নাটন কিছু গোপন করছেন কিনা বা কিছু জানেন না এটা বুঝতে পারছিলেন না হার্ড ক্যাসেল।
তার বাচ্চা সম্পর্কে তিনি কোনো খোঁজ নেননি এ বিষয়ে নাটন জানালেন যে, তিনি সিদ্ধান্ত নেবার ব্যাপারে অত্যন্ত কড়া। তার সঙ্গে কোন দেখাসাক্ষাৎ ঘটেনি। মিসেস নাটন বললেন, তার স্বামী যুদ্ধে মারা যান। ক্রাউডিয়ানে একটা মিষ্টির দোকান ছিলো তার। ল্যাঙ্কাশায়ার থেকে তার সবকিছু বিক্রি করে চলে এলেন। রসকো এ্যান্ড ওয়েস্ট বলে একটা ফার্মে চাকরি পান।
হার্ড ক্যাসেল তাকে ধন্যবাদ দিলো এবং বললো এ বিষয়ে শীলাকে এসব কথা একেবারেই জিজ্ঞাসা করবেন না। মিসেস নাটন লোকটার ছবি দেখে বললেন যে, এই লোকটিকে তিনি কোনোদিন দেখেননি। এখানে থাকে বলেও তার মনে হয় না। কিছুটা অপ্রত্যাশিতভাবে বললেন, লোকটা খুব চমৎকার, সম্ভবত ভদ্রলোক।
মিসেস নাটন বললেন, একটু আগে তার এক বান্ধবী তার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলো। কিন্তু তার সঙ্গে দেখা হয়নি। ইনসপেক্টর এবার বুঝতে পারলো। সে যখন ক্যাভেনডিস ব্যুরোতে গেছিল তখন ফিরে আসার সময় দেখেছিলো, মেয়েটি একটা জুতো হাতে করে দাঁড়িয়ে আছে। হার্ড ক্যাসেল জিজ্ঞাসা করলেন, মেয়েটি কি প্রিয় বান্ধবী। মিসেস নাটন বললেন, ওরা একই সঙ্গে চাকরি করে। শীলার সঙ্গে তার বন্ধুত্ব আছ। মেয়েটি বেশ সহজ সরল।
মিসেস নাটন শীলা ফিরছেন না বলে চিন্তিত। তবে মাঝে মাঝে প্রফেসারের কথায় থেকে যায়। মাঝে মাঝে বাসের লাইন পড়ে যায়। তিনি বললেন তার নাম শীলা, মিসেস নাটনের মা দিয়েছিলেন। রোজমেরী নামটা বোনই দিয়েছিলেন।
.
১৩.
কলিন ল্যাম্বের বিবৃতি
লন্ডনে এসে কর্নেল বেকের সঙ্গে দেখা করলেন। তিনি তাকে দেখে জামা খুললেন। আমি বললাম, স্বীকার করছি একটা গিট ছিলো মাত্র। তিনি বললেন যে, আমার কাজ কত এগিয়েছে। কর্নেল বেক বললেন, আমি ক্রিসেন্টে কাজ শুরু করেছিলাম। কাজ একটু বাকি আছে।
কাকতালীয় একটা ঘটনা ক্রিসেন্টে ঘটে গেছে। আমি তাকে বললাম যে, একজন অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তি সেখানে খুন হয়েছে, পকেটে নাম-ঠিকানা পাওয়া গেছে কিন্তু তা গুরুত্বপূর্ণ নয়।
উনি বললেন, তুমি এখানে কিসের জন্য এসেছে, ঐ উইলিব্রাহম ক্রিসেন্টের জন্য অনুমতি নিতে।
আমি বললাম, জায়গাটার নাম ক্রাউডিয়াম। পোর্ট লিবিউরি থেকে অন্তত দশ মাইলের মতো।
কর্নেল বেক আমার কথায় মাথা নাড়িয়ে বললেন, বেশ ভালোই জনবসতি আছে। আমি কতগুলি ব্যক্তি সম্পর্কে ভালোভাবে খতিয়ে দেখতে চাই। তার কথায় কর্নেল বেক দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। রিডিং ডেস্কটা ঠিকমতো নিজের কাছে টেনে নিয়ে পকেট থেকে একটা বলপেন নিয়ে তাকালেন আমার দিকে, বললেন, বলো।
