পোয়ারো তার কথায় মাথা নেড়ে সায় দিল। আমার এই প্রশ্নে আশাকরি আপনি আঘাত পাননি।
না মঁসিয়ে, একদম নয়। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পল যেন সব ঘটনার কথা জানতে পারে।
তা হলে মাদমোয়াজেল, আজকের দিনটা আপনার কাছে শুভ যাক–এই কামনা করে আপনার কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি।
পোয়ারো ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় একটুখানির জন্য থমকে দাঁড়ালো। তার দৃষ্টি তখন আটকে গিয়েছিল ঘরের সামনে খোলা একজোড়া চটির ওপর। এই চটিজোড়াটা আপনার মাদমোয়াজেল?
হ্যাঁ মঁসিয়ে। সবেমাত্র ওগুলো পরিষ্কার করে ওখানে রাখা হয়েছে।
আহ! পোয়ারো সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে অস্ফুটে বলল–ফায়ার প্লেসের আগুনের ছাই পরিষ্কার করার কথা এ বাড়ির চাকর-বাকরদের মনে না থাকলেও জুতোজোড়া পরিষ্কার করতে এরা ভুলে যায় না। এতে করে দু-একটা উল্লেখযোগ্য পয়েন্টের কথা মনে হলো। কিন্তু আমার ভয়, আবার এটা আমার অনুমানও হতে পারে। এই কেসের এখানেই শেষ বলে ধরে নিতে পারি আমার। কেসটা আমার অতি সহজ সরল বলে মনে হচ্ছে।
আর খুনী?
পোয়ারো কখনো তার শিকার সন্ধানে ভবঘুরেদের পেছনে সময় খরচ করে না, গলা ফুলিয়ে বলল আমার বন্ধুবর।
আমাদের সঙ্গে হলঘরে মিলিত হলো মিস অগল্যাণ্ড। আপনার সঙ্গে আমার মা কথা বলতে চান। সে পোয়ারোকে উদ্দেশ্য করে বলল–আপনারা যদি এক মিনিটের জন্য ড্রইংরুমে অপেক্ষা করেন।
ঘরটা এখনো স্পর্শ হয়নি। আলস্যভাবে তাসের কার্ডগুলো একজায়গায় করে পোয়ারো তার ছেটো ছোট আঙুল দিয়ে সাজিয়ে রাখল।
আমার প্রিয়বন্ধু, তুমি কি জানো এখুনি আমি কি ভাবছি?
আমি কৌতূহলভরে বললাম, না।
আমার অনুমান, মিস অগল্যাণ্ড একটা নো-ট্রাম্প কল দিয়ে ভুল করেছিল। তার তিনটে স্পেড কল দেওয়া উচিত ছিলো।
পোয়ারো তোমার একটা মাত্রা থাকা উচিত।
শোনো বন্ধু, আমি সবসময় রক্ত আর ঝড়ঝাঁপটার কথা বলতে চাই না। তার মুখটা হঠাৎ শক্ত হয়ে উঠল। দেখ, দেখ হেস্টিংস এই তাসগুলোর মধ্যে থেকে চিড়িতনের সাহেব উধাও।
আমি অস্ফুটে চিৎকার করে বললাম, জারা!
হেঁ, হেঁ! মনে হল সে আমার কথাটা ঠিক বুঝতে পারল না। সে কার্ডগুলোকে ব্যাগের মধ্যে পুরে রাখল। তার মুখটা খুব গম্ভীর হয়ে উঠল।
হেস্টিংস! অবশেষে সে বলল, আমি এরকুল পোয়ারো। আমি একটা খুব বড় ভুল করতে যাচ্ছিলাম। খুব বড় ভুল।
আমি তার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে রইলাম। আমাকে, তার সেই কথাটা প্রভাবিত করল বটে, কিন্তু চূড়ান্তভাবে উপলব্ধি করা যায় না।
হেস্টিংস আমার কি মনে হয় জান, আমাকে আবার পুনরায় প্রথম থেকে চিন্তা করতে হবে তবে এবার আর ভুল করব না।
পোয়ারো আরো কি যেন বলতে যাচ্ছিল, কিন্তু একটি মাঝবয়সী সুন্দরী মহিলার প্রবেশে বাধা পেলো। তাঁর হাতে একগাদা গৃহস্থালীর বই। পোয়ারো তাকে মাথা নিচু করে অভিবাদন জানাল।
স্যার, আপনাকে কি আমি মিস সেন্টক্লেয়ারের বন্ধু ধরে নিতে পারি?
