনা ব্রেন্টের সঙ্গে যা যা কথা হয়েছে সব জানালো। শুনে হার্ড ক্যাসেল বলে উঠলেন, আমার আলোচনা শেষ হওয়া পর্যন্ত তুমি ওকে অপেক্ষা করতে বলতে পারলে না।
পিয়ার্স যখন এডনা ব্রেন্টের সঙ্গে ছিল তখন আশেপাশে কি কেউ ছিল। অনেক লোকই ছিল স্যার। কারণ অনেকেই তো ইনকোয়েস্টে যোগ দিয়েছিল। পিয়ার্স সেরকম বিশেষ কাউকে দেখছে বলে মনে করতে পারছে না। পিয়ার্সকে তিনি বলে যেতে বললেন।
হার্ড ক্যাসেল খুব অবাক হচ্ছিলেন এডনা ব্রেন্টের মৃত্যু নিয়ে। তিনি ইনসপেক্টর সার্জেন্ট ক্লে-কে কয়েকটা নির্দেশ দিলেন। এবার সার্জেন্ট ওকে জিজ্ঞেস করলেন, স্যার, মেয়েটা উইলিব্রাহাম ক্রিসেন্টে গেল কেন সে ব্যাপারে আপনি কি ভাবছেন?
হার্ড ক্যাসেল বললো, এটা হতে পারে এডনা নিছক কৌতূহলের বসেই ওখানে গেছিল। আসলে জায়গাটা কেমন সেটাই হয়তো দেখতে গেছিল। সার্জেন্ট এরপর চলে গেল।
সার্জেন্ট যাবার পর হার্ড ক্যাসেল তিনটে সংখ্যা লিখলেন। প্রথম সংখ্যাটি কুড়ি, তারপর উনিশ, তৃতীয় সংখ্যাটি আঠারো। তারপর হেমিং পেবমার্স, ওয়াটারহাউস। তিনটে বাড়ির ব্রাহাম ক্রিসেন্টে। প্রথমে কুড়ি নম্বর যে ছুরিটা দিয়ে খুন করা হয়েছিলো সেটা ওই বাড়ির বাগান থেকে ছুঁড়ে ফেলা হয়েছে। সম্ভবতঃ উনিশ নম্বর বাড়ির বাগান থেকে ছুরিটা ছুঁড়ে ফেলা হয়েছে। কিংবা এও হতে পারে কুড়ি নম্বর বাড়ির মালিকই ছুরিটা ওখানে ঝোঁপঝাড়ের মধ্যে ফেলে দিয়েছিলো। প্রথমে ওর হেমিংকে সন্দেহ হয়। তারপর তিনি সিদ্ধান্ত করলেন, না উনি এটা করেননি। এডনা কি মিস পেবমার্স সম্পর্কে কিছু জানতো। যেমন শীলা ওয়েবের সঙ্গে ওর কোনোরকম যোগসূত্র কিংবা ঐরকম কিছু পিয়ার্সকে বলে ছিলো একবার। ও যা বলেছে তা সত্যি হতে পারে না।
তিনি ভাবলেন শেষ পর্যন্ত সবটাই তো অনুমান। এবার আঠারো নম্বর ওয়াটারহাউসই প্রথমে মৃতদেহটা দেখতে পান। যারা মৃতদেহ আবিষ্কার করেন তাদের বিরুদ্ধে হার্ড ক্যাসেলের পেশাগত এক ধরনের সংস্কার আছে। খুনী যদি নিজেই মৃতদেহ আবিষ্কার করে তাহলে কিছু সূত্র বের করা সম্ভব হয়। যেমন অন্যমনস্কতার ফলে রেখে যাওয়া আঙুলের ছাপ।ওয়াটারহাউস ইনকোয়েস্টে কোনো সাক্ষী দেয়নি। উনি কি পেবমার্স সেজে ক্যাভেনডিস ব্যুরোতে ফোন করেছিলেন। এছাড়া তাই শীলা ওয়েবকে তার সন্দেহ আছে।
হোটেলে কলিন ফোন করলেন।কলিন বললেন, একটার সময় মার্কেট স্ট্রিটে তিনি লাঞ্চ করেছেন।
হার্ড ক্যাসেল তাকে সন্ধেবেলা আসতে বললেন। ওপ্রান্ত থেকে কলিন বললো, তিনি চলে যাচ্ছেন। তিনি সপ্তাহখানেকের আগে ফিরবেন না।
.
১৮.
শেষ পর্যন্ত হার্ডক্যাসেল উইলিব্রাহাম ক্রিসেন্টে উনিশ নম্বর বাড়িতে এসে পৌঁছলেন। তখন মিস পেবমার্স বাড়ি থেকে বেরোচ্ছিলেন। পেরমার্স বললেন কোনো ভূমিকা না করে হার্ড ক্যাসেল প্রথমেই এলেন খুনের প্রসঙ্গে। তাকে এড়না ব্রেন্টের মৃত্যুর খবর জানানো হলো। তিনি সামান্য থেমে বলে উঠলেন, আচ্ছা মেয়েটি আপনার সঙ্গে দেখা করতে আসেনি? তিনি না বললেন। মিস পেবমার্স বললেন তার সাড়ে বারোটা নাগাদ বাড়িতে থাকার কথা। হার্ড ক্যাসেল মনে করেন ইনকোয়েস্টের সময় ও নিজেও ছিল। সম্ভবত সেখানে তাকে দেখে তার সঙ্গে দেখা করতে চাইতে পারতো। এই রাস্তার অন্য কোনো বাসিন্দার সঙ্গে ওর কোনো পরিচয় নেই। হয়তো কোনো কারণে মিস পেবমার্সের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল। মেয়েটির বয়স উনিশের মতো। মেয়েটার কোনো আকর্ষণ ছিল না। পেরমার্স বললেন যে তিনি কোনো সাহায্য করতে পারছেন না।