গল্প করার ছলে বেশ কিছু অপ্রয়োজনীয় কথা কিছুক্ষণ বলে চলেন মিসেস অলিভার, আর মনে মনে ভাবতে থাকেন কী ভাবে কাজের কথাটা শুরু করা যায়।
হঠাৎ মিসেস রোসেনটেল বলে উঠলেন–আপনি তো অ্যারিয়াডন অলিভার, ঔপন্যাসিক? তাই না?
মিসেস অলিভার অবাক হয়ে গেলেন তার কথা শুনে, কোনো রকমে সেই অবাক হওয়া ভাবটা কাটিয়ে উঠে তিনি বললেন, নিজের সম্পর্কে কিছু বলতে গেলে লজ্জা বোধ হয়। বলতে পারেন এটা আমার স্বভাবজাত অভ্যাস উপন্যাস লেখাটা।
আপনার অনেক বই আমি পড়েছি। চমৎকার সব বই। আমি আপনার একজন ভক্ত। এখন আপনি বসুন, আপনাকে আমি কীভাবে সাহায্য করতে পারি?
বেশ ভালো কথা। আমি পরচুলের প্রসঙ্গে কথা বলতে চাই। এটা এমন একটা ঘটনার কথা যা অনেক অনেক বছর আগে ঘটেছিল। এ-ব্যাপারে আপনার কোনো কিছু মনে নাও থাকতে পারে।
আমি অবাক হচ্ছি বহু বছর আগের ব্যাপার নিয়ে আপনি কথা বলতে চাইছেন কেন?
না, ঠিক তা নয়। আমার এক বন্ধু একজন মহিলার প্রসঙ্গে, তার সঙ্গে স্কুলে পড়তাম। তারপর তার বিয়ে হয়ে যায় এবং তিনি মালয়েতে চলে যান। পরে ইংলন্ডে ফিরে আসেন এবং সেখানে একটা দুঃখজনক ঘটনা ঘটে যায় তাঁদের পরিবারে। একটা কথা আমি এখনও চিন্তা করছি যে ব্যাপারে লোকেরাও বিস্মিত তার অতগুলো পরচুল রাখার কি প্রয়োজন ছিল? আমার অনুমান সব কটি পরচুল আপনারা যোগান দিয়েছিলেন।
ওহো, সে এক ট্রাজেডি। তার নাম কি যেন ছিল? আমি যতদূর জানি তার নাম ছিল প্রেস্টন-গ্রে। তবে পরে তাঁর নাম হয়েছিল র্যাভেন্সক্রক্ট, হ্যাঁ লেডি র্যাভেন্সটকে আমি জানি, আমি তাকে ভালোভাবেই মনে রেখেছি, কি অসাধারণ সুন্দরী ছিলেন। তাঁর স্বামী ছিলেন কর্ণেল বা জেনারেল পদমর্যাদাসম্পন্ন একজন। তারা তখন অবসর নিয়েছেন এবং বাস করছিলেন কান্ট্রি নামটা কী যেন ঠিক মনে পড়ছে না ভুলে গেছি এখন।
মিসেস অলিভার বললেন, সেখানে বোধহয় একজোড়া খুন হয়ে থাকবে।
হ্যাঁ, আমার মনে আছে সেই ঘটনা। তখন খবরের কাগজে পড়েছিলাম এবং লোকের মুখেও বলতে শুনেছিলাম। ওঁদের দুজনের ছবি খবরের কাগজে দেখেছিলাম। যদিও আমি কখনও সামনে সামনে জেনারেল র্যাভেন্সক্রফটকে দেখিনি তবে তার স্ত্রীকে বেশ কয়েকবার দেখেছিলাম। ঘটনাটা খুবই দুঃখের বলে মনে হয়েছিল। শুনেছিলাম ওঁরা নাকি আবিষ্কার করেন যে মিসেস র্যাভেন্সটের ক্যান্সার হয়েছিল। এবং সেই রোগ থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য সব কিছুই তারা করেছিলেন। আমার অনুমান তেমন আশাপ্রদ কিছু হয়নি বলেই বোধ হয় এমন একটা বেদনাদায়ক ঘটনা ঘটেছিল। কিন্তু সেই জোড়া আত্মহত্যার বিস্তারিত বিবরণ আমি জানতে পারিনি।
আমিও জানি না, বললেন মিসেস অলিভার।
কিন্তু এ-ব্যাপারে আপনাকে কী বলতে পারি বলুন?