মাদাম আমি ওর এক বন্ধুর কাছ থেকে এসেছি।
ওহো, তাই বুঝি! আমি ভেবেছিলাম হয়তো
পোয়ারো আচমকা জানলার দিকে চেয়ে দেখল। গতকাল রাত্রে আপনার জানলার খড়খড়িগুলো নিচে নামানো ছিল না নিশ্চয়?
না, আমার তো তা মনে হয় না, মনে হয় মিস সেন্টক্লেয়ার ঘরের আলো দেখতে পেয়েছিলো।
গতকাল রাত্রে পূর্ণিমার আলো ছিলো। আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি যে জানলার দিকে মুখ করে বসে থাকা সত্ত্বেও আপনি আপনার জায়গা থেকে মিস সেন্টক্লেয়ারকে দেখতে পেলেন না?
আমার মনে হয় আমরা তাস খেলায় গভীরভাবে মগ্ন ছিলাম। তাছাড়া এর পূর্বে আমি কখনো এরকম ঘটনা ঘটতে দেখিনি।
মাদাম, আমি সেটা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি। আর আমার ইচ্ছা আপনার পরিশ্রান্ত মনটা একটু বিশ্রাম পাক। শুনলাম, মাদমোয়াজেল সেন্টক্লেয়ার কালই নাকি এখান থেকে চলে যাচ্ছেন!
ওহো! তাই বলুন। ভদ্রমহিলাকে দেখে মনে হল, সেন্টক্লেয়ার চলে যাচ্ছেন দেখে তিনি যেন একটু চিন্তামুক্ত হলেন।
মাদাম, তাহলে এবার আপনাকে সুপ্রভাত জানিয়ে আমার চলে যেতে হচ্ছে।
অতঃপর আমরা ঘর থেকে চলে গেলাম।
সামনের দরজা দিয়ে বাইরে এসে দেখলাম একজন পরিচারিকা সিঁড়ি বঁট দিচ্ছে, পোয়ারো তাকে উদ্দেশ্য করে বলল, হ্যাঁ বাছা, তুমিই কি ওপরের ওই যুবতী রমণীর চপ্পলজোড়া পরিষ্কার করেছিলে?
মেয়েটি মাথা নেড়ে বলল, না স্যার। আমার তো মনে হয় ওই চপ্পলজোড়া পরিষ্কার করা হয়েছে বলে।
রাস্তায় নেমে পোয়ারোকে জিজ্ঞেস করলাম আমি, তাহলে ওগুলো পরিষ্কার করল কে?
কেউ নয়। চপ্পলজোড়া পরিষ্কার করার প্রয়োজন হয় না।
আমি মনে করি, চমৎকার জ্যোৎস্নার রাতে পরিষ্কার রাস্তা দিয়ে হাঁটতে জুতো বা চটিজোড়াতে কাদা লাগে না।
পোয়ারো বলল, হ্যাঁ, তার ঠোঁটে একটা রহস্যময় হাসি ফুটে উঠল, আমিও তোমার সঙ্গে একমত।
কিন্তু, বন্ধু, আর মাত্র তিরিশ মিনিট ধৈর্য সহকারে অপেক্ষা কর। আমরা এখন মনডেসারে ফিরে যাচ্ছি।
বাটলার আমাদের পুনরায় ফিরে আসতে দেখে আশ্চর্য হল কিন্তু লাইব্রেরীতে প্রবেশ করার পথে সে বাধা দিলো না।
পোয়ারোকে গাড়ি চলার পথ ধরে এগিয়ে যেতে দেখে, আমি চিৎকার করে বললাম, ওটা ভুল জানলা।
বন্ধু আমার তা মনে হচ্ছে না। তুমি একবার এখানে এসে দেখ। সে মার্বেলের সিংহের মাথাটার দিকে আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করাল। তার ওপর একটা অস্পষ্ট আঠালো দাগ, তারপর সে তার আঙুল দিয়ে পালিশ করা মেঝের দিকে দেখাল, সেখানেও ঐ একই দাগ লেগে থাকতে দেখা গেল।