আমি শুনেছি র্যাভেন্সক্রক্টদের আত্মহত্যা করার তিন সপ্তাহ আগে মিসেস গ্যারো তাঁদের কাছে এসেছিলেন।
হ্যাঁ সেটা খুবই সত্য। তাঁর নিজের সেই বেদনাদায়ক মৃত্যুও ঘটেছিল তখন। ঘুমের মধ্যে প্রায়ই তিনি হেঁটে বেড়োতেন। একদিন রাতে ঘুমের মধ্যে হাঁটতে হাঁটতে বাড়ির থেকে বেরিয়ে পড়েন আর চলে আসেন সেই উঁচু পাহাড়ে এবং সেই পাহাড়ে থেকেই পড়ে যান মিসেস গ্যারো। পরের দিন সকালে পাহাড়ের খাদে তাকে পাওয়া যায়। তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় কিন্তু তার জ্ঞান আর ফিরে আসেনি। কিন্তু আমি বলতে চাই সম্ভবত আপনিও যেটা জানতে চান, পরবর্তীকালে এক সুখী দম্পতির আত্মহত্যার কারণ সেটা কখনওই হতে পারে না। বোন অথবা শালির মৃত্যু কখনওই কাউকে আত্মহত্যার পথে ঠেলে দিতে পারে না। জোড়া আত্মহত্যার ক্ষেত্রে তো নয়ই।
পোয়ারো বললেন, যদি না সম্ভব তার বোনের মৃত্যুর জন্য মার্গারেট দায়ী হবেন।
ডাঃ উইলবি বললেন, আপনি নিশ্চয়ই সেটা অনুমান করছেন না–
তাঁর কথার সরাসরি উত্তর না দিয়ে পালটা প্রশ্ন করলেন পোয়ারো তার কাছে–আপনি কি বলতে পারেন ঘুমন্ত অবস্থায় ভ্রমণরত বোনকে মার্গারেট অনুসরণ করেননি? আর মার্গারেটই হাত দিয়ে ডরোথিকে রাতের অন্ধকারে পাহাড় থেকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেননি?
উত্তেজিত হয়ে ডাঃ উইলবি তীব্র প্রতিবাদ করে ওঠেন এবং বলেন, আপনার এই ধারণা কখনই আমি মেনে নিতে পারছি না।
পোয়ারো বললেন, কিন্তু লোকেদের ধারণা এ-ব্যাপারে কেউ কিছুই জানে না।
.
ইউজিন এবং রোসেনটেল হেয়ার স্টাইলিস্ট এবং বিউটিশিয়ান
মিসেস অলিভার সেলটেনহ্যামের চারিদিকে তাকালেন এবং ভাবলেন এর আগে সেলটেনহ্যামে তিনি কখনও আসেননি। এখানকার জায়গা কত সুন্দর আর বাড়িগুলো কত চমৎকার। তার মনে হল এগুলোই আসল সত্যিকারের বসবাস করার উপযোগী বাড়ি।
এখানে এসে তাঁর মনে পড়ে যায় যে তার কয়েকজন পরিচিত লোক আছে যেমন তার কাকিমা, মাসিমা অথবা তার আত্মীয়স্বজন। তারা যাদের চিনতেন এই সেলটেনহ্যামেই থাকত। তারা এখন অবসরপ্রাপ্ত। আর্মির অথবা নেভির।
হাতে বেশি সময় থাকলে বিদেশের এই জায়গাটায় বিশ্রাম নেওয়ার পক্ষে খুব ভালো, ইংরেজ মনোভাবাপন্ন লোকেরা এখানে বাস করে। আর এখানকার লোকেদের পছন্দও ভালো এবং তাদের কথাবার্তা বেশ মার্জিত ও আনন্দদায়ক। কতকগুলি দোকানের দিকে তাকিয়ে তিনি একটা দোকান দেখতে পেলেন যেটা তিনি খুঁজছিলেন। দোকানের নাম–দ্যা রোজ গ্রীন হেয়ার ড্রেসিং সেলুন। ভিতরে ঢুকে তিনি দেখলেন চার কী পাঁচজন লোক চুলের পরিচর্যা করছে। বেশ মোটা গোল চেহারার একজন যুবতী তার দিকে এগিয়ে এলো খোঁজ নেওয়ার জন্য। মিসেস অলিভার বললেন, যে, মিসেস রোসেনটেল বলেছেন আজ সকালে এলে তিনি আমার সঙ্গে দেখা করতে পারেন। আমার চুলের ব্যাপারে আমি এখানে আসিনি। আমি তার সঙ্গে একটা ব্যাপারে কথা বলতে চাই। আমার সঙ্গে টেলিফোনে তার কথা হয়েছে এবং তিনি বলেছেন সাড়ে এগারোটার সময় এলে তিনি আমার জন্য কিছু সময় ব্যয় করতে পারেন।
ও আচ্ছা, মেয়েটি বলল। আমার মনে হয় ম্যাডাম একজনের জন্য অপেক্ষা করছেন।
একটা ছোটো প্যাসেজ দিয়ে তাঁকে সঙ্গে করে একটা সুইং ডোরের সামনে এসে দাঁড়াল মেয়েটি। সুইং ডোরের নিচে ঠেলা দিতেই দরজা খুলে গেল এবং ভিতরে তাঁরা ঢুকলেন। মোটা গোল চেহারার মেয়েটি দরজায় নক করে বলল একজন মহিলা আপনার সঙ্গে দেখা করতে চান। তারপর সে জিজ্ঞেস করল, কী যেন নাম বলেছিলেন আপনি?
