মিসেস অলিভার বললেন, সত্যিই আমি ওকে জিজ্ঞেস করার কথা স্বপ্নেও ভাবতে পারি।, এবং তিনি তার ঘড়ির দিকে তাকাবার ভান করলেন এবং সঙ্গে সঙ্গে তিনি বলে উঠলেন, ওহে প্রিয়, আমরা দীর্ঘ সময় ধরে এই সুন্দর মধ্যাহ্নভোজ উপভোগ করলাম, অথচ এখনি আমাকে ছুটতে হবে কারণ আমার একটা জরুরি সাক্ষাৎকার আছে। কিন্তু, আপনাকে সাহায্য করতে না পারার জন্য সত্যিই আমি খুব দুঃখিত, বিদায়, মিসেস বেডলি কক্স, কিন্তু এ সব প্রসঙ্গ অত্যন্ত জটিল এবং সত্যি কথা বলতে কী আপনার ধারণার কি কোনো তফাত হতে পারে তা যে ভাবেই হোক?
ওহো, হ্যাঁ আমি কিন্তু মনে করি অনেক পার্থক্য হতে পারে।
ঠিক সেই সময়ে একজন লেখিকাকে সেদিকে এগিয়ে আসতে দেখলেন মিসেস অলিভার এবং তিনি তাকে বেশ ভালো করেই জানতেন, হঠাৎ লাফিয়ে উঠে তিনি তার একটা হাত ধরে ফেললেন।
সম্বোধন করলেন, লুইস, আমার প্রিয় লুইস, তোমাকে দেখতে পেয়ে কী যে ভালো লাগছে আমার। আচ্ছা, এর আগে তো তোমাকে দেখতে পাইনি।
হাই! এ্যারিয়াডন, বহুদিন হল তোমার সাথে কোনো দেখাসাক্ষাত হয়নি। অথচ তুমি কি খুব রোগা হয়ে গেছ, তাই না?
কী সুন্দর সুন্দর কথা না তুমি আমাকে বলল, বন্ধুকে হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে বললেন মিসেস অলিভার এবং সোফা থেকে উঠে দাঁড়ালেন তিনি এবং আবার বললেন, একজনের সাথে আমাকে দেখা করতে হবে, আমি যাচ্ছি বন্ধু।
মিসেস অলিভারের বন্ধু তাঁর কাঁধের ওপর দিয়ে আড়চোখে মিসেস বার্টন কক্সকে একবার দেখলেন এবং বললেন, আমার অনুমান ওই ভয়ঙ্কর মহিলার পাল্লায় পড়ে তুমি নিশ্চয়ই আটকে পড়েছিলে, তাই না?
কথার উত্তরে মিসেস অলিভার বললেন, উনি আমাকে যত সব অস্বাভাবিক প্রশ্ন করছিলেন। ওহো, তুমি কি জানতে না যে, কী ভাবে সেগুলোর উত্তর দেওয়া যায়?
না। কিন্তু সেগুলো কোনোভাবেই কাজের এক্তিয়ারে পড়ে না, এবং আমি যেসব প্রশ্নের বিন্দুবিসর্গ পর্যন্ত জানি না। কিন্তু সেগুলোর উত্তর দিতে আমি চাইনি।
কোনো আগ্রহে ব্যাপার আছে?
আমার মনে হয় বললেন মিসেস অলিভার। এবং তখন তার মাথায় একটা নতুন ধারণার আগমন ঘটছিল। যদিও মনে হয়, হয়তো সেটা আগ্রহ জাগাতে পারে কিন্তু কেবল–
বন্ধুটি জিজ্ঞেস করলেন, উইন কি তোমাকে তাগাদা করছিলেন? কিন্তু তোমার যদি গাড়ি না থাকে আমি তোমাকে লিফট দেব, এবং তুমি তোমার খুশিমত জায়গায় নেমে যেও। কিন্তু লন্ডনে আমি কখনও গাড়ি নিয়ে বেরোই না, কারণ পার্ক করা কি যে ভয়ঙ্কর ব্যাপার তা আমি জানি। এক কথায় যাকে বলে অচল অবস্থা।
ধন্যবাদ, পার্টিতে তাঁর সঙ্গ ভালো লাগে। সবাইকে বিদায় জানিয়ে আরও অনেক ভালো ভালো কথা বিনিময়ের পর মিসেস অলিভার তার বন্ধুর গাড়িতে গিয়ে বসলেন এবং গাড়িটা লন্ডন স্কোয়ারের দিকে ছুটে যাচ্ছিল।
ইটন টেরেস তাই না? তার বন্ধুটি জিজ্ঞেস করলেন।
হ্যাঁ, বললেন মিসেস অলিভার, অথচ এখন আমি কোথায় যাব, ও হ্যাঁ আমার মনে হয় হোয়াইটার ফায়ার্স ম্যানসনে। কিন্তু আমি সেটার নামটা কিছুতেই মনে রাখতে পারি না। অথচ আমি জানি, সেটা কোথায়?
