.
০৮.
উইলিব্রাহামের ২০ নম্বর বাড়িটার নাম ডায়না লজ। বাইরে থেকে কেউ যাতে ঢুকতে না পারে সেজন্য গেটের ভেতর থেকে রীতিমতো একটা লম্বা তার জড়ানো আছে। এই বাড়িটার একটা দুর্গন্ধ যুক্ত পরিবেশ। রঙটা বেশ উজ্জ্বল। কোনো বেল নেই। একটা হাতল ছিলো তা টানা হলে ভেতর থেকে একটা অল্প ঘণ্টা বাজার শব্দ কানে এলো ওর।
খানিক পর বছর তিরিশের আগেকার মতো চুল বাঁধা, গলায় মাফলার জড়ানো মিসেস হেমিং এসে দাঁড়ালেন। ইনসপেক্টর লক্ষ্য করলেন গলায় রাখা মাফলার আসলে একটা বেড়াল। এরপর আরো গোটাতিনেক বেড়াল বেরিয়ে এলো।
অনেক বেড়াল নিয়ে ঘরে থাকেন হেমিং। মিসেস হেমিং বললেন যে, তার গোপন করার কিছু নেই। তার পাশের বাড়ির কথা জিজ্ঞেস করতে তিনি বললেন, তার দৃষ্টি পোষ বেড়ালের দিকে। তিনি বললেন, তিনি দোকানপাট তাড়াতাড়ি করে নেন। আসলে বেড়ালদের দেখাশোনা করার জন্য এটা করেন তিনি। তিনি সামনের জানলা দিয়ে তাকাননি। বাড়ির পেছন দিক দিয়ে তিনি বাগানে যান। আসলে তিনি তার প্রিয় বেড়ালকে খুঁজে পাচ্ছিলেন না। বাগান দিয়ে গিয়ে ও একটা গাছের ওপরে উঠে গেছিল।
তার বাগানে দেখতে গেলে হার্ড ক্যাসেল দেখলেন এই বাগানের ঝোঁপঝাড় দিয়ে পেবমার্স, বাগান কোনো কিছু দেখা সম্ভব নয়। এদিকে কোনো প্রতিবেশী নেই। মিসেস হেমিং বললেন, উনিশ নম্বর বাড়ির কথা আপনি বললেন না? আপনার ধারণা বাড়িটায় মাত্র একজনই থাকে। অন্ধ মহিলা। তিনি বললেন যে, ভদ্রলোক খুন হবার জন্য এসেছিলেন ব্যাপারটা সত্যিই বড়ো অদ্ভুত।
.
০৯.
ওরা উইলিব্রাহাম ক্রিসেন্ট ধরে গাড়িটা নিয়ে যাচ্ছিলেন। কালব্রাম রোডে এসে তারা পৌঁছলেন। তবে আজকের কাগজে যতটুকু পড়লাম তাতেই আমি আশ্চর্য হয়ে গেছি। এখন নানা গুজব রটছে। এ সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই। কিন্তু তার স্ত্রী বেজায় ঘাবড়ে গেছে। তার একটাই চিন্তা যে, একজন জলজ্যান্ত খুনী অবাধে এখানে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
মিঃ জসুব্ল্যাণ্ড নানারকম গুজবের কথা বললেন। মিঃ ব্ল্যাণ্ড বললেন, ভদ্রলোকের কাছে একটা কার্ড আর ঠিকানা পাওয়া গেছে।
মিঃ ব্ল্যাণ্ডকে ছবি দেখানো হলো। তিনি বললেন এই ছবিটা অত্যন্ত সাধারণ। তিনি একে কোনোদিন দেখেননি। কারণ মনে রাখার মতো মুখ হলে তো সহজেই মনে পড়তো।
একষট্টি নম্বর বাড়িটা আসলে মিসেস হেমিং-এর বাড়ির পেছন দিকে পড়ে। ঐ বাড়িটার একটা অংশ ২০ নম্বর ছুঁয়ে আছে। এতে অবশ্য তুমি তোমার মিঃ ব্ল্যাণ্ডকে দেখতে পাবার একটা সুযোগ পাবে।
