তিনি মাসির নামটা মনে করার চেষ্টা করলেন। চোদ্দো নম্বর পামার টোন রোড, হার্ড ক্যাসেল পুলিশের গাড়ি নিলেন না। হেঁটে যাওয়াই মনস্থ করলেন। হার্ড ক্যাসেল ঠিক বুঝতে পারলেন না হঠাৎ এই মুহূর্তে ওর জুতোর কথা মনে পড়ে গেল। মেয়েটার মুখটা অস্পষ্টভাবে মনে পড়ে গেল ওর।
এই মেয়েটিকে দেখে তার অন্য কারোর মুখ মনে পড়ে গেলো। কিন্তু অনেক চেষ্টা করে তিনি একসময় হাল ছেড়ে দিলেন।
তিনি ১৪ নম্বরে পৌঁছে বেল বাজালেন। বেলের নিচেই নাম লেখা। মিসেস নাটন নিজেই দরজা খুললেন। তার চেহারা অনেকটা জাপানি আকৃতির।
মিসেস নাটন সাংবাদিকদের ভয় পান, তিনি যে পুলিশের লোক এটা জেনে তিনি খুব ভয় পেলেন। এরপর তিনি বসার ঘরে বসলেন, মিসেস নাটনের টেবিলে রাখা চিঠিতে একটাতে লেখা মিসেস নাটন আর অন্য দুটো আর. এস. ওরের লেখা। হার্ড ক্যাসেল বললেন যে, তার বোনঝি একটা ঘটনায় জড়িয়ে গেছে বলে তিনি জানতে এসেছেন।
তিনি বললেন, শীলার মনের অবস্থা শোচনীয়। তবে আজ সকালে সব ঠিক হয়ে গেছে। ও আবার কাজে বেরিয়েছে।
মিসেস নাটন বললেন, সম্ভবত আজ ওর ফিরতে একটু দেরি হবে। প্রফেসার পার্ডির কাছে কাজ করতে গেছে। আর শীলা বলছিলো ভদ্রলোকের সময়জ্ঞান বিন্দুমাত্র নেই। সবসময় বলেন যে, কাজ শেষ করতে মিনিট দশেকও সময় লাগবে না। আসলে লেগে যায় অনেক বেশি। তবে প্রফেসার পার্ডি খুব চমৎকার মানুষ ওর প্রতি নজর নেন।
শীলার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে ভদ্রলোক বললেন, শীলার আসল নাম রোজমেরী। সে ক্যাভেনডিস ব্যুরোতে দশ মাস ধরে কাজ করেছে। নভেম্বর থেকে সে এখানে কাজ করছে। এর আগে সে লন্ডনে থাকতো। তার কাছে লন্ডনের ঠিকানা থাকলেও এখন তিনি কোথায় রেখেছেন তা মনে নেই। তার মতে অ্যাসিংস্টন গ্রীড না ঐরকম কিছু। ফুলহামের দিকে যেতে পড়ে। একটা ফ্ল্যাটে দুটো মেয়ের সঙ্গে ভাগাভাগি করে থাকতো, লন্ডনের ঐ ঘরগুলো বেশ খরচ সাপেক্ষ।
মিসেস নাটন বললেন যে, ফার্মটার নাম ছিলো হপডড এ্যান্ড ট্রেন্ট। ওর মা-বাবা নেই। তিনি হলেন তার বোনের মেয়ে। তার পিতার পেশা সম্পর্কে তিনি ঠিক জানেন না।
হার্ড ক্যাসেল বললেন, মিঃ নাটন, এই ঘটনার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই ওয়েবের। কিন্তু সমগ্র পরিস্থিতিটা কেমন অস্বাভাবিক। উনি মানতে চাইছেন না মিস নাটনের কোনো শত্রু কেউ থাকতে পারে। তিনি অত্যন্ত বন্ধুবৎসল।
হার্ড ক্যাসেল বললেন, তিনি নিশ্চয়ই বুঝবেন যে, তার বোনঝি অনিবার্যভাবে কারো শিকার হয়েছে। ঘটনা হলো কি যে, ঐ জায়গাতেই ঘটনাক্রমে উপস্থিত ছিলো। নিশ্চয়ই কেউ একজন ওর জন্য ব্যবস্থা করেছিলো যাতে ও ঐ বাড়িতে যায়। বিশেষতঃ যখন সেখানে এমন একটা মৃতদেহ পড়ে আছে, যে কিছুক্ষণ আগে মারা গেছে।
