একটা নতুন খাতা নিয়ে টেবিলের ওপর রাখলেন এবং তাতে একটার পর একটা তারিখ, সম্ভাব্য ঠিকানা এবং নাম লিখে চললেন। টেলিফোন বইতে কি যেন দেখলেন এবং তারপর মঁসিয়ে এরকুল পোয়ারোকে ফোন করলেন।
হ্যালো মঁসিয়ে পোয়ারো, আপনি কি কথা বলছেন?
হ্যাঁ, ম্যাডাম নিজেই বলছি।
মিসেস অলিভার জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কি কিছু করলেন?
কিছু মনে করবেন না, মাপ করবেন। কিন্তু আমি কী করব বলুন তো?
মিসেস অলিভার বললেন, গতকাল আমি কী বলেছিলাম আপনাকে?
ও হ্যাঁ, দ্রুতগতিতেই কাজ এগিয়ে নিয়ে চলেছি। তবে আরও কয়েকটা খোঁজখবর নেবার ব্যবস্থা করেছি।
আবার মিসেস অলিভার জিজ্ঞেস করলেন, ওইগুলো এখনও করে উঠতে পারেননি এই তো? পুরুষদের কাজকর্মের ওপর আমি খুব একটা ভরসা পাই না।
আপনি ম্যাডাম?
আমি এখন খুব ব্যস্ত, তার কথার উত্তরে মিসেস অলিভার বললেন।
পালটা খোঁচা দিয়ে পোয়ারো বললেন, শুনি ম্যাডাম আপনিই বা কতদুর কী করেছেন?
বেশ উত্তেজিত হয়ে মিসেস অলিভার বললেন, হাতিগুলোকে একজায়গায় জড়ো করেছি। এর কোনো অর্থ কি আপনার কাছে আছে?
হ্যাঁ, আপনি কী বলতে চাইছেন মনে হয় তা আমি বুঝেছি।
মিসেস অলিভার মন্তব্য করলেন, অতীত নিয়ে চিন্তা করলে এটা যে খুব সহজ ব্যাপার নয় তখন বোঝা যায়। আরও একটা আশ্চর্যের ব্যাপার নাম মনে করে কজন লোকই বা তাদের চিনতে পারে? আমি এখন মনে করতে পারি না তখন আমার বয়স ষোলো, সতেরো কিংবা তিরিশ হবে। কেন যে আমি আমার জন্মদিনের খাতায় তাদের লিখতে বলেছিলাম! ওই বিশেষ দিনটিতে এক একজন কবির বাণী লিখে দিত এবং তাদের মধ্যে কিছু লেখা অর্থহীন।
আপনি কি আপনার সন্ধানকার্যে উৎসাহিত?
না, ঠিক তা বলব না, তবে আমি মনে করছি যে, আমি ঠিক পথেই চলেছি এবং মিসেস অলিভার আরও বললেন, আমি আমার ধর্মকন্যাকে ফোন করেছিলাম
আর আপনি ওর সাথে দেখা করতে যাচ্ছেন এই তো?
না, ও আসছে আমার সাথে দেখা করতে। আজ রাত সাড়ে সাতটা থেকে আটটার মধ্যে আসার কথা। কিন্তু যদি সে না আসে, জোর দিয়ে কিন্তু কেউ বলতে পারে না ও আসবে কিনা, কারণ আজকালকার তরুণ তরুণীরা একেবারেই বিশ্বাসযোগ্য নয়।
মিসেস অলিভার বললেন, জানি না, ঠিক খুশি নয় ও, কারণ ওর কণ্ঠস্বরটা যেন কেমন বলে মনে হল। এবার আমার মনে পড়ছে ওকে আমি শেষ দেখেছি বছর ছয়েক আগে, সেই জন্য হয়তো ভাবলাম যে ও হয়তো ভয় পেয়েছে। আমি আপনাকে বোঝাতে চাইছি আমি যত বেশি তর্জন গর্জন করে ওকে বলতাম তার থেকে অনেক বেশি গর্জন করে আমাকে বলত এই আর কী।
সেটা তো ভালোও হতে পারে বরং খারাপ তো নয়ই। আপনি কি তাই মনে করেন?
