মঁসিয়ে পোয়ারো?
তাকে মাথা নিচু করে আমার বন্ধুটি অভিবাদন জানাল।
মঁসিয়ে আমি প্রচণ্ড অসুবিধেয় পড়েছি, সেটা আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না…আমি খুবই চিন্তাগ্রস্ত।
পোয়ারো তাকে হাত নেড়ে সান্ত্বনা দিতে চাইল। আপনার দুশ্চিন্তার কথা আমি উপলব্ধি করতে পারছি। মাদমোয়াজেল সেন্টক্লেয়ার প্রিয় বান্ধবী ছিলো আপনার, তাই না?
রাজকুমার খুব সহজভাবে বলল, আশাকরি ওকে আমি আমার স্ত্রীর মর্যাদা দিতে পারব।
পোয়ারো তার দিকে বড় বড় চোখে তাকাল।
রাজকুমার বলতে থাকেন, আমাদের পরিবারের মধ্যে আমিই প্রথম অসবর্ণ বিয়েতে আবদ্ধ হতে যাচ্ছি না। আলেকজাণ্ডারও সাম্রাজ্যকে তুচ্ছ করে দেখেছিল। আমরা এখন সুখে আছি। সাবেকি জাতপাতের সংস্কার থেকে মুক্ত। তাছাড়া সত্যি কথা বলতে কি মাদমোয়াজেল আমার সমগোত্র। আশাকরি আপনি তার ইতিহাস শুনেছেন অথবা কিছু আভাষ পেয়েছেন।
অনেক রোমান্টিক কাহিনী আছে ওকে ঘিরে বিখ্যাত নর্তকীদের কাছে সে কাহিনী একেবারে মানানসই নয়। আমার শোনা কথা তিনি একজন পরিচারিকার মেয়ে, আবার এও শুনেছি তার মা নাকি রুশীয়–ডাচেস ছিলেন।
যুবকটি বলল–প্রথম কাহিনীটি বাজে এবং বানানো গল্প, তবে দ্বিতীয়টি মিথ্যা নয় আর তার পরিচয় গোপন রাখা উচিত। অন্তত আমার তো তাই মনে হয়। আর সে তার অবচেতন মনে সহস্রবার তার প্রমাণ দিয়েছে। আর আপনি এটাও জানেন মঁসিয়ে পোয়ারো, আমি বংশগত ব্যাপারটাকে পুরোপুরি বিশ্বাস করি।
পোয়ারো ভাবুক চিত্তে বলল, বংশগত ব্যাপারটায় আমিও অবশ্য অবিশ্বাসী নই। আমি এই ব্যাপারে কিছু কিছু আশ্চর্য জিনিষও লক্ষ্য করেছি। এবার আমি কাজের কথায় আসছি মঁসিয়ে লা প্রিন্স, আপনি আমাকে দিয়ে কি করাতে চান? আপনার কিসের ভয়? আমিও কি ভয় পাচ্ছি না? এই অপরাধের সঙ্গে মাদমোয়াজেল সেন্টক্লেয়ার কি জড়িত? তিনি কি রীডবাকে জানতেন না?
অবশ্যই চিনতেন, কেননা তিনি সকলকে বলে বেড়িয়েছেন যে, তিনি সেন্টক্লেয়ারকে ভালোবাসেন।
আর তিনি?
তাঁকে কিছুই বলার ছিল না।
পোয়ারো তার দিকে কৌতূহল ভরে তাকাল। আচ্ছা তাকে ভয় পাওয়ার মতো কোনো কারণ কি ছিলো সেন্টক্লেয়ারের।
যুবরাজ একটু ইতস্তত করে, এরই মাঝে একটি আশ্চর্য ঘটনা ঘটে যায়। আলোকদৃষ্টি সম্পন্ন জারাকে কি আপনি চেনেন?
