ও তাই জন্য আপনি মনে করেন মিসেস বারটন কক্স সেটা চান না?
হ্যাঁ ঠিক তাই, তিনি এমন কিছু একটা খুঁজে বার করতে চান যা তাকে সেই মেয়েটিকে বিয়ে করতে নিরুৎসাহ করতে পারে। আমার অনুমান তিনি আশা করেন এবং বিশ্বাসও করেন সিলিয়ার মা তার বাবাকে হত্যা করেছে। পরে সে নিজে নিজেকে গুলি করে। এমনকি মেয়েটির বাবা যদি তার মাকে হত্যা করে থাকে তবু সেটাও নিরুৎসাহের কারণ হতে পারে। এই বয়সে ছেলেটির ওপর এ-ব্যাপারটা প্রভাব ফেলতে পারে।
আপনি কি তার মানে বলতে চান মেয়েটির বাবা অথবা মা যদি খুনি হন তাহলে মেয়েটির মধ্যেও খুন করার প্রবণতা থাকবে?
স্বাভাবিকভাবে তা না হলেও ওটা একটা ধারণা হতে পারে বলে আমার মনে হয়।
কিন্তু ছেলেটি তো বড়োলোক নয়? একজন দত্তক পুত্র?
ছেলেটি তার মার সত্যিকারের নাম কি জানে না এবং তিনি যে কে তাও সে জানে না। কিন্তু তার অভিনেত্রী ও পপ সঙ্গীত শিল্পী মা মৃত্যুর আগে প্রচুর অর্থ করে যান এবং এক সময় তিনি তাঁর ছেলেকে ফেরতও চান। কিন্তু মিসেস বারটন কক্স সেই প্রস্তাবে রাজি হননি। তাই আমার অনুমান তিনি তখন এই ছেলেটির কথা চিন্তা করেন এবং সিদ্ধান্ত নেন যে, তার সমস্ত অর্থ তাকে দিয়ে যাবেন। এবং ছেলেটি তার পঁচিশ বছর পূর্ণ হওয়ার পর সেই অর্থের উত্তরাধিকারী হবে। আর সেই সময় পর্যন্ত তাঁর সব অর্থ একটা ট্রাস্টের কাছে গচ্ছিত রাখা থাকবে। অতএব মিসেস বারটন কক্স এখন অবশ্যই চাইতেন না যে, তার পছন্দমতো মেয়েকে বিয়ে করুক। বরং তিনি কেবল চাইবেন তার পছন্দমতো মেয়েকে বিয়ে করুক সেযার ওপর তার প্রভাব থাকতে পারে।
হ্যাঁ। এটা আমার কাছে খুব যুক্তিপূর্ণ বলে মনে হচ্ছে, তিনি মোটেই একজন ভালো মহিলা নন। তাই তো?
না, বললেন পোয়ারো। আমি তাকে খুব ভালো মহিলা বলে মনে করি না।
বেশি মেলামেশা করলে যদি আপনি তার স্বরূপ জেনে ফেলেন আর সেই কারণেই তিনি চান না যে আপনি তার সঙ্গে দেখা করেন।
তাই হবে হয়তো, বললেন পোয়ারো।
আর কিছু আপনি জানতে পেরেছেন?
হ্যাঁ মাত্র কয়েক ঘন্টা আগে কয়েকটা ছোটোখাটো ব্যাপারে সুপারিনটেন্ডেন্ট আমাকে ফোন করেছিলেন। সেই ফোনের উত্তরে আমি তাকে একটা প্রশ্ন করি। প্রত্যুত্তরে তিনি আমাকে বলেন যে, বয়স্ক হাউসকিপার চোখে ভালো দেখতে পান না।
পোয়ারো বললেন, হতে পারে। এই বলে তিনি তাঁর ঘড়ির দিকে তাকালেন। তিনি আবার ব্যস্ত হয়ে বলে উঠলেন, আমার এখন যাওয়ার সময় হয়ে গেছে। আমি চললাম।
আপনি কি এখন প্লেন ধরার পথে?
না, আমার প্লেন কাল সকালের আগে ছাড়ছে না। কিন্তু একটা জায়গায় আজই যেতে হচ্ছে কারণ সেই জায়গাটা আমার নিজের চোখে দেখতে হবে।
কৌতূহলের সঙ্গে মিসেস অলিভার জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কী দেখতে চান সেখানে?
