পোয়ারোকে আস্তে আস্তে বললাম, এটা খুবই অস্বস্তিকর। কে জানে কোন কোন ব্লু তারা নষ্ট করে ফেলেছে?
আমার বেঁটে বন্ধুটি হাসল। হেঁ, হেঁ! আমি বারবার বলেছি যে কোনো পরিস্থিতিতে ঘটনাস্থল থেকে ব্লু খুঁজে বার করা যায়। প্রতিটি রহস্যের সমাধান লুকানো থাকে ছোট ছোট ধূসর মস্তিষ্ক কোণে।
সে বাটলারের দিকে চেয়ে দেখল। আমার মনে হয় মৃতদেহ সরানো ছাড়া ঘরের আর কোনো জিনিষ ছোঁয়া হয়নি?
না স্যার, গতকাল রাত্রে পুলিসের লোক এখানে আসার আগে যেমনটি ছিল ঠিক তেমনটি আছে।
জানলার ওপরে ওই যে পর্দাগুলো তোলা রয়েছে, গতকাল রাত্রেও পর্দাগুলো সেরকম ভোলা ছিল?
হ্যাঁ, আমি প্রতিদিনই পর্দাগুলো তুলে দিয়ে থাকি কিন্তু গতকাল রাত্রে ওই কাজটা সম্পূর্ণ করতে পারিনি।
তাহলে মনে হয় মিঃ রীডবার্ন নিজে নিজেই পর্দাগুলো তুলে দিয়ে থাকবেন।
স্যার আমারও তাই মনে হয়।
তুমি কি মনে কর, তোমার মনিব গতকালে অতিথি আগমনের জন্য অপেক্ষা করছিল?
না স্যার, তিনি তো সেইধরনের কোনো কথা আমাকে বলেননি। তবে তিনি আমাকে সাবধান করে বলেছিলেন রাতের খাওয়ার পর আমায় যেন কেউ বিরক্ত না করে, একটা কথা স্যার, বাড়ির একদিকে টেরেসের পথে লাইব্রেরীর থেকে বাইরে বেরুবার একটা দরজা আছে। হয়তো তিনি সেই দরজা পথে কাউকে ডেকে থাকবেন।
তার সেরকম অভ্যাস ছিলো নাকি?
বাটলার একটু কেশে জবাব দিল, আমি তো সেটাই বিশ্বাস করি।
পোয়ারো সেই দরজার দিকে এগিয়ে গেলো। টেরেসে সেই দরজা দিয়ে বাইরে বেরিয়ে এল। ডান দিকে গাড়ি চলার রাস্তা আর বাঁ-দিকে লাল ইটের দেওয়াল।
এইদিকটা একটা ফলের বাগান আছে স্যার। আরোও একটা দরজা আছে, তবে সেটা সন্ধ্যে ছটার পর বন্ধ করে দেওয়া হয়।
পোয়ারো মাথা নাড়ল! সে পুনরায় প্রবেশ করল লাইব্রেরীতে। বাটলার তার পিছু পিছু গেল।
গতকাল রাতের ঘটনার কোনো কিছুই কি তোমার কানে আসেনি?
হা স্যার; ঠিক রাত নটা বাজার কিছুক্ষণ আগে লাইব্রেরী থেকে একটা গলার আওয়াজ আমাদের কানে আসে, তবে সেটাই স্বাভাবিক, বিশেষ করে যখন একজন মহিলার গলার আওয়াজ। তবে অস্বীকার করব না, আমরা যখন সারভেন্টস হলের দিকে চলে যাই তখন আমরা কিছুই শুনতে পাইনি। তারপর ঠিক রাত এগারোটায় পুলিস আসে।
তা তোমরা কতজনের গলার আওয়াজ শুনেছিলে?
তা আমি বলতে পারব না। তবে একটি মহিলার গলার আওয়াজ আমি শুনতে পেয়েছিলাম।
আহ!