না।
তিনি খুব ভালো মহিলা। আপনার একবার তার সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত। ভ্যালেরি আর আমি গতসপ্তাহে তার সঙ্গে দেখা করতে যাই। তিনি আমাদের কার্ডগুলো পড়ে দেখেন, ভ্যালেরিকে তার বিপদের কথা বলেন তিনি। তার ভাগ্যের আকাশে নাকি মেঘ জমে উঠেছে। তারপর তিনি শেষ কার্ডটি ওল্টান–ওরা যেটাকে তুরুপের তাস বলেন আর কি। চিড়িতনের সাহেব। ভ্যালেরিকে তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন যে, একটি লোক তার ক্ষমতা দ্বারা আপনাকে বশ করতে চায়। তাকে আপনি ভয় করেন; তার দ্বারা আপনার এমন বিপদ হবে। আমার অনুমান আপনি তাকে চেনেন, চেনেন না? ভ্যালেরির মুখ সাদা ও ফ্যাকাশে হয়ে যায়, তখন সে মাথা নেড়ে বলে, হা হা, আমি অনেক চিনি। তার কিছুক্ষণ পরে আমরা সেখান থেকে চলে আসি। ভ্যালেরির প্রতি জারার শেষ সতর্কবাণী হলো–চিড়িতনের সাহেবকে সাবধান। তার দিক থেকে আপনার বিপদ ঘনিয়ে আসছে! ভ্যালেরিকে আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম কিন্তু ও কোনো উত্তর দেয়নি। শুধু আমাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেছিল সব ঠিক আছে, কিন্তু গতকাল রাতের পর এখন আমি সম্পূর্ণ নিশ্চিত যে, রীডবার্নের মধ্যেই চিড়িতনের সাহেবকে প্রত্যক্ষ করে থাকবে ভ্যালেরি। ও তাকে দারুণ ভয় পেয়েছিল।
তারপর কিছুক্ষণের জন্য চুপ করে থেকে যুবরাজ আবার মুখ খুললেন, আজ সকালে সংবাদপত্রের পাতায় চোখ পড়তেই কেন যে আমি ভয় পাই তার কারণ আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন। ধরুন যদি ভ্যালেরির অবস্থা এখন উন্মাদের মতো হয়ে যায়–ওহো, সেটা সম্ভব নয়!
পোয়ারো উঠে দাঁড়ালো। যুবরাজের পিঠের ওপর সান্ত্বনার হাত বুলিয়ে তাকে আশ্বস্ত করে বলল, আমার একান্ত অনুরোধ, দয়া করে আপনি ভেঙ্গে পড়বেন না। ব্যাপারটা আমার ওপর ছেড়ে দিন।
আপনি কি তাহলে স্ট্রেথামে যাবেন? আমার কাছে সংবাদ আছে, এখনো ও সেখানেই আছে, মানে ডেইজিমেডে–ঘটনার আকস্মিকতায় দারুণ আতঙ্কিত ও এখন।
হ্যাঁ, আমি এখনি যাচ্ছি।
আমি রাষ্ট্রদূতের মারফৎ সব ব্যবস্থা করে রেখেছি। আপনার প্রবেশাধিকার সর্বত্র থাকবে।
আমরা এখন তাহলে যাচ্ছি। তারপর পোয়ারো আমার দিকে তাকিয়ে বলল, তুমি আমার সঙ্গী হবে নাকি হেস্টিংস?
আমি মাথা নেড়ে উত্তর দিলাম, হ্যাঁ।
বিদায় মঁসিয়ে লা প্রিন্স।
.
যেন এক অত্যাশ্চর্য চমৎকার ভিলা মনডেসার, আরামদায়ক এবং স্মৃতিবিজড়িত। রাস্তা থেকে খানিকটা দূরে বাড়িটা। বাড়ির পেছন দিকে কয়েক একর জমি নিয়ে একটি সুন্দর বাগান।
যুবরাজ পলের নাম বলতেই বাৰ্টলার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের ঘটনাস্থলে নিয়ে গেল। খুব সুন্দর একটা লাইব্রেরী রুম। সমস্ত বাড়িটার পেছন থেকে সামনে পর্যন্ত জুড়ে এই লাইব্রেরীর রুমটা। দু ধারে একটি করে জানলা–একটা জানলা সামনে গাড়ি চলার পথের দিকে, আর অন্যটি বাড়ির পেছনে বাগানের দিকে। এই লাইব্রেরী ঘরেই মৃতদেহ পড়েছিল। পুলিস তাদের তদন্তের কাজ সেরে কিছুক্ষণ আগে মৃতদেহ অন্য জায়গায় রাখার ব্যবস্থা করেন।