হয়তো কেউই রীডবার্নের দু চোখের মাঝখানে ঘুষি মেরে থাকবে। সেই আঘাতে টাল সামলাতে না পেরে পেছন ফিরে পড়ে যান তিনি ঐ মার্বেল পাথরের সিংহের মাথার ওপর। তারপর মেঝেতে পড়ে যান। এরপর তাকে টানতে টানতে অপর জানলার সামনে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে তাকে শায়িত অবস্থায় দেখা যায়, ডাক্তারের কথামতো যদি জানলার সামনে থেকে পড়ে মেঝের ওপর তাহলে যেখানে পড়া উচিত ছিল সেখানে নয়।
কিন্তু কেন?
সমস্ত কিছু দেখে শুনে মনে হচ্ছে এর কোনো দরকার ছিলো না।
অপরদিকে আবার এরও দরকার ছিলো। কারণ খুনীকে খুঁজে পাওয়ার এটাই ছিলো প্রধান চাবিকাঠি। যদিও তাকে হত্যা করার উদ্দেশ্য তার ছিলো না। তবু তাকে খুনি বলে ধরে নিতে হবে। সে অবশ্য একজন শক্তসমর্থ লোক।
মেঝের ওপর দিয়ে ভারী দেহটা বয়ে নিয়ে গেছে বলে?
না, ঠিক সেই কারণে নয়। কেসটা খুবই আগ্রহব্যঞ্জক। যদিও আর একটু হলে আমি নিজেকে মূর্খ প্রতিপন্ন করে ফেলতাম।
তার মানে তুমি কি বলতে চাও, এখানে সবকিছুর শেষ। তোমার সব জানা হয়ে গেছে?
হ্যাঁ।
না, আমি সঙ্গে সঙ্গে চিৎকার করে উঠলাম। তুমি একটা জিনিষ জানো না!
কি সেটা?
তুমি জানো না, সে হারিয়ে যাওয়া চিড়িতনের সাহেবটা কোথায়!
ওহো, এই কথা? সেটা হাসির ব্যাপার! বন্ধু সেটা খুবই হাস্যকর।
কেন?
কারণ সেটা আমার পকেটেই রয়েছে। সে সঙ্গে সঙ্গে সেটা পকেট থেকে বার করে দাঁড়াল।
ওহে! আমি বোকার মতো বলে উঠলাম, তুমি এটা কোত্থেকে পেলে?
এখানে। এটা কোনো সাড়া জাগানো ঘটনা নয়, এটা আসলে প্যাকেটের ভেতরেই ছিলো। প্যাকেট থেকে বার করা হয়নি।
হুম! এই ঘটনা। তোমার কাছে এটা সূত্র বলে মনে হয়েছে, হয়নি?
হা বন্ধু, এই ঘটনায় মহামান্য যুবরাজকে আমার সম্মান দেওয়া উচিত?
আর মাদাম জারাকে!
ওঃ, হ্যাঁ–সেই মহিলাকেও, ভালো কথা, আমরা এখন কোথায় যাচ্ছি।
এখন আমরা শহরে ফিরে যাচ্ছি। কিন্তু তার আগে ডেইজিমেডে একজন মহিলার সঙ্গে কিছু কথা বলে নিতে চাই।
সেই ছোটখাটো পরিচারিকা আমাদের এবারেও দরজা খুলে দিলো।
স্যার, ওরা এখন সবাই মধ্যাহ্নভোজ সারতে ব্যস্ত–অবশ্য যদি না আপনারা মিস সেন্টক্লেয়ারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চান, এখন তিনি বিশ্রাম নিচ্ছেন।
আমি যে মিস অগল্যাণ্ডের সঙ্গে দু-চারটে কথা বলতে চাই। তুমি তাকে বলবে?
সে আমাদের ড্রইংরুমে নিয়ে গিয়ে বসাল, একটু অপেক্ষা করতে হবে। ডাইনিংরুমের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় ওদের একবার দেখে নিলাম। ওদের মধ্যে দুজন শক্তসমর্থ লোককে দেখতে পেলাম, একজনের মোটা গোঁফ আছে, আর একজনের গোঁফ দাড়ি কিছুই নেই।
কিছুক্ষণের মধ্যে মিসেস অগল্যাণ্ড ঘরে এসে ঢুকল। তিনি জিজ্ঞাসু চোখে পোয়ারোর দিকে তাকালেন।
পোয়ারো তাকে মাথা নিচু করে সম্মান জানাল। মাদাম আমরা আমাদের দেশে মায়েদের খুব ভক্তি শ্রদ্ধা করে থাকি। তিনি আমাদের একাধারে জন্মদাত্রী। এবং পূজনীয়া, সবকিছু!