আমাকে ক্ষমা করবেন স্যার, তবে ডঃ রয়ান এখনো এই বাড়িতে আছেন। তার সঙ্গে আপনি দেখা করতে পারেন।
আমরা লাফিয়ে উঠলাম, প্রস্তাবটা অবশ্যই লোভনীয়। কয়েক মিনিটের মধ্যে একটি মাঝবয়সী, সদাহাস্যময় ডাক্তার এসে আমাদের সঙ্গে মিলিত হল। আর পোয়ারোর সমস্তরকম দরকারী সংবাদই তাকে দিল। রীডবার্ন জানলার ধারে পড়েছিলেন। মাথাটা মার্বেল পাথরের দিকে আর পা দুটো ছড়ানো রয়েছে। মার্বেল পাথরের দিকে তার দেহে দুটো ক্ষতের চিহ্ন লক্ষ্য করা গেল। একটা ভয়ঙ্কর ক্ষতের চিহ্ন–সেটি মাথার পিছন দিকে। আর দ্বিতীয়টি দুচোখের মাঝখানে।
তিনি কি চিৎ হয়ে পড়েছিলেন?
হ্যাঁ, তার চিহ্ন এখনো দেখা যাচ্ছে। সে এইসব কথা বলতে বলতে পোয়ারোকে মেঝেতে কালচে দাগগুলো দেখাল।
আচ্ছা এওতো হতে পারে যে, পেছন দিক দিয়ে প্রচণ্ড আঘাত পেয়ে মেঝেতে পড়ে গিয়ে থাকবে।
সেটা সম্ভব নয়। সেই অস্ত্র যেরকমই হোক না কেন, অল্প কিছু দূরত্ব থেকে মাথার খুলিতে বিদ্ধ করা হয়নি সেটা।
পোয়ারো চিন্তিত মুখে সামনের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে রইল। প্রতিটি জানলার খাঁজে রয়েছে ধনুকের মত মার্বেল পাথর বসানো। তার হাতগুলো সিংহের মাথার মতন।
পোয়ারোর চোখদুটো আলোকিত হয়ে উঠল। তখনি সে বলে উঠল, ধরে নেওয়া যাক, পশ্চাৎ থেকে তিনি সিংহের মাথার উপর ঢলে পড়েন এবং সেখান থেকে তিনি পড়ে যান মাটিতে। আপনি যেভাবে বর্ণনা দিলেন তাতে করে এইভাবে আঘাতের চিহ্নটা হতে পারে না?
হ্যাঁ, তা অসম্ভব কিছু নয়। কিন্তু যেভাবে তিনি যে জায়গায় পড়ে ছিলেন তাতে করে এ যুক্তিটা শুধু খাটে না নয়, সম্ভবও নয় বলা যায়। তাছাড়া জানলার মার্বেল পাথরে এতটুকু রক্তের চিহ্ন দেখা যায়নি।
যদি সেখান থেকে রক্তটাকে মুছে ফেলা হয়ে থাকে? ডাক্তার কাঁধ ঝাঁকিয়ে বললেন তা অসম্ভব কিছু নয়। আর এর ফলে খুনির খুন করবার কথা, উপস্থিতির কথা জানবার কিছু থাকবে না।
পোয়ারো তাকে সমর্থন করে বলল, তা ঠিক। আচ্ছা আপনি কি মনে করেন কোনো মহিলা তাকে ঘুসি মেরে বা আঘাত করে এরকম করতে পারে।
ওহো, আমি বলব এটা একেবারে প্রশ্নের বাইরে। আমার অনুমান, আপনি কি মাদমোয়াজেল সেন্টক্লেয়ারের কথা চিন্তা করছেন?
পোয়ারো নিজেকে সংযত করে বলল, আমি অনিশ্চিতের ওপর নির্ভর করে কখনও কারোর কথা চিন্তা করি না।
পোয়ারো তারপর সেই খোলা জানলাপথের দিকে তাকালো। ওদিকে ডাক্তার তখনও বলে চলে–মাদমোয়াজেল সেন্টক্লেয়ার ওই জানলা দিয়েই এখান থেকে পালিয়ে যায়। ভালো করে তাকিয়ে একবার দেখুন গাছগুলোর ফাঁক দিয়ে ডেইজিমেডের দৃশ্য, রাস্তার ওপর অবশ্য অনেক বাড়ি আছে, কিন্তু ওখান থেকে একমাত্র ডেইজিমেডই চোখে পড়বে, সবথেকে আগে।
পোয়ারো বলল, আপনার আন্তরিক সহযোগিতার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। হেস্টিংস এসো। এখন আমরা মাদমোয়াজেলের পায়ের ছাপ অনুসরণ করে চলি।