মিঃ ব্ল্যাণ্ড বললেন বছরখানেক আগে তার স্ত্রী তার কাকার সূত্রে কিছু অর্থের অধিকারী হয়েছিলেন। তবে কাকাকে ও বছর কুড়ি দেখেনি এটাই বিস্ময়ের ব্যাপার। যাইহোক আপনাকে বলতে অসুবিধা নেই এ ব্যাপারটাই আমাদের অনেকটা বদলে দিয়েছিলো। তার ফলে আমরা নিজেরাই সক্ষম হয়েছিলাম। পরে অবশ্য ঘুরে বেড়ানোর ব্যাপার মাথায় এলো। আমি জোর দিয়েই বলতে পারি। তখন আমাদের বাইরে যেতে খুবই ভালো লাগতো। তারপর বলতে কি এমনিতেই আমি ভ্রমণপ্রিয়। তবে ইংল্যান্ডের বাইরে যাওয়াটা তেমন ভালো লাগত না আমার। এখানে আমাদের সব বন্ধুই আছে। আর আমার বোনও এখানে থাকে। এখানকার প্রত্যেকেই আমাদের চেনা। বিদেশে গেলেই তো আমরা অন্য কারোর কাছে আগন্তুক।
.
১০.
উইলিব্রাহাম ক্রিসেন্টের বাষট্টি নম্বর বাড়ি। এই বাড়ির বাসিন্দা র্যামসে। রান্নাঘরের ওদিক থেকে বেশ আওয়াজ আসছিল।
বিল আর ট্রেড দুজন রান্না করার চেষ্টা করছিলো। মিসেস র্যামসে কাজের শেষে তাদের সমস্ত জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখার জন্য বললেন। তারা নিজেদের মধ্যে হৈ-হট্টগোল করলো। তিনি ওদের দুজনকে জোর করে বের করে দিলেন, তারপর ঘরটা বন্ধ করে দিলেন। তারপর এগোতে এগোতে ভাবলেন হঠাৎ একজন মহিলা সাংবাদিকের কথা আপনভাবে মনে পড়লো। বিল ও ট্রেন্ড আগামী পরশুদিন স্কুলে ফিরে যাবে। মাত্র পাঁচ সপ্তাহ আগে তিনি ওদের আসার ব্যাপারে কি খুশীই না হতেন। প্রথম দিন আনতে তিনি স্টেশনে গেছিলেন। সেই দিনগুলোর কথা আর বিশ্বাস হতে চাইছে না। ওরা চলে যাবার পর তিনি পুরোপুরি নিশ্চিত। গাদাখানেক খাবার আর তৈরি করতে হবে না। ওরা দুজনেই যে চমৎকার সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই তার।
ভাবনার মাঝখানে একটা আওয়াজ হলো। তার এগারো বছরের ছেলে বিল দৌড়ে এসে রান্নাঘরে ঢুকলো। বললো যে, একজন ডিটেকটিভ এখানে এসেছে। বিল বললো, মিস পেবমার্সের বাড়িতে খুনের ব্যাপারে তারা জানতে চান।
হার্ড ক্যাসেল তার দুই ছেলের দিকে তাকালেন। তারপর বললেন, তোমাদের এখানে থাকার দরকার নেই। কিন্তু ছেলেদুটোর মধ্যে যাবার কোনো লক্ষণ দেখা গেল না। ওরাও সব শুনবে বলে জেদ ধরে বসে রইলো। শেষে একেবারে বাধ্য হয়ে তাদের জোর করে ঘর থেকে বের করে দিলেন। মিসেস র্যামসে এবারে বললেন, দেখুন আমি ক্রিসেন্টের ওদিকটার কোনো লোককেই চিনি না।
হার্ড ক্যাসেল পকেট থেকে ছবি বার করে তার হাতে দিলেন। বললেন, এই ভদ্রলোককে আগে কখনো দেখেছেন কিনা। তিনি বললেন, সম্ভবত দেখিনি। র্যামসে বললেন, ছুটির দিনগুলোতে একেবারে সময় থাকে না। তাকে বলা হলো হার্ড ক্যাসেল র্যামসের ছেলেদুটির সঙ্গে একটু কথা বলতে চান। তার মতে অনেক সময় বাচ্চারা অনেক কিছু লক্ষ্য করে যা বুড়োরা করে না।
