পোয়ারা বললেন, সেই বিশেষ দিনে এরকম একটা ফ্যাশনের চল ছিল। সাধারণত মানুষ বাইরে বেড়াতে গেলে একটা কিংবা দুটো চুল নিয়ে যেতো। কিন্তু তার কাছে ছিল চারটে পরচুল। আমার প্রশ্ন হল তার চারটে পরচুলের প্রয়োজন হল কেন? আমি যাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম। তার মাথায় যে টাক পড়ার প্রবণতা ছিল তা কিন্তু নয়। সেই বয়সে অন্য মহিলাদের মতোই ভালো রকমের চুল ছিল তার মাথায়। পরে জেনেছি একটা পরচুলে ধূসর রঙের দাগ ছড়িয়ে ছিল আর একটি ছিল কোঁকড়ানো, এবং অপর পরচুলটি তিনি তার মৃত্যুর দিন ব্যবহার করেছিলেন।
সিলিয়া জিজ্ঞেস করলেন, কোনোভাবে সেটা কি অর্থপূর্ণ হতে পারে? চারটের মধ্যে থেকে যে কোনো একটা পছন্দ করতে পারতেন কিন্তু তিনি তা না করে ওই বিশেষ পরচুলটি–
পুলিসের কাছে হাউজকিপার বলেছিল যে, তার মৃত্যুর কয়েক সপ্তাহ আগে থেকে তিনি ওই বিশেষ পরচুলটি ব্যবহার করতেন।
আমি কিন্তু এর কোনো অর্থ খুঁজি পাচ্ছি না। সুপারিনটেন্ডেন্ট গ্যারোওয়ে আমাকে একটা কথা বলেছিলেন–একই লোক, অন্য ধরনের টুপি, তার সেই উক্তিটা আমাকে ভাবিয়ে তোলে।
সিলিয়া কিন্তু সেই আগের কথার পুনরাবৃত্তি করে বললেন, আমি কিন্তু এর কোনো অর্থ দেখতে পাচ্ছি না।
পোয়ারো আরও বললেন, একটা কুকুরের অস্তিত্বের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
কুকুর! কুকুর কী করেছিল?
সেই কুকুরটা মিসেস র্যাভেন্সক্রফটকে কামড়ে দিয়েছিল, সেই কুকুরটা কিন্তু তার খুব প্রিয়। এবং অনুরক্ত ছিল। জীবনের শেষ কয়েক সপ্তাহ কুকুরটা তাকে বেশ কয়েকবার আক্রমণ করে।
ডেসমন্ড এবার প্রশ্ন করলেন, তাহলে আপনি কি মনে করেন তিনি যে আত্মহত্যা করতে যাচ্ছেন কুকুরটা টের পেয়েছিল?
পোয়ারো বলেন, না, সেই কুকুরটা এমন কিছু জানত যা অন্য কেউ জানত না, সেই হাউজকিপার যে প্রায়ই অন্ধ ছিল এবং কানে কম শুনত সে নাকি একজন মহিলাকে মলি র্যাভেন্সটের পোশাক পরে থাকতে দেখেছিল এবং সেই প্রিয় পরচুলটি তার মাথায় লাগাতে দেখেছিল। এই ব্যাপারে হাউজকিপার বলেছিল তার মৃত্যুর কয়েক সপ্তাহ আগে তার মিস্ট্রেসকে কেমন যেন অন্য রকমের মহিলা বলে মনে হয়েছিল। একই লোক এবং অন্য ধরনের টুপি গ্যারোওয়ের সেই কথাটা মনে পড়ে যায় এবং নতুন একটা ভাবনার জন্ম হয়। যেমন একই পরচুল অথচ অন্য একজন মহিলা। কুকুরটি তার নাক দিয়ে বুঝেছিল এটা অন্য এক মহিলা যাকে সে ভালোবাসে তা সে নয়। এ সেই মহিলা যাকে সে অপছন্দ করত। আমার মনে হয় সেই মহিলা মলি র্যাভেন্সক্রফট ছিলেন না। কিন্তু কে হতে পারেন তিনি? তবে কি ধরে নেওয়া যায় তিনি ডলি ছিলেন? সেই যমজ বোন?
