আমি সামান্য ইতস্তত করে বললাম, আপনি ব্যাপারটা উপভোগ করলেন সেজন্য। পোয়ারো বললেন, একজন মালিক তার কুকুরের প্রতি সবসময় সহৃদয়। সে তাকে বাইরে নিয়ে যায়। কুকুরটাও সেই প্রভুর প্রতি সহৃদয়। সে যখন বেড়াল কিংবা ইঁদুর মারে তখন সেটা নিয়ে তার প্রভুর পায়ের কাছে রাখে। তারপর লেজ নাড়তে থাকে।
আমি বললাম, তাহলে কি আমি ল্যাজ নাড়ছি বলে আপনার মনে হয়। আমার ধারণা তুমি স্পর্শ করেছে কলিন।
অবশ্যই স্বাভাবিকভাবে বলতে গেলে এটা একটা অপরাধ। ব্যাপারটাতে আমি যে খুনী হবো না তা তুমি জানো নিশ্চয়ই।
পোয়ারোকে বললাম, আপনি চেষ্টা করে পুরো ব্যাপারটা বোধগম্য করে তুলুন। পোয়ারো সমস্ত ব্যাপারটা শুনতে চাইলো না। যাইহোক, এরপর আমি আরম্ভ করলাম। উইলিব্রাহাম ক্রিসেন্টে উনিশ নম্বরে ঘটে যাওয়া ঘটনাটা বললাম ওকে। এরকুল পোয়ারো চেয়ারে হেলান দিয়ে সমস্ত ঘটনা শুনে গেলেন। আমি চাই তিনি এ ব্যাপারটার একটা সমাধান করে দিন।
তিনি বললেন, এটা একটা সাধারণ অপরাধ। ঘটনাটা আপাতদৃষ্টিতে জটিল বলে মনে হয়। ব্যাপারটা বেশ কৌতূহলোদ্দীপক। পোয়ারো বললেন, তার আগের কোনো ব্যাপারের সঙ্গে সাদৃশ্য আছে। তিনি এক ভদ্রলোককে চিনতেন যিনি এক সুন্দরী স্বর্ণকেশীকে বিয়ে করার জন্য নিজের বউকে বিষ খাইয়ে মেরে দেন। সেক্ষেত্রে একটা কুকুর অপহরণ করার ঘটনায় জড়িয়ে ছিলাম। আমি ঐ স্বর্ণকেশী আর ওর প্রেমিককে খুঁজতে আরম্ভ করলাম। বলাবাহুল্য পেলামও। তোমার এই ঘটনাটা আমার কাছে কোনো একটা ঘটনার সাদৃশ্য আছে বলে মনে হচ্ছে।
পোয়ারো বিখ্যাত হাসি হাসলেন। ইতিমধ্যে ভদ্রলোককে হয়তো শনাক্ত করা সম্ভব হবে।
পোয়রো এবারে আমার দিকে তর্জনী তুলে ধরলেন। বললেন, এখন তোমার উচিত প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলা।
আমি জবাবে বললাম, সেসব আমি বলেছি। ইনসপেক্টর হার্ড ক্যাসেল আর আমি দুজনে মিলে যা জিজ্ঞাসাবাদ করার ছিলো করেছি। ওরা এমন কিছু বলেনি যা আমাদের উৎসাহ জোগাতে পারে।
পোয়ারো বললেন, আমি তোমাকে আশ্বস্ত করতে পারি। এরকম হতে পারে না। তুমি রহস্যজনক কিছু দেখেছো? এরকম কোনো কথা হয়তো তুমি ওদেরকে জিজ্ঞেস করেছে। উত্তরে তারা হয়তো না বলেছে, আর তুমি সেটা সত্যি বলে মেনে নিয়েছে।
পোয়ারো বললেন, আমি যখন প্রতিবেশীর সঙ্গে কথা বলতে বলি তার অর্থ কিন্তু তা নয়। তার বক্তব্য তুমি কথাবার্তার মধ্যে থেকেই একটা সূত্র খুঁজে পাবে। নানা বিষয় নিয়ে ওদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। যেমন বাগান কিংবা পোশাক কিংবা চুলের স্টাইল এরকম সবকিছুই আমাদের বিষয় হতে পারে। কিংবা ধরো ওদের খাদ্যাভ্যাস। এসবের মধ্যেই এমন কিছু কথা পেয়ে যেতে পারো যা সূত্র হিসাবে কাজে লেগে যেতে পারে। তুমি বলেছো, ওদের কথাবার্তায় তেমন কিছু পাওনি, আমার মতে তা হতে পারে না।