মিসেস র্যামসে মিসেস হেমিংকে চেনেন। তার প্রতি একটা অভিযোগ আছে, উনি মাঝে মাঝে বেড়ালদের সঙ্গে খুব খারাপ আচরণ করেন। তিনি জানালেন তার ছেলেরা চলে গেলে তিনি অলসভাবে সময় কাটাবেন।
কলিন ল্যাম্ব নোট নিতে নিতে বললেন, ঐ বাইরের মহিলা অতিথিদের মধ্যে একজন আপনার এখানেই থাকে। উন্যার–এই নামেই ডাকে ওকে সবাই। এখানে এসে ইংরেজি শেখার বদলে গান গাইবে, তাই তো।
র্যামসে বললেন, তার স্বামী সুইডেন চলে গেছেন। তিনি একজন কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ার। তার স্বামী কবে ফিরবেন তা বলা শক্ত।
বিল আর ট্রেড হলঘরে অপেক্ষা করছিলো। হার্ড ক্যাসেলের প্রস্তাবে ওরা রাজি হলো। ওরা বাগানের দিকে এগোতে লাগলো। বাগানে গাছগুলোর কিছুটা এলোমেলো ভাবেই কাটা। বাগানের একেবারে শেষে ন্যাসপাতির গাছ। একটা চমৎকার আপেল ছিলো তাতে। ট্রেড আপেল ও ন্যাসপাতির মাঝখানটা আঙুল দিয়ে দেখালো। সেখান দিয়ে মিস পেবমার্সের বাড়িটা দেখা যায়।
ইনসপেক্টর বললেন, তার ধারণা ওপরের জানলা থেকে দেখা যায়। তারা বললো, ঠিক বলেছেন আপনি। যদি কাল আমরা ওপরে যেতাম আর তাকাতাম তাহলে আমরা একটা কিছু নিশ্চয়ই দেখতে পেতাম। আমরা সিনেমায় গেছিলোম। বিল ও ট্রেড জানালো মিস পেরমার্স অন্ধ। তাদেরকে একবার তিনি বল ছুঁড়ে দিয়েছিলেন। ন্যাসপাতি গাছে জলের পাইপ দেখে কলিন অনুমান করলেন ছেলেদুটি হেমিং-এর বেড়ালের গায়ে জল দেয়। কলিন বললেন, তোমরা ওর বেড়ার ভেতর দিয়ে ঢুকেছে তারা তা মানলো না। তিনি বললেন, যেভাবেই হোক মাঝে মাঝে ওরা বেড়া দিয়ে ঢোকে। মিস পেবমার্সের বাগানে যাও। ওখান থেকে ঝোঁপঝাড় এগিয়ে মিসেস হেমিং-এর বাগান। ওখানে তারের বেড়ায় গর্ত আছে।
বিল ট্রেডকে বললেন, তখনই চুপ করে থাকতে বলেছিলাম। হার্ড ক্যাসেল বললেন যে, তারা সিনেমা থেকে ফিরে এসে ঘটনা শুনেছিলো। তিনি বাজী রেখে বলতে পারেন যে তখন তারা জায়গাটা খুব সাবধানে ঘুরে দেখে নেয়। তাই তো।
হার্ড ক্যাসেল বললেন, তারা যদি কিছু খুঁজে পেয়ে থাকে সেটা দেখাতে। ট্রেড ছুটে গিয়ে পকেট থেকে একটা রুমাল বের করে দেখালো। রুমালে পরপর কয়েকটা গিট দেওয়া আছে। তিনি রুমালের গিটগুলো খুললেন। দুটি ছেলে তখন দুপাশে দাঁড়িয়ে আছে। রুমালের ভেতরের জিনিসগুলো হলো কাপের একটা হাতল, চিনামাটির কোনো জিনিসের একটা টুকরো, জং ধরা একটা কাটা চামচ, একটা কয়েন, একটা কাচির অর্ধেক অংশ, একটুকরো কাঁচ আর কাপড় শুকোনোর ক্লিপ।