আমি তাদের জানালাম মিসেস হেমিং কুড়ি নম্বর উইলিব্রাহাম ক্রিসেন্টে থাকেন। বাষট্টি নম্বরে র্যামসে নামে একজন ভদ্রলোক আছেন। তার স্ত্রী থাকেন। তেষট্টি নম্বর বাড়িতে এক দম্পতি আছেন, ভদ্রলোকের নাম ম্যাকনটন। যেখানে ঐ অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিটি খুন হয়েছেন সেই বাড়ির বাগানের সঙ্গে অল্পবিস্তর আর সব পাশের বাড়িগুলোর বাগান ছুঁয়ে আছে।
কর্নেল বেক জিজ্ঞাসা করলেন, মৃতদেহটা কোথায়? উনিশ নম্বরে।
হ্যাঁ, ওখানে একজন অন্ধ মহিলা থাকেন। আগে স্কুলে পড়াতেন। এখন একটা ব্লাইণ্ড স্কুলে চাকরি করেন। স্থানীয় পুলিশ পুখানুপুঙ্খভাবে তদন্ত করে ব্যাপারটা জেনেছে।
আমি বললাম, যাদের নাম বললাম তাদের মধ্যে যে কোনো একজনের বাড়িতে যাওয়া খুব সহজ। তবে দিনের কোনো সময় মৃতদেহকে অন্য বাড়িতে ঢোকাতে গেলে তা অত্যন্ত ঝুঁকির ব্যাপার হবে।
কর্নেল বেক বললেন, কারণটা দেখে, বললেন তিনি, তাহলে তুমি ক্রিসেন্ট আর রাইজিং মুনের ব্যাপারে দৃঢ় মন নিয়ে একটা কিছু করতে চাইছে। ওটার পরে যে রাস্তাটা সেখানে রাইজিং মুন নামে পার্কটা আছে।
আমি এখন ক্রাউডিয়ানে ফিরে যাবো তা চললাম।
আমি বললাম, যে মৃতদেহটা আবিষ্কার করেছে সে একটি মেয়ে। কর্নেল বেক মাথা নাড়লেন। মেয়েটি মৃতদেহ দেখে চিৎকার করে তাকে জড়িয়ে ধরে। পুলিশের হাত থেকে আনা ফটোটা দেওয়া হলো কর্নেল-এর হাতে। তাকে বলা হলো ইনি সেই ব্যক্তি খুন হয়েছে।
কর্নেল বেকসিগারেট টানতে টানতে বললো, ঠিক আছে তুমি ইনকোয়েস্টে যাও। মেয়েটিকে দেখো। ওর নাম কি ডায়না, নাকি আর্টেমিস অথবা ক্রিসেন্ট বা মুনরাইজ ধরনের।
.
১৪.
কলিন ল্যাম্বের বিবৃতি
হোয়াইট হেভেন ম্যানসনে আসার পর থেকে অনেকদিন কেটে গেছে। বছর কয়েক আগে এটা আধুনিক ফ্ল্যাটে অতিরিক্ত বাড়ি ছিলো। তিনি লিফটে উঠলেন, কিছুক্ষণ পর দরজাটা খুলে গেল। সামনেই পুরুষ চাকর জর্জ দাঁড়িয়ে আছে। বললেন, ও মিঃ কলিন ল্যাম্ব, অনেকদিন পরে আপনাকে এখানে দেখলাম।
এরপর সে আমাকে এরকুল পোয়ারোর ঘরে নিয়ে এলো। তিনি নিজের ঘরে একটি চৌকো আর্মচেয়ারে বসে ছিলেন। এখন সেপ্টেম্বর মাস। আবহাওয়ায় গরম ভাব, পোয়ারার শীতের আমেজকে অনুভব করতে পেরেছেন। ওর দুপাশে স্তূপীকৃত বইয়ের সারি। ডান হাতে একটা ধূমায়িত কাপ।
পোয়ারো আমাকে বললেন, তুমি তো বিয়ে করতে চলেছে। আমি এবার কিছুটা বিব্রত বোধ করলাম। উনি আমার বাবার কথা জিজ্ঞাসা করলেন।
আমি বললাম, সত্যি কথা বলতে কি মিঃ পোয়ারো, আমি একটা খুনের কেলে জড়িয়ে পড়েছি। সেই জটিল সমস্যা সমাধানের জন্য আপনার কাছে এসেছি আমি।