ওহো, ফ্ল্যাটগুলো বেশ আধুনিক ধরনের। অত্যন্ত চারচৌকো এবং জ্যামিতিক।
ঠিকই তাই বললেন মিসেস অলিভার।
.
হাতি
মহান আল্ট অ্যালিসের জ্ঞানের পথনির্দেশ, মিস লিভিংস্টোন ঠিকানা লেখা বইটা খুঁজে দিতে পার কি?
তার উত্তরে বললেন, বাঁ হাতের কোণায় আপনার ডেস্কের ওপরই আছে মিসেস অলিভার।
মিসেস অলিভার বললেন, সেটার কথা আমি বলছি না। আমি যেটা বলছি মানে এখন যেটা আমি ব্যবহার করছি। অর্থাৎ আমার শেষেরটা বা আগের বছর কিংবা তার আগের আগেরটা, সন্দেহ প্রকাশ করে মিস লিভিংস্টোন বলল সেটা ফেলে দেওয়া হয়নি তো?
না, ঠিকানার বই আমি ফেলে দিই না কারণ সেটা তোমার প্রায়ই দরকার হয়ে থাকে, অর্থাৎ আমি বলতে চাইছি কিছু ঠিকানা তুমি নতুন বইতে কপি করোনি? তবে আমার মনে হয় টলবয়েজের ড্রয়ারগুলোর মধ্যে যে কোনো একটায় আছে সেটা।
মিস সেডউইকের স্থলাভিষিক্ত হল মিস লিভিংস্টোন সুতরাং বলতে গেলে একরকম নবাগতা। অ্যারিয়াডন অলিভার মিস সেডউইককে হারিয়েছেন। অনেক কিছু জানত মেয়েটি এবং সে আরও জানত কোন কোন সময়ে মিস অলিভার কোন জিনিস কোথায় রাখতেন। যে সব লোকেদের সুন্দর সুন্দর চিঠি লিখতেন মিসেস অলিভার তাদের নাম কী সুন্দর মনে রাখত। শুধু তাই নয় আবার যে সব লোকেদের রুক্ষ ভাষায় চিঠি লিখতেন তাদের নামও মনে রাখতেন। অত্যন্ত কাজের এই মেয়েটি যে কোনো কারণেই হোক সে অকাজের হয়ে পড়ে থাকবে হয়তো। মিসেস অলিভার বললেন, কী যেন বইটার নাম? সে ছিল সেই বইটার মতন, তার মনটাকে ফেলে আসা দিনগুলোতে পিছিয়ে নিয়ে গিয়ে মনে করার চেষ্টা করলেন এবং বললেন, ও হ্যাঁ আমি জানি। বাদামি রঙের একটা বড়ো বই ভিক্টোরিয় যুগের সব কিছুই তাতে এনকোয়্যার উইদিন আপন এভরিথিং। কী করে নিকেলের ওপর থেকে লোহার নোংরা দাগ তোলা যায়, এবং বিশপের কাছে খোশগল্পের চিঠি লেখা কী করে শুরু করতে হয় সব জানা এই বই থেকে। সব কিছু আছে এনকোয়্যার উইদিন আপন এভরিথিং। বইটি মহান আল্ট অ্যালিসের মহান নির্ভরযোগ্য আশ্রয়।
আনট অ্যালিসের বই-এর যোগ্য ছিল মিস সেডউইক এবং মিস লিভিংস্টোন মোটেও তার মতন নয়। মিস লিভিংস্টোন সব সময় সেখানে দাঁড়িয়ে থাকেন। গায়ের রং পাণ্ডুর বর্ণ, লম্বাটে ধরনের মুখ এবং নিজেকে একজন দক্ষ বলে দেখানোর প্রবণতা আছে কারণ তার মুখের প্রতিটি রেখাই বলে দেয় দেখো আমি অত্যন্ত দক্ষ। কিন্তু মিসেস অলিভার ভাবেন সে কিন্তু সত্যি সেরকম নয়। সে কেবল সব জায়গাগুলো জানে যেখানে প্রাক্তন কর্মীরা বইপত্তর রাখত এবং মিসেস অলিভার যেখানে কোনো জিনিস রাখতে পারেন সেই সব জায়গাগুলিই ছিল তার কাছে পরিষ্কারভাবে বিবেচিত হত।