রাউজেল বললেন, আমি আপনার নাম শুনেছি। এ দেশে আর ফ্রান্সে আপনার অনেক বন্ধু আছে জানেন। আপনার জন্য আমি কী করতে পারব জানি না। আপনার চিঠিতে আপনি যেটা ব্যাখ্যা করেছেন সেটা কোনো অতীতের ব্যাপার তাই না? যে ঘটনাটা ঘটে গেছে সেই ঘটনার ক্ল আপনি জানতে চান যা আজ থেকে অনেক বছর আগে ঘটেছিল। বসুন আপনি। আপনি ক্লান্ত আর টেবিলের ওপর সুরাপাত্র রয়েছে একটু পান করে জিরিয়ে নিন। পোয়ারোর মনে হল ভদ্রমহিলা বেশ অতিথিপরায়ণা, কারণ কোনো ব্যস্ততা নেই বা কোনো চিন্তা নেই। অথচ বেশ মিশুকে।
একটা সময়ে আপনি এক পরিবারে গভর্নেস ছিলেন এবং সেই ঘটনা যখন ঘটেছিল আপনি যুবতী ছিলেন। আর আমি দেখেছি সেই পরিবারে একটি মেয়ে ও একটি ছেলে ছিল এবং তাদের বাবা আর্মিতে জেনারেল পদে উন্নতি লাভ করেছিলেন।
সেই পরিবারে কিন্তু একটি বোনও ছিল।
হ্যাঁ আমার মনে আছে। আমি যখন সেখানে গিয়েছিলাম তখন তিনি সেখানে ছিলেন না। আমার অনুমান তিনি একটু জটিল প্রকৃতির ছিলেন এবং তাঁর স্বাস্থ্য ভালো ছিল না। তিনি যেন চিকিৎসার জন্য কোথায় গিয়েছিলেন।
আচ্ছা আপনি কি তাদের স্মৃশ্চিয়ান নামগুলো জানেন?
মার্গারেট বলে একজনের নাম মনে হয়। আর একজনের নাম এখন আমার আর মনে নেই।
তিনি বললেন, ডরোথি।
হ্যাঁ। যার সঙ্গে আমার খুব একটা পরিচয় ছিল না। তবে তারা পরস্পরের ছোট্ট নাম ধরে ডাকাডাকি করত। মলি আর ডলি। আর সেটা জানেন তো তাঁরা ছিলেন যমজ বোন। একই রকম দেখতে ছিলেন দু-জনে এবং দুজনেই দেখতে খুব সুন্দরী ছিলেন।
আচ্ছা তারা পরস্পর পরস্পরকে ভালোও বাসতেন তাই তো?
হ্যাঁ, তাঁরা পরস্পর পরস্পরের অনুরক্ত ছিলেন। আমি যে দুটি ছেলেমেয়েদের পড়াতে যেতাম তাদের নাম প্রেস্টন গ্রে ছিল। ডরোথি প্রেস্টন গ্রে একজন মেজরকে বিয়ে করেছিলেন। এখন নামটা ঠিক মনে করতে পারছি না। মার্গারেটের বিবাহিত নামটা কী ছিল যেন
পোয়ারো বললেন, র্যাভেন্সক্রফট।
হ্যাঁ হ্যাঁ। অদ্ভুত নামগুলো। কিছুতেই মনে রাখা যায় না। মার্গারেট প্রেস্টন গ্রে এখানকার একটা মহিলা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ওঁর বিয়ের পর মাদাম বেনয়টকে চিঠি লেখেন এবং বলেন যদি কোনো গভর্নের্স তার জানা থাকে তিনি যেন ওঁর কাছে পাঠিয়ে দেন। আর তখন আমাকে সুপারিশ করা হয়। এবং সেই সূত্র ধরেই আমি সেখানে যাই। আমার শুধু অপর বোনের সঙ্গেই কথা হত। কারণ আমার কার্যকলাপের সময় তিনি সেখানে থাকতেন। মেয়েটির তখন বয়স ছিল ছয় কিংবা সাত আর তার নাম দেওয়া হয়েছিল শেক্সপিয়ার থেকে। নাম ছিল রোজালিণ্ড বা সিলিয়া। আর ছেলেটির বয়স ছিল মাত্র তিন বা চার তার নাম ছিল এডওয়ার্ড। সে ছিল খুব দুষ্টু তবে চেহারা ছিল মিষ্টি। তাদের সঙ্গে আমি বেশ সুখেই ছিলাম।
আমি শুনেছি আপনাকে পেয়ে তারাও খুব সুখে ছিল।
ওদের সাথে একাত্ব হয়ে গিয়েছিলাম আমি, বললেন, মাদমোয়াজেল।
আমার বিশ্বাস ওরা আপনাকে ম্যাডি বলে ডাকতো। এই কথা শুনে হাসলেন তিনি।
ওরা যে আমাকে ওই নামে ডাকত আমিও তা খুব পছন্দ করতাম। সেটা আমাকে অতীতে ফিরিয়ে নিয়ে যেত।
আচ্ছা আপনি কি ডেসমন্ড বারটন কক্স নামে কোনো ছেলেকে চেনেন?