আপনি তাকে পরচুল যোগান দিয়েছিলেন। পুলিশ তখন ভেবেছিল যে কোনো লোকেরই চারটে পরচুল থাকতে পারে, তার মধ্যে অস্বাভাবিক কিছু নেই। কিন্তু তার পরিচিতরা বা লোকেরা সেই যুক্তিটা ঠিক মেনে নিতে পারেনি।
মিসেস রোসেনটেল বললেন, তা ঠিক। বেশির ভাগ লোকের দুটো পরচুল থাকে, একটা সার্ভিসিং-এর জন্য যখন আমাদের কাছে পাঠানো হয় তখন অপরটা ব্যবহার করা হয়। আপনার কি সে কথা মনে আছে যে, লেডি র্যাভেন্সক্রফট যে দুটো বাড়তি পরচুল অর্ডার দিয়েছিলেন?
নিজে অর্ডার দিতে তিনি আসেননি, আমার যতদূর মনে হয় তখন তিনি হাসপাতালে ছিলেন এবং একজন ফরাসি যুবতী এসেছিলেন। আমার মনে পড়ছে এ ফরাসি যুবতী একবার কী দুবার লেডি র্যাভেন্সক্রফটের সঙ্গে এসেছিলেন। খুব ভালো মেয়ে ছিল সে এবং খুব পরিষ্কার ইংরিজি বলত। তিনি কেন বাড়তি দুটো পরচুল চান তার সুন্দর একটা ব্যাখ্যা দিয়েছিল মেয়েটি। পরচুলের মাপ, রঙ এবং স্টাইলের বিবরণ দিয়ে অর্ডার দিয়েছিল সে, সেই ঘটনার কথা এখন আর ঠিক মনে করতে পারি না। তবে একটা ঘটনার কথা ছাড়া, সেটা একমাস বা তার থেকেও বেশি হবে। খবরের কাগজে সেই আত্মহত্যার ঘটনার কথা জানেন। আমার আশঙ্কা এই খবরে তিনি এমন মুষড়ে পড়েন এবং তখনই তিনি সিদ্ধান্ত নিয়ে নেন যে তিনি আর বেঁচে থাকবেন না। আর তার স্বামীও মনে করেন তাকে ছাড়া তিনি বেঁচে থাকবেন কী করে?
দুঃখের সঙ্গে মাথা নাড়লেন এবং জিজ্ঞেস করলেন মিসেস অলিভার, সেগুলো কি বিভিন্ন ধরনের পরচুল ছিল?
হ্যাঁ চারটে পরচুলের মধ্যে একটাতে ছিল ধূসর রঙের দাগ, দ্বিতীয়টা ছিল খুবই সুন্দর। তৃতীয়টা ছিল সন্ধ্যার সময় ব্যবহারের জন্য আর শেষেরটা ছিল ঘন কোঁকড়ানো। সবকটা পরচুলই টুপির নিচে পড়লে চুল অবিন্যস্ত হয় না এবং ভারি সুন্দর দেখায়। লেডি র্যাভেন্সটকে আর দেখা যাবে না কোনোদিন, ভাবতেই বড়ো দুঃখ লাগছে। তার অসুখ ছাড়াও তার বোনের মৃত্যুর জন্য তিনি খুব অসুখী ছিলেন কারণ আপনি জানেন হয়তো ওঁরা দুজন যমজ বোন ছিলেন।
মিসেস রোসেনটেল বললেন, আগে সব সময়ই ওঁকে সুখী মহিলা দেখাত।
দু-জনেই দীর্ঘশ্বাস ফেললেন এবং মিসেস অলিভার প্রসঙ্গ পালটালেন।
আপনার কি ধারণা পরচুল আমার কার্যকর বলে মনে হবে? প্রশ্ন করলেন তিনি।
অভিজ্ঞ হেয়ার ড্রেসার মিসেস রোসেনটেল মিসেস অলিভারের মাথায় হাত দিলেন এবং বললেন, আপনাকে পরচুল ব্যবহার করতে পরামর্শ দেব না–কারণ আপনার মাথায় অনেক চুল আছে এবং বেশ ঘন। আমার অনুমান–তিনি একটু হেসে বললেন, এতেই আপনি আপনার জীবনটা বেশ ভালোভাবেই উপভোগ করেন তাই না?