সিলিয়া বললেন, আমার মনে হয় মিসেস অলিভার হয়তো এলেন। কারণ উনি বলেছিলেন ট্রেনে আসবেন এবং স্টেশন থেকে ট্যাক্সি ধরে নেবেন।
মিসেস অলিভার এবং তাঁর সঙ্গিনী ট্যাক্সি থেকে নামলেন। পোয়ারো জানতেন সেই মহিলাটি আসবেন তাই তাকে দেখে তিনি বিস্মিত হলেন না। তিনি শুধু সিলিয়াকে লক্ষ্য করছিলেন তার প্রতিক্রিয়া দেখবার জন্য।
সিলিয়া সেই মহিলাটিকে দেখে আনন্দে লাফিয়ে তাঁর কাছে ছুটে গেলেন। ওহো সত্যিই আপনি আমাদের সেই জেলি? আপনাকে দেখে আমি কী যে আনন্দ পেলাম তা আপনাকে বোঝাতে পারব না। আপনি যে এখানে আসছেন তাও জানতাম না।
মঁসিয়ে এরকুল পোয়ারো আমাকে আসতে বলেছিলেন।
সিলিয়া বললেন, তাই বুঝি? কিন্তু আমি জানি না
কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন তিনি। এদিকে মুখ ঘোরাতেই তিনি দেখলেন তাঁর পাশে এক যুবক দাঁড়িয়ে আছেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, আচ্ছা তুমি ডেসমন্ড না?
হ্যাঁ। জেলি নামে ওঁকে ডাকতে পারি কিনা সেটা জানার জন্য আমি চিঠি দিয়েছিলাম মাদমোয়াজেল মিউহোরাটকে।
জেলি বললেন, তোমরা দু-জনেই ও নামে আমাকে ডাকতে পারো। এখানে আসাটা বুদ্ধিমানের কাজ হল কিনা আমি জানি না। কিন্তু আমি তা আশা করি।
সিলিয়া বললেন, আমরা দুজনেই জানতে চাই ডেসমন্ড ভেবেছে আপনি অন্তত আমাদের কিছু বলতে পারেন।
জেলি প্রত্যুত্তরে বললেন, মঁসিয়ে পোয়ারো আমরা সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন এবং অনুরোধ করেছিলেন আজ এখানে আসার জন্য।
সিলিয়া মিসেস অলিভারের একটা হাত ধরে বললেন, আপনিও এখানে আসুন কারণ আপনি মঁসিয়ে পোয়াবোর সহযোগিতা পেয়েছেন এবং আপনি নিজেও কিছু তথ্য খুঁজে পেয়েছেন। তার জন্য কেসটা আপনি হাতে নিয়েছেন, কি নিয়েছেন তো?
মিসেস অলিভার বললেন, লোকেরা আমাকে বলেছে। সেসব লোককে মনে রাখতে বলেছিলাম সেই ঘটনার কথা তাদের মধ্যে কয়েকজন ঠিকই মনে রেখেছে। আবার কয়েকজন মনে রাখতে গিয়ে ভুল তথ্য দিয়েছে। আর সেটাই হল বড়ো বিভ্রান্তিকর। তবে সিয়ে পোয়ারো বললেন, সেটা কোনো ব্যাপার হবে না।
পোয়ারো বললেন, না। জনশ্রুতি কি সেটা জানাও জরুরী। ধরুন একজনের কাছ থেকে আপনি ঘটনার কথা জানলেন, যদি সেটা সঠিক ঘটনা নাও হয় তবুও আপনি শুনবেন। আপনার নিশ্চয়ই মনে আছে ম্যাডাম, আপনাকে আমি যেভাবে বুঝিয়েছি এরা সেইসব লোকগুলো যাদের আপনি এক একটা হাতি বলে বর্ণনা করেছেন তাদের কাছ থেকে কিন্তু আপনি কিছু না কিছু জেনেছেন নিশ্চয়ই। এখন সেগুলোকে ভালোভাবে বুঝে উপলব্ধি করে সিদ্ধান্ত নিন। এই কথা বলে পোয়ারো হাসলেন।
হাতি? বললেন মাদমোয়াজেল জেলি।
পোয়ারো বললেন, উনি এই রকমই আখ্যা দিয়ে থাকেন।
মিসেস অলিভার ব্যাখ্যা করে বললেন, হাতিরা মনে রাখতে পারে। এই রকম একটা প্রবাদ আমি চালু করেছি। হাতিদের মতো মানুষও অনেকদিন আগের ঘটনার কথা মনে রাখতে পারে। তবে সব মানুষ নয়। এইভাবে আমি অনেক খবর সংগ্রহ করেছি। এবং এই খবরগুলো একত্রে করে মঁসিয়ে পোয়ারোর হাতে দিয়ে দিয়েছি। উনি যদি ডাক্তার হতেন তাহলে বলতাম রোগ নির্ণয় করতে।