যদি কোনো লোক মনঃস্থির করে থাকে যে, তারা একদম আপনাকে পছন্দ করে না, সে ক্ষেত্রে কিন্তু তারা তাদের মনোভাব লুকিয়ে রেখে আপনার সাথে বেশ খুশি মনেই কথা বলবে। এবং তারা আপনাকে বেশ ইনিয়ে বিনিয়ে অনেক খবর দেবে। কিন্তু তারা যদি আপনার সঙ্গে অন্তরঙ্গ হয়ে কথা বলত ঠিক তার ভিন্ন ব্যবহারই তারা করত।
তার মানে আপনি বলতে চাইছেন সেবার ভান করে, তোষামোদ করে আমাকে খুশি করার চেষ্টা করবে, হ্যাঁ কিছু একটা জিনিস আপনি পেয়েছেন, সেই জন্যই তারা ভেবে নিয়েছে আপনি যেভাবে খুশি হন সেই ভাবেই তারা বলবে। আবার অপর দিকে তারা যদি বিরক্ত হয় আপনার ওপর সেক্ষেত্রেও তারা সেইভাবেই কথা বলবে যাতে বিরক্ত হন। সিলিয়ার যখন পাঁচ বছর বয়স তখন ওকে আমি খুব ভালো করে জানতাম, এবং ওর একজন নার্সারি গভরনেস ছিল, তার দিকে ও ওর বই ছুঁড়ে ফেলত। আমার আশঙ্কা যে সিলিয়াও যদি আমার সাথে সেইরকম ব্যবহার করে?
শিশুর প্রতি গভরনেস না গভরনেসের প্রতি শিশু?
মিসেস অলিভার বললেন, অবশ্যই গভরনেসের প্রতি শিশু।
রিসিভার নামিয়ে রেখে সোফায় গিয়ে বসলেন এবং অতীতের স্মৃতি মন্থন করলেন। নিজের মনে নামগুলো বিড়োবিড়ো করে বলছিলেন ঠিক নিঃশ্বাসের সঙ্গে তাল মিলিয়ে। মারিয়ানা যোশেফিন পোল্টারলিয়ার–বেশ কয়েক বছর হল তার কথা একদম ভাবিনি। আমার মনে হয়েছিল সে বুঝি মারা গেছে। হা, হ্যাঁ, আন্না ব্রেসবি জগতের সেই প্রান্তে সে বসবাস করত। আমি এখন বিস্মিত এই ভেবে–এই সমস্ত কথা ভাবতে ভাবতে বেল বেজে উঠল এবং তিনি চমকে উঠলেন। এবং তিনি নিজেই উঠে গেলেন দরজা খোলার জন্য।
.
সেই প্রথম হাতির উল্লেখ
মিসেস অলিভার বন্ধু এরকুল পোয়ারোকে তাঁর বাড়িতে পেলেন না ফলে টেলিফোনে যোগাযোগ করলেন।
আজ সন্ধ্যায় আপনি কি বাড়িতে থাকবেন, জিজ্ঞেস করলেন মিসেস অলিভার।
তখন তিনি তার টেলিফোনের সামনে বসেছিলেন এবং একটু স্নায়ু দুর্বলতায় পীড়িত হয়ে টেবিলের ওপর অযথা আঙুলের আঁচড় কাটছিলেন।
তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কে আপনি বলুন তো?
অ্যারিয়াডন, অলিভার বললেন, মিসেস অলিভার তিনি নাম সবসময় উল্লেখ করে থাকেন না। কারণ তিনি আশা করেন যে, তাঁর বন্ধুরা তার কণ্ঠস্বর শুনেই তাকে চিনতে পারে যেন।
হ্যাঁ, আজ সারাটা সন্ধ্যা আমি বাড়িতেই থাকব। তাহলে তার মানে কি ধরে নিতে পারি যে, আমার বাড়িতে আপনার পায়ের ধুলো নিশ্চয়ই পড়বে? যদি পরে আমি খুব খুশি হব।
আমি আপনার কাছে গেলে আপনি যে খুশি হন শুনে খুব ভালো লাগল, বললেন মিসেস অলিভার। কিন্তু আমার কোনো ধারণা নেই সেরকম কোনো খুশির কারণ আমি হব কিনা।