সেখানে তাহলে তারা কি দুজনে একসঙ্গে গিয়েছিল?
হ্যাঁ, বন্ধু তোমার মনে আছে নিশ্চয়, ভ্যালেরিকে যখন আমি জিজ্ঞেস করি, সেখানে তার একলা যেতে ভয় করেনি? তখন সে একটু ইতস্তত করেছিল? জন অগল্যাণ্ড তার সঙ্গে গিয়েছিল–তাতে আমার অনুমান, রীডবার্নের তেজ বা ঔদ্ধত্য এতটুকু কমেনি। তারা ঝগড়া করে এবং ভ্যালেরিকে কিছু অসম্মানজনক উক্তি করে থাকবেন। এর ফলে রাগে উত্তেজনায় অগল্যাণ্ড আচমকা তাকে আঘাত করে থাকে। তারপরের ঘটনা তো তোমার জানা।
কিন্তু ওই ব্রীজ খেলার ব্যাপার?
আমরা প্রত্যেকে জানি, চারজন খেলোয়াড় ছাড়া ব্রীজ খেলা যায় না। এই তুচ্ছ ব্যাপারটায় মানুষের মনে বিশ্বাস জন্মাতে পারে। কিন্তু সেদিন সন্ধ্যায় সেই ঘরে মাত্র তিনজন ছিল, তার খবর কেই বা রাখে?
আমি এখনো সেই একই ধাঁধায় পড়ে আছি।
আমি একটা জিনিষ এখনো কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছি না, নর্তকী ভ্যালেরি সেন্টক্লেয়ারের ব্যাপারে অগল্যাণ্ড পরিবারের এত কৌতূল কেন?
পোয়ারো বলল, আহ! তুমি আমাকে অবাক করে দিলে। কেন ড্রইংরুমে তুমি অগল্যাণ্ড পরিবারের গ্রুপ ফটোটা দেখনি। অনেকদিন আগের তোলা ছবি তাতে একটি মেয়ের ছোটবেলার ছবি ছিলো, সেই মেয়েটি তাদেরই মিসেস অগল্যাণ্ড অপর মেয়েটি তার পরিবারের কাছে মৃত হলেও, সেই মেয়েটি হলো মিস ভ্যালেরি সেন্টক্লেয়ার!
কি, কি বললে?
একসঙ্গে দুইবোনকে দেখেও তুমি তাদের চেহারার মধ্যে মিল খুঁজে পাওনি?
আমি অকপটে স্বীকার করলাম যে, না, আমি তখন চিন্তা করছিলাম তাদের দুজনের মধ্যে কি আশ্চর্যরকম অমিল।
এর কারণ কি জান বন্ধু, তোমার মনটা এতই উদার যে, তোমার মনে সবসময় একটা রোমান্টিক ভাব জেগে ওঠে। শোনো ওদের দুজনের শরীর এবং মুখের গড়ন একই। রঙটা শুধু আলাদা। একটা মজার ব্যাপার হলো, ভ্যালেরি তার পরিবারের কাছে লজ্জাকর, আর তার পরিবার তার জন্য লজ্জিত। সে যাইহোক, বিপদে পড়ে সে সাহায্যের জন্য ভায়ের শরণাপন্ন হয়। আর ঘটনাটা যখন গোলমালের রূপ নেয়, তখন তারা একে একে সবাই জড়িয়ে পড়ে। পারিবারিক শক্তি এক অভূতপূর্ব জিনিষ, একই পরিবারের সকল সদস্য বিশেষ ক্ষেত্রে একসঙ্গে লড়তে পারে তাদের শত্রুর বিরুদ্ধে। তখনি নিজেদের মধ্যে যত ঝগড়া বা রেষারেষিই থাক না কেন। আর ভ্যালেরি তার পরিবারের কাছ থেকে সেই ঐতিহাসিক দক্ষতা লাভ করে। যুবরাজ পলের মত আমি বংশগত ব্যাপারটাকে বিশ্বাস করি। আমাকে ওঁরা ঠকিয়েছেন? তবে ভাগ্য ভালো যে, একটা ব্যাপারে মিসেস অগল্যাণ্ডকে জিজ্ঞাসা করার মাধ্যমে সেদিন সন্ধ্যায় ড্রইংরুমে তাদের অবস্থানের ব্যাপারে মা ও মেয়ের বক্তব্যের মধ্যে আমি পার্থক্য খুঁজে পাই। এক্ষেত্রে এরকুল পোয়ারোর কাছে অগল্যাণ্ড পরিবার অবশ্যই হার মেনেছে।
পোয়ারো, তুমি এবার যুবরাজ পলকে কি বলবে?
বলব, ভ্যালেরি সম্ভবত কোনো দোষ করেননি, আর এই বলব যে, আমার অনুমান–সেই ভবঘুরে লোকটার খোঁজ কোনোদিন পাওয়া যাবে না। এবং জারাকে জানাব আমার অভিনন্দন। একটা আশ্চর্য রকমের মিল রয়েছে জারার ভবিষ্যৎ বাণীর সঙ্গে এই ঘটনার। আমার তো মনে হয় এই ছোট্ট ঘটনাকে চিড়িতনের রাজার অভিমান বলে আখ্যা দিলে খারাপ হবে না, তুমি কি বলো, বন্ধু?