আমি দেখছি আপনি সব জানেন এবং খুব চালাক আপনি। খুব সত্যি কথা, এই পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে গিয়ে আমি বেশ উপভোগ করে থাকি। যা সত্যিই মজার ব্যাপার।
জীবনটাকে আপনি চুটিয়ে উপভোগ করেন তাই না? হ্যাঁ নিশ্চয়ই করি বৈকি। তবে আমার মনে হয় এটা এমন একটা অনুভূতি যা কেউ জানতে পারে না পরে কী হবে।
মিসেস রোসেনটেল বললেন, তবু সেই অনুভূতি ঠিক এমনি যে, অনেক মানুষই চিন্তা থেকে কখনও বিরত হয় না।
২.২ মিঃ গোবির রিপোর্ট
পোয়ারোর নির্দেশে ঘরে এসে মিঃ গোবি তার চেয়ারে বসলেন। তিনি তার চার পাশে একবার দেখে নিলেন নির্দিষ্ট কোনো ফার্নিচার বা ঘরের কোনো জিনিসের উদ্দেশ্যে তাকে বলতে হবে। এবং তিনি অন্য দিনের মতো ইলেকট্রিক ফায়ারের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। মিঃ গোবির জানা ছিল না যে, কোনো মানুষের উদ্দেশ্যে কিছু বলতে হয়। তিনি সব সময় নির্বাচন করেন হয় রেডিয়েটের, টেলিভিসন সেট, ঘড়ি প্রভৃতি নয়তো কার্পেট কিংবা মাটি। তিনি ব্রীফকেস খুলে কিছু কাগজ বার করলেন।
আমার জন্য আপনি কি কিছু এনেছেন? বললেন পোয়ারো।
মিঃ গোবি বললেন, হ্যাঁ নানা ধরনের বিস্তারিত খবর সংগ্রহ করে এনেছি।
সারা লন্ডনে এমন কি সারা ইংলন্ডে বিখ্যাত মিঃ গোবি। কারণ খবরের ব্যাপারে তিনি একজন বিরাট সংগ্রাহক। এই অতি আশ্চর্য কাজটা তিনি যে কী করে করেন কেউ সেটা জানে না। তার কর্মচারীর সংখ্যাও কম। তার পা-দুটো সম্পর্কে একক সময়ে অভিযোগ করে থাকেন তাদের যে রকম ব্যবহার করা উচিত তা তারা ঠিক সেরকম করে না। কিন্তু তার সাফল্য আজও মানুষকে অবাক করে দেয়। মিসেস বারটন কক্স, গীর্জায় তত্ত্বাবধায়ক কর্মচারীর মতন তিনি ঘোষণা করলেন তৃতীয় স্তবক, চতুর্থ অধ্যায়, ইসিয়া বই।
আবার তিনি বললেন, মিসেস বারটন কক্স বিয়ে করেন মিঃ সিসিল অন্তবারিকে। তার বিরাট বোতাম তৈরির কারখানা ছিল এবং তিনি ধনী ব্যক্তি ছিলেন। তিনি আবার রাজধানীতে প্রবেশ করেছেন লিটল স্ট্যান্স মেয়ারের এম. পি. মাত্র চার বছর তাঁদের বিয়ে হয়েছিল। তারপরই একটা গাড়ি দুর্ঘটনায় তিনি মারা যান। আবার কিছুদিন পরেই তার একমাত্র পুত্র আর একটি দুর্ঘটনায় মারা যায়। মিঃ অন্তবারির এস্টেটের উত্তরাধিকারিণী হন তার স্ত্রী। কিন্তু যতটা আশা করা হয়েছিল ঠিক ততটা নয় কারণ কয়েক বছর হল তাদের ব্যাবসা খুব ভালো চলছিল না। মিস ক্যাথলিন ফেন নামে এক মহিলার জন্যও বেশ মোটা টাকা তিনি রেখে যান। তার সঙ্গে মনে হয় মিঃ অন্তবারির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। মিসেস বারটন কক্স তার রাজনৈতিক জীবন চালিয়ে যান। বছর তিনেক বাদে তিনি একটি শিশুকে দত্তক নেন। এবং এই শিশুটি ছিল