মিসেস অগল্যাণ্ড পোয়ারোর এমন গদগদ ভাব দেখে আশ্চর্য হয়ে তার দিকে তাকিয়ে রইলেন।
আর একমাত্র সেই কারণেই আমি আবার এখানে ফিরে এলাম মায়ের চিন্তা একটু কমানোর জন্য। মিঃ রীডবার্নের খুনীকে কখনো চিহ্নিত করা যাবে না। আপনার কোনো ভয় নেই। আমি এরকুল পোয়ারো আপনাকে আশ্বস্ত করছি। আমি ঠিক বলছি, না বলছি না? আমার আগে জানতে হবে আমি কাকে বলছি? মাকে না খুনীর স্ত্রীকে?
কয়েক মুহূর্ত সব চুপচাপ। মিসেস অগল্যাণ্ড তার নিজের চোখ দিয়ে পোয়ারোর মধ্যে যেন কি খুঁজে পেলেন। অবশেষে তিনি শান্তভাবে বললেন, জানি না আপনি কিভাবে এতসব সংবাদ পেলেন–তবে হ্যাঁ, আপনার ধারণাই সত্য!
পোয়ারো গম্ভীর হয়ে মাথা নেড়ে বলল, ব্যস, মাদাম এতেই যথেষ্ট। তবে আপনার অস্বস্তি বোধ করার কোনো কারণ নেই। পোয়ারোর মতো চোখ ইংলিশ পুলিসের নয়। এরপর তিনি দেওয়ালে টাঙানো গ্রুপ ফটোটার দিকে আঙুল তুলে দেখালেন।
এক সময় আপনার একটি মেয়ে ছিল। মাদাম সে কি এখন মৃত?
আবার কিছুক্ষণ চুপচাপ। তিনি পোয়ারোকে তার চোখ দিয়ে একবার ভালো করে মাপলেন। তারপর উত্তর দিলেন, হ্যাঁ, সে মৃত।
পোয়ারো আহা! বলে তাড়াতাড়ি উঠে দাঁড়াল। ঠিক আছে। আমাদের এখনি আবার শহরে ফিরে যেতে হচ্ছে! তাসের প্যাকেটে চিড়িতনের সাহেবটা রেখে দেওয়ার অনুমতি দেবেন আমাকে? আপনার গলতি একটাই মাদাম, কেবল ৫১টা কার্ড নিয়ে একঘন্টা কি আরও বেশি সময় ধরে ব্রীজ খেলা–যাইহোক খেলা সম্বন্ধে যার কোনো ধারণাই নেই, মুহূর্তের জন্য বাহবা দেবে সে আপনাদের। বাঃ বাঃ বেশ!
পোয়ারো স্টেশনের পথে যেতে গিয়ে বলল, বন্ধু, তুমি তো সবই দেখলে।
না, আমি কিছুই দেখিনি! স্পষ্ট করে বলল, কে খুন করেছে রীডবার্নকে?
জুনিয়র জন অগল্যাণ্ড, সে তার বাবাকে খুন করেছে, এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ নিশ্চিত নই। তবে তাদের মধ্যে শক্তি ও কম বয়সের দিক থেকে আমি এক্ষেত্রে তাদের ছেলেকেই খুনী হিসাবে চিহ্নিত করতে চাই। ওই জানলার ঘটনার জন্য তাদের দুজনের মধ্যে যে কেউ একজন মিঃ রীডবার্নের খুনী।
কেন?
লাইব্রেরী থেকে বেরোবার চারটি রাস্তা খোলা ছিল–দুটি জানলা, ও দুটি দরজা। তবে একটি পথই ব্যবহার করা হয়, পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষ ভাবে বলতে পারি বেরোবার তিনটি পথই বাড়ির সামনের দিকে ছিলো। এই বিয়োগান্ত নাটকের মূল কেন্দ্রবিন্দু ছিলো বাড়ির পিছনের দিকে জানলাটা। এর থেকে বোঝা যায় যে, হঠাৎই কোনো কিছু চিন্তা না করে, পেছনের জানালা দিয়ে টপকে সে ডেইজিমেড়ে গিয়ে উপস্থিত হয়। তিনি অবশ্য সত্যি সত্যি অজ্ঞান হয়ে যান। আর জন অগল্যাণ্ড তাকে কাঁধে করে বয়ে নিয়ে আসে। আর সেই কারণবশতঃ আমি বলেছিলাম যে খুনী একজন শক্তসমর্থ লোক।