মিসেস অলিভার।
তিনি ভেতরে ঢুকলেন। ভেতরটা যেন একটা শোরুম মনে হল। ওয়াল পেপারের ওপর গোলাপ এবং গোলাপের সূক্ষ্ম ডালপালা ঘরে শোভা পাচ্ছিল। তার বয়সি বা বেশ কয়েক বছরের বেশি হবে, সেই সময় সবে সকালের কফি খাচ্ছিলেন।
মিসেস অলিভার বললেন, আপনি কি মিসেস রোসেনটেল?
হ্যাঁ।
আমার অপেক্ষায় ছিলেন?
কী ব্যাপার যে, আপনি এখানে এসেছেন তা আমি ঠিক বুঝতে পারিনি। কারণ আজকাল টেলিফোনের লাইন খুব খারাপ। ঠিক আছে কোনো ব্যাপার নয় আমি আপনাকে আধ ঘণ্টা সময় দিতে পারি। আচ্ছা কফি আপনার চলবে?
না, মিসেস অলিভার ধন্যবাদ জানালেন। আমার প্রয়োজনের অতিরিক্ত সময় আমি আপনাকে আটকিয়ে রাখব না। আমি আপনার কাছে এমন কতকগুলো কথা জানতে চাই যেগুলো জানি না আপনি সেগুলো মনে রেখেছেন কিনা। আমি শুনেছি এই হেয়ারড্রেসিং-এর ব্যাবসা আপনার দীর্ঘদিনের।
হ্যাঁ। এখন আমি নিজের হাতে এইসব কাজ আর করি না। ওই মেয়েগুলোর ওপর সব ভার দিয়ে দিয়েছি।
এখনও তো আপনি লোকেদের উপদেশ দেন?
মিসেস রোসেনটেল হাসলেন এবং বললেন, তা অবশ্য করি। তার সুন্দর বুদ্ধিদীপ্ত মুখ এবং সুবিন্যস্ত বাদামি চুল।
আপনি কী ব্যাপারে এখানে এসেছেন এখনও ঠিক বুঝে উঠতে পারলাম না।
আমি আপনাকে পরচুলের ব্যাপারে কয়েকটা প্রশ্ন করতে চাই?
এখন তো খুব বেশি পরচুল আমরা তৈরি করি না।
লন্ডনে তো আপনাদের ব্যাবসা ছিল?
হ্যাঁ প্রথমে বন্ড স্ট্রিটে তারপর সেটা স্লোয়েন স্ট্রিটে স্থানান্তরিত করা হয়। সেইসব কান্ট্রিতে আমাদের বড়ো ভালো সময় কেটেছিল। তবে আমি আর আমার স্বামী এখানেও সন্তুষ্ট। এখানে আমরা ছোটো একটা ব্যাবসা চালাচ্ছি। তবে পরচুলের কাজ আমরা আজকাল আর বেশি করি না। তাহলেও আমার স্বামী এখনও পরচুলের সম্পর্কে পরামর্শ দিয়ে থাকেন। টাকওয়ালা পুরুষদের পরচুলের ডিজাইন উনি তৈরি করে দেন। আপনি জানেন বোধহয় পরচুল অনেক পার্থক্য সৃষ্টি করতে পারে। কোনো বয়স্ক লোক যদি পরচুল মাথায় দিয়ে বয়েস কমাতে পারে তাতে তার পক্ষে কাজ যোগাড় করতে বিশেষ সুবিধা হয়ে থাকে। মিসেস অলিভার বললেন, আমি যথেষ্ট অনুমান করতে পারি।