সামান্য হেসে কলিন বললেন, তোমার মিঃ ব্ল্যাণ্ড যে একজন ধনী ব্যক্তি সে ব্যাপারে আমি নিশ্চিত। যদি তা না হত তাহলে এরকম মারাত্মক বোধ ওর থাকতো না। হার্ড ক্যাসেল বেল বাজিয়েছেন। কলিন ওর দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন, সকালেই ঠিক এই সময়টাতে ওকে তুমি পাবে বলে আশা করতে পারো।
ঠিক তখন একটা ট্রাভেলারস ভ্যান এসে দাঁড়ালো। সামনেই গ্যারেজ। তাতে গাড়ি ঢুকলো। ভেতর থেকে মিঃ ব্ল্যাণ্ড এলেন। তিনি নিজেই বললেন, নিশ্চয়ই ঐ উনিশ নম্বর বাড়িটার ব্যাপারে এসেছেন? আমার বাগানেরই সংলগ্ন ঐ বাড়িটা। তবে একমাত্র ওপর তলার জানলা দিয়ে ছাড়া প্রকৃতই ও বাড়ির ভেতরে কিছু দেখা যায় না। সব মিলিয়ে বেশ অদ্ভুত ব্যাপার।
মিঃ ব্ল্যাণ্ডকে বলা হয় ভদ্রলোকের ছবিটা তার মারা যাবার আগে ভোলা হয়েছিল। হঠাৎ ভেতরের দিকে দরজা খুলে মিঃ ব্ল্যাণ্ডের স্ত্রী এলেন। হার্ড ক্যাসেল তাকালেন ওর দিকে। তিনি দেখতে অনেকটা অ্যানিমিয়া রোগীর মতো। সঙ্গে সঙ্গে আরো একজনের কথা আপনভাবে তার মনে এলো। তিনি বললেন, তার শরীর ভালো নয় বলে তার স্বামী তাকে গুরুগম্ভীর বিষয় থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করে। একটুতেই তিনি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। তার মনে হয় আপনারা খুন হয়ে যাওয়া লোকের ব্যাপারে কথাবার্তা বলছিলেন। তিনি ছবি দেখতে চান। ইনসপেক্টর ছবি দিলে তিনি তা দেখে বললেন, এটাকে কি শাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে, তাকে ছুরি মারা হয়েছে শুনে তারা খুব ভয় পেলেন।
তিনি এর আগে কখনো তাকে দেখেননি। তার স্বামীরও ওই লোকটির সম্পর্কে কিছু জানা নেই। মিস পেবমার্সের সঙ্গে লোকটির কোনো আত্মীয়তা ছিলো না। মিস পেবমার্সের কাছে লোকটি একেবারে অপরিচিত।
তিনি পেবমার্সকে প্রতিবেশী হিসেবে চেনেন। উনি বাগানের ব্যাপারে আমার স্বামীকে প্রায়ই কিছু উপদেশ কিংবা পরামর্শ দেন।
ইনসপেক্টর হার্ড ক্যাসেল মিঃ ব্ল্যাণ্ডের দিকে তাকিয়ে বললেন, যদি তিনি বা তার স্ত্রী গতকাল বাগানে গিয়ে থাকেন, বাগান থেকে গুলি করার কোনো ঘটনা গতকাল কোনোভাবে আপনাদের নজরে পড়ে থাকে দুপুরবেলা, তিনি কিছু শোনেননি। প্রাসঙ্গিক সময়টা বেলা দেড়টা থেকে তিনটের মধ্যে। ঐ সময়টা ভ্যালেরী ও মিঃ ব্ল্যাণ্ড এখানেই ছিলেন। তখন আমরা লাঞ্চও করেছিলাম। তাদের ডাইনিং রুমে রাস্তার ধারে। সুতরাং বাগানের কোনো কিছু দেখা বা শোনা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়।
তারা সাধারণত দেড়টার মধ্যে লাঞ্চ করেন। ব্লাণ্ড বললেন, না যাই না। তিনি বললেন তার স্ত্রী সবসময় লাঞ্চের পর বিশ্রাম নিতে যায়। আর তেমন যদি কোনো জরুরী কাজ না থাকে তাহলে চেয়ারে বসে একটু ঝিমিয়ে নিই। আমি বাড়ি থেকে বেরিয়েছি পৌনে তিনটে নাগাদ। তবে তার আগে একবার ও বাগানে দাঁড়িয়েছে।