মিস ক্যাথলিন ফেনের পুত্র। মিস্ ক্যাথলিন দাবি করেন তার পুত্র আসলে মৃত মিঃ অন্তবারিরই ছেলে। এই খবরটা আমার অনুসন্ধানের যে সূত্র ধরে পেয়েছে যে কোনো কারণেই হোক তা গ্রহণীয় নয় বললেন মিঃ গোবি। আরও অনেক পুরুষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে মেলামেশা করতেন মিস ফেন এবং তারা সবাই সমাজে প্রতিষ্ঠিত ও উদারনৈতিক। সবাই তাঁর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে মেলামেশার জন্য উচিত মূল্যই দিয়েছে। আমার মনে হয় এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য যা আমি আপনাকে পরিবেশন করলাম।
এরকুল পোয়ারো বললেন, বলে যান আপনি।
মিসেস অন্তবারি, তখন তিনি ওই পদবিটাই ধারণ করতেন। তিনি সেই শিশুটিকে দত্তক হিসাবে নিতে রাজী হয়ে যান। এর কিছু দিন বাদে মেজর বারটন কক্সকে তিনি বিয়ে করেন। মিস ক্যাথলিন ফেন তখন সফল অভিনেত্রী ও পপ সঙ্গীত শিল্পী হয়ে প্রচুর অর্থের অধিকারিণী হন। তিনি মিসেস বারটন কক্সকে চিঠি লিখে জানান যে, তিনি সেই দত্তক পুত্রটিকে ফেরত নিতে চান। কিন্তু মিসেস বারটন কক্স দত্তক শিশুটিকে ফেরত দিতে অস্বীকার করেন। আমি আরও জানতে পারি, মালয়েতে থাকাকালীন সময় মেজর বারটন কক্স নিহত হন। তবে তিনি তার জন্য প্রচুর অর্থ রেখে যান। আরও একটা খবর আমি পেয়েছি, মিস ক্যাথলিন ফেন যিনি আঠারো মাস আগে হয়তো মারা যান। মারা যাবার সময় তিনি একটা উইল করে যান। তার অর্জিত সমস্ত অর্থ তাঁর প্রকৃত পুত্র ডেসমন্ড, এখন যে ডেসমন্ড বারটন কক্স নামে পরিচিত তার নামে রেখে যান।
তিনি অত্যন্ত উদার, বললেন পোয়ারো। মিস ফেন কীসে মারা যান?
আমি যা খবর পেয়েছি তা হল তিনি লিউকোমিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন।
আর ছেলেটি তার মায়ের সমস্ত অর্থের উত্তরাধিকারী হয়?
টাকাটা একটা ট্রাস্টের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। ডেসমন্ডের যখন পঁচিশ বছর পূর্ণ হবে তখন সেই মোটা টাকার অর্থ ও পাবে।
আর মিসেস বারটন কক্স?
তিনি তার অর্থ বিনিয়োগে সুখী নন। কারণ তাঁর জীবন ধারণের জন্য যথেষ্ট অর্থ থাকলেও সেটা খুব একটা বেশি নয়।
পোয়ারো তাকে প্রশ্ন করলেন, ডেসমন্ড কি কোনো উইল করেছে?
মিঃ গোবি বললেন, সেটা আমি এখনও জানতে পারিনি। তবে সেটা খুঁজে বার করার উপায় আমার জানা আছে। আর যদি জানতে পারি তবে সময় একটুকুও নষ্ট না করে আপনাকে জানিয়ে দেব।
বিদায় নেবার জন্য তিনি উঠে দাঁড়ালেন।
প্রায় দেড় ঘন্টা বাদে আবার টেলিফোন বেজে উঠল। পোয়ারো একটা কাগজের সিটে নোট করছিলেন। যখন তখন লেখা কাটাকাটি করছিলেন আবার নতুন করে লিখছিলেন। টেলিফোনটা বেজে উঠতেই রিসিভারটা তুলে নিয়ে কান পেতে শুনলেন।