হ্যাঁ মনে আছে। ছেলেটি হয় ওদের পাশের বাড়ি নয় তার পরের বাড়িতে থাকত। যেখানে অনেক প্রতিবেশী ছিল। আমাদের আর তাদের ছেলেমেয়েরা সবাই একসঙ্গে খেলাধুলা করত।
আপনি কি সেখানে অনেক দিন ছিলেন মাদমোয়াজেল?
না, আমি সেখানে মাত্র তিন থেকে চার বছর ছিলাম। আমার মা অসুস্থ হওয়ার জন্য এবং তাঁকে সেবা শুশ্রূষা করবার জন্য আমি দেশে ফিরে আসি। সেখানে ফিরে যাওয়ার দেড় কী দু বছর পরেই তিনি মারা যান। তারপর আমি নিজেই বয়স্কা মহিলাদের বিভিন্ন ভাষা শেখানোর জন্য একটা প্রতিষ্ঠান খুলি। যদিও এক কী দু-বছর সেই দেশের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছিলাম কিন্তু ইংলন্ডে আর যাইনি।
জেনারেল র্যাভেন্সক্রফট এবং তার স্ত্রীর দাম্পত্য জীবন সুখের ছিল বলে কি আপনার মনে হয়?
অন্তত খুশি ছিলেন তারা। তাঁরা তাঁদের ছেলেমেয়েদেরও খুব প্রিয় ছিলেন এবং তিনিও ওদের খুব ভালোবাসতেন। এক কথায় বলা যায় ওঁরা দু-জন যেন পূর্ণ কবিতা। যার মধ্যে সুর আছে, ছন্দ আছে। সুতরাং তাদের বিয়েটা যে সফল তা বলা যায়।
আপনি বলছেন লেডি র্যাভেন্সক্রষ্ট তার যমজ বোনের প্রতি অনুগত ছিলেন।
আমি সেই যমজ বোনটার কথা ভাবছিলাম। সেই জন্যই বোধহয় কেন জানি না ভদ্রমহিলাকে দেখেই একটা দুঃখবোধ অনুভব করি। তিনি ছিলেন ঈর্ষাপরায়ণ মহিলা। আমি জেনেছি একসময় তিনি মনে করতেন তিনি যেন জেনারেল র্যাভেন্সক্রফট-এর বাগদত্তা। জেনারেল প্রথমে তার প্রেমে পড়ে যান এবং পরে সব প্রেম ও ভালোবাসা ঘুরে যায় যমজ বোনের দিকে। আমি মনে করি জেনারেলের এই পরিবর্তন খুব সৌভাগ্যের কথা। কারণ মলি র্যাভেন্সক্রফট সুন্দরী ও মিষ্টি স্বভাবের মহিলা ছিলেন। আর ডলির ব্যাপারে আমি দেখেছি তিনি কখনও তার বোনকে আদর করছেন ও ভালোবাসছেন আবার কখনও ঘৃণা করছেন ও ঈর্ষা প্রকাশ করছেন। তার ঈর্ষা এত বেশি ছিল যে, তিনি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন যমজ বোনের ছেলেমেয়েদের আর স্নেহ করবেন না। তবে আমার মনে হয় এ-ব্যাপারে আরও বেশি ভালো করে বলতে পারবে মাদমোয়াজেল মিউহোরাট। তিনি এখন লওসেনে থাকেন। আমি চলে আসার দেড় কী দু-বছর পর র্যাভেন্সক্রফটদের কাছে তিনি যান। বেশ কয়েক বছর সেখানে ছিলেন। আমার বিশ্বাস সিলিয়া যখন বিদেশে তিনি তখন লেডি র্যাভেন্সক্রফট-এর সঙ্গিনী হয়ে আবার ফিরে আসেন। তাঁর ঠিকানা আমার কাছে আছে।