সিলিয়া আশ্চর্য হয়ে বললেন, উনিই বা কী করে মানিয়ে নিলেন নিজেকে মলির ভূমিকায়? নিশ্চয়ই সেটা ভয়ঙ্কর ব্যাপার ছিল।
না, ওঁর কাছে সেটা খুব একটা অসুবিধা বলে মনে হয়নি। উনি যা চেয়েছিলেন সেটাই তো পেয়েছিলেন। অ্যালিয়েস্টারকে তিনি পেয়েছিলেন–কিন্তু অ্যালিয়েস্টার তিনি কী করে সহ্য করলেন? তিনি আমাকে বলেছিলেন কেন আর কীভাবে এই ব্যবস্থাটা সহ্য করে নিলেন।
তিনি আমাকে বলেছিলেন কেন এবং কীভাবে সহ্য করলেন যেদিন উনি আমার সুইজারল্যান্ডে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করলেন, সেইদিন তিনি তার মনের কথা আমাকে বলেছিলেন।
তিনি বলেন একটা কাজ করতে শুধু বাকি আছে। মার্গারেটকে শপথ করে বলেছিলাম পুলিশের হাতে ডলিকে ধরিয়ে দেব না। যাতে কখনও কেউ জানতে না পারে ডলি একজন খুনি। এবং ছেলেমেয়েরাও যাতে জানতে না পারে যে তাদের মাসি খুনি।
আমি আর থাকতে না পেরে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলে ফেললাম, আপনি সেটা করবেন কী করে? উত্তরে তিনি বলেন, আমি যা করতে যাচ্ছি সে ব্যাপারে তোমারও জেনে রাখা উচিত।
তিনি বলেন ডলি যাতে বেঁচে না থাকতে পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে কারণ সে নিজের মুখে বলেছে রক্ত দেখতে ও ভালোবাসে। রক্তের স্বাদ যখন ও পেয়েছে তখন একটার পর একটা খুন ও করবেই। সে কয়েকটা জীবন নষ্ট করবে। বেঁচে থাকার মতো সে উপযুক্ত নয়। আমি যে কারণে সেই অপ্রিয় কাজটা করতে যাচ্ছি আমার নিজের জীবন দিয়েও সেই নিষ্ঠুর কাজটা আমাকে করতেই হবে, ডলির সঙ্গে স্বামী স্ত্রীর মতন আর মাত্র কয়েকটা সপ্তাহ বেঁচে থাকব। তারপর আর একটা বেদনাদায়ক ঘটনা ঘটবে। তিনি কি বোঝাতে চেয়েছিলেন তা আমি বুঝতে পারিনি–আমি তাকে জিজ্ঞেস করি আর একটা দুর্ঘটনা? আবার ঘুমের ঘোরে হাঁটা। সে আবার কী? তার উত্তরে তিনি বলেন, না, সবাই যা জানবে তা হল আমি আর মলি দু-জনেই আত্মহত্যা করেছি। আমার মনে হয় না কারণটা কেউ জানতে পারবে, তারা হয়তো মনে করতে পারে মলির ক্যান্সার হয়েছে শুনে স্বভাবতই সে আত্মহত্যা করতে পারে কিংবা আমিও সেটা ভাবতে পারি। এই সব ধারণাগুলো লোকেদের মাথায় আসলে তখন তারা ধরে নেবে হয়তো আমরা জীবনের মানে খুঁজতে না পেরে আপোষে দু-জনে মিলে আত্মহত্যা করে থাকব।
দেখো জেলি আমাকে তোমার সাহায্যের প্রয়োজন। তুমি সত্যিকারের আমাকে, মলিকে আর আমাদের ছেলেমেয়েকে ভালোবাসো। আর ডলিকে যদি মরতেই হয় আমাকেই তাহলে এই কাজটা করতে হবে, আমি প্রথমে তাকে গুলি করব এবং পরে নিজেকে নিজে গুলি করব। রিভলবারে তার হাতের ছাপ থাকবে কারণ সে সেটা খুব বেশি ব্যবহার করেনি। ঘাতক হব আমি। একটা কথা তোমাকে বলে যেতে চাই যে আমি এখনও দুজনকেই ভালোবাসি। তিনি বললেন, মলি আমার প্রাণ, আমার জীবনের থেকেও বেশি ভালোবাসি, আর ডলির প্রতি আমার করুণা হয়। এবং