বকে যাওয়া ছেলের মতন খুব জোরে চিৎকার করে বললেন, আমি কী চাই জানো? আমার চাই ১৯৭০ সালের ঠিকানার বই এবং সেই সঙ্গে ১৯৬৯ সালেরটাও লাগবে। যত শিগগির সম্ভব তুমি কি খোঁজ করবে?
হ্যাঁ, হ্যাঁ, নিশ্চয়ই। বলল মিস লিভিংস্টোন। মেয়েটি এমনভাবে শূন্যে তার দিকে তাকাল যেন দেখে মনে হল এমন একটা জিনিস তাকে খোঁজ করতে বলা হয়েছে, যার নাম সে আগে কখনও শুনেছে বলে মনে হয় না, অভাবনীয়ভাবে ভাগ্য তার সহায় না হলে মনগড়া দক্ষতা দিয়ে সে কীভাবে খুঁজে বার করবে।
মিসেস অলিভার নিজের মনে ভাবলেন সেডউইককে না পেলে আমার সব কিছু অচল হয়ে যাবে এবং আমি পাগল হয়ে যাব।
মিস লিভিংস্টোন মিসেস অলিভারের স্টাডি ও লেখার ঘরের ফার্নিচারের সমস্ত ড্রয়ারগুলো খুলতে শুরু করল।
মিস লিভিংস্টোন বেশ খুশি হয়ে আনন্দে বলে উঠল এখানে গত বছরেরটা, অনেক বেশি হাল আমলের লেখা ১৯৭১ চলবে না?মিসেস অলিভার বললেন, ১৯৭১ আমি চাই না। একটা অস্পষ্ট চিন্তা এবং স্মৃতিশক্তিকে কাজে লাগিয়ে বললেন, চায়ের পেটির টেবিলে দেখো তো? মিস লিভিংস্টোন চারদিকে তাকিয়ে দেখে এবং যতই তাকায় ততোই চিন্তিত দেখায় তাকে, ওই যে ওই-টেবিলটা টেবিলের দিকে আঙুল দেখিয়ে বললেন। চায়ের পেটির ওপর একটা ডেস্ক বুক রয়েছে, সেটা কি? মিস লিভিংস্টোন মিসেস অলিভারের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল।
হ্যাঁ ওটা হতে পারে, আমার মনে পড়ছে মিসেস অলিভার বললেন।
কিন্তু এ তো দেখছি চার বছর আগেকার সেই ১৯৬৮ সালের মিসেস অলিভার।
ওটাই প্রায় ঠিক, মিসেস অলিভার বললেন এবং সেটি হস্তগত করে ডেস্কে ফিরে গেলেন। এর মধ্যে হাল আমলেরও সব কিছু আছে কিন্তু এখন দেখ তো আমার জন্মদিনের বইটা তুমি পাও কিনা মিস লিভিংস্টোন।
আমি তো জানি না।
ওটা এখন আর আমি ব্যবহার করি না তবে এক সময় করতাম। বেশ বড়ো আকারের ছিল, মিসেস অলিভার বললেন এবং আরও বললেন, আমি যখন শিশু ছিলাম তখন থেকেই শুরু করি। আমার ধারণা সেটা ওপরের তলায় আছে, তুমি জানো ছেলেরা ছুটির সময় বাড়িতে এলে আমরা যে ঘরটা ব্যবহার করে থাকি এবং বিছানার পাশে যে আলমারিটা আছে–
ওহো আমি কি সেটার খোঁজ করব? হা, আমি ঠিক তাই চাই, বললেন মিসেস অলিভার। মিস লিভিংস্টোন যেই ঘর থেকে বের হয়ে গেলেন তিনি একটু উৎফুল্ল হয়ে উঠলেন এবং দরজাটা বন্ধ করে দিলেন ভেতর থেকে, তিনি ডেস্কের সামনে গিয়ে ঠিকানাগুলোর ওপর চোখ বুলোতে থাকেন। লেখাগুলো অবশ্য ফিকে হয়ে গেছে, তখন চায়ের গন্ধ তার নাকে ভেসে আসছিল। ঠিকানাগুলো দেখতেই চোখে পড়ল র্যাভেন্সক্রফট! সিলিয়া র্যাভেন্সক্রফট। হ্যাঁ ১৪ ফিশাফ্রে মিউস. এস. ডব্লু ৩। এটাই