পোয়ারো বললেন, অনেকদিন আগে কী ঘটেছিল তার যথা সম্ভব বিবরণ নিয়ে আমি একটা তালিকা তৈরি করেছি। আর এই তালিকার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আমি আপনাদের পড়ে শোনাব আর দেখব আপনারা এসবের সঙ্গে জড়িত কিনা। অথবা আপনাদের কাছে এর কোনো গুরুত্ব আছে কিনা। হয়তো আপনাদের কাছে মামুলি বলে মনে হতে পারে।
সিলিয়া বললেন, সবাই জানতে চায় সেটা কি আত্মহত্যা বা খুনের ঘটনা? যদি ধরা হয় খুন হয়েছে তাহলে কি বাইরের কেউ আমার মা ও বাবাকে খুন করেছে? কোনো কারণে হয়তো তাদের গুলি করা হয়েছে। এই খুনের পিছনে কোনো মোটিভ থাকলেও থাকতে পারে যা আমরা জানি না। আমার সব সময়ে মনে হয় সেই ঘটনার পিছনে একটা কিছু অবশ্যই আছে যেটা খুঁজে বার করা খুবই মুশকিল
পোয়ারো বললেন, আমরা এখানেই থাকব। এখন বাড়ির ভিতর যাওয়ার দরকার নেই। যেহেতু অন্য লোকেরা এখানে বাস করে গেছে সেহেতু এখানকার আবহাওয়া অন্য রকমের। আমাদের এখানে কোর্ট অফ এনকোয়ারির কাজ শেষ হওয়ার পর যদি আমরা মনে করি তবে আমরা ভিতরে যাব।
ডেসমন্ড বললেন, তাহলে এটা কি কোর্ট অব এনকোয়ারির কাজ?
হ্যাঁ, সেদিন এখানে কী ঘটেছিল তা জানার জন্যই এই কোর্ট অফ এনকোয়ারি।
দুটোর মধ্যে যে কোনো একটা অবশ্যই সত্য, বললেন সিলিয়া।
আমি বলব যে, দুটোই সত্য। আমার ধারণা আমরা এখানে এসেছি কেবল একটা খুনের বা আত্মহত্যার ব্যাপার নয় একটা বেদনাদায়ক ঘটনাও আছে–এখানে দুটো মানুষের ট্র্যাজেডি, যাঁরা পরস্পরকে ভালোবাসতেন এবং প্রেমের জন্য যারা জীবন বিসর্জন দিলেন। ভালোবাসার ট্র্যাজেডি যে সবসময় রোমিও এবং জুলিয়েটের মতো হবে তা নয়, প্রেম ও ভালোবাসার দুঃখ বেদনা এবং ব্যর্থতার জন্য মৃত্যুকে বরণ করে নেওয়ার একচেটিয়া অধিকার শুধুমাত্র যুবক যুবতীদের। কিন্তু প্রেমের বলির সামিল বয়স্করাও হতে পারে, এর মধ্যে তার থেকেও আরও বেশি কিছু থাকতে পারে।
আপনি কী বলতে চাইছেন আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না, সিলিয়া বললেন।
এখনও সময় হয়নি।
সিলিয়া আবার প্রশ্ন করলেন, আমি কি বুঝতে পারব?
পোয়ারো বললেন, আমার তাই মনে হয়। আমি আপনাদের বলব কী করে সেই ঘটনাটা ঘটেছে। এবং সেটা ঘটলই বা কি করে? প্রথম ব্যাপারটার ব্যাখ্যা সাক্ষ্য প্রমাণ নেই, পুলিশি রেকর্ড নেই। এমন কতকগুলো জিনিস আছে যা সাক্ষ্য প্রমাণের দরকার হয় না। যেমন মৃত মার্গারেট র্যাভেন্সক্রফট-এর ব্যবহৃত চারটি পরচুলের কথা। এবং একটু জোর দিয়ে পুনরায় বললেন, চার-চারটি পরচুল। সব সময়েই তিনি পরচুল ব্যবহার করতেন না, বিশেষ বিশেষ উপলক্ষে ব্যবহার করতেন। যেমন বাইরে বেড়োতে গেলে, সান্ধ্যভ্রমণের সময়। কারণ বাইরে বেরোলে চুলগুলো অবিন্যস্ত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।