সিলিয়া প্রতিবাদ করে বলে উঠলেন, সেটা অসম্ভব।
না, সেটা অসম্ভব কিছু নয়। তারা ছিলেন যমজ বোন। মিসেস অলিভার আমাকে একটা কথা মনে করিয়ে দিয়েছিলেন এবং সেই কথাটা তিনি শুনেছিলেন অন্য লোকের কাছ থেকে যারা ব্যাভেন্সক্রফটদের জানতেন। সেই কথাটা হল লেডি র্যাভেন্সক্রফট সেই সময় কিছুদিনের জন্য হাসপাতালে ছিলেন। খুব সম্ভব তিনি জেনে গিয়েছিলেন যে তার ক্যান্সার হয়েছে। ডাক্তারি পরীক্ষায় বোঝা যায় তার সেরকম কিছুই হয়নি। এরপর তার ও তার যমজ বোনের ইতিহাস জানতে পারি। তারা উভয়ই পরস্পরকে গভীরভাবে ভালোবাসতেন। তাদের সব কিছুই ছিল একইরকম, একই সময়ে অসুস্থ হয়ে পড়া বা প্রায় একই সময়ে দু-জনের বিবাহ করা, সম্ভবত দুই যমজ বোনের মধ্যে আলাদা বৈশিষ্ট্য আনার জন্য এবং যাতে করে তৃতীয় ব্যক্তি তাদের পরিচয় বুঝতে পারেন যে, কে ডলি বা কে মলি সেই জন্য একই ফ্যাশন এবং একই কায়দা না করে ওঁরা ঠিক বিপরীত ফ্যাশনে অভ্যস্ত হয়েছিলেন। আর তাছাড়া তাদের জীবনের শেষ দিকে এ ওকে অপছন্দ করার একটা মানসিকতাও গড়ে উঠেছিল। জেনারেল র্যাভেন্সক্রফট প্রথমে ডরোথি প্রেস্টন-গ্রের প্রেমে পড়েন, যমজ বোনের সেই ছিল বড়ো। কিন্তু কিছুদিন পরে সেই প্রেমের পাত্রী বদল হয়ে যায়। অর্থাৎ ডলির পরিবর্তে মলিকে ভালোবাসতে শুরু করেন। এবার তাকেই বিয়ে করেন এবং যেটা স্বাভাবিক যে দুই যমজ বোনের মধ্যে বিদ্বেষ সৃষ্টি হল। তাই এর ব্যাখ্যা হিসাবে আমার অনেক কিছুই মনে হয়েছে। ডরোথি হল একটা ট্র্যাজিক চরিত্র। সব সময়ে মানসিক দিক থেকে অস্বস্তিতে থাকতেন তিনি। কি কারণে কে জানে যা আজও অজানা। সেই ছোটোবেলা থেকে তিনি শিশুদের পছন্দ করতেন না। আবার এক সময় একটি শিশু হত্যার জন্য তিনিই দায়ী হয়ে পড়েন। অবশ্য সেটা বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ ছিল, এবং সেই কারণেই সেই চিকিৎসক তাকে মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য সুপারিশ করেন এবং বেশ কয়েকবছর তাকে মানসিক হাসপাতালে থাকতে হয়। এর কিছুদিন পর তিনি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন। র্যাভেন্সক্রফট যখন মালয়েতে ছিলেন তখন তিনি সেখানে গিয়েছিলেন। আর সেখানেই আগের একটা দুর্ঘটনা ঘটে। প্রমাণ না থাকলেও প্রতিবেশী সেই শিশুটির মৃত্যুর জন্য ডরোথিই দায়ী ছিলেন, জেনারেল তখন ডরোথিকে ইংলন্ডে নিয়ে আসেন এবং তাকে মানসিক চিৎকৎসার ব্যবস্থা করেন। তিনি আবার ভালো হয়ে ওঠেন। এবার মার্গারেট বিশ্বাস করলেন তার যমজ বোন চিরদিনের মতো সুস্থ হয়ে উঠেছে এবং তার দিকে সব সময় নজর রাখার জন্য তার কাছে নিয়ে আসলেন। তাতে জেনারেলের সম্মতি ছিল আমার বিশ্বাস হয় না। কারণ তিনি জানতেন জন্ম থেকে এধরনের রোগ চিরদিনের মতো নির্মূল হয় না। তার সব সময় আশঙ্কা ছিল ডলির দিক থেকে যদি আবার বিপদের সূচনা হয় এই ভয়ে।