আমি বললাম, ওদের যেসব কথাবার্তা হয়েছে একজন সহকারী পুলিশ অফিসার হিসেবে আমি সে সবের শর্টহ্যান্ড নোট নিয়েছিলাম, এনেছি সেগুলো।
আমি তার হাতে কাগজপত্র দিলে পোয়ারো বললেন, অধিকভাবে তুমি এগোচ্ছো।
ওর প্রশংসায় তিনি বিব্রত বোধ করতে লাগলেন। সামান্য চুপ থাকার পর তিনি বললেন যে তিনি সবসময় তাকে পরামর্শ দিতে রাজী। তিনি বললেন, তুমি মনে মনে হয়তো ভাবছ মেয়েটা এই ঘটনার সঙ্গে সম্ভবত জড়িত আছে।
না না, ওর সেরকম সুযোগ ছিলো না। এটা আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন। পোয়ারো বললেন এবারে না, আমি তা বলতে পারছি না। তুমিও আমাকে বলেছে ওকে কোনো বিশেষ কারণে ডেকে আনা হয়েছিল।
পোয়ারো আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, তুমি এবার ওর সঙ্গে কথা বলবে। ঐ কেনর উত্তরটা সম্ভবত পেয়ে যাবে। এমনকি ও যদি নিজে থেকেও না সত্যিটা না উপলব্ধি করতে পারে।
এরকুল পোয়ারো বললেন, তুমি ওর সঙ্গে কথা বলো। কেন না তুমি ওর বন্ধু। আর ঐ অন্ধ মহিলাটির সঙ্গে যেভাবেই হোক দেখা করো। ওর সঙ্গে একইভাবে কথা বলো। এরপর টাইপরাটিং ব্যুরোতে যাবে। কিছু পাণ্ডুলিপি টাইপ করাবে এই অজুহাতেই সেখানে যাবে তুমি। ওখানে যে-সমস্ত মেয়েরা কাজ করে তাদের একজনের সঙ্গে বন্ধুত্ব করবে। তার সঙ্গেও ওদের ব্যাপারে আলোচনা করবে। তারপর চলে আসবে আমার কাছে।
পোয়রোকে জিজ্ঞেস করলাম, আচ্ছা আর একটা কথা জিজ্ঞেস করছি আপনাকে। ঐ ঘড়িগুলোর ব্যাপারে আপনি কি ভাবছেন, পোয়ারো চেয়ারে হেলান দিয়ে আবার চোখ বুজলেন। তিনি কাব্য করে বললেন।
সময় এসে গেছে..সবে…তিনি বললেন কি বুঝতে পেরেছে। দি ওয়ান বাস হ্যান্ড দি কার্পেন্টার থেকে উদ্ধৃতি, এলিস থুলি লুকিং গ্লাস। তাই তো?
এই মুহূর্তে তোমার জন্য যা করতে পারি তা এই। এবার এগোও।
.
১৫.
ইনকোয়েস্ট-এর সময় সাধারণ লোকজনদের ভিড় ভালোই ছিল। শীলা ওয়েবের ভাগ্য পরীক্ষার, ব্যাপারে কোনো উদ্বেগ ছিল না। কয়েক মিনিটের মধ্যে সবকিছু শেষ হয়ে গেল।
উনিশ নম্বর বাড়ি থেকে ক্যাভেনডিস ব্যুরোতে একটা ফোন যায়। সেই ফোনে নির্দেশের : মতো পেবমার্সের বাড়িতে গিয়ে তিনি মৃতদেহ দেখতে পান।
মিস মার্টিনডেলের কাছ থেকে জানা গেল যে, তিনি ফোন পেয়ে তার কথামতো শীলা ওয়েব তার কাছে যান। এর সঙ্গে কিছু নির্দেশ তিনি প্যাডে লিখে রেখেছিলেন।