খুব একটা বেশি কিছু দেখার অথবা অনুভব করার মতো কিছু নেই। ঠিক কথাটা হল উপলব্ধি করা এবং বোঝবার চেষ্টা করা। আমি কি অনুভব করতে পারি।
.
ছোট্ট নাটিকা
চার্চইয়ার্ডের গেটের ভেতরে দিয়ে একটা পথ ধরে এগিয়ে চললেন এরকুল পোয়ারো। শেওলা পড়া দেওয়ালের সামনে একসময় থামলেন। কয়েক মিনিটের জন্য একটা কবরের দিকে তাকালেন। তারপর তিনি তাকালেন অদূর সমুদ্রের দিকে। তিনি তার দৃষ্টি আবার ফিরিয়ে নিলেন কবরের দিকে। বন্য ফুলের একটা গুচ্ছ হয়তো কোনো বাচ্চা ছেলে রেখে দিয়ে থাকবে। কিন্তু পোয়ারো মনে করেন এটা কোনো বাচ্চা ছেলে ফেলে রেখে যেতে পারে না। কবরের ওপর লেখা অক্ষরগুলো তিনি পড়লেন।
এদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে
ডরোথি গ্যারো
মৃত্যু : ১৫ই সেপ্টেম্বর ১৯৬০
এবং
মার্গারেট র্যাভেন্সক্রফট
মৃত্যু : ৩রা অক্টোবর ১৯৬০। ওপরে মহিলার বোন এবং এ্যালিয়েস্টার র্যাভেন্সক্রফট।
মৃত্যু : ৩রা অক্টোবর ১৯৬০ ওঁর স্বামীর মৃত্যুতেও ওঁরা বিচ্ছিন্ন হননি।
আমাদের অসঙ্গতভাবে হস্তক্ষেপের জন্য ক্ষমা করবেন আমাদের। যেন আমরা ক্ষমা করি তাদের যারা অসঙ্গতভাবে আমাদের বিরুদ্ধে হস্তক্ষেপ করে–
প্রভু, আমাদের ওপর দয়া করুন।
যিশু আমাদের ওপর দয়া করুন।
প্রভু, আমাদের ওপর দয়া করুন।
কিছুক্ষণের জন্য সেখানে দাঁড়ালেন। তারপর চাচঁইয়ার্ড ছেড়ে এসে ফুটপাথ ধরে হেঁটে চললেন যে পথ গিয়ে মিশেছিল সেই পাহাড়ে বা পাহাড়ের কোণ বরাবর। তিনি আবার তাকালেন সমুদ্রের দিকে আপন মনে বলে উঠলেন
আমি এখন নিশ্চিত হয়ে গেছি সেদিন কী ঘটেছিল আর কেনই বা সেটা ঘটেছিল। এবং সেই বেদনাদায়ক ঘটনার দুঃখবোধ আমি বেশ ভালোভাবেই উপলব্ধি করতে পারি। এই দীর্ঘ পথ সবাইকে পরিক্রম করতে হয়। আমার শেষেতেই আমার শুরু, আবার কেউ বলে আমার শুরুতেই আমার দুঃখদায়ক ঘটনা দিয়ে শেষ। সেই সুইস মেয়েটি নিশ্চয়ই সব জানে। ও আমাকে বলবে কি? ছেলেটির বিশ্বাস অন্তত ওদের খাতিরে বলবে। সেই মেয়েটি ও সেই ছেলেটির জন্য। এবং ওরা সেটা না জানা পর্যন্ত এ ওকে গ্রহণ করতে পারে না। আর গ্রহণ করতে পারে না ওদের জীবনকে।
.
ম্যাডি এবং জেলি
মাথাটা নিচু করে পোয়ারো বললেন, মাদমোয়াজেল রাউজেল।
মাদমোয়াজেল রাউজেল তার হাতটা বাড়িয়ে দিলেন। বয়স প্রায় পঞ্চাশ হবে। একটু উদ্ধত। ওঁর নিজস্ব একটা পথ আছে। তিনি বুদ্ধিমতী, বুদ্ধিজীবী এবং সন্তুষ্ট, পোয়ারো ভাবলেন। পোয়ারোর মনে হল তিনি একইসঙ্গে জীবনের আনন্দ এবং দুঃখবোধ অনুভব করছেন।