মিস নাটন বললেন, তার মানে আপনি বলতে চাইছেন শীলা যে খুন করেছে এটা কেউ সাজাতে চেষ্টা করছে? না না, আমি বিশ্বাস করতে পারছি না।
হার্ড ক্যাসেল বললেন, ঠিক তাই। বিশ্বাস করাটা শক্ত বলে।
কিন্তু আমাদের তো এই ব্যাপারটা পুরোপুরি নিশ্চিত এবং পরিষ্কার হয়ে নিতে হবে। উদাহরণ হিসাবে ধরা যাক, কেউ তার বোনঝিকে প্রেম নিবেদন করে অসফল হয়ে তাকে খুনের মামলায় জড়িয়ে দিয়েছে।
মিঃ নাটন বললেন, দু-একজনের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আছে বটে, তবে তারা কেউ ওরকম নয়। এমন হতে পারে ও লন্ডনে যখন ছিলো তখন ব্যাপারটা ঘটেছিলো। মিসেস নাটন তার কোনো বন্ধুকেও যে খুনের ব্যপারে জড়িত বলে মেনে নিতে চান না।
মিসেস নাটন মনে করেন এটা কোনো উন্মাদের কাজ। হার্ড ক্যাসেল বললেন, ঐ পাগলামির মধ্যে একটা নির্দিষ্ট পরিকল্পনা ছিল। সেজন্য এই প্রসঙ্গ উঠেছে। ওর মা-বাবার কথা এজন্য জিজ্ঞেস করছি, আপনি জানলে অবাক হবেন। কত না খুনের উদ্দেশ্যে গড়ে ওঠে যার মূল গোথিত থাকে একেবারে অতীতে। মিস ওয়েবের বাবা-মা যখন মারা যান তখন ও নিতান্তই শিশু। তাই ওর পক্ষে তাদের সম্পর্কে কিছু বলাটা সম্ভব নয়। সেজন্যই আপনাকে জিজ্ঞেস করছিলাম। মিসেস নাটন বললেন, ওর বাবা-মা স্বাভাবিক ভাবেই মারা যান। তিনি আরও বলেন, ওদের জিজ্ঞেস করিনি। মিসেস নাটন বললেন, শীলা সম্ভবত অবৈধ সন্তান।
শীলা তার বোনের সন্তান। সে একথা নিজে জানতো না। শুধু তাকে বলেছিলো, অল্প বয়সে ওর বাবা-মা মারা গেছে। সুতরাং সেই কারণেই আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন।
হার্ড ক্যাসেল বললেন তিনি এ সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন করবেন না। তবে তিনি নাটনের কাছ থেকে তার পরিবারের কথা জানতে চান।
তিনি বললেন, তার বোন চালাক ছিল। স্কুল শিক্ষিকা ছিলো। একজন সম্মানিত মহিলা ছিল। তিনি তার নাম জানতেন না। তিনি কখনও দেখেননি। শীলার মা একদিন তার কাছে এসে অঘটনের কথা জানালেন। ও ছিল উচ্চাকাঙ্খী স্বভাবের। সে তার বোনকে ভালো করে চিনতে, বিয়ে করা দুরের ব্যাপার। তাই সে অবস্থায় তিনি তাকে সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দেন। তার বোন এখন কোথায় আছে সে সম্পর্কে তার বিন্দুমাত্র ধারণা নেই। তার বোন এরকম একটা ব্যাপার চেয়েছিল। ও ভেবেছিল এটা তার সম্মানের পক্ষে ভালো। নিজের পক্ষেও ভালো। ওর আর ওর সন্তানের মধ্যে এটা বিচ্ছেদের দেওয়াল থাকা উচিত।
মায়ের রেখে যাওয়া অর্থ থেকে তার শিশুটির জন্য অর্থ ব্যয় হত, অ্যান তার ভাগটা রেখে দিয়েছিলেন বাচ্চাটাকে মানুষ করার জন্য। তবে স্কুলটা শেষ পর্যন্ত বদলাতে হয়েছিলো। আলনিয়া বা অন্য কোনো দেশ হবে।