ডেসমন্ড প্রশ্ন করলেন, তাহলে আপনি বলতে চাইছেন তিনিই র্যাভেন্সক্রফটদের গুলি করেছিলেন?
পোয়ারো বললেন, না, সেটা আমার সমাধান নয়। আমার ধারণা কী জানেন, ডরোথি তার বোন মার্গারেটকে হত্যা করেছিলেন। একদিন তারা দুজনে একসঙ্গে পাহাড়ের ওপর বেড়োতে যান। এবং মার্গারেটের অজান্তে ডরোথি ধাক্কা দিয়ে তাকে পাহাড় থেকে ফেলে দেন কারণ ব্যর্থ প্রেম। জীবনের হতাশা থেকে ডরোথি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছিল, মার্গারেটের প্রতি তার হিংসা, ঘৃণা ও বিদ্বেষ জন্মায়। অবচেতন মনে মার্গারেটকে হত্যা করে বসেন। আমার অনুমান বাইরের একজন মানুষ এঘটনার কথা জানতেন। আমার ধারণা মাদমোয়াজেল, আপনি জানেন সেই ঘটনার সময় সেখানে কে ছিলেন?
জেলি মিউহোরাট বললেন, আমি জানি, আমি সেই সময় এখানে ছিলাম। তাদের সেই ছোট্ট ছেলে এডওয়ার্ডকে জখম করার পর থেকেই ডলির ব্যাপারে সব সময়ই তাদের চিন্তা হয়। এডওয়ার্ডকে লন্ডনে ফেরত পাঠানো হয় আর আমি এবং সিলিয়া সুইজারল্যান্ডে ফিরে যাই, দুই বোন একসঙ্গে বেড়াতে গেল। একজন ফিরল না অথচ ডলি ফিরে এলো। তাকে নার্ভাস দেখাচ্ছিল। ভিতরে এসে চায়ের টেবিলে বসে পড়লেন আর তখনই দেখলেন ডলির হাতে রক্তের দাগ। জেনারেল তাকে জিজ্ঞেস করেন যে তিনি কোথাও পড়ে গিয়েছিলেন কিনা। সঙ্গে সঙ্গে তিনি লাফিয়ে উঠলেন এবং বললেন, গোলাপ গাছের কাঁটায় হাতটা একটু কেটে গেছে। আর সেই জন্য ওই ক্ষতস্থান দিয়ে রক্ত পড়ছে। পাহাড়ের গায়ে কোনো গোলাপ গাছ থাকে না। সম্পূর্ণ বোকার মতো কথা বলার ফলে খুবই চিন্তিত হয়ে পড়ি, পাহাড়ের গায়ে হলুদ রঙের এক প্রকার কাটা গাছ হয়, তা উনি ওই গাছের কথা বলতেন আমরা না হয় মেনে নিতাম। একটা কিছু চিন্তা করতে করতে বাড়ির থেকে বেরুলেন জেনারেল। আমিও তার সঙ্গে গেলাম। তিনি রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে বলতে লাগলেন, মলির নিশ্চয়ই কিছু একটা হয়েছে, ওখানে গিয়ে দেখলাম মলি পাহাড়ের নিচে খাদেতে একটা পাথরের ওপর পড়ে আছে। তার দেহ ক্ষত বিক্ষত তখনও তিনি মারা যাননি। তখন মাথায় আসছিল না ঠিক কি করব আমরা। ডাক্তার ডেকে আনা অবশ্যই দরকার। ঠিক সেই মুহূর্তে তার স্বামীকে জড়িয়ে ধরে বলে উঠলেন, হ্যাঁ ডলিই একাজ করেছে। সত্যিই সে জানত না সে কী করতে যাচ্ছে। ওর এই কাজের জন্য কোনো রকম শাস্তি যেন ও না পায়। এবং কেউ যেন জানতে না পারে কী নিষ্ঠুর কাজ ও করেছে। অথবা কেন করেছে। ওর কোনো দোষ আমি দেখতে পাচ্ছি না। তোমায় আমাকে কথা দিতেই হবে যে তুমি ওর সব অপরাধ ক্ষমা করে দেবে। ডাক্তার ডেকে কোনো লাভ হবে না, কারণ সময় আর নেই। আমি জানি মৃত্যুর মুখোমুখি এসে উপস্থিত হয়েছি। তোমাকে আবার বলছি তুমি কথা দাও আমার বোনকে রক্ষা করবে, আমাকে হত্যা করার জন্য ওর বিচারের ব্যবস্থা তুমি করবে না।
আমাকে কোথাও লুকিয়ে রাখো কারণ কেউ যাতে দেখতে না পায়। আর জেলি তুমিও তো আমাকে খুব ভালোবাসো। আমি জানি তুমি আমার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করেছ এবং আমার শরীরের যত্ন নেবার চেষ্টা করেছ, আর আমার ছেলে মেয়েদেরও তুমি ভালোবাসো। সুতরাং তোমাকেও দেখতে হবে যেন ডলি রক্ষা পায় এই অপরাধ থেকে। এই হল সেদিনের প্রকৃত ঘটনা।