সিলিয়ার ঠিকানা এবং সেখানেই ও থাকত। কিন্তু আরও একজন ছিল স্ট্যান্ড অন দি গ্রীন, কিউ ব্রিজের কাছে হবে হয়তো। তিনি আবার কয়েকটা পাতা ওল্টালেন, এটা মনে হচ্ছে মারডিক গ্রোভ। সেটা বোধহয় ফুলহাম রোডে বা ওই রকম কোথাও হবে হয়তো, অত্যধিক রবার ঘষা হয়েছে, ওর কি টেলিফোন আছে? মনে হয় ওটাই ছিল ফ্ল্যাক্সম্যান…তবে যাইহোক আমি অন্তত সেটা চেষ্টা করব।
টেলিফোনের দিকে তিনি এগিয়ে গেলেন, সাথে সাথে দরজা খুলে যায় এবং লিভিংস্টোন ভেতরের দিকে তাকায়।
আপনি কি সেটার কথা ভাবছেন?…
আমি যেটা চাইছিলাম ঠিক সেটা আমি পেয়ে গেছি, মিসেস অলিভার বললেন, যাও জন্মদিনের বইটা খুঁজে দেখো কারণ ওটা খুবই জরুরি।
আপনি যখন সিলি হাউসে যান, আপনার কি মনে আছে যে সেটা আপনি দেখে গিয়েছিলেন?
না আমার মনে পড়ছে না, যাও গিয়ে খুঁজে দেখো, বললেন মিসেস অলিভার।
তোমার ইচ্ছা মতন যত পারো দেরি করো, নিজের মনেই বিড়বিড় করে বললেন।
টেলিফোনে ডায়াল করলেন এবং অপেক্ষা করতে থাকলেন। হঠাৎ দরজা খুলে ওপরতলার উদ্দেশ্যে চিৎকার করে বলে উঠলেন, স্প্যানিশ আলমারিতে খুঁজে দেখো, সেটা পিতল দিয়ে বাঁধানো বই এবং সেটা যে এখন কোথায়, আমি সম্পূর্ণ ভুলে গেছি। তবে আমার মনে হয় টেবিলের মধ্যেই রয়েছে সেটা।
মিসেস অলিভার প্রথম ডায়ালে সফল না হওয়ায় তিনি যোগাযযাগ করলেন মিসেস স্মিথ পোটারের সঙ্গে। তিনি যে শুধু বিরক্তই হলেন তা নয় কোনো রকম সাহায্যও করলেন না। আগে যারা সেই ফ্ল্যাটে থাকত তাদের কারোরই এখনকার টেলিফোন নম্বর দিতে পারলেন না। সুতরাং আরও একবার ঠিকানার বইটা উলটে-পালটে দেখলেন। আরও দুটো ঠিকানা মিসেস অলিভার আবিষ্কার করলেন। যাইহোক তৃতীয়বারের চেষ্টায় র্যাভেন্সক্রফটের একটা অস্পষ্ট ঠিকানা খুঁজে পেলেন। নামের পাশে একটা ক্রস চিহ্ন সই করা। এটা দেখে তিনি মনে করলেন তার অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবেন। কথাটা যেই মাত্র ভাবলেন তৎক্ষণাৎ তিনি ডায়াল করলেন।
একটা নারীর কণ্ঠস্বর ভেসে এলো। তিনি মনে মনে ভাবলেন সিলিয়ার!
ওহে প্রিয়, হা, তা বেশ কয়েকবছর হল এখানে ও থাকছে না এবং আমার মনে হয় এখন ও নিউক্যাসেলে আছে। সম্ভবত শেষবার সেখান থেকেই ওর কণ্ঠস্বর শুনেছিলাম।
মিসেস অলিভার বললে, ওখানকার ঠিকানা আমি পাইনি।
না দুঃখিত আমার কাছেও নেই। তখন মেয়েটি বলল, আমার ধারণা একজন ভেটনারি সার্জেনের সেক্রেটারির কাজ করছে সম্ভবত। সেটা কোনো কাজের কথা নয়। মিসেস অলিভার শেষবারের মতো চেষ্টা করলেন ১৯৬৭ সালের ঠিকানা লেখা বইটার ওপর চোখ বোলাতে। দূরাভাষে প্রশ্ন আসে আপনি কি সিলিয়া র্যাভেলক্রফটের কথা বলছেন?