সব সময়ে মনে হয় ওর জন্মই বোধহয় এইজন্য। তিনি আবার বললেন, সব সময়ে এই কথাগুলি মনে রেখো। জেলি উঠে সিলিয়ার কাছে এসে দাঁড়াল এবং বলল, প্রকৃত সত্য কি তা তো জানলে। তোমার বাবার কাছে শপথ করেছিলাম যে একথা তোমাদের কখনও জানাব না অথবা তোমরা জানতে পারবে না। আমি কল্পনাও করতে পারিনি তোমাদের কাছে বা অন্য কারোর কাছে সেদিনের সেই দুঃখজনক ঘটনার প্রকৃত তথ্য বলব। আমি আমার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছি। কারণ মঁসিয়ে পোয়ারো আমাকে অন্যরকম ভাবতে শিখিয়েছেন। এটা একটা এমন বীভৎস কাহিনি
সিলিয়া বললেন, আপনার মনের অবস্থা কেমন আমি বেশ বুঝতে পারছি। আপনি আপনার কথা রক্ষার ক্ষেত্রে ঠিকই করেছিলেন কিন্তু এই বিষয়ে জেনে মনের দিক থেকে কতটা হালকা হলাম। এখন মনে হচ্ছে বিরাট বোঝা আমার ওপর থেকে নেমে গেল–
ডেসমন্ড বললেন, আমরা দুজনেই এই ঘটনা জেনে গেলাম। আমরা কিন্তু কিছু মনে করব না। তবে এটা অবশ্যই একটা বেদনাদায়ক ঘটনা কারণ দু-জন মানুষের একটা সত্যিকারের ট্র্যাজেডি। ওঁরা কিন্তু কেউ কাউকে খুন করেনি। তারা পরস্পর-পরস্পরকে ভালোবাসতেন, একজন খুন হয়েছিলেন আর অপরজন ঘাতকের কাজ করেছেন, কারণ খুনিকে সরিয়ে দিয়ে মানবিকতার খাতিরে যাতে ছেলেমেয়েদের দুঃখ ভোগ করতে না হয়। যদি তিনি কিছু ভুল করে থাকেন কেউ তাকে ক্ষমা করে দেবেন। কিন্তু আমি মনে করি না যে সত্যি কোনো ভুল হয়েছিল।
সিলিয়া বললেন, তিনি ছিলেন ভয়াবহ প্রকৃতির মহিলা। আমি যখন শিশু ছিলাম তাকে দেখলেই ভীষণ ভয় পেতাম এবং তখন জানতাম না কেন ভয় পাই। তবে এখন বুঝতে পারি কেন তখন ভয় পেতাম। আমার দৃঢ় বিশ্বাস আমার বাবা ছিলেন খুব সাহসী পুরুষ, তিনি যা করেছেন খুব সাহসের সঙ্গেই করেছেন এবং আমার মা করতে বলেছিলেন বলেই করেছিলেন। বাবা তার যমজ বোনকে রক্ষা করেছেন। সিলিয়া এরকুল পোয়ারোর দিকে সন্দেহের চোখে তাকালেন। আমার অনুমান যে, আপনি একজন ক্যাথলিক। তাদের কবরস্তম্ভে কী যেন লেখা ছিল–মৃত্যুতেও ওঁরা বিচ্ছিন্ন হননি। আচ্ছা এর থেকে কি ধরে নেওয়া যায় না যে, ওঁরা একসঙ্গে মারা গিয়েছিলেন। তবে আমি মনে করি ওঁরা অভিন্ন। দুটি মানুষ যাঁরা পরস্পরকে খুব ভালোবাসতেন এবং আমার ভাগ্যহীনা মাসিমাকে খুব বেশি যন্ত্রণা পেতে হয়নি। মনে রাখবেন যা তিনি লাঘব করতে পারেননি। বললেন সিলিয়া। আশ্চর্য ওঁর গলার স্বর কেমন বদলে গেল। বললেন তিনি, কোনো ব্যক্তি যদি ভালো না হয় আপনি শত চেষ্টা করলেও তাকে পছন্দ করতে পারবেন না। তিনি যদি চেষ্টা করতেন বরং অন্য রকম হতে পারতেন। সম্ভবত তিনি তা করতে পারেননি। আর তা যদি হত যে কোনো লোক তার সম্পর্কে ভাবত একজন অসুস্থ মানুষ হিসাবে। আমার মা ও বাবার জন্য আর কোনো চিন্তা আমার নেই, ওঁরা পরস্পরকে এত গভীরভাবে ভালোবাসতেন যার তুলনা করা যায় না, অসুখী ডলিকেও সমানভাবে ভালোবাসতেন।