পোয়ারো জিজ্ঞেস করলেন, তারপর আপনারা কী করলেন? আমার মনে হল এরই মধ্যে
হ্যাঁ তিনি মারা যান। তাঁর সেই কথাগুলো ছিল শেষে অনুরোধ। ওঁর মৃতদেহকে লুকিয়ে রাখতে ওঁকে সাহায্য করলাম। আমরা ওকে ধরাধরি করে নিয়ে এলাম যেখানে পাথরের নুড়ি পড়েছিল। এবং তা দিয়ে আমরা ঢেকে রাখার চেষ্টা করলাম এছাড়া অন্য কোনো পথ আর খোলা ছিল না। ফেরার পথে বার বার অ্যালিয়েস্টার বলতে থাকেন, ওর কাছে প্রতিজ্ঞা করেছি। এবং কথা আমাকে রাখতেই হবে। তবে আমি জানি না কীভাবে সেটা রাখব। ডলি তখন বাড়িতেই ছিল। উনি তখন বেপরোয়া। তিনি বলে চললেন যে, বেশ কয়েক বছর থেকে আমি জানতাম মলি একটা শয়তান ছাড়া কিছু নয়। সে তোমাকে আমার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে। এবং বাধ্য করেছিল তোমাকে বিয়ে করতে। ওরা এখন আমাকে নিয়ে কী করবে? আমি আর মুখ বুজে থাকব না। ওরা বলবে মলির খুনের জন্য আমি দায়ী। আমি এই কাজের জন্য খুশি নই। আমাকে এই নিষ্ঠুর কাজটা করতে হয়েছে, আমি রক্ত দেখতে চেয়েছিলাম বলে। কিন্তু মলির মৃত্যু দেখার সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারিনি। পালিয়ে এসেছি। আমি নিশ্চিত ও করবেই। আমি শুধু চেয়েছি যে, তুমি যেন ওকে দেখতে না পাও।
এ যে দেখছি ভয়ঙ্কর, বীভৎস এবং নিষ্ঠুর কাহিনি, বললেন ডেসমন্ড।
সিলিয়া বললেন, হ্যাঁ বীভৎস তো বটেই তবে জেনে রাখা ভালো তাই না? আমি জানি তিনি খুব মিষ্টি সুন্দর স্বভাবের মেয়ে ছিলেন আর তার মধ্যে শয়তানের কোনো চিহ্ন ছিল না। সারাজীবন ধরে আমার মা খুব ভালো মহিলা ছিলেন। এখন আমি বুঝতে পারি বাবা কেন ডলিকে বিয়ে করতে চাননি। সেই সময় বাবা হয়তো বুঝেছিলেন যে, ডলির মধ্যে ভুল ত্রুটি আছে।
জেলি বললেন, আমরা আশা করেছিলাম মৃতদেহ খুঁজে পাওয়া যাবে না। পরে রাতের অন্ধকারে সেটা সরিয়ে এমন জায়গায় রাখা হবে যাতে লোকে দেখে বুঝতে পারে ঘুমের ঘোরে হাঁটতে হাঁটতে পাহাড় থেকে সমুদ্রে পড়ে গেছেন। অ্যালিয়েস্টার বললেন, আমি মলির কাছে শপথ নিয়েছি। আর ওঁর কথা মতো কাজ করব। ডলিকে বাঁচানোর একটা উপায় আছে যে, ডলিকে ওর ভূমিকা পালন করতে হবে। আমি জানি না সে ওটা করতে সমর্থ কিনা। মৃতদেহটা ডরোথির আর ও যে মলি সেটা ওকে অভিনয় করতে হবে। ডরোথি ঘুমের ঘোরে হাঁটতে হাঁটতে পাহাড়ে উঠে যায় এবং ওখান থেকে পড়ে সে মারা যায়। আর ডলিকে নিয়ে দূরে একটা কটেজে কিছুদিন একসঙ্গে থাকি। তারপর অ্যালিয়েস্টার বলতে থাকেন, ডলির আকস্মিক মৃত্যুর শোক সামলাতে না পেরে মলি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, তাই তিনি তাকে হাসপাতালে পাঠাতে বাধ্য হয়েছেন? এদিকে একদিন ডলিকে ফিরিয়ে নিয়ে আমি মলির ভূমিকায় মলির পোশাক আর পরচুল পড়িয়ে। কোকড়ানো চুলের পরচুল ওর আসল মুখের চেহারাটা চাপা দিয়ে দেয়। বৃদ্ধ হাউজকিপার চোখে ভালো দেখতে পেতেন না। যমজ বোনের ক্ষেত্রে যা হয় ডলি ও মলিকে দেখতে একই রকম ছিল তাই সহজে সবাই ডলিকে মলির ভূমিকায় গ্রহণ করে নিল। তার জন্য কোনো প্রকার সন্দেহ প্রকাশ করেনি। ডলি এমনিতে ছিল গম্ভীর এবং অন্যমনস্কতা ফুটে উঠত। এই ভাবটা মলির তখনকার ভূমিকায় সুন্দর ভাবে মানিয়ে নিল এবং লোকে ভাবলো বোনের মৃত্যুর শোকটা মলি এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেননি।